নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবশিষ্টের পাটীগণিত এবং আলোর গতিতে কম্পিউটিং

১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২

{সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ- এটি অঙ্ক বিষয়ক একটি জটিল ও বড় পোস্ট}



ছোটবেলা থেকে আমরা মুখে মুখে যোগ করতে শিখি। আমাদের সংখ্যা পদ্ধতি দশমিক পদ্ধতি। অর্থাৎ এই পদ্ধিতিতে রয়েছে ০ (শুন্য) থেকে ৯ (নয়) পর্যন্ত দশটি প্রতীক। প্রতিটি সংখ্যার অঙ্কগুলোর (ডিজিট) দুটি মান থাকে। একটি তার নিজস্ব বা স্বকীয়মান এবং অপরটি তার স্থানীয় (পজিশনাল) মান। আর আমাদের সংখ্যার মান নির্ভর করে একক, দশক, শতক... এভাবে অবস্থানের ওপর।

যোগ করার সময় আমরা ডানপাশ থেকে যোগ করতে থাকি এবং করতে করতে বাম দিকে শেষ অবস্থানে এসে পড়ি। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

২৭

+১৫

---

৪২

এই যোগ অঙ্কে এককের অঙ্ক দুটোর যোগফল ১২, যার ২ বসানো হয়েছে এবং হাতে থাকে ১। এই এক দশকের যোগফল ৩-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে ৪। এখন ইচ্ছে থাকলেও আমরা দশকের যোগটা আগে করতে পারছি না, কারণ এই যোগফল নির্ভর করছে একক স্থানের যোগফলের ওপর। এভাবে ক্যারিওভার বা হাতে থাকার সমস্যার কারণে সমান্তরাল প্রসেসিং সম্ভব হয় না। যদি সমান্তরাল প্রসেসিং সম্ভব হতো তাহলে অনেক বড় যোগ নিমেষেই করে ফেলা যেত।



বাইনারি কম্পিউটার

আমাদের এখনকার কম্পিউটারগুলো চলে বাইনারি পদ্ধতিতে। এ ক্ষেত্রে দশমিকের চেয়েও সমস্যা বেশি, যদিও যোগটা সহজ। আগের যোগটাই যদি আমরা বাইনারিতে করি তাহলে কেমন দাঁড়াবে-

০১১০১১ (২৭)

০০১১১১ (১৫)

-------------

১০১০১০ (৪২)

বাইনারিতে দেখা যাচ্ছে ডানদিকের পাঁচটি স্থানেই ক্যারিওভার থাকছে (মনে রাখবেন, বাইনারিতে মাত্র দুটো প্রতীক শুন্য ও এক)। কাজেই ছয় অঙ্কের এই যোগ করার জন্য কম্পিউটারের ছয়টি ক্লক সাইকেলের দরকার হবে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে এই ছোট অঙ্কটিও ‘নিমেষেই’ করে ফেলা সম্ভব নয়। এই দুর্বলতা কম্পিউটারের নয়, আমাদের সংখ্যা পদ্ধতির।

চৈনিক জেনারেলের অঙ্ক

ক্যারিওভারের সমস্যাটা মেটানোর জন্য বিশ্বব্যাপী গণিতবিদ ও কম্পিউটারবিদগণ নানা রকম প্রকল্পের সম্ভাব্যতা খুঁজছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো-প্রাচীনকালের এক চীনা জেনারেলের কাছ থেকে পাওয়া গেল একটি সহজ সমাধান। ওই জেনারেল তার সেনাদলের সৈন্যসংখ্যা কিছুতেই বলতে চাইতেন না।

তো, আপনার অধীনে এখন কত সৈন্য-এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি সবসময় বলতেন, আমার দলের সৈন্যদের যদি প্রতি সারিতে ১১ জন করে সাজানো হয়, তাহলে শেষ সারিতে থাকবে ৯ জন, যদি ৯ জন করে সারিবদ্ধ করা হয় তাহলে শেষ সারির জন্য থাকবে তিনজন আর যদি সাতজন করে সাজাও তাহলে শেষ সারিতে থাকবে ৫ জন। অঙ্কটা তুমি করো। অর্থাৎ ওই জেনারেল একটি নির্দিষ্ট নিয়মে শুধু অবশিষ্টগুলো বলতেন।



গণিতবিদরা দেখলেন চীনা জেনারেলের এই ধাঁধার মধ্যে রয়েছে একটি নতুন সংখ্যা পদ্ধতি-অবশিষ্টের সংখ্যাপদ্ধতি বা রেসিডিউয়াল নম্বর সিস্টেম। এবার দেখা যাক, এই পদ্ধতি আমাদের ক্যারিওভার সমস্যার সমাধান করতে পারে কি না?

