নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমকামী ব্যক্তির প্রতি এত ঘৃনা কেন?

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু তন্নয় হত্যার ফলে তথাকথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্টার দুঃস্বপ্নে বিভোর কিলারদের কিলিং মিশনে নাস্তিক ব্লগার ও নাস্তিক লেখকের সাথে সমকামী অধিকারকর্মীও নতুন করে যোগ হল। জুলহাজ মান্নান সমকামী ছিলেন কিনা তা
যতটানা বিবেচ্য ছিল, তার চেয়েও ইসলামি মৌলবাদীদের নিকট বেশী বিবেচ্য ছিল তিনি সমকামী অধিকার আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করলেই যে নিজেকে সমকামী হতে হবে তা কিন্তু নয়। কারণ বিষমকামী ব্যক্তিও সমকামী অধিকার
আন্দোলনে অগ্রগামী ভুমিকা পালনের অহরহ নজির দেখা যায়।

বাংলাদেশে বসবাসরত সমকামী বা সমকামী অধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাই যে শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি (সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন) ও লিঙ্গ পরিচয় (জেন্ডার আইডেন্টিটি)’র কারনে সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হন তা কিন্তু নয়, সমগ্র বিশ্বেই সমকামী ব্যক্তিরা এইরূপ সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন।

যেহেতু জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১ ধারায় সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে বলে ঘোষনা করা হয়েছে, সেহেতু লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার (এলজিবিটি)সহ সকল মানুষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জীবনের অধিকার; ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার; স্বেচ্ছাচারী আটক, গ্রেফতার ও নির্যাতিত না হওয়ার অধিকার; মত প্রকাশ, সংগঠন করা ও শান্তিপূর্ন সমাবেশের অধিকারসহ একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সহজাত সকল অধিকার পূর্ণরূপে উপভোগ করার অধিকারী।

বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হিসেবে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করে সকল প্রকার বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য
সমসুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতদ্বসত্ত্বেও বাংলাদেশে সমকামী ব্যক্তিরা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারনে হত্যা, ধর্ষন, শারীরিকভাবে আহত, নির্যাতন, স্বেচ্ছাচারী আটক এবং চাকুরী, স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যসহ বিভিন্নরকম সহিংসতার শিকার হন।

পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সমকামিতা বা সমলিঙ্গীয় মিলন আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কি তা যদি দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ণ সম্মতিতে হয় তবুও। বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারা সমকামিতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অপরাধ হিসেবে গন্য করছে। উক্ত ধারায় উল্লেখ করেছে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে (যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে) দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

সমকামিতার অধিকারকে বৈধতা দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে গত ১৭ জুন ২০১১ ইং তারিখে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। উক্ত প্রস্তাবে যৌন প্রবৃত্তি বা লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে কোন ভেদাভেদ থাকবে না এবং লেসবিয়ান, গে, বাই-সেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডাররা অন্য লিঙ্গের মানুষের মতোই সমঅধিকার ভোগ করবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সমকামিতা যদিও প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক বিষয় তবুও বিশ্বের অধিকাংশ সমাজে তাদের সবসময় আলাদা করে নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে এবং আমাদের দেশে তা পাপ বলে গন্য করা হয়। ফলে তাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব জায়গায় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। কিন্তু যৌন প্রবৃত্তিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অর্থাৎ লেজবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রানজেণ্ডার ব্যক্তি (সমকামী) সমাজের আর দশজন ব্যক্তির চেয়ে আলাদা কেউ নন। সমকামী ব্যক্তিও সমাজের অন্যান্য মানুষের মানুষের মত স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করে থাকেন। তাদের জীবনেও রয়েছে স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার লক্ষ্য, রয়েছে জীবনে সুখি হওয়ার বাসনা।

