নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন আমরা কল্পনায় বাস্তবের চেয়ে বেশি কষ্ট পাই?

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১৯



সালাম/আদাব পাওয়া সম্মানের। অন্যদিকে সালাম/আদাবের পরিবর্তে নিজ সম্পর্কে কটু কথা শোনা কিছুটা হলেও অসম্মানের। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক যত আগ্রহের সাথে নিজ সম্পর্কে ‘কটু’ কথা মনে রাখে ঠিক তত পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে ‘সালাম/আদাব’ পাওয়ার হিসেব মনে রাখে না। আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় নেতিবাচক ঘটনা বেশি মনে রাখতে চায়। সমালোচনা বেশি মনে রাখে প্রশংসার চেয়ে।

একজন মানুষ আপনাকে কতবার সাহায্য করেছে এই হিসেব আপনি জানেন। কিন্তু ঐ একই মানুষ কতবার আপনার বিপদের বা সমস্যার কারণ হয়েছে সেই হিসেব থাকে আপনার অন্তরে। হাজারো সালামের হিসাব ম্লান হয়ে যেতে পারে একটি কঠোর সমালোচনা বা কটুবাক্যের সামনে। হাজারো সাহায্য করেও কারো মন নাও পেতে পারেন কোনো একদিন তার বিপদের/সমস্যার কারণ হওয়ার জন্যে।

আমরা আমাদের নিজেদের জীবন নিয়েও এরকম নেতিবাচক চিন্তা করি। নেতিবাচক কল্পনা করি। আপনার সফল হবার যথেষ্ট কারণ আপনার হাতে থাকলেও আপনি হয়তো সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে পারেন এই ভেবে যে, “যদি ব্যর্থ হই!”, “যদি এই পরীক্ষায় পাশ করতে না পারি!”, “যদি চাকুরীটা হাতছাড়া হয়ে যায়!”…

এই ‘যদি’ শব্দ দিয়ে অন্তহীন নেতিবাচক চিন্তায় আমরা প্রায় সময় ভাসমান থাকি, আমরা আমাদের কল্পনায় বারবার মরে যাই। কারণ আমাদের বাস্তবতা সীমিত, কল্পনা সীমাহীন। ফলে বাস্তবতায় ‘যদি’ একবার ব্যর্থও হোন তাহলে ঐ ঘটনা ঘটে একবারের জন্যই। কিন্তু ‘যদি’ শব্দ দিয়ে কল্পনায় ব্যর্থ হতে পারেন অন্তহীন। ফলে আমরা, মানুষ, কল্পনায় বেশি ভোগান্তিতে থাকি বাস্তবতার চেয়ে।

বিখ্যাত স্টোয়িক দার্শনিক সেনেকা (Seneca) বলেছিলেন, “We suffer more often in imagination than in reality.”

প্রশ্ন হলো কেন এমন হয়?

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা কেউ ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারি না। স্ক্রিনে আপনি সরাসরি ক্রিকেট খেলায় দেখতে পাবেন একধরনের অনুমান দেখাচ্ছে যে, “বিজয়ী হবে কোন দল?”

A দল = ৬০% জেতার সম্ভাবনা
B দল = ৪০% জেতার সম্ভাবনা

কিন্তু এখানে প্রতিটি দলের অতীত পরিসংখ্যান কাজ করে। অতীত পারফর্মেন্সের পরিসংখ্যান কাজ করে। কিন্তু এই ধরণের প্রেডিকশন প্রায় প্রায় ভুল হয়। ৪০% সম্ভাবনা নিয়েও জিতে যায় বারবার ব্যর্থ হওয়া দলটি। আমাদের মস্তিষ্কও আমাদের আগামীদিনের সফলতা ও ব্যর্থতার হিসেব করে অতীত অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান দিয়ে। যেখানে সে বারবার ব্যর্থ হয়েছে সেখানে সে সফলতার ছবি আমাদের দেখাতে চায় না।

