নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখতার বাবলু

আমি মুখতার বাবলু। বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই নীল আকাশের প্রান্তরে।

মুখতার বাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ বাবাকে চিত্কার করে বলতে ইচ্ছা করছে,...

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৫

১৯৭১ সালে আমার দাদার সংসারে খুব অভাব ছিল । দাদার ছিল দুই ছেলে, আমার বাবা আর চাচা । দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন বাবা চাচা দুজনই যুদ্ধে যোগ দিতে চেয়েছিল । কিন্তু দুজনই যদি যুদ্ধ যোগ দেয় তাহলেতো আর দাদার সংসার চলে না । তাই দাদার সিদ্ধান্তক্রমে চাচা যোগ দিল যুদ্ধে আর বাবা রইলো সাংসারিক কাজে । কারণ, চাচার দ্বারা সাংসারিক কাজ সামলানো সম্ভব নয় । তাই বাবার প্রচুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।



দাদা তখন বাবাকে শান্তনা দিয়ে বলতো, আজ তুমি সংসারিক কাজের জন্য দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে না পারলেও একদিন দেখবে তোমার সন্তান ঠিকই বড় হয়ে দেশের বড় বড় পোষ্টে নিযুক্ত হয়ে তোমার মুখ উজ্জল করবে । বাবা সেদিন সম্ভবত সেই শান্তনা পেয়ে একবুক আশা নিয়ে আমাকে বড় করে তুলেছিলেন।



বিশ্ববিদ্যালয়ের মত আঙ্গিনায় আমার স্থানও হয়েছিল । তবে আমার মনে পড়ে যুদ্ধের সেই দিনগুলির কথা, চাচা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছিলেন ঠিকই । কিন্তু সেই যুদ্ধক্ষেত্রের রসদ যোগাতে, চাচাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে বাবাকে নিজ সংসারের সাথে করতে হয়েছিল আরেক যুদ্ধ। চাচা যুদ্ধে থাকাকালীন সময়ে চাচার পরিবারের যাতে কোন অযত্ন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে গিয়ে অনেক সময় দেখতে পেতাম বাবা তার নিজ পরিবারের দিকেই খেয়াল রাখতে পারতেন না। এইসব নিয়ে অনেক সময় বাবার সাথে রাগারাগি করে ভাত খেতে না চাইলে বাবা কাছে ডেকে শান্তনা দিয়ে বলতেন, রাগ করোনা বাবা খেয়ে নাও। তোমার চাচা তোমাদের ভবিষ্যত গড়তে গিয়েছেন । দেখবে তোমার চাচা যখন দেশ স্বাধীন করে ফিরে আসবে স্বাধীন বাংলাদেশে তখন আর কোন অভাব থাকবে না, থাকবেনা কোন শোষণ, বঞ্চনা আর বৈষম্য।



বাবার আদরমাখা সেই শান্তনা নিয়ে আজ জীবনের এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে এলাম । চাচাতো ভাই বেলাল আমার তুলনায় মেধার দিকথেকে সবসময় পিছনে পড়ে থাকলেও সেও আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সাথে একই বিভাগে পড়ে কৌটায় চান্স পেয়ে । আমার থেকে কম নাম্বার পাওয়া সত্ত্বেও হলে আমার সিট না হলেও তার সিট হয়েছে কৌটার জোরে। তাকে সিট না দিলে ঐ সিটটা আমারই হতো । কিছু মনে করিনি । ভেবেছি, পরের বছর আরো ভালো রেজাল্ট করে নিজের যৌগ্যতাবলে সিট নিয়ে নিব । পরের বছর আরো ভালো রেজাল্ট করলামও, কিন্তু সিট হয়নি, সিট পেয়ে গেছে আরেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাও কিছু মনে করিনি । নিজের মনকে শান্তনা দিলাম এই বলে যে, এইতো আর দুটো বছরই তো, হলে সিট দিয়ে কি করব । রেজাল্টটা আরো ভালো করে কর্মজীবনে ভালো একটা চাকরি নিয়ে নিতে পারলেই হলো।



