![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত্যুশয্যায় মানুষের মধ্যে ‘আফসোস’ বেশি লক্ষ্য করতে পারেন। জীবন নিয়ে বিরাট স্বপ্ন কমবেশি আমরা সকলেই দেখে থাকি। কিন্তু জীবন হলো কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র। সময় ফুরায়, স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। আর এই অপূর্ণতা থেকে আমাদের মধ্যে জন্মে নেয় এক ধরণের ‘আফসোস (Regret)’।
জীবনের শেষদিকে এসে নসিহত/ওছিয়তনামা করে যাবার কারণ সম্ভবত নিজের অপূর্ণ স্বপ্নের পূর্ণতা পাবার সর্বশেষ চেষ্টা। অনেক মানুষ সন্তান শুধু এজন্যই জন্ম দেন, কারণ তিনি বা তারা মনে করেন তার বা তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানদের মাধ্যমে পূর্ণ হতে পারে।
আমরা যারা বেঁচে আছি, সাধারণত আমরা মনে করি, মৃত্যু আমার পাশের গ্রামে এমনকি পাশের বাড়িতে ঘটতে পারে কিন্তু আমার সাথে ঘটবে না। আমার হাতে অনেক সময় আছে। আমার এখনো মৃত্যুকে বরণ করে নেবার সময় হয় নাই। কিন্তু মৃত্যু ঠিকই আমাদের দরজায় একদিন কড়া নাড়বে, আমরা হঠাৎ একদিন টের পাবো, “আমার হাতে থাকা সময় শেষ…” সেদিন হয়তো একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের সকল অপারগতা ও অপূর্ণতা মনে করবো।
এই কথাগুলো লিখতেই মনে পড়লো, একসাথে ক্লাসে বসে পড়েছি কিন্তু কিছু পরিচিত মুখ আমার ও আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আমার সমবয়সী একাধিক মানুষ আর বেঁচে নেই। পরিচিত/অপরিচিত মানুষ চোখের সামনেই দূর্ঘটনায় মারা পড়ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, আমি আমার মৃত্যুর কথা ভাবছি না, আমি নিশ্চিন্ত আছি এবং আমার মনে হয়, আমার হাতে অনেক সময় আছে!
সত্যিই কি তাই?
না, জীবন অনিশ্চিত। আমিও যেকোনো সময় এই জীবন থেকে প্রস্থান নিতে পারি। আপনিও নিতে পারেন, ইন্তেকাল। আমার অবশ্য মৃত্যুতে সমস্যা নাই, কিন্তু মৃত্যুর আগে ‘আফসোস’ করাতে ভীষণ আপত্তি আছে। “আমি চাইলে পারতাম…” এমন দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মরতে ইচ্ছে করে না। বেঁচে থাকতে আমি আমার সর্বোচ্চ যা কিছু করতে পারতাম তা করেই মরতে চাই। যাতে মৃত্যুর পর এই ছোট্ট জীবন নিয়ে একফোঁটাও আফসোস করতে না হয়।
আমার এই কথাগুলো আমার কাছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনেকের কাছেই ঝরঝরে ও পরিষ্কার বলেই মনে হবার কথা। কিন্তু মুশকিল হলো, রিগ্রেট (আফসোস) ছাড়া একটা জীবন কীভাবে শেষ করা যায়? বা, কীভাবে একটি জীবন পরিচালনা করলে আমি মৃত্যুর পর আফসোস করবো না? আমি যখনই এই ধরণের প্রশ্ন নিজেকে করেছি তখনই এক ধরণের ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছি। চাই আমি জীবনে যাই করি, আমি আমার শেষদিনে আফসোস করতে যাচ্ছি! আর এটা আমি মোটেই মেনে নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে একটি বই লিখেছেন ‘Bronnie Ware’ নামে একজন নার্স। তিনি ৮ বছর ধরে মৃত্যুশয্যায় থাকা মানুষদের সাথে কথা বলে একটি বই লিখেছেন। বইটির নামও বেশ ইন্টারেস্টিং, ‘The Top Five Regrets of the Dying’। মানে মৃত্যুর আগে সবার মধ্যে কমন ৫টি আফসোস তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
১. নিজের জীবনে নিজের মত করে না বাঁচা।
২. কাজ কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া।
৩. নিজেত অনুভূতি প্রকাশ না করা।
৪. বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ না রাখা।
৫. নিজের সুখ নিজেই বিনষ্ট করা।
খুব ভালো একটা বই। নিশ্চয় একবার পড়ে দেখুন। কিন্তু আমি অবশ্য ভিন্ন ধারার একটি আউটলাইন খুঁজে পেয়েছি। অথবা, এই ধরণের জীবনের আউটলাইন ইতিমধ্যেই বিদ্যমান আমি শুধু সেটাকে বুঝার চেষ্টা করছি। আর সেই আউটলাইন হচ্ছে, “মৃত্যুর ছায়ায় বেঁচে থাকা”। শুরুটা হবে একটি তালিকা দিয়ে, “Before I die…”
এই বেঁচে থাকার পদ্ধতিকে ‘memento mori (লাতিন শব্দ)’ বলা হয়। আমি অবশ্য সরাসরি ওদিকেও যাচ্ছি না। আমি বলতে চাইছি, আপনি খাতা-কলম নিয়ে বসুন আর তারপর আপনার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় পূরণ করা সম্ভব এমন কাজের তালিকা তৈরি করুন। সেখানে সবকিছু অর্থবহ থাকবে বিষয়টি এমন নয়।
