নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসডিজি, এমডিজি ও বাংলাদেশ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১০

আজকের বণিক বারতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আমার এই লেখা





বিশ্বকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষা থেকে মুক্ত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ রয়েছে অনেক। যদিও সেসব উদ্যোগের আন্তরিকতা, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, এর পরও কিছু কিছু উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে, কিছু উদ্যোগ হয়তো ভালো কিছু করার পথ দেখিয়েছে, আর কিছু হয়েছে ব্যর্থ।

পুরো পৃথিবীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে লক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা ২০০০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) তৈরি করেছিলেন। ২০১৫ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার পর কী? ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্য বা উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আর এজন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) প্রণয়ন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে খোদ জাতিসংঘ।

এসডিজি: ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্য

দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা, নারী উন্নয়ন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, টেকসই পরিবেশ, এইচআইভি এইডস ও সংক্রামক ব্যাধি এবং বিশ্ব সহযোগিতা— এ আট ক্ষেত্রে বিশেষ কতগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করে, সেগুলো পূরণের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৫ সাল। ২০১৫ সাল যতোই এগিয়ে আসছে, তখনই এর পরবর্তী লক্ষ্য কী হবে; তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে। এরই সূত্র ধরে ২০১২ সালের জুনে ব্রাজিলে রিওতে বিশ্বের ১৯২টি দেশ একটি প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছে।

রিও সম্মেলনে লক্ষ্যগুলোকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৩০ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি করে দেয়, যারা সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে নতুন লক্ষ্য সম্পর্কে তাদের সুপারিশ পেশ করবে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের প্যানেল

২০১৫-পরবর্তী বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কী হওয়া উচিত, সেটা খুঁজে বের করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বিশ্বের ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল গঠন করে দিয়েছেন; যেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতি এলেন জনসন সিরলেফ ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ড. সুশীলো বামবাং ইয়াধুনো কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হোন। উচ্চপর্যায়ের এ প্যানেল পৃথিবীজুড়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে। এ প্যানেলের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা ১২০টি দেশে তৃণমূল সংগঠন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জোট পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি সুশীল সমাজ সংগঠনের সঙ্গে ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্য ও টার্গেট নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া তারা কথা বলেছেন ৩০টি দেশের ২৫০টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে, যারা ৮ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি কর দিয়ে থাকেন। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও ও সুশীল সমাজ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে।

সুশীল সমাজ সংগঠনের উদ্যোগেও পৃথিবীব্যাপী এ বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যেখানে স্থানীয় সংগঠন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে এবং তাদের বক্তব্য প্যানেলের বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। সুশীল সমাজ প্রতিনিধিরা উক্ত প্যানেলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সময় নানা প্রান্তের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে ফোরাম গঠন করেছে এবং ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন আলোচ্য নিয়ে মতবিনিময় করেছে।

উচ্চপর্যায়ের প্যানেল ৩০ জুন, ২০১৩ “A New Global Partnership : Eradicate Poverty and Transform Economics through Sustainable Development” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে ২০১৫-পরবর্তীকালে উন্নয়নের ক্ষেত্র হিসেবে মোট ১২টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো— ১. দারিদ্র্য নিরসন; ২. নারী ও মেয়েশিশুর ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার সমতা অর্জন; ৩. মানসম্মত শিক্ষাদান ও আজীবন শিক্ষা; ৪. সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা; ৫. খাদ্যনিরাপত্তা ও উত্তম পুষ্টি নিশ্চিত করা; ৬. পানি ও স্যানিটেশনে বৈশ্বিক প্রবেশাধিকার অর্জন; ৭. টেকসই জ্বালানির সুরক্ষা; ৮. কর্মসংস্থান সৃষ্টি, টেকসই প্রতিবেশ ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি; ৯. খনিজ সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা; ১০. সুশাসন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করা; ১১. স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ নিশ্চিত করা এবং ১২. একটি বৈশ্বিক সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ প্রশ্বস্ত করা।

খালি চোখে দেখলে এ লক্ষ্যগুলোকে বেশ ভালোই মনে হয়। কিন্তু মুশকিল হলো এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রচুর অর্থায়নের প্রয়োজন হবে, সেই অর্থায়ন আসবে কোথায় থেকে? অতীত অভিজ্ঞতা বলে, যারা সম্ভাব্য মূল অর্থ জোগানদাতা, সেই ধনী দেশগুলো এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি।

