নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলি, কিছু কথা!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ

খুঁজে ফিরি অর্থপূর্ণ জীবন!

মুনিরেভ সুপ্রকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কার্ল মার্ক্সকে মনে পড়ছে

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৫০

কার্ল মাক্স, সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্র বিষয়ে জানাশোনা আমার নেই বললেই চলে। তবে জগতে মানুষে- মানুষে, বিশেষ করে মানব সমাজে শ্রেণীতে-শ্রেণীতে ব্যবধানটা যে ভয়ংকর সত্য, ব্যবধানটা যে আমাদের সমাজে অস্বাভাবিকভাবে স্পষ্ট- সেটা টের পাই ভীষণভাবে।

এই যেমন আজকে বিমান বন্দর থেকে বের হওয়ার সময়কার ঘটনা। যাত্রী উঠানোর জন্য কোন একটা গাড়ি দরজার সামনে আসতে না আসতেই নিরাপত্তা কর্মীদের ধমক- 'সরান সরান, তাড়াতাড়ি করেন , সামনে যান' ইত্যাদি। সম্ভাব্য জট এড়াতে এটা করা দরকারও বটে। কিন্তু খেয়াল করলাম, তাঁদের ধমকে অন্যরা তটস্থ হয়ে গাড়ি যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে নিলেও, একটা গাড়ি দিব্যি পার্ক করে আছে, একেবারে দরজার সামনে। নিরাপত্তা কর্মীরাও সামনে আর পিছনের গাড়িগুলোকে ধমক-টমক দিলেও ঐ গাড়িটাকে কিছু বলছেন না! কারণ? গাড়িটা যে বিএমডব্লিউ! নিশ্চয়ই উচু শ্রেণীরই কেউ এর মালিক! কিছুটা সমীহতো এই শ্রেণীর পাওনাই! এক পর্যায়ে তাঁরা যখন গাড়িটির চালককে সরতে বললেন, দেখা গেলো চালক পাল্টা ধমক ফেরত দিয়ে দিচ্ছেন! উচুশ্রেণীর গাড়ির মালিকের ক্ষমতার ছিটেফোঁটার প্রভাব নিশ্চয়ই।

মনে আছে ফিডব্যাক ব্যান্ডের মাকসুদ গান নিয়ে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। লোকসংগীতকে আধুনিক সঙ্গীত আয়োজনে গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি লালন গানও করেছেন। কিন্তু বাধ সাধলো তিনি যখন নতুন করে রবীন্দ্র সংগীত চেষ্টা করলেন! তীব্র প্রতিবাদ নানা মহল থেকে। কারণ? এর আগে তিনি গেয়েছেন গরিব শ্রেণীর মানুষের গান, মাঠের গান-ঘাটের গান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তো আবার উচু শ্রেণীর শ্রেণীগত আভিজাত্য আর গরিমার বিষয়!এখানে আঘাত করলেতো শ্রেণীচেতনায় লাগে, স্বাভাবিকভাবেই উচু শ্রেণীর রোষানলে পড়তে হয় তাঁকে।

টিভি চ্যানেলের মালিক উচু শ্রেণীর, তিনি বা তাঁর স্ত্রী, তাঁর আত্মীয়-স্বজন গানের নামে সাংস্কৃতিক অত্যাচার চালালেও লোকে হাসে, মজা পায়- কিন্তু আঘাত করার সাহস পায় না। উচুশ্রেণী বলে কথা। বিশাল আয়োজনে, বহুজাতিক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায়, আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে ঐতিহ্য বাহী অনেক গান এইদেশে বিকৃত করে গাওয়া যায়, কিছু সমালোচনা হয়, কিন্তু সেই অর্থে এগুলোর বিরুদ্ধে আঘাত আসে না। আসা হয়ত উচিতও নয়। ‘গেরাম’ থেকে উঠে আসা, ‘অশিক্ষিত’, 'ফকির' চেহারার কেউ কেন সেটা করবে? বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি তাও মানা যায়, কিন্তু তাই বলে রবীন্দ্রসংগীত? এটা নিচু জাত বা শ্রেণীর দু:সাহস বৈকি ! মেনে নেওয়া যায় না, মেনে নেওয়া হয়ওনি! উচুশ্রেণীর বিকৃতি, অত্যচার আমরা নিচু জাতের লোকজন কিন্তু মেনে নিতে পারি, মেনে নিতে হয় বলেই বোধয়।