ধরুন, মৃত্যুর আগে আপনি কাউকে একবার গালি দিতে চান, তাও একটি পাবলিক প্লেসে! সমস্যা নাই, লিখে ফেলুন। কিন্তু অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “কেন?” যদি যুতসই উত্তর নিজের থেকে পান তবেই এগিয়ে যান এবং তাকে পাবলিক প্লেসে গালি দেন।
আপনার যদি মনে হয় কোনো এক বাটপার আপনাকে বিপদগ্রস্ত বা ঋণগ্রস্ত করে তুলেছে। আপনি চাইছেন তার বাড়িঘর ডাকাতি দিতে। ঠিকাছে, এগিয়ে যান। প্রশাসন একজন খুনীকে ধরতে পারে নাই বা ধরছে না, ধর্ষকের বিচার হচ্ছে না। আপনার মনে হচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এদের হত্যা করতে। ঠিকাছে, এদের সবাইকে এক এক করে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী খুন করুন।
কারণ আপনার নিজের মধ্যে ‘আফসোস’ থাকা যাবে না। কিন্তু প্রতিবার অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “কেন?”
আবেগের এই তীব্রতায় আপনি যে হিংসা, বিদ্বেষ, সহিংসতা ও প্রতিশোধ নেবেন সেটার মাধ্যমে ‘আফসোস’ কিন্তু আরো বাড়বে। আবার কিছু ট্রমার কোনো ঔষধ নাই, মনোবিজ্ঞান ঘেঁটেও ওসব পুরোপুরি নাই করে দেওয়া যায় না। সুতরাং আপনাকে কৌশলী হতে হবে। আবার অন্যদিকে মৃত্যুর পূর্বে আপনি কি কি করতে চান তার তালিকা যখন মন থেকেই লিখতে যাবেন তখন ‘দুঃখিত’ এবং ‘ধন্যবাদ’ জানানোর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
আপনি কারো জীবন জাহান্নামে পরিণত করতে গেলেও সময় খরচ হবে, আবার আপনি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতেও সময় খরচ হবে। আমি একটি বালেন্স তালিকার কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
আপনি কাউকে খুন করে প্রথমেই যদি জেলে চলে যান তবে তালিকার বাকি অংশের কি হবে?
আপনার হাতে তখন ধ্বংস ও সৃষ্টির দুটো অপশন-ই থাকে। আপনি দুটোই করুন। প্রতিশোধ নিতে হলে অন্তত আপনার বিবেকের আদালত ও রাষ্ট্রের আদলতের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রাখুন। আর গড়তে হলে বা সৃষ্টি করতে হলে পরিশ্রম করুন। এতে ‘আফসোস’ কমে আসবে। আর তালিকা তে প্রথমেই অতিরিক্ত বা অতি বড় লক্ষ্য সেট করা যাবে না। বিশেষ করে যদি সেসব অর্জন করতে বছর লেগে যায়। আপনি ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে বিরাট বিরাট সব স্বপ্নের মধ্যে একটা বালেন্স রাখতে পারেন। এতে কিছু না কিছু অবশ্যই অর্জিত হবে এবং ‘আফসোস’ কমতে শুরু করবে।
আমি কামনা করছি, আপনার এই তালিকা শুধু সৃষ্টির জন্য হোক। কারণ কাউকে ধ্বংস করতে গেলেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, আপনি যখন কাউকে ধ্বংস করবেন তখন তার মধ্যেও প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা গড়ে উঠতে পারে। ঠিক যেমন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ কখনোই পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় না। জনগণ চায়, তারা জিততে; এটা জেনেও যে, যুদ্ধে জেতা যায় না। ঠিক তেমন করে প্রতিশোধ ও প্রতিরোধ নিতে ও করতে গিয়ে জীবনের একটি বড় সময় নষ্ট হতে পারে।
আবার একটি তালিকা তৈরি করবার পর আপনি সেটাকে হাদিস মনে করবেন না। মন চাইলে তালিকা পরিমার্জন, পরিবর্তন ও সংশোধন করুন। এছাড়াও মনে রাখুন, বা তালিকার শেষের দিকে একটি ছোট্ট নোট রাখুন যে, “এই তালিকার কোনো অংশ অপূর্ণ রেখেই যদি আপনি মারা যান তবে নিজেকে দোষারোপ করবেন না।” খুব সম্ভবত আপনার জীবনের মেয়াদ ঐ পর্যন্তই ছিলো। এই উপায়ে আপনি আপনার জীবনের সর্বোচ্চ পরিমাণ ‘আফসোস’ থেকে বাঁচতে পারবেন।
আমি কিছু মানুষকে দেখেছি ওঁরা ঠিক যেন এভাবেই জীবনযাপন করছে। মন চাইলে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে, কারণে-অকারণে আড্ডা দিচ্ছে, খেলাধূলা করছে, সিনেমা/সিরিজ দেখছে। জীবনের প্রতিটা সুন্দর মুহুর্তের জন্য সময়, সুযোগ ও অর্থ ঠিকই বের করছে। এরমানে এই নয় যে, ঐ সব মানুষের কাছে অঢেল সময়-সুযোগ ও টাকা আছে। বিষয়টি মোটেই এরকম নয়। শুধু তাঁদের মধ্যে একটি তীব্র ইচ্ছা আছে। আর তাহলো, ওঁরা ‘আফসোস’ নিয়ে এক জীবন কাটাতে চায় না।
প্রশ্ন হলো, এই ধরণের তালিকা তৈরি করে লাভ কি?
