নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়, পড়, পড়-১

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

১৯৮৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসেছি। একটা বড় ব্যাগ (স্যুটকেস না), একটা তোষক, একটা মশারী, একটা বালিশ। সঙ্গে মা। মা'কে খালার বাড়িতে রেখে বিকেলে এসে হাজির হলাম বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলে। দুইটি ছাত্র সংগঠনের চিঠি পেয়েছি আর প্রভোস্ট-এর একটা। কাজে নিশ্চিত ছিলাম যে একটা কোন অভ্যর্থনা থাকবে। কিন্তু হা, হতোম্ভি। দারোয়ান চাচা অবাক হয়ে জানতে চাইল – আপনি তোষক টোষক আনছেন কেন? আজকে তো কোন রুম দেওয়া হবে না। আর প্রভোস্ট স্যার তো আসেন সন্ধ্যা বেলায়। অফিসও তখন খুলবে। কী মুশকিল! খালার বাসায় যাবো? মা’কে যে বড় গলায় বলে আসলাম হলে থাকতে যাচ্ছি! যাকগে, দারোয়ান চাচাকে বললাম যেহেতু ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে দৌড় ঝাপ করা সম্ভব না। কাজে এগুলো আপনার রুমে থাক। সন্ধ্যায় দেখা যাবে।



সন্ধ্যা বেলায় দেখলাম আরো অনেকে হাজির। ফরম ফিলাপ করে বসে থাকলাম। এর মধ্যে হলের কেয়ারটেকারের সঙ্গে আলাপ। খুবই অবাক কারণ ঢাকা শহরে থাকার কেও নাই এমন কী হলেও থাকতে পারি এমন কাউকে আমি চিনি না!!! কেমিস্ট্রির মনোয়ার স্যার (নাম পরে জেনেছি), সহকারি প্রভোস্ট। আমার ইন্টারভিউ নিলেন। বললেন – ঠিক আছে পরশু দিন আমরা যাদের সিট দেওয়া হবে তাদের নাম টাঙ্গিয়ে দেব। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠি না।



-এই ছেলে। এবার যাও। পরশু দিন আসবা। - স্যার, আমি কই যাবো? কোথায় যাবো?



- কোথায় যাবা মানে কী? তুমি চট্টগ্রাম থেকে কখন আসছো, ঢাকায় কে আছে?



- ট্রনে এসে দুপুরে পৌছাইছি। ঢাকায় কেও নাই। -কেও নাই মানে? ব্যাগ ট্যাগ কই। -কমলাপুর থেকে সরাসরি ওখানে এসেছি। ব্যাগ-তোষক দারোয়ানের রুমে।



হতভম্ব স্যার বেল বাজিয়ে কেয়ারটেকারকে ডাকলেন। জাফর সাহেব (নাম পরে জেনেছি) জানালেন – জি, ওনার ব্যাগ তোষক দারোয়ানের রুমে আছে। দারোয়ানকে ডাকা হল কেন আমার ব্যাগ ট্যাগ রাখছে। বেচারা। - ঠিক আছে। দেখি আমি কী করতে পারি। পাশের রুমে গিয়ে বসে থাকো। তো, আমি বসে আছি। ভাবছি রাতের দিকে যদি ছেড়ে দেয় কই যাবো? খালাম্মার বাসায় যাওয়া যাবে কিন্তু প্রেস্টিজতো থাকবে না!!! রাত ৯টার দিকে স্যার আমাকে ডাকলেন। আরো কী কী জিঙ্হাসা করলেন। ওতো মনে নাই। টাকা পয়সা আছে কী না জানতে চাইলেন। বললাম – আছে। ফী টী এসব নিয়ে এসেছি। তারপর বললেন – তোমাকে একটা টেম্পোরারি রুম দেওয়া হল। সেখানে তুমি থাকবা। কিন্তু পরে যদি মেরিটে সিট না পাও তাহলে তোমাকে আমি রাখতে পারবো না।



-হলে সিট না পেলে আমার আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হবে না। আমি বাড়ি চলে যাবো।



