নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সাধারন

প্রবাসী মৃত্তিকা

প্রবাসী মৃত্তিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিন্নতাসমূহ- সাধারন দৃষ্টি/সাধারনের দৃষ্টি

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:৪০

আমি যন্ত্রে বাংলা লেখার নিয়ম জেনেছিলাম, অর্ধেকের বেশী জীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসের ও সামাজিক জীবনের সুযোগ পেয়েছিলাম, এখন কিয়দ সময় ধরে উন্নত বিশ্বে (প্রকাশ্য আমেরিকা) প্রবাসী জীবনযাপন করতে পারছি। এ সমাজ জীবন বৈচিত্র আমার সাধারন দৃষ্টিতে যেভাবে দেখছি বা উপলব্ধি করছি তা আপনাদের সাথে মতবিনিময়ের চেষ্টা করছি। অসংখ্য বিষয় রকমতার মাঝে আজ ”ফয়জুল্লাহ্‌কে” স্মরণে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশি/আইন ব্যবস্থা ও মানবাধিকার ভিন্নতা নিয়ে আমার দৃষ্টি আলোচনা-

আমি প্রথম গাড়ি কেনার পর নতুন চাকরির সন্ধানে ঘুরছি, একদিন বাসায় ফিরে আমার নামে বিএমভি (ব্যুরো অফ মোটর ভ্যাহিক্যাল) জারিকৃত একটি চিঠি পাই যাহাতে ছবিযুক্ত প্রমানসহ উল্লেখিত ছিল আমি ২৫মাইল/ঘন্টার সড়কে বিপদজ্জনক সীমার অতিরিক্ত গতিতে তথা ৩৭মাইল/ঘন্টায় গাড়ি চালিয়েছিলাম (এক্ষেত্রে বিপদজ্জনক সর্বোচ্চসীমা ৩৫মাইল/ঘন্টা)। অতএব আমাকে ১০০ ডলার জরিমানা প্রেরণ করতে হবে নতুবা পত্রে উল্লেখিত জরিমানা প্রেরণের শেষ তারিখের পূর্বে আদালতে আপত্তি জানাতে হবে। আমাকে যেভাবে তারা প্রমাণাদি সরবরাহ করেছে তাতে আদালতে আপত্তি তোলা যে শুধু আদালতের খরচই বৃদ্ধি করবে বুঝতে পেরে আমি জরিমানার অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করি। তার বেশকিছুকাল পর একরাত্রে দোকানে কাজ করছি তো হঠাৎ এক পুলিশ অফিসার (বলা বাহুল্য এখানে সকল পুলিশই অফিসারের মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়) আমাকে প্রশ্ন করে আমি কোন মাইনর (অর্থাৎ একুশ বছর বয়সের ছোট) এর কাছে বিয়ার এবং ওয়াইন বিক্রয় করেছি কিনা। প্রসঙ্গত- আমার এক পরিচিত গ্রাহকের মেয়ে ও তার ছেলেবন্ধু উক্ত মহিলা গ্রাহকের অনুরোধ আমার কাছে প্রমানসহ আসে, তবে তারা যেহেতু মাইনর ছিল তাই আমি আমার এক সহকর্মীর মাধ্যমে তা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করি। কিন্তু বিষয়টি তত সহজভাবে যায়নি। তো আমি অফিসারকে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করলাম, অফিসারও প্রায় ঘন্টা যাবৎ আমার অজ্ঞাতে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উর্ধ্বতনের সাথে আলোচনার সাপেক্ষে আমাকে জানালো ঘটনাটি আদালতের বিষয় হবে এবং আমাকে ও আমার সহকর্মীকে তার গ্রেফতার করতে হবে। যাহোক আমি তার কাছ থেকে সময় নিয়ে দোকান মালিককে আমি বিষয়টি অবগত করে দোকানের দৈনিক কর্মসম্পাদনপূর্বক গ্রেফতার হয়ে থানায় যাই। সেখানে যে অফিসার আমাকে থানার সেলে প্রেরণ করে সেও গ্রেফতারকৃত অফিসারের মতোই আমাদের সাথে প্রচন্ড বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রিয়াকর্মাদি সম্পন্ন করে এবং জানতে চায় আমাদের জামিন নেয়ার জন্য কারো সাথে আমাদের তার বার্তার প্রয়োজন আছে কিনা? কিন্তু যেহেতু আমি ইতোপূর্বে দোকান মালিকের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম তাই তাকে জানালাম আমাদের অপেক্ষার প্রয়োজনীয়তা। এর ঘন্টাকাল পরই আমরা থানা থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে যাই। যদিও এটা রাত ১১টার ঘটনা তথাপি এখানকার নিয়মানুযায়ী আমাদের জামিন থানা থেকেই করা হয়, সেজন্য আদালতের অপেক্ষা করতে হয়নি এবং জামিনের সময় আমাদের আদালতের সময় তারিখ সব উল্লেখিত সমন হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। যাহোক সে মোতাবেক আমরা আদালতে হাজিরা দেই এবং একজন নিয়োগকৃত আইনজ্ঞের মাধ্যমে আমরা ব্যাখ্যা প্রদান করি, এবং সেযাত্রায় আমার বোঝার ভূল বিবেচনায় আমাকে আদালত প্রথমবারের মতো অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেয়। একবার এক খরিদ্দার দোকন থেকে একটি মোবাইল চার্জার ক্রয় করে কিন্তু বিক্রয় কালে আমি উপস্থিত ছিলামনা, কিন্তু চার্জারটি কাজ করছিলনা ফলে সে আমার কাছে রশিদবিহীন তা পরিবর্তনের দাবি করে এবং আমি অপারগতা প্রকাশ করি, সে আমার অপারগতাকে ভালোভাবে না নিয়ে পুলিশ ডাকে, অফিসার তার বক্তব্য জানার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজনীয়তা বোধ না করে উক্ত খরিদ্দারকে দোকানের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমার কথা মেনে নিতে ও পরবর্তীতে আসার অনুরোধ করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

