নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়, পড়, পড়-২

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪

পড়, পড়, পড়-১



১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাতের বেলায় আহসানউল্লাহ হলের ৪১৫ নম্বর রুমের রাস্তার পাশের খাটটাতে মশারী টাঙ্গানোর চেষ্টা করছি। কেয়ারটেকার জাফর সাহেব আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য পিওন একজনকে পাঠিয়েছেন এবং তার সহায়তায় আমি মোটামুটি ঘুমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়বো।



তবে তার আগে হলের সিড়ির গোড়াতে একটা কয়েন ফোন থেকে খালার বাসায় ফোন করে মাকে জানিয়েছি – বিশাল হল মা। আমাকে একটা রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। একাই একটা রুম। তিনটা খাট আছে আর মানুষ আমি একলা।



দরজা বন্ধ করে বাতি নিভাবো কি নিভাবো না এমনটা ভাবছি। পরে ভাবলাম থাক, একা একা এই বিরানভুমিতে থাকবো, বাতি বরং জ্বলুক।





কতক্ষণ হল বলতে পারি না। দরজায় জোরে জোরে বাড়ি শুনে থতমত খেয়ে দেখি কেয়ারটেকারের গলা। দরজা খুলে দেখলাম আরো একজন তোষক, লেপ (আমি লেপ আনি নাই, এ দেখি এনেছে), স্যুটকেস সমেত দরজার সামনে। বুঝলাম আমার মত একই অবস্থা। কেয়ারটেকার বলে গেলেন আপনারা দুইজন এই রুমে থাকবেন। বলে তিনি চলে গেলেন। -আমি তুহিন। মেকানিক্যাল। বলে নতুন আগন্তুক তার বাক্স পেটরা খুলে বই পত্র বের করে ফেললো। আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। এই বেটা দেখি অনেক স্মার্ট। বই কোনটা জানে!!! ভাবলাম তার কাছ থেকে জানা যাক। যা শুনলাম তাতে কিছুক্ষণ আমার কোন কথায় সরলো না।



আমার নতুন রুমমেট জানালো – বুয়েটে এই তার দ্বিতীয়বার ভর্তি হওয়া, মানে সে আমার একব্যাচ সিনিয়র। কিন্তু মেটালার্জি পেয়েছে বলে কিছুদিন পর আর পড়ে নাই। এবার মেকানিক্যাল পেয়েছে (পারলে আমাকে তুই বলে। দয় করে তুমি বলছে)।





এটুকুতে আমি আসলে বোবা হইনি। হয়েছি পরের অংশ শুনে – “আমার বাসা মিরপুরে। কিন্তু এমনভাবে স্যারকে বলেছি যে ঢাকায় আমার কেও নাই। স্যার শেষ পর্যন্ত যখন আমাকে রুম দিতে রাজী হলেন তখন আমি বাসায় গিয়ে বাক্স-পেটরা নিয়ে এসেছি। কেয়ার-টেকারকে বলছি যে আমি খেয় আার সময় তিতুমীর হলের ওখান থেকে আমার বাক্স প্যাটরা আনবো!!! আমি আর কী বলবো। এসেছি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম থেকে। বিদ্যা-বুদ্ধি তেমন নেই। এমন বুদ্ধিও নাই। তারপর তোষক পাততে পাততে তুহিন জানালো তার একটা কোচিং সেন্টার আছে। কয়েকটা গাইড বই বের করেছে। আগামী বছর বুয়েট ভর্তির কোচিং শুরু করবে। এগুলো বাসা থেকে করা কঠিন। সেজন্য তার হলে সিট দরকার। আমার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা। খালি মনে মনে বলি- এর সঙ্গে যদি আমার একই রুমে চার বছর থাকতে হয় তাহলে তো ও আমাকে সকালে পলাশীতে বিক্রি করে দেবে আর রাতে আবার গুলিস্তান থেকে কিনে হলে নিয়ে আসবে!!! (তুহিন অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমার রুমমেট হয়নি। মাসখানেক পর জানালো সে ট্রান্সফার নিয়ে রশীদ হলে চলে যাবে কারণ ওখানে ওর ঢাকার স্মার্ট বন্ধুরা থাকে। গ্রামের লোকজনকে ওর পছন্দ না।)



কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের রুম এলোটমেন্ট হল। আমি পেলাম ১২৭ নম্বর রুম। বাথরুমের পাশের রুম। রুমমেট সিভিলের রহমতউল্লা রুপু আর একজন অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন স্মার্ট, সিভিলের। নাম মনে নেই। কেবল মনে আছে সে আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরীর ভাইপো! দুজনই ব্যাপক পড়ুয়া। এবং রুমে এসে দেখলাম দুজনই বই পত্র কিনে আনছে।



ওরিয়েন্টেশনে কী হল মনে নাই তেমন খালি মনে আছে কয়েক গ্রুপে ভাগ করে একজন করে লেকচারার সঙ্গে নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখানো হল। আমাদের দেখানো হল ওল্ড একাডেমিক বিল্ডিং। বলা হল যদিও তোমরা ইলেকট্রিক্যালের ছাত্র, কিন্তু তোমাদের বেশিরভাগ ক্লাস হবে এই পুরাতন একাডেমিক ভবনে। তারপর দেখানো হল সিভিল বিল্ডিং। নিচতলার একটা ল্যাব দেখানো হল। শপগুলো দেখানো হল। তারপর নেওয়া হল একটা কাঁচের ঘরের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখলাম ঐ রুমের ফ্লোরের ওপর উচু করে কাঠের পাটাতন বসানো হয়েছে। কাঁচের ঘরের ভেতরে লাল লাল আলমিরার মতো কয়েকটা। তারপর চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা কিছু বাক্স। এই সময় যে লেকচারার (স্যারের নাম মনে নাই) এজন হাসিখুশী লোককে ডেকে আনলো। উনি এসে আমাদের ব্যাখ্যা করলেন – এই যে কাঁচের ঘরে যে বাক্সগুলো দেখতে পাচ্ছো এগুলো সব মিলে একটা কম্পিউটার, মেইন ফ্রেম কম্পিউটার!!! আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম। গ্রামের ছেলে কম্পিউটারের নাম শুনেছি কি না বলতে পারবো না। কাছে এত্তবড় একটা কম্পিউটার। লাল বাক্সগুলো আমাকে খুব আপ্লুত করলো। (পরে জানলাম ঐ লালবাক্সগুলো আসলে ছিল এয়ারকুলার!!!)। এর মাধ্যমে আমাদের পরিদর্শন শেষ। বলা হল বিকেলে ভিসি স্যারের রিসেপশন। রশিদ বিল্ডিং এর পেছনের লনে। বিকেল চারটার সময় শুরু হবে। রুমে গেলাম। তুহিন জানালো উত্তেজনার কিছু নাই। কারণ রিসেপশনে ভিসি স্যার একটা বক্তৃতা দেবেন খালি গলায়। তারপর উনি ডিনদের সঙ্গে হাটবেন আর নাস্তা খেতে দেওয়া হবে। ওটা খেয়ে চলে আসা।