জাফর সাহেব, আমাকে নিয়ে গেলেন আহসানউল্লাহ হলের নতুন চারতলায়। ৪১৫ নম্বর রুমটি আমাকে খুলে দেওয়া হল। আমি ঐ রুমের প্রথম বাসিন্দা। কারণ ঐ ফ্লোরটি এবারই হয়েছে। জানলাম নতুন একটা জীবন শুরু হবে। পরের দিনের পরের দিন থেকে শুরু হয়ে গেল বুয়েট জীবন। সুন্দর এবং সোনালী। আনন্দেরও। সম্ভবত জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা চ্যাপ্টার।



তবে, এটা হল উপক্রমনিকা।



কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে পারলাম হিসাবে কিছুটা গোলমাল হয়েছে। কারণ মাসে মিল চার্জ ২৭০ টাকা। বাবা পাঠাবেন মোট ৭০০ টাকা। এই দিয়ে তিনবেলা নাস্তা, রিকশা ভাড়া, খাতা-কলম কেমনে কী? তার ওপর রুমে একটা পত্রিকাও রাখতে চাই! কিন্তু বাবাকে টাকার কথা বলি কেমনে।কাজে খরচ কমাতে হবে। শুরু করলাম হাটা। হল থেকে গুলিস্তান হয়ে স্টেডিয়াম। হাটো।



হল থেকে বের হয়ে এসএমহলকে বামে রেখে শামসুন নাহার হল আর উদয়ন স্কুলের মাঝখানের মেঠোপথ দিয়ে টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরদিয়ে আইইবি। হাটো।



আইইবি পার হয়ে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে সুগন্ধা হয়ে বেইলী রোডে খালার বাড়ি। হাটো। নিউমার্কেট হয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি। ওখানে একটা সাদা বিল্ডিং-এর তিন তলায় একটা লাইব্রেরি। ওখানে ফিজিক্স টু ডে পড়া যায়! এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা নাড়াচাড়া করলে কেও বকা দেয় না! হাটো। টিএসসি হয়ে শাহবাগ হয়ে ১৪ ময়মনসিংহ রোড। বাংলা মোটর। হাটো। ওখানে একটা লাইব্রেরি আছে। অনেক বই। চট্টগ্রামে এমন কোন লাইব্রেরি নাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম ৩০০ টাকা জমা দিলে মাসে ১০টা ফী দিয়ে প্রতিদিন ২টা বই নেওয়া যাবে।



৩০০ টাকা অনেক টাকা। একমাস চকলেট দুধ না খেলে আর সকালের নাস্তার ডিমটা বাদ দিলে শ দেড়েক টাকা বাচানো যাবে আর কয়েক দফা তিনদিনের জন্য মিল বন্ধ করে হেটে খালার বাড়িতে গিয়ে একবেলা করে খেলে ঐ টাকাটা হয়ে যাবে। তো, হোক। কিছুদিনের মধ্যে ৩১০ টাকা নিয়ে হাজির হলাম ছোট্ট বাড়িটাতে। প্রথমদিন সমরেশ বসুর একটা বই নিয়ে ফিরলাম। তারপর থেকে আামার রুটিন হয়ে গেল প্রতিদিন বিকেলে হাটতে হাটতে ঐ বাড়িটাতে যাওয়া। তখন দেশ পত্রিকায় লোটাকম্বল আর পূর্বপশ্চিম ছাপা হচ্ছে। কাজে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকা পড়, পারলে একটা উপন্যাসও পড়া যায়। শুনেছি ওখানকার সিঙ্গারা অনেক মজা। কিন্তু, হেটে আসি হেটি যাই। ৩০০ টাকার কস্ট লাঘবে অনেক সময় লাগবে। কাজে শুনে শুনে সিঙ্গারা খাওয়া হয়ে যায়।কয়েকদিনের মধ্যে বুঝলাম বিক্ষিপ্তভাবে পড়লে হবে না। যে কোন এক তাক থেকে শুরু করতে হবে। কাজে একদিন সকালে ১নং দেরাজ/বইয়ের রেক-এর সবচেয়ে উপরের তাকের দুইটা বই দিয়ে নতুন করে শুরু করলাম। উদ্দেশ্য মহৎ। কত কম সময়ের মধ্যে ৩০০ টাকা উদ্ধার করা যায়!



--- পরের অংশ আগামী পর্বে।

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১৫

পি কা চু বলেছেন: পরের অংশ কবে নাগাদ পেতে পারি??