উপরোক্ত কলামে তো শুধু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগে এখানকার আইন উদাহরন দিলাম। এর বাইরেও আমার পুলিশের সাক্ষাৎ অসংখ্যবার করতে হয়েছে যার সংখ্যা কোনদিনই আমার মনে করা সম্ভব নয়। যার কয়েকটি বিবরণ জানাচ্ছি- একবার আমি কাজ করছি তো দোকানের সামনে কিছু উঠতি বয়সের ছোকরা আড্ডা দিচ্ছে, তো তাদেরকে ডেকে জানালাম তারা প্রয়োজন ব্যতিরেকে এখানে বেশীসময় অবস্থান করতে পারেনা, দু’বার তাদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ ডাকি, দু’জন অফিসার (যেহেতু ছোকরারা সংখ্যায় বেশী ছিল) এসে তাদের মুখোমূখি হয়, সবার পরিচয় নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ কি ধরনের করবো জানতে চায়, আমি শুধু তাদেরকে ভবিষ্যতে এমন করবে না বলে সতর্ক করে দিতে বলি এবং সে মোতাবেক অফিসাররা তাদের জ্ঞাতার্থ করে দোকান সম্মূখ হতে বিতারন করে দেয়। আর একবার এক ছেলে এসে সিগারেট কিনতে চাইল তো সন্দেহবশতঃ আমি তাহার পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হলাম যে ১৮ বছর বয়সের বড়, যাহোক তার ব্যবহার আমার কাছে ভালো লাগেনি তাই সিগারেট প্যাকেট দেয়ার সময় তাকে অনুরোধ করলাম দোকানে আমার কর্ম সময়ে আর না আসার জন্য। জানিনা কেন সে আমার কথার তোয়াক্কা না করে পর পর আরো দু’বার আসলো এবং প্রতিবারই আমি তাকে সতর্ক করলাম কিন্তু সে আমার অপেক্ষা না করে দ্রব্যমূল্য কাউন্টারে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিল, তো তৃতীয়বার সহ্যেরসীমার বাধ রইলনা, আমি পুলিশ ডাকলাম। তারা আমার বর্ণনা জেনে উক্ত ছেলেটিকে পথে কোথাও আটকে জানতে চাইলো অন্য বিশেষ কোন অভিযোগ আমার আছে কিন? আমি তাদেরকে জানালাম ছেলেটির আচরন আমাকে অসন্তুষ্ট করে তাই আমি তাকে দোকনে দেখতে চাইনা। যাহোক তারা ব্যবস্থা নিয়ে একজন আমার কাছে এসে অনুরোধ করে এরপরবর্তীতে যদি ছেলেটি আবার দোকানে আসে তবে তার সাথে যেন বিবাদে না জরায়ে যেন তাদেরকে অবহিত করি, কেননা ছেলেটির আচরন তাদের কাছেও উগ্র মনে হয়েছে। এরকম অসংখ্যবার যেমন কাউকে ক্যামেরাতে দেখলাম পকেটে বিয়ারক্যান ঢুকিয়েছে, কেউ দোকানে এসে মাতলামি করছে, উগ্রতা প্রদর্শন করছে, দোকানের সামনে অহেতুক দাড়িয়ে আছে প্রত্যেকটি সামান্য কারণে পুলিশ ডেকেছি, তাতে তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত, বিরক্ত না হয়ে বরঞ্চ আমাকে সহযোগীতার হাত আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, কোন কোন সময় তাদেরকে অনেকদিন যাবত না ডাকায় তাদের কেউ কেউ চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে দোকানে এসে কেমন আছি জানতে চেয়েছে, সন্দেহবশত কারো পিছু নিয়ে দোকানে উক্ত খরিদ্দার অবস্থানকালীন অবস্থান করে গেছে, যদিও আমি এখন উক্তদোকানে বা দোকানে কাজ করছিনা, তথাপি তারা তাই এখনো করে এবং শুধুমাত্র উক্ত দোকানেই নয় প্রত্যেক দোকানে, প্রত্যেক রাস্তায়, প্রত্যেক মহল্লায় সর্বত্র তাদের বিচরণ, গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। আমি কখনো কোন অফিসারকে ডিউটিরত অবস্থা অন্যকোন অফিসারের সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে গল্প করতে আজো দেখিনি।