তুহিনের কথা কে পাত্তা দেয়। রিসেপশনের জন্য আগে থেকে একটা শার্ট-প্যান্ট ইস্ত্রি করে রেখেছিলাম। আমি তো জুতা পড়িনা, কী করি। তারপর ভাবলাম সবাই নিশ্চয়ই শহুরে না। আমার মত গ্রামের ছেলে-মেয়ে কয়েকজন থাকবে। তো, রিসেপশনে গিয়ে দেখলাম অনেক স্মার্ট ছেলে-মেয়ে। নিজেকে কুকড়ে একপাশে দাঁড় করিয়ে ফেললাম। ভিসি স্যার একটা বক্তৃতা দিলেন। আর সব স্যাররা (ডিনের ব্যাপারটা বুঝতাম না তখন) ঘুরতে থাকলেন। একজন শুকনা মত স্যার আমাকে জিঙ্হাষা করলেন বাড়ি কই। চট্টগ্রাম শুনে এক-দুই কথা বললেন। নাস্তা খাওয়ার সময় একজনকে দেখে আমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হিউবার্ট সরকার। নটরডেমিয়ান এবং ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে মেডিকেল টেস্টের সময় আর ভর্তির সময়! যাক এতক্ষণে একজনকে চিনলাম। মনটা ভাল হয়ে গেল। নাস্তা করতে করতে জানলাম হিউবার্ট হলে ওঠবে না। কারণ ওর বাসা লহ্মীবাজারে এবং সে বাসাতে থাকবে (হিউবার্ট সিভিলে পড়তো এবং তার বুয়েটে স্যার হওয়ার কথা ছিল। তবে, ফাইনাল পরীক্ষার পর স্যার হওয়ার কয়েকদিন আগে (অথবা কয়েকদিন পরে) হিউবার্ট বুড়িগঙ্গাতে ঝাপ দিল। আর উঠলো না। আমি প্রথম জানলাম কোনরকম রাজনৈতিক উত্তেজনা কিংবা প্রেমের ব্যর্থতা ছাড়াও কেবল দার্শনিক কারণে কেও একজন নিজে নিজে আত্মাহুতি দিতে পারে। তবে সে্অন্য প্রসঙ্গ এখন থাক)। পরের দিন প্রথম ক্লাশ। সিভিল বিল্ডিং-এ (সপ্তাহে ২ দিন সকালের দিকে সিভিল আমাদের দয়া করে তাদের বিল্ডিং-এ ক্লাস করতে দিত)। ড. আবদুর রশীদ সরকার, মেকানিক্যালের প্রথম ক্লাস। উপদশের পর তিনি যারা বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছে তাদেরকে স্ট্যান্ড করতে বললেন। মনে হল পুরো ক্লাশই দাড়িয়ে গেল।



আমরা হাতে গোনা কয়েকজন বসে থাকলাম!



বুঝলাম ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। কী আছে কপালে কে জানে!!!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

সুমন কর বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণের সাথে ছিলাম, আছি। পড়ে ভাল লাগল।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

হাসান রেজভী বলেছেন: +++

পরের পর্বের অপেক্ষায়

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪১

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুটা পড়তে খুব ভাল লাগছে, সাথে আছি :)

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
খুবই ভাল লাগল।

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮

সোহানী বলেছেন: মাসখানেক পর জানালো সে ট্রান্সফার নিয়ে রশীদ হলে চলে যাবে কারণ ওখানে ওর ঢাকার স্মার্ট বন্ধুরা থাকে। গ্রামের লোকজনকে ওর পছন্দ না।

ঠিক তাই মুনির ভাই, আমি ও আমার বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ এ এটা খেয়াল করেছিলাম.... যারা ঢাকায় বড় হয়েছে তারা আমাদের সাথে খুব ভাব নিত তাই আমিও কিছুদিন পর এক ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, "তোমরা বাংলাদেশের কয়টা যায়গায় বেড়াতে গেছ? "ওরা উত্তর দিল, "কোথাও না"... এর পর থেকে আমি কঠিন ভাব নেয়ার চেস্টা করলাম কারন... ততদিনে আমার বাবা আমাকে প্রায় বাংলাদেশের সব কয়টা জেলা সহ বিখ্যাত স্থান দেখিয়েছিল।.............. ওদের জন্য করুনা ছাড়া কিছু করার ছিল না...হাহাহাহাহা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৫

মুনির হাসান বলেছেন: কী আর করা, করুনা কর!!

৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

ডরোথী সুমী বলেছেন: ভাল লেগেছে।

৭| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:

ভাল লাগল

আমি কিন্তু ঢাকার আর আমার ভাবও আছে,

ভাব আছে এই জন্য না যে আমি ঢাকার,

ভাব এই জন্য যে মুনীর হাসান এর সহব্লগার

৮| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

সকাল রয় বলেছেন:
পড়ছিলাম
বেশ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.