অবশিষ্ট নম্বর পদ্ধতি : উদাহরণ

অবশিষ্ট সংখ্যা পদ্ধতির একটা ভিত্তি থাকবে, তবে সেটা একাধিক সংখ্যা হতে পারে। আমরা উদাহরণ হিসেবে একটি পদ্ধতি বিবেচনা করতে পারি, যার ভিত্তি হবে [৩, ৫ ও ৭]। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে যেকোনো সংখ্যাকে প্রকাশ করা হবে ওই সংখ্যাকে ৩, ৫ ও ৭ দ্বারা ভাগ করলে যে অবশিষ্ট থাকবে সেই সংখ্যা দ্বারা। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ১৫ হবে [০, ০, ১]। অর্থাৎ ১৫কে ৩, ৫ ও ৭ দ্বারা ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে যথাক্রমে ০, ০ ও ১। এভাবে কিছু সংখ্যার প্রকাশ দেখানো হলো-

০. [০, ০, ০]

১ [১, ১, ১]

২ [২, ২, ২]

৩ [০, ৩, ৩]

৪ [১, ৪, ৪]

৫ [২, ০, ৫]

৬ [০, ১, ৬]

৭ [১, ২, ০]

১৫ [০, ০, ১]

১৬ [১, ১, ২]

২৫ [১, ০, ৪]

২৬ [২, ১, ৫]

২৭ [০, ২, ৬]

৪০ [১, ০, ৫]

৪১ [২, ১, ৬]

৪২ [০, ২, ০]

এখন অবশিষ্টের যোগ করা যাক-

[০, ২, ৬] (২৭)

+ [০, ০, ১] (১৫)

[০, ২, ০]

এই যোগ অঙ্কটি আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখব এতে প্রত্যেক স্থানের অঙ্ককে সরাসরি যোগ করা হয়েছে। ডান দিকের ৬ ও ১ এর যোগফল ৭, যাকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে (আমাদের ভিত্তি ৩, ৫, ৭) কোনো অবশিষ্ট থাকে না। এখন যোগফল [০, ২, ০] এর মান কত? আমাদের তালিকা থেকে দেখতে পাচ্ছি যে, [০, ২, ০] হলো ৪২। কাজেই ২৭+১৫ = ৪২ এবং তা সঠিক। হ্যাঁ, এভাবেই ক্যারিওভার সমস্যার সমাধান করা যায় চীনা জেনারেলের পদ্ধতিতে। পাঠক ইচ্ছে করলে আরো কিছু উদাহরণ নিয়ে চেষ্টা করতে পারেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কোনো হাতে রাখা ছাড়াই যোগফল বের করা যাবে। তবে এই নম্বর পদ্ধতির একটা ছোট সমস্যা আছে, সেটি হলো এই পদ্ধতিতে কত বড় সংখ্যা প্রকাশ করা যাবে সেটি সীমিত। বেশি বড় সংখ্যা প্রকাশ করতে চাইলে ভিত্তি সংখ্যাও বাড়াতে হবে।

অবশিষ্টের গণিত দিয়ে ঋণাত্মক সংখ্যাও প্রকাশ করা সম্ভব।

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে যোগ করা যায়, সেই পদ্ধতিতে বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করা যাবেই। কারণ বিয়োগ, গুণ কিংবা ভাগ আসলে কোনো না কোনোভাবে যোগ অঙ্কই।

পরিবর্তিত নম্বর পদ্ধতি

ক্যারিওভার সমস্যার সমাধান করার জন্য উপরোক্ত অবশিষ্টের গণিত বেশ ভালো পদক্ষেপ। অবশ্য এই পদ্ধতি ছাড়াও নানাভাবে ক্যারিওভারের সমস্যা সমাধান করা যায়, যার একটি হলো মডিফায়েড সাইন সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে প্রতীক হলো তিনটে ০, ১ ও -১ (মাইনাস ১)। এই পদ্ধতিতে কোনো সংখ্যাকে ইউনিকভাবে প্রকাশ করা যায় না, একই সংখ্যার নানা রকম প্রকাশ হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যারিওভার ছাড়াই যোগ করা যাবে।