এখানে মস্তিষ্কের ‘Amygdala’ ও ‘Threat Detection’ কাজ করে। মস্তিষ্কের ‘Amygdala’ অংশটি বিপদ শনাক্ত করে এবং ‘Threat Detection’ এর মাধ্যমে অতীত পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখে একটি ভবিষ্যতের স্ব-রুপ। কিন্তু অতীতে ভালো রেকর্ড বা পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চিত্রটি একটি নেতিবাচক চিত্রে রুপান্তরিত হয়। মানে হলো, বিপদ শনাক্তকরণ ও সতর্ক করা হয় সম্ভাব্য ব্যর্থতার জন্য।

কিন্তু বারবার নেতিবাচক ভবিষ্যতের স্ব-রুপ তৈরি করে আরো অনেককিছু… এই বিষয়টির নাম হলো, ‘বিবর্তনের মনোবিজ্ঞান (Evolutionary Psychology)’। আমাদের DNA -তে এই ধরণের নেতিবাচক বিষয় লুকিয়ে থাকে। অতীতে যারা বিপদ থেকে বেশি সাবধান থাকতেন ধরা হয় তারাই দীর্ঘ সময় টিকে ছিলেন বা বেঁচে গেছিলেন। প্রাচীন যুগে মানুষকে প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণী, খাদ্য সংকট, আবহাওয়া, শত্রু আক্রমণ ইত্যাদি মোকাবিলা করতে হতো। যারা বিপদের সম্ভাবনা আগে চিন্তা করত, তারা সতর্ক থাকত, ঝুঁকি এড়াতে পারত, পরিকল্পনা করতে পারত। ফলে তারা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি পেত। এই প্রবণতা জেনেটিক্যালি পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।

National Institute of Mental Health (NIMH) ও Harvard Medical School-এর গবেষণায় দেখা গেছে: “Genetic predisposition plays a significant role in anxiety and threat sensitivity.” এছাড়াও নোবেল বিজেতা Daniel Kahneman বলেন: “Our brains are not built for happiness, but for survival.”

এরপর যে বিষয়টি করতে পারে সেটা হলো, ‘নেতিবাচক পক্ষপাত (Negativity Bias)’। সাধারণত আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নেতিবাচক চিত্র কল্পনা করি। সময় সময় এই বিষয়টি ‘Catastrophizing’ পর্যায়ে চলে যায়। উদাহরণস্বরূপ: “যদি আমি এই পরীক্ষায় পাশ করতে না পারি তাহলে আমার বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নাই।” একারণেই দেখবেন সাধারণ একটি পরীক্ষা এসএসসি (SSC) -তে ব্যর্থ হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এসএসসি’র মত পরীক্ষায় একবার ব্যর্থ হলেই জীবনের গল্প বাস্তবেও শেষ হয়ে যায় না। কারণ এই ধরণের পরীক্ষা একেবারেই প্রাথমিক একটি ধাপ নিজেকে প্রমাণ করবার।

এরপর আসে ‘Confirmation Bias’। মানে হলো, আমরা যখন নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করি তখন ঐ চিন্তাকে সমর্থন করে এমন বাস্তব উদাহরণের মধ্যে একটি প্যাটার্ন খুঁজে বেড়াই। একবার মিলে গেলেই, আমরা ভাবতে থাকি আমার এই নেতিবাচক চিন্তার বাস্তব একটি প্রমাণও রয়েছে। এরপর ‘Availability Heuristic’ অনুযায়ী, “একজন মানুষ চাকুরী হারিয়ে বা ব্যবসায় ক্ষতি হবার কারণে আত্মহত্যা করেছেন সুতরাং আমার সাথে এমন হলে আমিও এরকম বিপদে পড়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারি।”

এখান থেকে ভবিষ্যৎ ঘিরে আমাদের মধ্যে প্রচন্ড ভয় কাজ করা শুরু করতে পারে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের প্রত্যেকের গল্প আলাদা আলাদা। একজন মানুষ চাকুরী হারিয়ে বা ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় আত্মহত্যা করলেও সেটা একান্তই তার নিজের গল্প। এছাড়াও আমরা শতভাগ নিশ্চিত হতে পারি না কারো আত্মহত্যার বিষয়ে। হতে পারে ইতিমধ্যেই তিনি অন্য কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন এবং চাকুরী বা ব্যবসা না থাকায় মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন। এবং সাপোর্ট করবারও কেউ ছিলো না। সুতরাং ঐ ব্যক্তির পুরো গল্প আপনার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

