নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন আমরা কল্পনায় বাস্তবের চেয়ে বেশি কষ্ট পাই?

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১৯



সালাম/আদাব পাওয়া সম্মানের। অন্যদিকে সালাম/আদাবের পরিবর্তে নিজ সম্পর্কে কটু কথা শোনা কিছুটা হলেও অসম্মানের। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক যত আগ্রহের সাথে নিজ সম্পর্কে ‘কটু’ কথা মনে রাখে ঠিক তত পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে ‘সালাম/আদাব’ পাওয়ার হিসেব মনে রাখে না। আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় নেতিবাচক ঘটনা বেশি মনে রাখতে চায়। সমালোচনা বেশি মনে রাখে প্রশংসার চেয়ে।

একজন মানুষ আপনাকে কতবার সাহায্য করেছে এই হিসেব আপনি জানেন। কিন্তু ঐ একই মানুষ কতবার আপনার বিপদের বা সমস্যার কারণ হয়েছে সেই হিসেব থাকে আপনার অন্তরে। হাজারো সালামের হিসাব ম্লান হয়ে যেতে পারে একটি কঠোর সমালোচনা বা কটুবাক্যের সামনে। হাজারো সাহায্য করেও কারো মন নাও পেতে পারেন কোনো একদিন তার বিপদের/সমস্যার কারণ হওয়ার জন্যে।

আমরা আমাদের নিজেদের জীবন নিয়েও এরকম নেতিবাচক চিন্তা করি। নেতিবাচক কল্পনা করি। আপনার সফল হবার যথেষ্ট কারণ আপনার হাতে থাকলেও আপনি হয়তো সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে পারেন এই ভেবে যে, “যদি ব্যর্থ হই!”, “যদি এই পরীক্ষায় পাশ করতে না পারি!”, “যদি চাকুরীটা হাতছাড়া হয়ে যায়!”…

এই ‘যদি’ শব্দ দিয়ে অন্তহীন নেতিবাচক চিন্তায় আমরা প্রায় সময় ভাসমান থাকি, আমরা আমাদের কল্পনায় বারবার মরে যাই। কারণ আমাদের বাস্তবতা সীমিত, কল্পনা সীমাহীন। ফলে বাস্তবতায় ‘যদি’ একবার ব্যর্থও হোন তাহলে ঐ ঘটনা ঘটে একবারের জন্যই। কিন্তু ‘যদি’ শব্দ দিয়ে কল্পনায় ব্যর্থ হতে পারেন অন্তহীন। ফলে আমরা, মানুষ, কল্পনায় বেশি ভোগান্তিতে থাকি বাস্তবতার চেয়ে।

বিখ্যাত স্টোয়িক দার্শনিক সেনেকা (Seneca) বলেছিলেন, “We suffer more often in imagination than in reality.”

প্রশ্ন হলো কেন এমন হয়?

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা কেউ ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারি না। স্ক্রিনে আপনি সরাসরি ক্রিকেট খেলায় দেখতে পাবেন একধরনের অনুমান দেখাচ্ছে যে, “বিজয়ী হবে কোন দল?”

A দল = ৬০% জেতার সম্ভাবনা
B দল = ৪০% জেতার সম্ভাবনা

কিন্তু এখানে প্রতিটি দলের অতীত পরিসংখ্যান কাজ করে। অতীত পারফর্মেন্সের পরিসংখ্যান কাজ করে। কিন্তু এই ধরণের প্রেডিকশন প্রায় প্রায় ভুল হয়। ৪০% সম্ভাবনা নিয়েও জিতে যায় বারবার ব্যর্থ হওয়া দলটি। আমাদের মস্তিষ্কও আমাদের আগামীদিনের সফলতা ও ব্যর্থতার হিসেব করে অতীত অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান দিয়ে। যেখানে সে বারবার ব্যর্থ হয়েছে সেখানে সে সফলতার ছবি আমাদের দেখাতে চায় না।

এখানে মস্তিষ্কের ‘Amygdala’ ও ‘Threat Detection’ কাজ করে। মস্তিষ্কের ‘Amygdala’ অংশটি বিপদ শনাক্ত করে এবং ‘Threat Detection’ এর মাধ্যমে অতীত পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখে একটি ভবিষ্যতের স্ব-রুপ। কিন্তু অতীতে ভালো রেকর্ড বা পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চিত্রটি একটি নেতিবাচক চিত্রে রুপান্তরিত হয়। মানে হলো, বিপদ শনাক্তকরণ ও সতর্ক করা হয় সম্ভাব্য ব্যর্থতার জন্য।