আমরা যদি সমকামী ব্যক্তিদের সংগে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত অতিবাহিত করে তাদের জানার চেষ্টা করি তাহলে অনুভব করতে পারব যে তারা আসলে আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। তারাও সমাজের অন্যান্য মানুষের মত নানান প্রকৃতির চাকুরীর সাথে জড়িত থেকে বিভিন্নভাবে জীবন যাপন করে থাকেন। সকল গে ব্যক্তি যে রান্না করতে জানে বা টাইট পোশাক পরিধান করে বা বাজার করতে বা গান গাইতে পছন্দ করে তা কিন্তু নয়। তেমনি সমল লেসবিয়ান ব্যক্তি ছোট চুল রাখতে বা পুরুষের পোষাক পড়ে একজন পুরুষের মত আচরণ করে তাও কিন্তু নয়।

অন্যকে ভালবাসা বা যত্ন নেওয়ার বিষয়টি যে শুধুমাত্র যৌনপ্রবৃত্তির সাথে সংশ্লিষ্ট তা কিন্তু নয় এবং ভালবাসার ক্ষেত্রে যে কোন লিঙ্গ পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয় তা আমাদের সমাজে এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। সমাজের অন্যান্য মানুষের মত পারস্পারিক আকর্ষন বোধ, ভালবাসা, সম্মান ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে সমকামী ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ​কোন ব্যক্তি কাকে ভালবাসছে সে ব্যপারে মাথা ঘামানো আমাদের যে কাজ নয় তা আমাদের বুঝতে হবে। ভালবাসা প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পূর্ন নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যপার এবং তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কোন ভাবেই ব্যহত করে না। তাছাড়া পৃথকভাবে বসবাসরত অন্যের জীবণ যাপন প্রনালী খুব কমই আপনার জীবন যাপন প্রনালীকে প্রভাবিত করতে পারে এবং আমরা যদি না চাই তবে সমকামী ব্যক্তি কখনো আমাদের সাথে জোরপূর্বক সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে সমকামী ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সমকামী হয় না এবং স্ট্রেইট ব্যক্তিরা যেমন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন বোধ করে, সমকামি ব্যক্তি চাইলেই সেভাবে নিজেদের স্ট্রেইট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। সমাজে অন্য দশজন ব্যক্তির সাথে একত্রে বসবাসের জন্য আমাদের অবশ্য সংস্কারমুক্ত খোলা
মনে অধিকারী হওয়া উচিত। সকল ব্যক্তি আমাকে সেক্সুয়ালী আকর্ষন করবে বা করে তা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। আমি যদি একজন মেয়ে মানুষ হই তবে কি আমি ভেবে নিব যে সকল পুরুষ মানুষই আমাকে সেক্সুয়ালী পেতে চায়, যেহেতু তারা মেয়ে মানুষ পছন্দ করে?

যদি আমরা তা মনে করি তবে সেটা অত্যন্ত হাস্যকর হবে এবং এটা সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি লিঙ্গগত কারণে আকর্ষন বোধ করলে যে সে তার প্রতি সেক্সুয়ালী আগ্রহী তা কিন্তু নয়। একজন ভিন্ন যৌন প্রবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি অর্থাৎ সমকামী ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা এবং বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্ব করার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যদি আমাদের এ বিষয়ে মতভেদ থেকে থাকে তবুও আমাদের সমকামী ব্যক্তিদের অপমান করা উচিত নয়। বরং শান্তভাবে বিষয়টি বিবেচনা করে সমকামী বিবাহসহ সমকামিতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর বিপরিতে মতামত প্রদানসহ সকল প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের আছে। কিন্ত সমকামী ব্যক্তির প্রতি কোনভাবেই বৈষম্য বা তাদের নির্যাতন করার অধিকার আমাদের নেই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০