লাভ আছে। আপনি যখন মৃত্যুর চিন্তা মাথায় নিয়ে এরকম তালিকা তৈরি করবেন তখন সময় নিয়ে সঠিক ধারণা পাবেন। সময়কে বেশি মূল্যায়ন করতে পারবেন। আপনি যখনই দেখবেন যে, আপনার হাতে সময় সংকট তখনই আপনি আপনার স্বপ্ন ও অপূর্ণ কাজ নিয়ে দ্রুত কাজ করবেন।
উদাহরণস্বরূপ: “আমি কোনো একদিন ‘A’ নামক স্থানে বেড়াতে যাবো।” এই বিষয়টি এখন দাঁড়াবে, “আমি আগামী মাসের ১ তারিখে ‘A’ নামক স্থানে যাবো।” এতে করে আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে আসে।
আপনার প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে অন্তত ১০০ গুণ। আগে মনে করতেন, আগামীকাল আমি এই কাজ করবো। এখন যেহেতু আপনার কল্পনায় আগামীকালের অস্তিত্বই থাকছে না তাই আপনি ঐ কাজ আজকেই সারতে চাইবেন। ফলে ডেস্কে বা ডেস্কের বাইরে আপনার কোনো কাজ-ই আর পরে থাকবে না।
নিশ্চয় আপনি আগামীকাল-পরশু-তরশু নিয়ে পরিকল্পনা করবেন। তবে এখন এই পরিকল্পনা হবে ভিন্ন ধাঁচের। তালিকা বা লক্ষ্য ভিত্তিক একটি জীবন। কাউকে ‘দুঃখিত’ বলার থাকলে বলে নিন, কাউকে ‘ধন্যবাদ’ জানানোর থাকলে জানিয়ে দিন।
আর কাউকে ভালোবেসে থাকলে সেটাও আজই বলুন, “হ্যাঁ, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি…”
ছবি: Gemini
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:২৬
মানুষ বলেছেন: এতবড় গদ্য পড়তে গেলে এমনেই মরে যাব
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১১
রাজীব নুর বলেছেন: মৃত্যুর কথা ভেবে মরণ ঠেকানো যাবে না।তাই মৃত্যুর কথা ভাবা অর্থহীন।জীবনকে উপভোগ করাই সঠিক কাজ।
কামাল১৮ সুন্দর কথা বলেছেন।
৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩
নতুন বলেছেন: কামাল১৮ বলেছেন: মৃত্যুর কথা ভেবে মরণ ঠেকানো যাবে না।তাই মৃত্যুর কথা ভাবা অর্থহীন।জীবনকে উপভোগ করাই সঠিক কাজ।
মৃত্যু অবিসম্ভাবি তাই মৃত্যু নিয়ে না ভেবে কিভাবে ভালো ভাবে জীবন জাপন করা যায় সেটা নিয়ে ভাবি।
যেন মৃত্যুর সময় পরিবার বা বন্ধু যারা কাছে থাকে তাদের বলা যায় সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সুন্দর একটা জীবন পার করেছি। বিদায়।
৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮
বিজন রয় বলেছেন: অত ভেবে লাভ নেই। যা হবার তাই হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:১২
কামাল১৮ বলেছেন: মৃত্যুর কথা ভেবে মরণ ঠেকানো যাবে না।তাই মৃত্যুর কথা ভাবা অর্থহীন।জীবনকে উপভোগ করাই সঠিক কাজ।