কিন্তু বারবার নেতিবাচক ভবিষ্যতের স্ব-রুপ তৈরি করে আরো অনেককিছু… এই বিষয়টির নাম হলো, ‘বিবর্তনের মনোবিজ্ঞান (Evolutionary Psychology)’। আমাদের DNA -তে এই ধরণের নেতিবাচক বিষয় লুকিয়ে থাকে। অতীতে যারা বিপদ থেকে বেশি সাবধান থাকতেন ধরা হয় তারাই দীর্ঘ সময় টিকে ছিলেন বা বেঁচে গেছিলেন। প্রাচীন যুগে মানুষকে প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণী, খাদ্য সংকট, আবহাওয়া, শত্রু আক্রমণ ইত্যাদি মোকাবিলা করতে হতো। যারা বিপদের সম্ভাবনা আগে চিন্তা করত, তারা সতর্ক থাকত, ঝুঁকি এড়াতে পারত, পরিকল্পনা করতে পারত। ফলে তারা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি পেত। এই প্রবণতা জেনেটিক্যালি পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।

National Institute of Mental Health (NIMH) ও Harvard Medical School-এর গবেষণায় দেখা গেছে: “Genetic predisposition plays a significant role in anxiety and threat sensitivity.” এছাড়াও নোবেল বিজেতা Daniel Kahneman বলেন: “Our brains are not built for happiness, but for survival.”

এরপর যে বিষয়টি করতে পারে সেটা হলো, ‘নেতিবাচক পক্ষপাত (Negativity Bias)’। সাধারণত আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নেতিবাচক চিত্র কল্পনা করি। সময় সময় এই বিষয়টি ‘Catastrophizing’ পর্যায়ে চলে যায়। উদাহরণস্বরূপ: “যদি আমি এই পরীক্ষায় পাশ করতে না পারি তাহলে আমার বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নাই।” একারণেই দেখবেন সাধারণ একটি পরীক্ষা এসএসসি (SSC) -তে ব্যর্থ হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এসএসসি’র মত পরীক্ষায় একবার ব্যর্থ হলেই জীবনের গল্প বাস্তবেও শেষ হয়ে যায় না। কারণ এই ধরণের পরীক্ষা একেবারেই প্রাথমিক একটি ধাপ নিজেকে প্রমাণ করবার।

এরপর আসে ‘Confirmation Bias’। মানে হলো, আমরা যখন নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করি তখন ঐ চিন্তাকে সমর্থন করে এমন বাস্তব উদাহরণের মধ্যে একটি প্যাটার্ন খুঁজে বেড়াই। একবার মিলে গেলেই, আমরা ভাবতে থাকি আমার এই নেতিবাচক চিন্তার বাস্তব একটি প্রমাণও রয়েছে। এরপর ‘Availability Heuristic’ অনুযায়ী, “একজন মানুষ চাকুরী হারিয়ে বা ব্যবসায় ক্ষতি হবার কারণে আত্মহত্যা করেছেন সুতরাং আমার সাথে এমন হলে আমিও এরকম বিপদে পড়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারি।”

এখান থেকে ভবিষ্যৎ ঘিরে আমাদের মধ্যে প্রচন্ড ভয় কাজ করা শুরু করতে পারে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের প্রত্যেকের গল্প আলাদা আলাদা। একজন মানুষ চাকুরী হারিয়ে বা ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় আত্মহত্যা করলেও সেটা একান্তই তার নিজের গল্প। এছাড়াও আমরা শতভাগ নিশ্চিত হতে পারি না কারো আত্মহত্যার বিষয়ে। হতে পারে ইতিমধ্যেই তিনি অন্য কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন এবং চাকুরী বা ব্যবসা না থাকায় মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন। এবং সাপোর্ট করবারও কেউ ছিলো না। সুতরাং ঐ ব্যক্তির পুরো গল্প আপনার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

Daniel Kahneman (Nobel Laureate in Economics) তার বই Thinking, Fast and Slow-এ বলেন: “Cognitive biases systematically distort our judgment and decision-making.” এ বিষয়ে স্টোয়িক দার্শনিকরা বলেন, ভয় ও চিন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই সাধারণত এমন বিষয় নিয়ে হয়। ‘Cognitive Bias’ আমাদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দেয়। আবার বৌদ্ধ দর্শনে বলা হয়, অজ্ঞতা ও আসক্তি Bias তৈরি করে, যা ভবিষ্যতের প্রতি অতিরিক্ত ভয় সৃষ্টি করে।