এ কারণেই মানুষের মধ্যে যে কোনও মূল্যে উচু জাতে উঠার তীব্র এক প্রতিযোগিতা! সরকারি অফিসের কেরানির হাজার কোটি টাকা, ওসির অনেক বাড়ি-ফ্ল্যাট। একারণেই চারদিকে এত অত্যাচার -অবিচার-অন্যায়। সবাই জাতে উঠার তালে, যে কোনওভাবে, যেকোনও উপায়ে। জাতে উঠার, তীব্র জ্যামে তীব্র শব্দে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি চালানোর , নিজেকে বিশেষ শ্রেণীতে রূপান্তরের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা একটা অসুস্থ জাতিই না তৈরি করে ফেলে! সেটা হতে আর বাকিই কীই বা আছে?

জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের বিকল্প বিরল। বিকল্প হয়ত খুঁজলে পাওয়া সম্ভব, কিন্তু তাতে আবার ‘উচুশ্রেণীর’ই যে কষ্ট বাড়বে! প্রতিটি অফিসে প্রতি বছর কত লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়? বিপিসিতেই দুর্নীতি নেই? অপচয় নেই? শতকোটি টাকা খরচে অবকাঠামো নির্মাণ করে দেখা যাচ্ছে সেগুলো আর কোনও কাজেই লাগছে না! এইযে অপচয়, এটা বন্ধ করে মানুষের উপর চাপটা কমানো যেতো না? ১২ বছরে ৮৬ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে দেওয়া হলো, এগুলো বন্ধ করা যায় না? এক বিমান ভাড়া করে এনে ক্ষতি হয়ে গেলো ১১ শতকোটি টাকা? শাস্তি হয়েছে কারো? সেই টাকা কোথায়? গাছে পানি দিতে বিদেশে পাঠানো কেন? এই তালিকাটা দিয়ে একটা বই লিখে ফেলা সম্ভব। খুব সহজে এগুলো বন্ধ করে মানুষের উপর চাপ কমানো যেতো, এখনো যায়। কিন্তু করা হচ্ছে উল্টো। ওয়াসার এমডি’র বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ, কিন্তু সংস্থাটার খরচ কমাতে পানির দাম বাড়ে, আবার ঐদিকে বাড়ে এমডি’র বেতন!

জ্বালানীর দাম লিটারে এক লাফে ৩৪, ৪৪ আর ৪৬টাকা করে বাড়ানোটা অকল্পনীয়, কিন্তু সরকার এটা করতে পেরেছে কারণ এতে উচুশ্রেণীর তেমন কষ্ট হবে না। তাঁরা চুরি বাড়িয়ে দিয়ে, ব্যাংক লুট বাড়িয়ে দিয়ে, দ্রব্য মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে খুব সহজেই পুষিয়ে নিবে এই চাপ। কিন্তু বিপদে যে পড়বে সেই তলানীতে থাকা শ্রেণীর মানুষগুলোই। সংখ্যায় বেশি হলেও এই শ্রেণীটিকে চাপ দেওয়া সহজ, কারণ কষ্ট বাড়লেও, এরা এখন প্রায় মেরুদণ্ডহীন, প্রতিবাদের ভাষা তাঁদের আছে, কিন্তু সেই ভাষা প্রকাশের সক্ষমতা নেই।

মার্ক্স থেকেই ধার করে বলিঃ পুরো সমাজ এখন তীব্রভাবে মূলত দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছেঃ ধনী আর গরিব! (Society as a whole is more and more splitting up into two great hostile camps, into two great classes directly facing each other—Bourgeoisie and Proletariat)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:১৩

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: বাইক গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে রিক্সা গরুর গাড়ী ভ্যান গাড়ী নামাতে হবে রাস্তায়। আমরা ফিরে যাব সে মান্দাতা আমলে।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:১৯

কামাল৮০ বলেছেন: যতদিন শ্রেনী থাকবে ততদিন শ্রেনী সংগ্রাম থাকবে। একদিন না একদিন তারা জয় লাভ করবেই।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৩৩

ককচক বলেছেন: ঠিক বলেছেন। +

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৮

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: ১৬ কোটি মানুষ নিজের পিঠ বাচিয়ে নিজেরাই বাঁচে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.