নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদের করাল থাবায় আক্রান্ত বাংলাদেশ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১৫

মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানমনস্কতা, ধর্মনিরপেক্ষতার আন্দোলন করার কারনে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার কারনে খুন হবার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
আর ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িকতার পিশাচের কালো থাবা হতে প্রাণ বাঁচাতে বাড়ছে দেশত্যাগকারীর সংখ্যা।
কিন্তু এমনটি হবার কথা ছিল না।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নবযাত্রার মূলভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রত্যাশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন ছিল উন্নত সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামো সৃষ্টির।
কিন্তু প্রগতিশীলতার একবুক আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে, প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এই জনপদ হেঁটেছে উল্টোপথে আর ৭৫’এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এই উল্টোপথে হাঁটা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।
আর ফলশ্রুতিতে প্রগতিশীলতা, মুক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতাকে সামনে রেখে ত্রিশ লক্ষ শহিদ, পাঁচ লক্ষ নির্যাতিত নারী, সাড়ে সাত কোটি মানুষের দুঃসহ যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই দেশ-জনপদ পরিণত হয়েছে জঙ্গিবাদের উর্বরভূমিতে।

সমাজের সর্বস্তরে মৌলবাদীদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ, ধর্মান্ধ জনগণের অন্ধ আবেগ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি, জিয়া সরকার কর্তৃক একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পুর্নবাসিত করা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবর্তন, এরশাদ সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ধর্মের আশ্রয় নেয়া, আইএসআইয়ের পোষ্য বিএনপি ও মৌলবাদী জামাতের ক্ষমতায় যাওয়া এই দেশে জঙ্গিবাদ প্রসারে ও প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে।

জঙ্গিবাদের এই থাবা আজ নতুন নয়।
অঙ্কুর থেকে বৃহৎ বৃক্ষ যেমন বেড়ে উঠে, তেমনি জঙ্গিবাদ এইদেশে বেড়ে উঠেছে।
১৯৭৪ সালে কবিতা লিখে অনুভূতিতে আঘাতের অপরাধে কবি দাউদ হায়দার, নব্বইয়ের দশকে মৌলবাদীদের আন্দোলনের মুখে প্রগতিশীল লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
বিজ্ঞানমনস্কতার আন্দোলন করার কারনে মৌলবাদীরা অধ্যাপক আহমদ শরীফের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন করেছিল।
১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি কবি শামসুর রাহমান ঢাকায় নিজ বাড়িতে জঙ্গিদের আক্রমনে শিকার হন।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বই মেলা থেকে ফেরার পথে প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে জঙ্গিরা কুপিয়ে আহত করে।
২০০৭ সালে প্রথম আলোর আলপিন ম্যাগাজিনে কার্টুন একে অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার হয় কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান।
ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লেখার কারনে আসিফ মহিউদ্দিনকে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরায় জঙ্গিরা কুপিয়ে আহত করে।

সেসময়গুলোতে এই ঘটনাগুলোকে প্রশাসন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেছিল।
বিচার হয়নি এসব কোন ঘটনার, এমনকি হয়নি কোন সুষ্ঠু তদন্ত।
এসব ঘটনার বিচারহীনতা, জঙ্গিবাদ সম্পর্কে অদূরদর্শীতা ও জিয়া-এরশাদ-বিএনপি’র জঙ্গিবাদকে পৃষ্টপোষকতা করা থেকেই এই দেশে শক্তিশালী শিকড় গেড়ে বসে মৌলবাদী শক্তিগুলো, এই দেশ পরিণত হয় জঙ্গিবাদের শক্তিশালী আস্তানায়।