কিন্তু না আমার ধারণা মিথ্যে হয়ে গেল । রেজাল্ট ভালো হল ঠিকই, চাকরি কিন্তু পেলাম না । বিসিএস পরীক্ষা দিলাম, ৭০ পেয়েও চান্স হল না, ৫৫ পেয়েও চান্স পেয়ে গেল চাচাতো ভাই বেলাল । এবার আর সইতে পারলাম না, আজ বিছানায় পড়ে থাকা আমার অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে চিত্কার করে বলতে ইচ্ছা করছে, বাবা তোমার কথা আজ মিথ্যে প্রমাণিত হলো । আমার চাচা আমার ভবিষ্যত গড়তে যায়নি, গিয়েছে আমার ভবিষ্যত ধ্বংস করতে । আজ তাই তুমি মৃত্যুশয্যায় কাতরালেও আমি পারছিনা তোমার চিকিত্সা করাতে । দাদাকে চিত্কার করে জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছা করছে কেন তুমি সেদিন আমার বাবাকে যুদ্ধে যেতে দিলে না, তোমার সংসারের সবাই সেদিন অভাবে মরলেও আমার তাতে কি আসে যায়। আমি তো আজ রাজার হালে থাকতে পারতাম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে । এই ক্ষোভ আমার দাদা, চাচা বা চাচাতো ভাইয়ের প্রতি নয়, আমার এই ক্ষোভ আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি । কারণ, আমার চাচা এই রাষ্ট্রকে কখনও বলে যায়নি আমার অধিকার কেড়ে নিয়ে আমার চাচাতো ভাইকে দিতে। এই রাষ্ট্রই অন্যায়ভাবে আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছে ।



এই কথাগুলো বলেছিলেন আমার এক চাচা, তিনি আজ দেশে নেই, মালেশিয়ার একটি সফ্টওয়্যার কোম্পানিতে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ভালো একটি জব পেয়ে স্ত্রী, পুত্র, পরিবার নিয়ে তিনি সেখানেই স্যাটেল হয়েছেন, এখন তিনি তেমন একটা দেশে আসেন না বললে চলে। টাকার অভাবে তার অসুস্থ পিতাকে ঠিকমত চিকিত্‍সা করাতে পারেন নি। পিতার মৃত্যুর পর বন্ধুদের সহায়তায় পাড়ি জমিয়েছেন মালেশিয়ায়। দুঃখ হয় এই দেশের জন্য, এই জাতির জন্য। এই দেশ তার মেধার কোন মূল্যায়ন করতে পারল না, তার মেধাকে কাজে লাগাচ্ছে একটি বিদেশী কোম্পানী, এই জাতি বঞ্চিত হয়েছে তার মেধা থেকে। দেশে না আসলেও নিজ জন্মভূমির খোঁজখবর ঠিকই রাখেন। সম্প্রতি শুরু হওয়া কৌটাবিরোধী আন্দোলনের খবরও পেয়েছেন মিডিয়ার কল্যাণে। খবরটি জানতে পেরেই তিনি অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে আমাকে ফোন দিয়েছেন এবং আন্দোলনের বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের সাথে তিনি একাত্মতা জানিয়েছেন এবং আন্দোলনকারীদেরকে অভিনন্দন ও উত্‍সাহ জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন আমরা যে অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা পারিনি নিজেদের অধিকার আদায় করতে, তোমরা আজ সেই অধিকার রক্ষায় আন্দোলনের মাঠে নেমে এসেছো, আশা করি তোমরা সফল হবে।



আর কতকাল আমরা এইভাবে অযৌক্তিক কৌটার ফাঁদে পড়ে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো? এখন সময় হয়েছে এই কৌটাপ্রথার বিরুদ্ধে জেগে ওঠার, জেগে ওঠতে হবে নিজেদের স্বার্থেই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.