এবার আসি তাদের কর্মব্যাপ্তি, ক্ষমতা, ক্ষমতার ব্যবহার অপব্যবহার, অপব্যবহারের প্রতিকার নিয়ে আলোচনায়। এখানে পুলিশের কর্মব্যপ্তি খুব সাধারন- প্রত্যেক প্রাণীর র্নিঝঞ্জাট, নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রত্যেক প্রাণীর বলার কারন আপনার পালিত কুকুর বেড়াল বা জঙ্গলে বিচরণকারী হরিন বা অন্য প্রাণী যদি বিপদজ্জনক অবস্থায় পড়ে তবে সেটাকে প্রাণীসম্পদ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়াও তাদের দ্বায়িত্বে পড়ে। ক্ষমতা- খুব নিকটতম ঘটনা অরল্যান্ডো নামক সিটিতে ঘটে যাওয়া আফগান বংশোদ্ভূত ওমর মতিন কর্তৃক ঘটিত হত্যাযজ্ঞ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এখানকার এফবিআই, বা অন্যান্য আইনপ্রয়োগ সংস্থার কাছে উক্ত ব্যক্তি অপরিচিত নন। তার সাথে সংস্থাসমূহের অন্তত আরো দু’বার সাংঘর্ষিক সম্পর্কযুক্ত হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই সংস্থাসমূহ তার বিরুদ্ধে কোন আইন লংঘনের অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয়, ফলে সে শুধুমাত্র তাদের নজরদারিতেই থেকে যায় যাও কিনা দূর্বল হিসেবে প্রমানিত হলো। একবার আমার কর্মস্থলেরে উল্টোদিকের এক নরসুন্দরের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটার কিছু পর আমার বন্ধুস্থানীয় এক অফিসার দোকনে আসলে আমি প্রসঙ্গত হাস্যচ্ছলেই তাকে নরসুন্দরের দোকানেও ডাকাতি (যা কিনা অর্থমূ্ল্য বিবেচনায় উপহাসযোগ্য) প্রসঙ্গে উপস্থাপন করি, তখন সে আমাকে বন্ধুত্বের খাতিরে প্রকৃত ঘটনা ব্যাখ্যা করে যে উহা ডাকাতি না বলে গাঁজা বিক্রয়সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব বলা প্রযোজ্য। অতঃপর আমার বিস্মিত জিজ্ঘাসা ছিল তাদের মাদক নিরাময়ে সেখানে অভিযান প্রসঙ্গ। তার উত্তর উক্ত বানিজ্যালয়ের উপস্থিতির (প্রসঙ্গত সর্বোচ্চ ৪ বা ৫জনা) সাপেক্ষে সন্দেহাতীতভাবে কাউকে মাদক ক্রেতা বা বিক্রেতা প্রমান সম্ভব নয় এবং গাজা বিক্রয় তেমন কোন বড় অপরাধও নয় যেকারনে উপস্থিত সকলের নির্ঝঞ্জাট নাগরিক জীবনের ব্যত্যয় ঘটানো যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার- কিয়দকাল পূর্বে ঘটে যাওয়া বাল্টিমোর নগরের উদাহরন বলা যায়। যেখানে এক সন্দেহভাজন দুষ্কৃতিকারীকে (কেননা পূর্বে তার বিরুদ্ধে কতিপয় প্রমানিত অভিযোগ থাকা এবং গ্রেফতারকালীন তার সহিত ছোরা জাতীয় অস্ত্র উদ্ধার) গ্রেফতারের পর তাকে পুলিশভ্যানে করে থানায় নেয়ার সময় তাকে যথাযথভাবে আসনে না বসানো, সিটবেল্ট না পরানো যে কারনে উক্ত ব্যক্তি মাথায় জখম পাওয়া, পথিমধ্যে একাধিকবার অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীকে বহন নিমিত্তে যাত্রাবিরতি করার হেতু উক্ত জখমের প্রতিকার নিশ্চিত করতে না পারা এবং সর্বশেষ উক্ত জখমের ফলে উক্ত ব্যাক্তির হাসপাতালে চিকিৎসার অসারতায় মৃত্যু সমগ্র বিশ্বে আমেরিকাকে নির্দেশিত করে বিভিন্নভাবে। এর ফলাফল উক্ত গ্রেফতারকালীন উপস্থিত গ্রেফতারকারী, বহনকারী, নিরাপত্তাপ্রদানকারী এবং উক্ত থানার প্রধান শুধু বরখাস্তই হননি বর্তমানে জামিনবিহীন অবস্থায় জেলে বসে শাস্তির দিন গুনছেন। এমন শাস্তি শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই নয়, বরঞ্চ প্রতিটি প্রয়োজনাতিরিক্ত পুলিশি আচরনের জন্যই হচ্ছে। ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৪ সালে আমেরিকার বড় ১০টি নগরী পুলিশী অসদাচরনের জন্য জনগনের নিকট জরিমানা গুনেছে প্রায় ২৪৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত এখানে রাস্তায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো হতে শুরু করে যেকোন অসদাচরনের বিচার নির্ধারিত হয় অর্থমূল্যে সেটা জনগন বা প্রশাসন যার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হোক।

