নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো বাংলাদেশ সফর করছেন। আমাদের সংবাদপত্রের পাতাগুলোতে তার উপস্থিতি এবং কর্মযজ্ঞের উচ্ছ্বসিত উপস্থিতি দেখি। উদ্বেগ নিয়ে খেয়াল করি, বাংলাদেশ তার কাছে সহযোগিতা চাচ্ছে। মনে হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার উপরই নির্ভর করছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার দেন-দরবা্র করার জন্যও তার কাছে ধর্ণা দিতে দেখি। আমাদের মিডিয়াও ইনিয়ে-বিনিয়ে সেগুলো লিখছে, আমাদের জানাচ্ছে। আমরাও সেটা দেখছি, আর আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে আমরা চাইছি সহযোগিতা? এই সংস্তাটি কার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, কাদের পদলেহন করে, কাদের এজেন্ডা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সেটা কি আমরা ভুলে গেছি? নাকি ভুলে যেতে চাইছি? আসলে আমরা প্রাণপনে চোখ-মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছি। মুখ বন্ধ করে রাখছে আমাদের মিডিয়াও। এর প্রমাণ স্পষ্ট, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালকের বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ হয়েছে এই বাংলাদেশেই, খোদ রাজধানী ঢাকায়। কিছু মানুষ দেশের স্বার্থে কিছু কথা তুলে ধরার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছে, সংবাদ সম্মেলন করেছে। কিন্তু তার সংবাদ কই? এড়িয়ে গেছে আমাদের মিডিয়া। যার কাছে এত কিছু পাওয়ার আছে, সম্ভবত তাকে বিব্রত করতে চায়নি কেউ।
মহাপরিচালক মহোদয় আসলে বাংলাদেশের কোনও উপকার করতে আসেননি, ওনি এসেছেন সাম্রাজ্যবাদী কিছু শক্তির কিছু প্রেসক্রিপশন গরিব এই দেশটাকে গেলাতে। মুখের উপর তিনি ঠাস করে কিন্তু বলেই দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের কোনও সুপারিশ তিনি তুলতে পারবেন না। তিনি কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসর প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ’র চাপ এ্ই্ দেশটাকে দিতে কোনও ভুল করবেন না। আর মহপরিচালক মহোদয় ইউরোপ আমেরিকার ভর্তুকির ব্যাপারে মুখে কুলুপ লাগিয়ে রাখলেও বাংলাদেশকে যে এ ব্যাপারে প্রেসক্রিপশন দেবেন সেটাও বেশ বোধগম্য।
আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, রবার্তো’র এই সফরে বাংলাদেশ সহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার (Duty Free Quota Free Market Access) প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এই প্রবেশাধিকার বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অপরিহার্য নয়। কারণ, এতদিন এই সুবিধা ছাড়াই বাংলাদেশের ক্সতরি পোষাক তার মান ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিয়ে বিশ্বের বাজারে টিকে আছে। উল্লেখ্য যে, আমেরিকা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে অনেকগুলো পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে রাজী হলেও আমাদের প্রধান রপ্তানী পণ্য তৈরি পোষাকে তা দিতে রাজী নয়। আমরা এ খাতে বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক দিয়ে থাকি, আর তার বিপরীতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাই যা বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়, আমাদের জন্য তাদের দয়া-দাক্ষিণ্যের নজির প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে “ইকুয়েল ট্রিটমেন্ট” নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করলেও তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই।
কিন্তু এই মৌখিক আশ্বাসের বিনিময়ে টিসা (Trade in Services Agreement) ও টিফা (Trade and Investment Framework Agreement)-র মত চুক্তি মেনে নেবার জন্য বাংলাদেশ সহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছে, তা কোথাও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মি. রবার্তো ইতিমধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও গিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে চাপ দিয়েছেন। এই ধরনের চুক্তি সম্পন্ন হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ইত্যাদির মত অপরিহার্য সেবা খাত বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির অবারিত মুনাফার একচেটিয়া ক্ষেত্রে পরিণত হবে এবং দরিদ্র মানুষ অধিকার বঞ্চিত হবে। টিফা-র মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য স্বল্পোন্নত দেশে অবাধ প্রবেশের যেসব ছোটখাট বাধা রয়েছে তা অপসারিত হবে দরিদ্র দেশ ও তার জনগণের স্বার্থকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে।
দেশের স্বার্থে আমাদের মিডিয়াগুলো এই সব বিষয় কেন তুলে ধরেনি, বা তুলে ধরতে পারছে না। সম্ভবত তারা সংশ্লিষ্টমহলকে চটাতে চাইছেন না। আখেরে মিডিয়া হাউসের আড়ালে যে বিনিয়োগ-ব্যবসা আছে সেগুলোর ব্যাপারে তো আর ঝুঁকি নেওয়া যায় না! তাদের বলি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চাইছে বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থান নিক যেখানে দেশটি সকল ক্ষেত্রে নিজের দেশের কোম্পানি আর বহুজাতিক কেম্পানিগুলোকে সমান সুযোগ দেওয়া হবে। অার এতে করে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদেরই ব্যবসা-শিল্প-অর্থনীতি।
©somewhere in net ltd.