![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকারী দল আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে তাতে সরকার প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং উক্ত সরকারের মন্ত্রীসভায় বর্তমান সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বেশিরভাগ সদস্যই হবেন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটভুক্ত। তাই তাদের প্রস্তাবটি সংবিধান সম্মত হলেও তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয় না, কারণ নির্বাচনকালীন সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারিদলের মন্ত্রীদের মতামত বিশেষ করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার মতামতই প্রাধান্য পাবে, তাতে নির্বাচনের মাঠে সবাই সমান সুযোগ পাবে না।
এদিকে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের যে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে সরকারী ও বিরোধীদলের মতামতের ভিত্তিতে ৫জন করে মোট ১০ জন সদস্য নিয়ে নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভা গঠিত হবে এবং উক্ত সরকারের প্রধান হবে একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি। এই প্রস্তাব অনুসারে নিরপেক্ষতার বিষয়টি কিছুটা নিশ্চিত হলেও তা সংবিধান সম্মত নয়। যদিও বিরোধীদল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উক্ত ব্যক্তিদের সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত করে আনলে তা সংবিধান সম্মতই হবে কিন্ত এটা হচ্ছে একটা কৃত্রিম পদ্ধতি, গণতন্ত্রের জন্য এটা কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তাছাড়া তাতে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের আশঙ্কাটা থেকেই যায়।
তাই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আমি একটি বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করছি যাতে সংবিধানসম্মত উপায়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। আমার প্রস্তাবনা অনুসারে মন্ত্রীসভায় সদস্য হবে ১০-১২ জন। এর মধ্যে দুই প্রধান জোটের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে হবে ৪ জন করে আটজন, দুই জোটের বাইরে সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য দল বা জোট এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নেওয়া হবে আরো দুই জন (এটা হতে পারে স্বতন্ত্র সদস্যদের মধ্য থেকে একজন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে, অন্যান্য দল বা জোট থেকে একজন)। আর প্রধান দুই জোট ইচ্ছা করলে বুদ্ধিজীবি মহল ও সুশীল সমাজ থেকে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে পারস্পারিক সম্মতিতে আরো দুইজন সদস্যকে বিদ্যমান সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত করে এনে নির্বাচনকালীন সরকারের অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন। এবং উক্ত সরকারের প্রধান নির্বাচন করা যেতে পারে কয়েক ধাপের আলোচনার ভিত্তিতে। প্রথমত: বর্তমান রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে অতীতে বিভিন্ন সময়ে যারা রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে তাদের মধ্য থেকে কারো ব্যাপারে একমত হওয়া যায় কি না, যদি তা না হয় তাহলে আলোচনা করা যেতে পারে বর্তমান স্পীকারসহ অতীতের সকল স্পীকারকে নিয়ে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় রাষ্ট্রপতি স্পীকাররা কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ। যদি তাও না হয় তাহলে সাবেক কোন বিচারপতি কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যেকোন উপাচার্য অথবা সুশীল সমাজের অন্য কোন ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এইসব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সমূহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।
সরকার প্রধান নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসু করার জন্য প্রথম পর্যায়ে যা করতে হবে- আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মোট দশজনের নামের তালিকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে জমা দিতে হবে, সেখান থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তাদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোন ৪জনকে বাছাই করবে নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য, যদি প্রথম ১০জনের মধ্যে তাদের পছন্দমত ৪জনকে বাছাই করতে না পারে তবে তারা আরো ৫জনের নাম চাইতে পারে। প্রথম পর্যায়ে ১০ জনের মধ্যে না হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে সর্বমোট ১৫ জন থেকে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ৪জনকে অবশ্যই বাছাই করতে হবে। একই পদ্ধতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে যাতে করে নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্যদের প্রতি মোটামুটি উভয় দলেরই আস্থা থাকে।
অন্যান্য দল বা জোট থেকে যে দুইজন সদস্য নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে উভয়দল যদি সর্বসম্মতভাবে একমত হতে না পারে তাহলে বিএনপি দুইজনের নাম প্রস্তাব করবে সেখান থেকে আওয়ামী লীগ একজনকে বাছাই করবে একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত দুইজন থেকেও একজনকে বাছাই করবে বিএনপি। আর সুশীল সমাজের সদস্য নিলে সেক্ষেত্রেও দুই দল যদি সর্বসম্মতভাবে একমত হতে না পারে তাহলে একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রধান দুই জোটের বাইরে অন্যান্য দল বা জোটের কিংবা সুশীল সমাজের সদস্যদের প্রস্তাবিত নামসমূহ গোপন রাখা হবে যাতে করে কারো প্রতি কারো অনুরাগ বা বিরাগ না জন্মায়। শুধুমাত্র যাদেরকে নির্বাচন করা হয়েছে তারাই জানবে তাদেরকে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, কার পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এটা যেন তারা না জানে।
সরকার প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পীকারদেরকে নিয়ে দুই প্রধান জোট যদি একমত হতে না পারে তাহলে উভয় জোটের পক্ষ থেকে সুশীল সমাজের ৩জন করে মোট ৬ জনের নাম প্রস্তাব করবে। মন্ত্রীসভার নির্বাচিত ১০-১২জন সদস্য গোপন ভোটের মাধ্যমে ৬ জন থেকে একজনকে বেছে নেবে, যার পক্ষে সর্বোচ্ছ ভোট পড়বে তিনি হবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। এখানেও যদি কাকতালীয়ভাবে একাধিক ব্যক্তির ভোট সমান হয় তাহলে সর্বসমক্ষে টসের মাধ্যমে সর্বোচ্ছ ভোটের অধিকারী একাধিক ব্যক্তির মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে। উক্ত প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ব্যক্তি দলকানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুবই কম। আর যদি দলকানা হওয়ার সম্ভাবনা কিঞ্চিৎ থেকেও থাকে তবুও জাতীয় স্বার্থে তাকে সবাই মেনে নিতে হবে, কারণ মন্ত্রীসভায় তো দুই জোটের সমান সংখ্যাক সদস্য আছেই। তাছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধিও থাকবে সীমিত। এভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব হলে নির্বাচিত সরকার তার মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মত নিয়ে নির্বাচন কমিশনও পুনর্গঠন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন
©somewhere in net ltd.