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

মুনির হাসান বলেছেন: হুম। আমি আসলে অনেকগুলো পর্ব লিকে ফেলেছি। দুইদিনের মধ্যে বাকী পর্বগুলো এখানে দিয়ে দেব। তারপর সব জায়গায় একসঙ্গে যাবো।
ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
পি কা চু বলেছেন: পরের অংশ কবে নাগাদ পেতে পারি??

স্যার দেখি খুব ভাল।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

মুনির হাসান বলেছেন: তুমি কি মানা করছো যেন তাড়াতাড়ি না দেই!!!

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

পি কা চু বলেছেন: এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
পি কা চু বলেছেন: পরের অংশ কবে নাগাদ পেতে পারি??

স্যার দেখি খুব ভাল

ওই যে বললাম, পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা!! :)

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:

না, না। তাড়াতাড়ি দেন। পড়তে ভাল লাগছে।

আপনি কি আমাকে চিনেন? :)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

মুনির হাসান বলেছেন: কী জানি।
চিনি না মনে হয়! চেনার কী দরকার?

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

টিভি পাগলা বলেছেন: ২০০১ সালে আমি পেতাম মাসে ২০০০ টাকা, আমার পরিচিত একজন পেত ১৫০০ টাকা। মেস ফি ৬৬০টাকা।

সেই হিসাবে ৮৬ সালে আপনার ৭০০ টাকা তো অনেক টাকা।

ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১১

মুনির হাসান বলেছেন: মেস ফী ৬৬০ টাকা হলে সেটা ২০০০ টাকার ৩৩ শতাংশ হয়। আর ২৯০ টাকা হল ৭০০ টাকার ৪১ শতাংশ!!!

তারমানে আমিই টাকা কম পেতাম!!!

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪২

পি কা চু বলেছেন: এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:

আপনি কি আমাকে চিনেন?

আমাকে বললেন??

যদি আমাকে বলেন, উত্তরঃ না ।

আর এই ইন্টারনেটের যুগে কেউ কারো চেনাও নয় আবার অচেনাও নয়! :)

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
না, লেখককে বলেছি।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫০

ঢাকাবাসী বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে।

৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

সুমন কর বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভাল লাগল।

১০| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১১

সোহানী বলেছেন: মুনির ভাই ... দারুন লাগছে। বাকীগুলা পড়ার অপেক্ষায়...

তবে আপনার নিজের সর্ম্পকে ডেসক্রিপশান ঠিক না .........। আপনি মোটেও অলস নন... সেটা আমাদের থেকে ভালো কেউ কি জানে... হাহাহাহা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১২

মুনির হাসান বলেছেন: সোহানী - আপনি যে ছোট বেলায় রামসুন্দর বসাকের বাল্য শিক্ষা পড়েছেন সেটা জানতাম না। এখন দেকি আপনি অলসকে অলস বলেন না।

ভাল!

১১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

ইলুসন বলেছেন: হা হা হা। হলে থেকে এমন কত যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বলার মত না।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

মুনির হাসান বলেছেন: সবার হলে নানান অভিজ্ঞতা হয়। তবে, এটা ঠিক হল লাইফের স্মৃতিচারণ না। এটি আমার আত্মপোলব্ধির যে জার্নি তার একটা পর্যায়ের কিছু খুটি নাটি। ব্যাটা কী-বোর্ড আমাকে দিয়ে লেখাই নিচ্ছে আর কি!
ধন্যবাদ।

১২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: খুব ভাল লাগল পড়তে। এই সিরিজের সাথে আছি। চলুক।



শুভকামনা রইল।

১৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৭

সোহানী বলেছেন: :-B :-B :-B :-B আপনার দৈাড় দেখার জন্য রামসুন্দরের বাল্য বই পড়ার দরকার নেই.... প্রতিদিন আপনার লিখা, গনিত অলিম্পিয়াড আর অফিসের দৈাড় দেখলেই টের পাওয়া যায়................

ফেইসবুকে আপনার লিখার ছবিটা আসেনি.....

পরের পর্বের অপেক্ষায়................

১৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪

হাসান রেজভী বলেছেন: গোল্ডেন ওল্ড ডেইজ ..... :)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪১

মুনির হাসান বলেছেন: :)

১৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

ডরোথী সুমী বলেছেন: দারুণ উপভোগ করলাম। কঠিন বাস্তবতা, তবে ভবিষ্যতে এই ঘটনাগুলিই প্রেরণা যোগায়। সময় করে বাকিগুলো পড়বো। ভাল থাকুন।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.