আবার আমাদের মধ্যে ভবিষ্যতের ফলাফল নিয়ে একটি অনুমান তৈরি থাকে। যেহেতু আমি ভালো পরীক্ষা দিয়েছি সেহেতু আমার ফলাফল সর্বোচ্চ ভালো হবে। কিন্তু যখন আমাদের মনে অনুমিত ‘Efforts = Result’ না হয় তখন আমরা ভেঙ্গে পড়তে পারি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ও শঙ্কা কাজ করতে পারে। কারণ সবসময় Efforts - ই শেষ কথা নয়। ভাগ্য কাজ করে। সিস্টেমের দূর্বলতাও প্রভাব ফেলতে পারে। যাকগে, এটাকে বলা হয়, ‘Attachment to Outcome’।

সাম্প্রতিক সময়ে আমি ও আমার বন্ধুর কিছু কথোপকথনে লক্ষ্য করেছি, আমরা বারবার ভবিষ্যৎ ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ করছি। ভবিষ্যৎ আর্থিক সংকট নিয়ে আলাপ করছি। কারণ ব্যবসা বা চাকুরী, যা-ই করি, সেখানে এসব অবশ্যই থাকে। কিন্তু আমরা একেবারেই ভালো কিছু চিন্তা করতে পারছিলাম না। একসময় আমার মনে হলো, পৃথিবীর যত সমস্যা সব আমাদের সাথেই ঘটবে কেন? মানে, ভালো কিছুও তো হতে পারে! আবার আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ও শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু তারমানে এই নয় যে, এই বিষয়টি চিরস্থায়ী হয়ে যায়। পৃথিবীতে কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়, ব্যর্থতাও নয়, আর্থিক সংকটও নয়।

আমরা কল্পনায় সেদিন ভবিষ্যৎ নিয়ে এত ভয় পেয়েছি যে বাস্তবে কিছু শুরু করতেই ভয় করে। ‘AI’ আসছে, সব শেষ করে দেবে। কিন্তু, কই! আমি তো আরো বেশি লিখতে পারছি। পূর্বের চেয়ে তুলনামূলক নির্ভুল লিখতে পারছি। প্রতিদিন হাজারো আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারছি।

সুতরাং চলুন, সবসময় না-হোক সময় সময় আমরা একটু সফলতা নিয়েও চিন্তা করি। যেমন: “যদি পাশ করি তো!”, “যদি চাকুরীটা হয়ে যায় তো!”, “যদি ব্যবসাটা দাঁড় করাতে পারি তো!”, “যদি সফল হই তো!”

শেষ করছি বিখ্যাত স্টোয়িক দার্শনিক মার্কাস অরেলিয়াসের একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে,

“Never let the future disturb you. You will meet it, if you have to, with the same weapons of reason which today arm you against the present.”
— Marcus Aurelius (Meditations)

ছবি: Copilot Enterprise (GPT - 5)

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:১৪

আরোগ্য বলেছেন: সুন্দর পোস্ট তবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা সহজ নয় সবক্ষেত্রে। আর গভীর আঘাতে মানুষ অনেক সময় নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৭

মি. বিকেল বলেছেন: কথাটা একেবারে সতি। বাস্তব জীবনে এসব ভাবনা কাগজে লেখা যায়, কিন্তু শরীরে যখন আঘাত তখন শব্দগুলো প্রায় শুকিয়ে যায়। আমিও জানি, কেউ যখন সত্যিকারের অন্ধকারে পড়ে থাকে তখন 'চিন্তাবদল' বলতে কেবল একটা বাতাসের নাম মনে হয়। তবুও এটুকু বলি, ব্লগটা কাউকে তৎক্ষণাৎ সুস্থ করে তুলবে এমন দাবি আমার নেই; শুধু এইটুকু আশা রাখি, দুঃখের ভেতরেও একটা মৃদু ধরনের স্মৃতি থাকুক যে একদিন কেউ একজন এভাবে ভেবেছিল, ভালো কিছুর সম্ভাবনা যে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। সেটাই হয়তো পরে কাজে লাগে, যখন মানুষ নিজে থেকেই আবার মুখ তুলে দেখতে চায়।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:০৬

কামাল১৮ বলেছেন: বাস্তবের শেষ আছে কল্পনার শেষ নাই।শত রূপে আসে মনের আয়নায়।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৯