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে সূচিত শাহবাগ আন্দোলনকে বানচাল করতে মৌলবাদী গোষ্টীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে, বেরিয়ে আসে জঙ্গিবাদের নগ্ন চেহারা।
জঙ্গিদের হিংস্রতায় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার, ০২ মার্চ সিলেটে খুন হন একটিভিস্ট জগৎজ্যোতি তালুকদার, ০৯ মার্চ মিরপুরে আহত হন একটিভিস্ট সানিউর রহমান, ০৯ এপ্রিল বুয়েটে ক্যাম্পাসে বুয়েটের ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে, ১১ অগাস্ট বুয়েটের ছাত্র একটিভিস্ট তন্ময় আহমেদ জঙ্গি হামলায় মারাত্মক আহত হন।
২০১৪ সালের ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে রাহি-উল্লাস জঙ্গিগোষ্টী শিবিরের হামলায় আহত হয়, ২৪ জুন জঙ্গি হামলায় একটিভিস্ট রাকিব মামুন আহত হন, ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারে একটিভিস্ট ছাত্র আশরাফুল আলমকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে, ১৬ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে।
২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নার্সিং ইনিস্টিটিউটের লেকচারার অঞ্জলি দেবী চৌধুরীকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে, ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে জঙ্গিহামলায় খুন হন বিজ্ঞানলেখক অভিজিৎ রায়, সাথে গুরুতর আহত হন মুক্তমনা লেখিকা বন্যা আহমদ, ৩০ মার্চ অফিস যাওয়ার পথে খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু, ১২ মে সিলেটে বিজ্ঞানলেখক অনন্ত বিজয় দাসকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে, ০৭ অাগস্ট ঢাকায় নিজ বাসায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন ব্লগার নীলয় নীল, ৩১ অক্টোবর ঢাকায় জাগৃতি প্রকাশনীর কর্নধার ফয়সাল আরেফিন দীপনকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে, একইদিন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্নধার টুটুল, ব্লগার রণদীপম বসু ও কবি তারেক রহিম জঙ্গি হামলায় আহত হন।
এবং জঙ্গিদের হাতে নিহতের এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলেন একটিভিস্ট নাজিমুদ্দীন সামাদ, ০৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখ রাতে তাকে ঢাকায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

একের পর এক মুক্তমনা, অবিশ্বাসী, ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনকারীদের হত্যা করছে জঙ্গিরা।
কিন্তু এসব খুনের তদন্তে অগ্রগতি শ্লথ; ফলে, সৃষ্টি হয়েছে বিচারহীনতার আশংকা।
স্বাভাবিক কারনে এই বিচারহীনতা জঙ্গিদের সাহস বাড়িয়ে দেবে।
জঙ্গি উত্থানের ভয়াবহ চেহারা আমরা দেখেছি ২০১৩ সালের ০৫ মে।

ব্লগার, মুক্তমনা ও অবিশ্বাসীদের হত্যা শুধু নয়, মৌলবাদের থাবায় অাক্রান্ত হয়ে এসেছে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসী, আহমদিয়া, সুফি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষরাও।

মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বাংলাদেশে তাদের বিশাল বিষবৃক্ষ বড় করেছে; এখন অপেক্ষা করছে, শক্তি সঞ্চয় করছে চুড়ান্ত আঘাত হানার।
এখনই যদি এই বিষবৃক্ষ উপরে ফেলা না হয়, তবে একাত্তরে রক্তের দামে কেনা এই বাংলাদেশ আর থাকবে না।
মৌলবাদী অপশক্তির আগ্রাসনে পরাজিত হবে বাংলাদেশ।
সরকার-প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝবে ও ব্যবস্থা নিবে, ততই মঙ্গল; তা না হলে বাংলাদেশ অচিরেই পশ্চাদপদতার অতলে হারিয়ে যাবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:০১

সিমন্ত বলেছেন: ধন্যবাদ। আমাদের দেশে যা চলছে সেটা হল - জঙ্গী রিমান্ড

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:১১

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: এ যেন এক নীরব জঙ্গি রিমান্ড

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:৩৩

সাগর মাঝি বলেছেন: এখনি উপযুক্ত সময় জঙ্গি দমনের। এদের শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৫৭

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: এই বাংলা আমার ঠিকানা ,নিপাত যাক জঙ্গিদের আস্তানা !

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২

অেসন বলেছেন: "সরকার-প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝবে ও ব্যবস্থা নিবে, ততই মঙ্গল; তা না হলে বাংলাদেশ অচিরেই পশ্চাদপদতার অতলে হারিয়ে যাবে। " - আপাতত কোন সম্ভাবনা দেখছি না। কারন সরকার-প্রশাসন আশা করছে উনাদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে নিয়ে এসে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার। তাতে যদি কিছুসংখ্যক প্রগতিশীলদের সমর্থন হারাই ক্ষতি তেমন হবে না। এই সরকারকে তো ওলামারাই বসিয়েছে, তাই না?

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: প্রগতিশীলদের হত্যার বিচার এক না একদিন হবে, সরকার চোখে কালো কাপড় বেধে রাখছে তা এক না একদিন ঠিক ই খুলবে না হয় পতন নিশ্চিত !

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

অেসন বলেছেন: যেদিন চোখের কাল কাপড় খুলে পরবে, ততদিনে হয়ত অনেক বড় খেসারত দিতে হবে। তা কি সরকারের পতন নাকি রক্তের দামে কেনা এই বাংলাদেশ এর পতন তা বুঝতে পারছি না।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: এই দেশ এমনিতেই অনেক রক্ত দিয়েছে এবং নিয়েছে,মুক্তমনারা না হয় আর একটু রক্ত দিল তবু একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ দেখতে চাই তার বিনিময়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.