আশরাফ ও নীল বলেছেন: সমকামী সম্প্রদায় মানবজাতির সঙ্গে এমনভাবেই বেমানান, যে আল্লাহ তায়ালা সে জাতিকে তো রাখেনই নি, তারা যে এলাকায় বসবাস করত, তাকে উল্টো করে সাগরের নিচে তলিয়ে দিয়েছেন। এরা এতটাই ঘেন্নার পাত্র। আমি যদিও সামনাসামনি কন সমকামীকে দেখিনি - রাস্তায় ওপেন সেক্স করা কুকুরদের দেখে আমার এতটা ঘেন্না লাগেনা, এদেরকে যতটা লাগে। এরা কেবল মানবজাতির নয়, প্রাণী জগতের জন্যও লজ্জার।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: যে যেভাবে ভাল থাকে থাকুক না।

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: দৈনন্দিন জীবনে এত এত কাম থাকতে সমকামের দরকারটা কি?

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: লোল

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: সমকামিতা যদিও প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক বিষয় তবুও বিশ্বের অধিকাংশ সমাজে তাদের সবসময় আলাদা করে নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে এবং আমাদের দেশে তা পাপ বলে গন্য করা হয়।[/sb
প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক বিষয় কখনই কেউ অস্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করে না। যা স্বাভাবিক আচরণ বিরুদ্ধ হয়ে অন্যের চোখে ঠেকে মানুষ তাকেই অস্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করে। মানসিক বিকারগ্রস্তকে প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক বিষয় বলে আইন করে আরও উন্মাদ বানানোর কোনো মানে নেই। তাইলে পাগলা গারদ বলতেও কিছু রাখার দরকার ছিলো না। পাগলরাও মানুষ হিসেবে সমান অধিকার প্রাপ্ত, সমাজে সবার সাথে সমান ভাবে চলাচলের অধিকার তাদের রয়েছে এই যুক্তি দিয়ে সবাইকে পথে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তখন বুঝা যেত কত গমে কত আটা! হ্যাঁ, পাগলরাও মানুষ। কিন্তু তবুও সে বাকি মানুষদের সাথে বেমানান এবং ক্ষেত্র বিশেষে হুমকিস্বরূপ। তাই মানুষের নিরাপত্তার খাতিরেই তাদের পৃথক রাখতে হয়। ঠিক তেমনি সমকামিদের মুক্তবাদী আখ্যা দিয়ে ছেড়ে দিলে বাকি মানুষরাও হুমকির সম্মুখীন হবে। আর ঠিক এই সমস্ত ফালতু ব্যাপারগুলো থেকে নিরাপদ থাকার জন্যেই ধর্মের খুব দরকার!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: ওয়েল সেইড।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

নতুন নকিব বলেছেন:



''আশরাফ ও নীল বলেছেন: সমকামী সম্প্রদায় মানবজাতির সঙ্গে এমনভাবেই বেমানান, যে আল্লাহ তায়ালা সে জাতিকে তো রাখেনই নি, তারা যে এলাকায় বসবাস করত, তাকে উল্টো করে সাগরের নিচে তলিয়ে দিয়েছেন। এরা এতটাই ঘেন্নার পাত্র। আমি যদিও সামনাসামনি কন সমকামীকে দেখিনি - রাস্তায় ওপেন সেক্স করা কুকুরদের দেখে আমার এতটা ঘেন্না লাগেনা, এদেরকে যতটা লাগে। এরা কেবল মানবজাতির নয়, প্রাণী জগতের জন্যও লজ্জার।''

-মন্তব্যে সহমত।

এই পোস্ট লেখকের প্রতি,
স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যে বিকৃত রুচির পাপিষ্টদের থেকে তাঁর দয়ার নজরকে তুলে নেন। আপনি কি তাদের প্রতি সদয় হতে চান? সহৃদয়তা আর হৃদ্যতায় তাদের মুগ্ধ করতে চান? তাদের দুষ্কর্মের উতসাহদাতার ভূমিকায় নিজেকে ভাবতে ভাল লাগে?

মাফ করবেন, আমি আপনার এই পোস্টটি পড়ি নি। শুধু শিরোনাম ''সমকামী ব্যক্তির প্রতি এত ঘৃনা কেন?'' টা দেখে মন্তব্য করলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.