আলোর গতিতে কম্পিউটিং

এই ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে কম্পিউটারকে গড়ে তোলা যাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হিসেবে। যদি ক্যারিওভার না থাকে, তাহলে যত অঙ্কের সংখ্যা হোক না কেন এক ক্লক সাইকেলেই যোগফল করে ফেলা যাবে। তবে আলোর গতিতে হিসাব-নিকাশ করতে চাইলে ‘আলো দিয়ে কম্পিউটার’ বানানো যেতে পারে। আলোর কম্পিউটারে আলোই হলো প্রধান। আলো দিয়ে খুব সহজে শুন্য আর এক বোঝানো সম্ভব। আলো থাকলে এক আর না থাকলে (অন্ধকার) শুন্য এমনটা আমরা সহজে বুঝি।



কাজেই, আলো দিয়ে প্রক্রিয়া করা যায় এমন কম্পিউটার বানাতে পারলে সেটি দিয়ে অনায়াসে নানা সমস্যার সমাধান করা যাবে। এই ধরনের কম্পিউটার অবশ্য খুব সহজে বানানো যাবে না। কারণ সব ক্ষেত্রে কো-হেরেন্ট আলোর উৎসের দরকার হবে। সেটি পাওয়া যাবে শুধু লেজার ব্যবহার করে। আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এই নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কয়েকটি আলোর কম্পিউটার বানানোও হয়েছে, যেগুলো এখন কয়েক বিটের অঙ্ক করতে পারে। আগামীতে আরো উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।



হাঁটি হাঁটি পা পা

চল্লিশের দশকে বানানো হয়েছিল এখনকার কম্পিউটারের আদি পুরুষ-এনিয়্যাক। একটি বিশাল রুমে ছিল এর যন্ত্রপাতি। ছোট একটা অঙ্ক করতে সেটির অনেক সময় লাগত। সেখান থেকে কম্পিউটার এখন হাতের তালুতে আর নিমেষে করতে পারে জটিল সব অঙ্ক। একইভাবে বিবেচনা করলে আলোকীয় কম্পিউটারের মাত্র জন্ম হয়েছে। দোলনা থেকে হাঁটাহাঁটি পর্যায়ে যেতেও এর অনেক সময় লাগবে। তবে ভিত্তিটি জোরদার হয়ে গেলেই উন্নতি হবে তরতরিয়ে।





সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮

সাগর রহমান বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। ধন্যবাদ।।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

জেনো বলেছেন: ভাল লাগল।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭

আমি সুফিয়ান বলেছেন: অবশিষ্টের গণিত ব্যাপারটা অসাধারন :)

১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৩

মুনির হাসান বলেছেন: অবশিষ্টের গণিতটা ইন্টারেস্টিং।

আমার সৌভাগ্য হচ্ছে আমি করিম স্যারের প্রেজেন্টেশনটা দেখেছি এবং তার থেকে শিখেছি। সেই জন্য ব্যাপারটা আমার কাছে আরো বেশি এক্সাইটিং। কত কী হচ্ছে সারা দুনিয়ায়।

আজ ছেলের জন্য ক্লাশের বই কিনতে গিয়েছিলাম। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য একাধিক বই-এর নাম দিয়ে দিয়েছে স্কুল থেকে। কোনটি টেক্সট আর কোনটি রেফারেন্স সেটাও পরিস্কার করে দিয়েছে।

অনেক দু:খ হল - আমাদের জাতীয় কারিকুলামে সব ক্লাশে সব সাবজেক্টে একটাই বই।

আর কতো যে পিছিয়ে থাকবো।

ভাল থাকবেন, সুফিয়ান।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: মাথাটি ম্যালা প্রাচীন তো তাই উপর দিয়েই গেল। তবে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এদেশের কিশোর যুবাদের একটা অংশকে অংকের প্রতি আগ্রহশীল করে তোলার জন্য। ।

১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০০

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
তবে, বেশি লোককে যে বোঝাতে পারছি তা না।

এখনো অনেক স্কুলে আমাদের ঢুকতে দেয় না।

তারপরও সুকা্ন্তের কবিতার মত "প্রাণপনে" লড়ে যাওয়া।

ভাল থাকবেন।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মজার তো !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.