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার দুই লাইন-ই পুরো জিনিসটা ভেঙে দিলে। বাস্তব একদিন শেষ হয়, কিন্তু যে আয়নার ভেতরে দাঁড়িয়ে আমরা দিনের পর দিন নিজেকে দেখি, সে আয়নার কোনা ধরে কেউ বলে উঠতে পারে না যে এখানে শেষ। আর এই আয়নায় প্রতিটি ভয়, প্রতিটি আশা শত রূপ নিয়ে নাচে, যতক্ষণ না আমরা নিজেরাই তার পর্দা টেনে দিই।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মুখের কথায় চিড়া ভিজে না।
বাস্তব জীবন অনেক কঠিন।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫১

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কথাটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই। মুখের কথা আর বাস্তবের মাটি এক জায়গায় দাঁড়ায় না; একটা হাওয়া, আরেকটা পাথর। বাস্তব জীবন যখন কঠিন হয়ে ওঠে, তখন কেবল কথা শুনিয়ে কিছু হয় না, বরং হাতে কাজ, পায়ে পথ, বুকে এক টুকরো সাহস লাগে। তাই আমি চাই না ব্লগটা শুধু শব্দের গালভরা বকেয়া থাকুক; চাই সেটা যে যেখানে আছেন, সেখান থেকে একটা ছোট পদক্ষেপের স্পর্শ দিতে পারে।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৬

বিজন রয় বলেছেন: কল্পনায় বাস্তবের চেয়ে বেশি কেহ কষ্ট পায় না। যে একথা বলে সে পাগল।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫২

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কথায় একধরনের কড়া সত্য আছে। বাস্তবে পা দেওয়া আঘাত তো একবারই লাগে, কল্পনায় সেই আঘাত বারবার নতুন করে খোঁচে। তবে এই যে কষ্ট কল্পনায় বেশি হয়, সেটা বলার পরেই যদি কাউকে পাগল বলে দেওয়া হয়, তাহলে সেই কষ্টের জায়গাটা আরও একা হয়ে যায়। মনের ভেতর যে ঝড় ওঠে, সেটা বাইরে না দেখলেও কিন্তু ভেতরে অনেককে নিঃশব্দে ভাসিয়ে দেয়। হয়তো সেই মানুষটা পাগল নয়, শুধু আপনার চোখে ধরা পড়েনি তার বাস্তবতার গভীরতা।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:০৫

লোকমানুষ বলেছেন: উচিত কাজগুলোই আমরা করতে ব্যর্থ হই। যেমন, বর্তমানের যুক্তি দিয়েই ভবিষ্যৎ মোকাবেলা করা উচিত। কিন্তু মনের ভেতর দিনে দিনে গড়ে উঠা ভয়ই আমাদের কাবু করে ফেলে, এবং এর পেছনে যথেষ্ট শক্ত কারণও থাকে। তারপরও আমাদের সম্ভাব্য সাফল্য নিয়েও ভাবা দরকার। সম্ভাবনার দুয়ার খুলেই এগিয়ে যাওয়ার ভাবনাটা জোড় করে আনতে হবে।

শেষ পর্যন্ত, জীবনটা শুধু 'যদি'র গল্প নয়, বরং 'হয়তো'র আশা নিয়েও।

আপনার পোস্টের বিষয়বস্তু দারুণ রকমের ইন্টারেস্টিং! ভাবনার খোরাক যুগিয়ে দেয়।
শুভকামনা জানবেন।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৫

মি. বিকেল বলেছেন: আপনি যে কথাটা তুলেছেন তা কাঁধে চাপা একটা পাথরের মতো। উচিত কাজগুলো আমরা ঠিকই চিনতে পারি, কিন্তু ভয় যখন পা চেপে ধরে তখন সেই পাথর আর নড়ে না। আপনার কথায় একটা সমাধানের দিক আছে, আমি সেটাকে ধরতে চাই। প্রতিদিন একবার করে মনে মনে বললে কেমন হয়, আমি আজ ঠিক একটা ছোট পদক্ষেপ নেব, ভবিষ্যত নয়, আজকের মাটিতে পা রেখে। এই একটা অভ্যেসই হয়তো ভয়কে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল, আপনার পাশে আলো থাকুক যাতে পেছনের অন্ধকার ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে না যায়।

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৬

মি. বিকেল বলেছেন: আপনি যে আবার ফিরে এলেন, সেটাই বলে দেয় পোস্টটা আপনার মনে ঠাঁই নিয়েছে। এখানে কে কি বলেছে তার চেয়ে বড় কথা, আপনি নিজে কি অনুভব করছেন। সেই অনুভূতিটুকু যদি আপনার ভেতর জমে থাকে, তাহলে পোস্টটা সার্থক।