এবার আসি আমার সোনার বাংলার সাথে তুলনাতে। বিশ্বস্থতা বর্জনহেতু সততার মানদন্ডে আমাকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দেবনা, তথাপি আমি জন্মেছি যে দেশে, বড় হয়েছি যে মাতৃকার মাটির উর্বরতায়, বাতাসে সেই মাতৃকার পুলিশী ব্যবস্থায় ব্যথিত হয়ে তার সীমাবদ্ধতা কারন অনুসন্ধানে। আমি ব্যথিত কারন, সেখানে গ্রেফতার হওয়ার পর ফয়জুল্লাহ তার বিচারের অপেক্ষা করতে পারেনি, সে পুলিশের উপস্থিতিতে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেনি। আমিও এখানে গ্রেফতার হয়েছিলাম, কিন্তু আমি আমার নিরাপত্তা, আমার অধিকার নিশ্চিত করনের সকল সহযোগীতা পুলিশ কর্তৃপক্ষই করে দেয়। প্রসঙ্গত, আমি একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে ভাগ্যের বদৌলতে ডিভি পেয়ে আমেরিকায় আসি, এখানকার কোন মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার জোরে নয়। অথচ ফয়জুল্লাহ যে নিঃসন্দেহে একজন অপরাধকারী যদিও প্রমানিত অপরাধী নয়, কিন্তু প্রথমত সে একজন উঠতি বয়সী ”মানুষ” ছিল, বিচারে তার অপরাধের শাস্তি হওয়ার কথা ছিল, হয়তো শাস্তি মৃত্যুদন্ডও হতে পারতো, সেটা বিচার হতো, বিচার হতো অপরাধের, বিচার পেত আহত শিক্ষক। কিন্তু এটা কি হলো রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে তাকে অকালে, অবিচারে জীবন হারাতে হলো। মানুষ যদি পুলিশের উপস্থিতিতেই নিরাপরাধ না থাকে তবে যেভাবে মারা পড়ছে তাতে অন্যের দোষ দেয়ার কি আছে? যেখানে রাষ্ট্র মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে না পারে তবে সেখানে মানুষ যে কোনভাবেই নিরাপদ নয় তা কি রাষ্ট্র প্রমান করছেনা? তবে একে ব্যর্থ রাষ্ট্র বললে আপনারা প্রতিবাদ করছেন কেন?