বিশ্লেষকরা উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন। সুশীল সমাজ থেকে এ প্রতিবেদনকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য ও ফাঁকা বুলি বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে বলছেন— অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিদ্যমান উন্নয়ন ধারায় তথাকথিত মুক্তবাজারের প্রাধান্য, উন্নয়নে বেসরকারি অর্থায়ন এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। উচ্চপর্যায়ের প্যানেল এসব কাঠামোগত বিষয় এড়িয়ে গেছে। ২০১৫-পরবর্তী সময়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কীভাবে কাজ করবে, তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা উচ্চপর্যায়ের প্যানেল দেয়নি। বরং মুক্তবাজার অর্থনীতির বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদনে দ্বান্দ্বিক ধারণা পোষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়নি, ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন পরিকাঠামো কি মুক্তবাজারের সম্প্রসারণ হিসেবে কাজ করবে, যা মূলত আয়বৈষম্য বাড়ায় ও ধনী-গরিব ব্যবধান জোরদার করে? নাকি একটা নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থাকে স্বাগত জানাবে, যা স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে, যেমন: সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি, সম্পদের পুনর্বণ্টন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

উচ্চপর্যায় প্যানেলের প্রতিবেদনে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি অর্থায়নের ওপর অনাবশ্যক রকম জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, একটা জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থার অধীনে উন্নয়নের জন্য অর্থায়নে প্রাইভেট সেক্টরের আগ্রহ তেমন একটা দেখা যায় না। উপরন্তু, পুঁজি সবসময় মুনাফার ব্যাপারে আগ্রহী, উন্নয়নের ব্যাপারে নয়। কাজেই আসন্ন উন্নয়নের জন্য এর ওপর নির্ভর করা একে তো প্রশ্নসাপেক্ষ, তার ওপর ক্রিয়াশীল অংশীদারদের মধ্যে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করেছে।

এমডিজি, এসডিজি ও বাংলাদেশ

ধনী দেশগুলোর জন্য এমডিজি বা এসডিজির বিশেষ কোন গুরুত্ব না থাকলেও বাংলাদেশের মতো গরিব দেশর জন্য এ ধরনের লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে এ ধরনের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার ক্ষেত্রে এসব দেশের প্রধান সমস্যাই হলো পর্যাপ্ত অর্থের অভাব। যদিও অনেকে মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর উন্নয়নের দায় ধনী দেশগুলোরই নেয়া উচিত।

বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত ও কিছু উন্নয়নশীল দেশ কেন এখনো অনুন্নত, তার কিছু ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, আজকের ধনী দেশগুলোর বেশির ভাগই স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় উপনিবেশ কায়েম করে তাদের সম্পদ শোষণ করেছে, যা পরবর্তীতে তাদের শিল্প বিকাশে সহায়ক হয়েছে। ইদানীং অনেক স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। কারণ শিল্পোন্নত দেশগুলো ব্যাপক পরিমাণ কার্বন উদগীরণ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটেছে। সুতরাং উন্নত দেশগুলোকে আজ এ পরিবেশ বিপর্যয় ও কার্বন ঋণ স্বীকার করতে হবে। নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে ক্ষতি তারা করছে তার দায় আজ তাদের বহন করতেই হবে।

বাংলাদেশে এমডিজি: ভুল লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা!

যেহেতু বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এর উন্নয়নের জন্য ধনী দেশগুলোর সমর্থন নানাভাবেই প্রয়োজন। আর এজন্যই বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এসডিজি বাংলাদেশের জন্য কতটুকু পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারবে? এ প্রশ্নের উত্তর আছে এমডিজিতেই! এমডিজি পূরণে বাংলাদেশের অর্জন, বিদেশীর সহযোগিতার ধরন পরীক্ষা করলেই আসলে এসডিজি বা নতুন এ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশকে কী দেবে, সেটা হয়তোবা বোঝা যেতে পারে।

কিছু দ্বিমত থাকলেও এমডিজির বেশকিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন যে বেশ ভালো, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যদি বলা হয়, লক্ষ্যই তো ছিল ভুল! অন্তত একটা ক্ষেত্রে তো তথ্য-উপাত্ত দিয়েই এ কথা বলা যায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ দারিদ্র্য কমাবে। এই ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ দারিদ্র্য কমানো হবে কোন ভিত্তিতে? ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ দরিদ্র ছিল তার ভিত্তিতে! ১০ বছর আগের তথ্য কেন ভিত্তি হিসেবে ধরা হলো, সেটা আজো জানা গেল না। ফলে বাংলাদেশ যদি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য, ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমাতে সক্ষমও হয়, তবুও বাংলাদেশের পাঁচ-ছয় কোটি মানুষ, দারিদ্র্যের মধ্যে থেকে যাবে। ভিত্তি বছর হিসেবে যদি ২০০০ সালকে নেয়া হতো, তাহলে তার পরিমাণ বেশকিছু কমানো যেত।

দরিদ্র কারা?