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৯

মি. বিকেল বলেছেন: আরোগ্য, আপনি যে বাস্তবের কঠিনতা তুলে ধরেছেন তা আমি অস্বীকার করি না। আসলে ঠিক কাজগুলোর দিকে যেতে গেলে ভেতরের ভয় প্রথমেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই ভয়কে ধরে রাখার কৌশল সহজ নয়, তবে সম্ভব। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের সঙ্গে যুক্তি করে এগোলে দেখবেন পাথরটা কিছুটা সরে যায়।

কামাল১৮, আপনার বাক্য দুটো যেন গভীর অন্ধকারে একটা প্রদীপের মতো। বাস্তবের শেষ আছে বলেই আমরা একদিন সেটা অতিক্রম করতে পারি, আর কল্পনার শেষ নেই বলেই আমরা সেখানে বারবার নিজেকে নতুন করে দেখি। এই দেখাটুকুই মুক্তির শুরু।

রাজীব নুর, আপনি বারবার ফিরে আসছেন, এটাই প্রমাণ করে কথাগুলো আপনার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। মুখের কথায় চিড়া না ভিজলেও নিজের ভেতরের কথাটা যদি একবার স্পষ্ট হয়, তাহলে বাইরের কোনো কথাই আর তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না।

লোকমানুষ, আপনি যে উচিত কাজগুলো না করার কারণ খুঁজেছেন তা আমাদের সবার অভিজ্ঞতা। ভয়ের পেছনে যুক্তি থাকতেই পারে, কিন্তু সেই যুক্তিকে একটু পাশে রেখে যদি আমরা 'হয়তো'র দিকে এক পা এগোতে পারি, তাহলে জীবনটা শুধু যদির গল্প নয়, হয়তোর সম্ভাবনাও হয়ে ওঠে।

বিজন রয়, আপনি বলেছেন কেউ কল্পনায় বেশি কষ্ট পায় না সে পাগল। আমি বলব, সে হয়তো সবচেয়ে সতর্ক মানুষ, কারণ সে বিপদকে আগে থেকেই অনুভব করে। পাগল নয়, সে শুধু ভয়কে বেশি করে আলিঙ্গন করেছে। সেই আলিঙ্গন থেকে বেরিয়ে আসার পথ যদি আমরা একে অপরকে দেখিয়ে দিতে পারি, তাহলে কল্পনার কষ্টও একদিন হালকা হবে।

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের কথাগুলো আমার ভেতরও নতুন করে ভাবনার বীজ বুনেছে।

৮| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪০

কথামৃত বলেছেন: মানুষের কল্পনায় বাস্তবের চেয়ে বেশি কষ্ট পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণ রয়েছে। কিছু মূল কারণ বিশ্লেষণ করিঃ

১. অনিশ্চয়তা ও নিয়ন্ত্রণের অভাব
কল্পনায় আমরা সম্ভাব্য নেতিবাচক ঘটনাগুলোকে অতিমাত্রায় বিশদভাবে ভাবি, কিন্তু বাস্তবে ঘটনাগুলো প্রায়শই আমাদের মনে করা মতো ততটা খারাপ হয় না। কল্পনায় আমরা অনিশ্চয়তা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার মুখোমুখি হই, যা উদ্বেগ বাড়ায়। বাস্তবে ঘটনা ঘটলে আমরা সেটি মোকাবিলা করার উপায় খুঁজে পাই, কিন্তু কল্পনায় আমরা শুধুই আতঙ্কিত হই।

২. অতিরিক্ত চিন্তার চক্র (Rumination)
মানুষের মস্তিষ্ক নেতিবাচক ঘটনাগুলো বারবার চিন্তা করতে থাকে, যাকে রুমিনেশন বলে। এই চক্রে আটকে গেলে আমরা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগ ও কষ্ট অনুভব করি। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সম্পর্কে সমস্যা হলে আমরা ভাবি, "যদি এটা ভেঙে যায়, তাহলে কী হবে?"—এভাবে কল্পনায় তৈরি দৃশ্যগুলো বাস্তবের চেয়ে বেশি ভয়ানক মনে হয়।

৩. বাস্তবের সীমাবদ্ধতা বনাম কল্পনার অসীমতা
বাস্তব জীবনে সমস্যার সমাধান বা পরিণতি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে, কিন্তু কল্পনায় আমরা অসীম নেতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করি। যেমন, চাকরি চলে গেলে বাস্তবে হয়তো নতুন চাকরি খোঁজার বিকল্প থাকে, কিন্তু কল্পনায় আমরা ভাবি, "আমি হয়তো আর কখনো কাজ পাব না, সর্বস্বান্ত হয়ে যাব!"