এক পুলিশের ব্যর্থতা কি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা? আপনাদের প্রশ্ন। তবে চলুন আসি কেন পুলিশ ব্যর্থ? আমার শেষবারের বাংলাদেশ সফরের সময় এক জনাকীর্ণ স্থানে এক পুলিশের উপস্থিতিতেই এক কথিত ছিনতাকারীকে কতিপয় ব্যক্তি ধরে নিয়ে মারধর করতে দেখি, উপস্থিত বন্ধুদের জোর নিবৃর্ত্তে মনের সাধহেতু উক্ত পুলিশের পচ্চাদদেশে লাথি দিতে পারিনি। কিন্তু জানতে পেরেছিলাম উক্ত ছিনতাইয়ের বিচারকবৃন্দ বর্তমান কুমিল্লার ক্ষমতাসীন এমপি সাহেবের ছাত্রবাহিনী। এখানে দুটি প্রশ্নের অবতারনা, প্রথমত ক্ষমতা কি? দ্বিতীয়ত ছাত্র রাজনীতি কি? উত্তর একটিই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ব্যর্থ করার দুটি নিয়ামক। কেন?

ক্ষমতা প্রসঙ্গ- অনেক প্রসঙ্গের ক্ষমতার বাহুল্য বাদ দিয়ে আজ শুধু আইন প্রণতাদের নিয়েই আলোচনা বিনিময় করবো। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই নির্দিষ্টকাল পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে আইন প্রণেতা নির্বাচিত হবেন, যাদের উদ্দেশ্য তার অঞ্চলের প্রত্যেক নাগরিকের সমমর্যাদার, সমানাধিকার দেশের ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকের সমতূল্য হিসেবে আইনের প্রয়োগ ও অনুপস্থিতিতে প্রণয়ন নিশ্চিত করা। যে দ্বায়িত্বকে মানবের সর্বোচ্চ আদর্শিক অবস্থান অভিহিতিতে উক্ত সাংসদের সামাজিক, আইনী, ও রাষ্ট্রীয় তহবিল সংক্রান্ত ব্যক্তিক অবস্থান সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের একটি বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু আমি আমার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমি যতবারই সতবিবেচনাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছি, ততবারই আমার ভোট ব্যর্থতায় নিমজ্জিত হয়েছিল। এবং প্রতিবারই এমন কিছু আইন প্রণেতা বাংলাদেশের সংসদে এসেছে বা আসছে দুই বা একজন বাদে যাদের সামনে দাড়িয়ে চোর বললেও তারা বিন্দুমাত্র লজ্জ্বাবোধের তোয়াক্কা না করে উত্তর দিবে, রাজনীতি তুই কি বুঝিস, বা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। সেই আইন প্রণেতার এমন অমানবিক নির্লজ্জ অবস্থানের কারন? আমরা। আমরা জিয়া বা মুজিব রাজতন্ত্রের তোষামোদের বাইরে এমনকি দলীয় গণতন্ত্রের আকাংখাও করতে পারিনা। যেখানে আমাদের অবস্থান চোরদের পক্ষে, সেখানে আইন যে চৌর্যবৃত্তির হবে, আইন যে তার ব্যর্থতাকে প্রশ্নাতীত করবে তা কেন মানব না? হাসিনাকে তোষামোদ করে খুশি করতে পারলে ভালো মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব নেয়া যায়, মন্ত্রণালয় হতে ব্যক্তিক লাভ উপার্যণ করা যায়, মন্ত্রীকে তোষামোদে খুশি করতে পারলে সাংসদের স্বীয় আসনের ভালো উন্নয়ণ বাজেট পাওয়া যায়, জনগণও খুশি হয়, অংশচুরির মাধ্যমে নিজেরও ভাগ্যউন্নয়ণ করা যায়, এমপি সাহেবের তোষামোদ করে ভালো ভালো ঠিকাদারী কাজ পাওয়া যায়, চুরির মাধ্যমে ভাগ্য উন্নয়ন করা যায়। নেতাকে তোষামোদ করে ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রন করা যায়, বাজে মালের সরবারহ নিশ্চিত করে অধিক মুনাফা করা যায়, অথবা একটা কাংখিত চাকরি পাওয়া যায়, যেখানে অধিক ঘুষের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব। এই পরম্পরায় আমরা সবাই ভাগ্যের পিছনে ঘুরছি, অধিকার কি? প্রশ্ন বিসর্জন দিয়েছি। আমরা কি কেউ মানুষ রইলাম? না ভাগ্যান্বেষী শকুন হয়ে উড়ছি? হ্যাঁ আমি প্রত্যেককেই দায়ী করছি, তৃতীয় প্রজাতির প্রাণী বলছি, কেননা এর ব্যতিক্রম আমি যতজনার মধ্যে দেখেছি তা দশমিকাংশেও পড়ে না। পুলিশবাহিনী আমাদেরই একজন, অন্যকোন গ্রহবাসী নন। তার উপরে তারা জনগনের নয় ক্ষমতাসীনদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য। মানুষ থাকলে তো আইন, রাষ্ট্র, মানবাধিকার নিশ্চিত করা। আর যে ভূখন্ডে মানুষ থাকেনা, সেখানে সমাজ, রাষ্ট্র উপস্থিত বলাটা কি বিবেচনা? রাষ্ট্র যেখানে অসাড় সেখানে আবার ব্যর্থতা? তাও ঠিক।