প্রায় সবসময়, সব আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রার একটি বিশেষ দিক দারিদ্র্য বিমোচন। কিন্তু দরিদ্র কারা? এমডিজিতে দারিদ্র্য নির্ণয় করা হয়েছে আয় দ্বারা। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে দারিদ্র্যকে এত সীমিত আকারে দেখার আসলে সুযোগ কম বলেই মনে করেন অনেকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সম্পদে প্রবেশাধিকার, কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা লাভ, নিজের কথা বলার স্বাধীনতা বা সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়কেও দারিদ্র্য পরিমাপের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি রাখেনি: এবার রাখবে?

বাংলাদেশের এমডিজি অর্জনের জন্য প্রতি বছর ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ গড়ে প্রতি বছর বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। শুধু বাংলাদেশ কেন, পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর উন্নয়নে আসলে কখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, স্পষ্ট করে বললে ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কথা ছিল, ধনী দেশগুলো তাদের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা দশমিক ৭ ভাগ পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে। সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস আর লুক্সেমবার্গ ছাড়া অন্য কোনো ধনী দেশ তাদের দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। সুতরাং এক্ষেত্রে সন্দেহ আছে এসডিজির অর্জন নিয়েও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যে অর্থের প্রয়োজন হবে, তার জন্য ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি হয়তো দেবে, কিন্তু যথারীতি সেটা তারা পূরণ করবে না।

ঋণ পরিশোধ: এমডিজি অর্জনের অন্যতম বাধা

বৈদেশিক সাহায্যের অপ্রতুলতা এবং বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান বাধা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ২২ হাজার ৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, অথচ একই অর্থবছর মোট বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া গেছে ২ হাজার ৩৩ মিলিয়ন ডলারের। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৫ মিলিয়ন ডলার। অন্য এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়কালের তুলনায় ২০১১-১২ অর্থবছর বৈদেশিক সাহায্য প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবছর এর হার ছিল ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

২০১০-১১ অর্থবছর দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৩২২ ডলার, যা মোট জিডিপির ২২ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থ বছরের তুলনায় জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের বোঝা ২০১০-১১ অর্থবছরে বেড়ে যায় ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর মোট বাজেটের একটা বড় খরচ চলে যায় ঋণ পরিশোধের জন্য। আর এজন্য ব্যাহত হয় স্বাভাবিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। ২০০৬-৭ অর্থবছরের এক হিসাবে দেখা গেছে, ওই বছর মোট উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতের মোট বাজেটের ১১ শতাংশ ব্যয় হয় ঋণ পরিশোধ খাতে, আর একই সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ব্যয় হয় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ হয় মোট ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

জলবায়ু পরিবর্তন: উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম বিবেচনা হতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বিপদাপন্ন দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব দেশের এমডিজি অর্জন ও উন্নয়নের অন্যতম বাধা। বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও এর পরিণাম ভোগী অন্যতম দেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার উন্নয়ন কৌশলে এ বিষয় বিবেচনা না করলে কোনোভাবেই বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। তাছাড়া অন্য আরেকটি হিসাবে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে দুর্যোগ খাতে দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ব্যয় করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের মোট প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়বে। দেশের সুশীল সমাজ সংগঠনগুলো দাবি করছে, যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা একেবারই নগণ্য, তাই এটি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থ তাদেরই জোগান দিতে হবে; যারা এ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এসডিজিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সবার জন্য এক প্রেসক্রিপশন?

এ অভিযোগটা এমডিজির বেলায় ছিল প্রকটভাবে। আর সেটা হলো, সব দেশর সমস্যা যেমন এক নয়, উন্নয়ন কৌশল বা লক্ষ্যও এক হতে পারে না। একই মাপের জামা সবার গায়ে ঠিকভাবে নাও মানাতে পারে। কিন্তু এমডিজিতে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল সব দেশের জন্যই একই রকম। এসডিজির বেলায়ও যদি একই কৌশল নেয়া হয়, তবে সেখানে সাফল্য আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিকে সম্পদ বণ্টনের ব্যবস্থা না করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয় বলেই মনে করেন অনেকে। পাশাপাশি যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় খরচ না বাড়িয়ে, ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বিশ্বের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও হতে হবে দারিদ্র্যবান্ধব। তবেই সফল হতে পারে এসডিজি।

- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.