৪. সাইকোলজিক্যাল ডিসট্যান্সিং-এর অভাব
বাস্তব ঘটনাগুলো ঘটার সময় আমরা মানসিকভাবে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারি (psychological distancing), কিন্তু কল্পনায় আমরা সম্পূর্ণ আবেগের মধ্যে ডুবে যাই। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কল্পনা করে (যেমন, "সে কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবে?";), তখন উদ্বেগ কমে।

৫. মস্তিষ্কের নেগেটিভিটি বায়াস
মানুষের মস্তিষ্ক নেতিবাচক তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়—এটি একটি বিবর্তনীয় অভিযোজন (সাবধানতা হিসেবে)। তাই আমরা সম্ভাব্য বিপদ বা কষ্টকে বাস্তবের চেয়ে বড় করে দেখি। এই নেগেটিভিটি বায়াস কল্পনাকে আরও ভয়ানক করে তোলে।

৬. অভিজ্ঞতার অভাব
অনেক সময় আমরা যা ভয় পাই, তা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় কল্পনাই আমাদের একমাত্র নির্দেশিকা হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কখনো বক্তৃতা না দিয়ে থাকে, তাহলে সে মঞ্চে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার কল্পনায় এতটাই আতঙ্কিত হতে পারে যে বাস্তবে ঘটলে সেটি ততটা খারাপ নাও হতে পারে।

কীভাবে এই প্রবণতা কমানো যায়?
- মাইন্ডফুলনেস ও বর্তমানে থাকাঃ কল্পনার নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করুন, কিন্তু সেগুলোকে সত্যি বলে গ্রহণ করবেন না।
- বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা বিশ্লেষণঃ"সবচেয়ে খারাপটা কি সত্যিই হতে পারে? তার সমাধান কী?"—এভাবে যুক্তি প্রয়োগ করুন।
- এক্সপোজার থেরাপিঃযদি কোনো নির্দিষ্ট ভয় থাকে (যেমন সামাজিক উদ্বেগ), ধীরে ধীরে বাস্তবে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অভ্যস্ত হোন।

কল্পনা আমাদের রক্ষাও করতে পারে (যেমন বিপদ এড়াতে), কিন্তু যখন তা অতিরিক্ত হয়, তখনই তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবতা প্রায়শই আমাদের কল্পনার চেয়ে কম নিষ্ঠুর।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৪

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণ খুব গভীর ও বাস্তব। আমি শুধু একটি বা দুটি জায়গায় আলোকপাত করতে চাই যেন আমরা আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি কেন কল্পনায় কষ্ট বেশি।

প্রথমত, অনিশ্চয়তা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে আমরা কল্পনায় যে আতঙ্ক তৈরি করি সেটি বাস্তবে ঘটলে প্রায়শই অনুভব করি যে পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ ছিল না। কারণ বাস্তবে আমরা কাজ করতে থাকি, সমাধান খুঁজতে থাকি, আর সেই ক্রিয়াশীলতাই কষ্টকে কমিয়ে দেয়। কিন্তু কল্পনায় আমরা নিষ্ক্রিয় থাকি, তাই কষ্ট বাড়ে।

দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত চিন্তার চক্রে আটকে গেলে আমরা একই নেতিবাচক দৃশ্য বারবার মনে করি। এই পুনরাবৃত্তি মস্তিষ্ককে বিশ্বাস করিয়ে দেয় যে সেটাই সত্যি। ফলে ভাবনাটি আরও শক্তিশালী হয় এবং আবেগীয় প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়।

তৃতীয়ত, সাইকোলজিক্যাল ডিসট্যান্সিং যখন অনুপস্থিত থাকে তখন আমরা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে কল্পিত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিই। গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে উদ্বেগ কমে। কারণ তখন আমরা আবেগ থেকে কিছুটা দূরে থাকি এবং যুক্তি প্রয়োগ করতে পারি।

অবশেষে, অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে কল্পনা হয়ে ওঠে একমাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র। এই তথ্যসূত্র প্রায়শই অতিরঞ্জিত হয় কারণ এতে বাস্তবতার ভারসাম্য নেই। তাই ধীরে ধীরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করলে কল্পনার কষ্ট অনেকটাই কমে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.