উপরোক্ত কলামে মনের আক্ষেপে অনেক প্রলাপে ছাত্ররাজনীতি আলোচনা আজ আর ভালো লাগছেনা। শুধু কতিপয় প্রশ্ন, কেন ছাত্ররাজনীতির নামে কিশোরদের মানষিকতাকে কলুষিত করা? কেন কিশোর জীবনকে হানাহানির, অস্ত্রবাজির ক্রিড়াণক করা, কেন তাদের উর্বরতাকে পঁচিয়ে দেয়া। কেন তাদের উদ্দামতার, উদারতার মাঝে বিষোদগার জন্মে দেয়া? কোন উন্নতদেশের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধারার রাজনীতিকে বহন করা? ছাত্ররাজনীতি যদি বাংলাদেশে না থাকে তবে কি ক্ষতির আশংকা? কাদের ক্ষতির আশংকা? কেন আমরা পারিনা এ রাজনীতির প্রতিবাদ করতে? চেষ্টা প্রতিহত করতে?

পৃথিবীর সকল উন্নত দেশের সকল নাগরিক তার নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে যোগ্য নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং তার অধিকার নিশ্চিত করেন, কিন্তু সকলেই কি রাজনীতি করেন? কেউ কি রাজনৈতিক নেতৃত্বের তোষণ করেন? তবে আমার মার্তৃকার সকলে কবে নিজেদের অধিকারের নিশ্চয়তা ও মানবিক জীবন নিশ্চিত করতে পারবেন? আমার সোনার বাংলাকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে মর্যাদাশীল করতে পারবেন?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:২৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: এবার আসি তাদের কর্মব্যাপ্তি, ক্ষমতা, ক্ষমতার ব্যবহার অপব্যবহার, অপব্যবহারের প্রতিকার নিয়ে আলোচনায়। এখানে পুলিশের কর্মব্যপ্তি খুব সাধারন- প্রত্যেক প্রাণীর র্নিঝঞ্জাট, নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রত্যেক প্রাণীর বলার কারন আপনার পালিত কুকুর বেড়াল বা জঙ্গলে বিচরণকারী হরিন বা অন্য প্রাণী যদি বিপদজ্জনক অবস্থায় পড়ে তবে সেটাকে প্রাণীসম্পদ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়াও তাদের দ্বায়িত্বে পড়ে। :)

কি আর বলব, ভুলেও আমাদের শোনার বাংলার সাথে এসব তুলনা করতে যাবেন না। আমরা আছি অরাজকতার,অব্যবস্থাপনার,দূর্ণীতির সর্বোচ্চো পর্যায়ে। আমাদের এখানে প্রাণীর নিরাপত্তা?? হেঃ হেঃ হাসালেন ভাই :-P আমাদের দেশে মানুষের নিরাপত্তা তো দূরের কথা জীবনেরই কোন মূল্য নেই। তারপরেও কেন আমরা নিজেদের সভ্য বলে মিথ্যা দাবী করি এটা আমার মাথায়ই ধরে না। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.