Daniel Kahneman (Nobel Laureate in Economics) তার বই Thinking, Fast and Slow-এ বলেন: “Cognitive biases systematically distort our judgment and decision-making.” এ বিষয়ে স্টোয়িক দার্শনিকরা বলেন, ভয় ও চিন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই সাধারণত এমন বিষয় নিয়ে হয়। ‘Cognitive Bias’ আমাদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দেয়। আবার বৌদ্ধ দর্শনে বলা হয়, অজ্ঞতা ও আসক্তি Bias তৈরি করে, যা ভবিষ্যতের প্রতি অতিরিক্ত ভয় সৃষ্টি করে।

আবার আমাদের মধ্যে ভবিষ্যতের ফলাফল নিয়ে একটি অনুমান তৈরি থাকে। যেহেতু আমি ভালো পরীক্ষা দিয়েছি সেহেতু আমার ফলাফল সর্বোচ্চ ভালো হবে। কিন্তু যখন আমাদের মনে অনুমিত ‘Efforts = Result’ না হয় তখন আমরা ভেঙ্গে পড়তে পারি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ও শঙ্কা কাজ করতে পারে। কারণ সবসময় Efforts - ই শেষ কথা নয়। ভাগ্য কাজ করে। সিস্টেমের দূর্বলতাও প্রভাব ফেলতে পারে। যাকগে, এটাকে বলা হয়, ‘Attachment to Outcome’।

সাম্প্রতিক সময়ে আমি ও আমার বন্ধুর কিছু কথোপকথনে লক্ষ্য করেছি, আমরা বারবার ভবিষ্যৎ ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ করছি। ভবিষ্যৎ আর্থিক সংকট নিয়ে আলাপ করছি। কারণ ব্যবসা বা চাকুরী, যা-ই করি, সেখানে এসব অবশ্যই থাকে। কিন্তু আমরা একেবারেই ভালো কিছু চিন্তা করতে পারছিলাম না। একসময় আমার মনে হলো, পৃথিবীর যত সমস্যা সব আমাদের সাথেই ঘটবে কেন? মানে, ভালো কিছুও তো হতে পারে! আবার আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ও শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু তারমানে এই নয় যে, এই বিষয়টি চিরস্থায়ী হয়ে যায়। পৃথিবীতে কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়, ব্যর্থতাও নয়, আর্থিক সংকটও নয়।

আমরা কল্পনায় সেদিন ভবিষ্যৎ নিয়ে এত ভয় পেয়েছি যে বাস্তবে কিছু শুরু করতেই ভয় করে। ‘AI’ আসছে, সব শেষ করে দেবে। কিন্তু, কই! আমি তো আরো বেশি লিখতে পারছি। পূর্বের চেয়ে তুলনামূলক নির্ভুল লিখতে পারছি। প্রতিদিন হাজারো আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারছি।

সুতরাং চলুন, সবসময় না-হোক সময় সময় আমরা একটু সফলতা নিয়েও চিন্তা করি। যেমন: “যদি পাশ করি তো!”, “যদি চাকুরীটা হয়ে যায় তো!”, “যদি ব্যবসাটা দাঁড় করাতে পারি তো!”, “যদি সফল হই তো!”

শেষ করছি বিখ্যাত স্টোয়িক দার্শনিক মার্কাস অরেলিয়াসের একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে,

“Never let the future disturb you. You will meet it, if you have to, with the same weapons of reason which today arm you against the present.”
— Marcus Aurelius (Meditations)

ছবি: Copilot Enterprise (GPT - 5)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:১৪

আরোগ্য বলেছেন: সুন্দর পোস্ট তবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা সহজ নয় সবক্ষেত্রে। আর গভীর আঘাতে মানুষ অনেক সময় নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:০৬

কামাল১৮ বলেছেন: বাস্তবের শেষ আছে কল্পনার শেষ নাই।শত রূপে আসে মনের আয়নায়।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মুখের কথায় চিড়া ভিজে না।
বাস্তব জীবন অনেক কঠিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.