নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'আপলোগ যো বলতেহে, ওহ নেহি লিখতেহে\'

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪৭

১। স্বাদ-বিস্বাদ বানান শিখতে গিয়ে ছেলে রামিন বললো, ‘বাবা, তুমি বলতে চাইছো, এটা 'ব'-এর মতো দেখা গেলেও ‘ব’ অক্ষর না, এর নাম ব-ফলা বা একটা কিছু। আবার বলছো এই ‘ব’-এর উচ্চারণ হবে না! ‘স’ এর নিচে এই ‘ব’ থাকলে উচ্চারণ করতে হবে শ্শ? তাহলে স্বাদ না লিখে শাদ লিখলেই তো হয়ে যেতো, বিশ্শাদ লিখলেই হয়!' বুঝাতে চাইলাম বিষয়টা, থামিয়ে দিয়ে রামিনের ক্ষোভ, 'যারা এই বইটা লিখেছে, তাঁরা পঁচা!’ খুব কষ্ট পেয়েছি বাংলার প্রতি তার ক্ষোভ দেখে, কিন্তু শিশুমনে এই ক্ষোভ কি আমরাই তৈরি করে দিইনি? উচ্চারণ যদি শাদ করি, বানান কেন সোয়াাদ (মানে স্বাদ) লিখতে হবে? নাকি কোনও একদিন যেন বাঙালি শিশুরাই বাংলাকে ঘৃণা করতে পারে সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে ষড়যন্ত্র করেই বাংলা ব্যাকরণ এরকম উদ্ভট করে সাজানো?

২। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ঠিক একই ধরণের প্রশ্ন আমি করেছিলাম স্কুলের স্যারকে। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর ছিলো, 'এটা সংস্কৃত থেকে এসেছে তো, তাই।' কিন্তু আমি তো কথা বলি বাংলায়, সংস্কৃত থেকে এলে সংস্কৃতের মতো উচ্চারণ কেন করি না? লিখি সংস্কৃত নিয়মে, পড়বো বাংলা নিয়মে-এটা কেমন কথা? এটা তো বানান ‘ইন্ডিয়া’ লিখে 'ভারত' উচ্চারণ করার মতো! প্রয়াস, চাষ, পলাশ- এই তিন শব্দের শেষের তিন অক্ষরের উচ্চারণের পার্থক্য কী? পানি আর পাণি-এই দুই শব্দের দুই অর্থ বুঝলাম, কিন্তু উচ্চারণ? কেন, এক পানি দিয়েই দুটো অর্থ প্রকাশ সম্ভব না? ইংরেজি Run শব্দের অর্থ আছে ৬শ-এর মতো!

৩। মধুর এই বাংলা ভাষাকে নিয়ে ঈর্ষাকাতর হয়েই কিনা জানি না, নানা চক্রান্ত আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। জেনে, না জেনে অনেকে বাংলার সর্বনাশ করেছেন। হ্যালহেড বাংলা ব্যাকরণ লিখেছেন, অথচ তাঁর বাংলা জ্ঞান ছিলো সীমিত। বাংলার মানুষ কিভাবে কথা বলে সেটাও তিনি ঠিক জানতেন না। তিনি তাই বাংলা ব্যাকরণ লিখেছেন এক সংস্কৃত পণ্ডিতের সহযোগিতা নিয়ে। সর্বনাশের শুরু এখানেই। এই দুজন মিলে আমাদেরকে সংস্কৃত নিয়মে বাংলা শেখাতে চেয়েছেন। সাধারণত মানুষের মুখের ভাষাই বইয়ের ভাষা হয়, মুখের ভাষাকে কেন্দ্র করে হয় ব্যাকরণ, অথচ হ্যালহেড আমাদের বইয়ের ভাষায় কথা বলতে শেখাতে চাইলেন। উইলিয়াম ক্যারি বাংলা জানতেন, কিন্তু তিনি মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুবাদ করার মতো করে বাংলা ব্যাকরণ লিখেছেন। এরা সবাই এসে আমাদের বললেন, আমরা সারা জীবন যে ‘নিশশাশ’ বলে এসেছি সেটা ভুল, শুদ্ধ উচ্চারণ ‘নিসওয়াস’। বাংলাকে শুদ্ধিকরণের নামে, এভাবেই আমাদেরকে বহুদিন বাংলা ব্যাকরণের নামে আসলে পড়ানো হয়েছে সংস্কৃত ব্যাকরণ! এজন্যই ‘শাদ’ উচ্চারণ করলেও লিখতে হয় ‘স্বাদ’! আর এভাবেই গর্ব করার মতো বাংলা ভাষাটাকে নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা ‘বিস্বাদময়’ করে তুলছি।

৪. এক বন্ধু বাংলা নিয়ে ভিনদেশী একজনের একটা মন্তব্য শুনেয়েছিলো। বাংলা ভাষা শিখতে এসে বিড়ম্বিত ভদ্যলোক বলেছিলেন,আপলোগ যো বলতেহে ওহ নেহি লিখতেহে! বলাবাহুল্য, তিনি বাংলা ভাষা শেখার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত পরিত্যাগ করতেই বাধ্য হলেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভাষার ব্যকরণ যত সহজ সরল হবে, তত টেকসই হবে এবং সহজে ও সর্বতোভাবে পালিত হবে।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৩

নূর আলম হিরণ বলেছেন: এসব প্রশ্নের উদয় আমার মনে প্রায়ই হয়। আমার কাছে মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণকে অযথাই কঠিন করা হয়েছে।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯

বিটপি বলেছেন: বাংলা ভাষাকে নষ্ট করেছে বাংলা একাডেমী। তারা একটা উচ্চারণ অভিধান বের করেছে - যেখানে শ্রাবণ এর উচ্চারণ স্রাবন আর সবুজ এর উচ্চারণ শবুয। এইজন্য বাংলা ভাষার উচ্চারণ রীতি আমার একদমই পছন্দ নয়। যেখানে যাই হোক না কেন গরু বানান আমি গরুই লিখব - গোরু না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.