নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়, পড়.পড়-৫

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

পড়, পড়.পড়-৪



এতো দেখি সর্বনাশ!



বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নবীনবরণে বক্তৃতা দিয়ে ফেলছি আর জাতীয় ছাত্রলীগের ফ্লায়ারে নিজের নাম!!!

তবে, মনে মনে তো খুশী। ওরা নিশ্চয়ই এটা পুরা বুয়েটে দিয়েছে। কাজে নামতো সবাই জেনে গেছে (তখন কী জানতাম আমাদের ব্যাচেই কেবল n সংখ্যক মুনির আছে!)



তবে, কী করবো এটা নিয়ে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। পরদিন ক্যান্টিনে যাবার পথে মোজাম্মেল বাবু ভাই-এর সঙ্গে দেখা। ওনার সঙ্গে আরো একজন। মোজাম্মেল বাবু ভাই আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন, মিটুন। সেই আমার আনিসুল হককে প্রথম দেখা।

আমি সাহস করে বললাম – বাবু ভাই, ফ্লায়ারে যে আমার কথাগুলো দিয়ে দিলেন। আমি তো?

- এগুলো তোমার কথা তো?

-জি। আমি আপনাকে এই কথাগুলো বলেছিলাম।

-তাইলে আর অসুবিধা কি!! নবীন বরণে থাইকো। এই বলে ওনারা চলে গেলেন। (আনিস ভাই-এর সঙ্গে আমার কোন বাক্যালাপ হয়েছে কিনা মনে করতে পারছি না। উনি যে কবিতা লেখেন এই কথাটা মনে হয় বাবু ভাই বলেছিলেন)।

অসুবিধা যে কি সেটা তো আমিও জানি না। তবে, ততোদিনে সেশনাল নামে একটা অত্যাচারের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। পরদিন সেরকম কিছু আছে ফলে এই নিয়ে বেশি ভাবার কিছু নাই।

কলেজ জীবনে ব্যবহারিক বলে একটা ব্যাপার ছিল। বুয়েটে এসে দেখলাম সেটারে বলে সেশনাল। মানে কী আল্লাহ জানে তবে পদার্থ বিজ্ঞানে দেখলাম রিপোর্ট লিখতে হয় ফিউচার টেন্সে???

প্রথমদিন যখন গিয়াসউদ্দিন স্যার বলেছিলেন যে, রিপোর্ট ঐদিনই জমা দিতে হবে তখন মনে করছি রিপোর্টে কেবল ডেটা ফেটা থাকবে। বর্ণনা লিখতে হবে না। কিনউত উনি বোঝানোর পর বুঝলাম ল্যাবের উদ্দেশ্য-বিধেয় গুলো আগেভাগে লিখে আনতে হবে। লিখতে হবে ফিউচার টেন্সে কারণ লেখা হবে আগে, পরীক্ষাটা করা হবে পরে। একটা নতুন জিনিষের নাম শিখলাম – টপশীট। মানে শাদাকাগজে রিপোর্টটা লিখতে হবে, পরে ডেটা আর রেজাল্ট যোগ করে সেটার সামনে একটা শীট যোগ করতে হবে। ঐ শীটে নাম-ধাপ ঠিকুজি লিখতে হবে। এটাকে বলা হয় টপসীট। অনেকেই দেখতাম সুন্দর করে, বিভিন্ন কালার পেন ব্যবহার করে লিখে আনে। পরে দেখলাম এই টপসীটের ব্যাপারটা সব বিষয়েই আছে!

যাকগে, ঐদিন আর একটা ছোট্ট ঘটনাও হল। চারতলায় থাকতেই হরের কমনরুমটা চিনে ফেলেছিলাম। ওখানে সবাই টেলিভিশন গিলে, টেবিল টেনিস খাই আর পত্রিকা মুখস্ত করে। কমন রুমে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক এমনকি চিত্রবাংলা নামের একটা ম্যাগাজিনও রাখা হয়। আমারে আর পায় কে?



মনে পড়ল, আন্দরকিল্লায় আমাদের বাসায় মাত্র একটা দৈনিক আর পাক্ষিক আনন্দমেলা রাখা হত। মাঝে মধ্যে বিচিত্রা আসতো। তবে, সেটা খুবই কম। আন্দরকিল্লা মোড়ে একজন হকার ছিলেন। ওনার নাম হাফেজ আহমদ। এইট বা নাইনে থাকতে একদিন উনি আমাকে ডেকে যা বললেন তা মর্মার্থ খুব সহজ। উনি আমাকে দেখেছেন যে, আমি নানান উছিলায় ওনার পত্রিকা স্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করি দিনে কয়েকবার এবং ঘুরেফিরে বিচিত্রা, বিজ্ঞান সমাজ পত্রিকা ইত্যাদি উল্টেপাল্টে দেখি। কিন্তু কিনি না!



বুঝলাম আমার জারিজুরি শেষ! বললাম – আর করবো না।



উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যা বললেন সেটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। উনি বললেন যে, উনি আমার পড়ার আগ্রহটা লক্ষ্য করেছেন। এবং খুশী হয়েছেন। ওনাকে ফাঁকি দিয়ে পড়ার দরকার নাই। আমি যেন যখন যেটা পড়ার ইচ্ছা সেটা এসে ওনাকে বলি। উনি তাহলে আমাকে পাশে দাড়িয়ে পড়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর থেকে আন্দরকিল্লা মোড়ে দাড়িয়ে নানান সাপ্তাহিক আর দৈনিক পত্রিকা পড়ার সুযোগটা আমি কখনো হাতছাড়া করি নাই।



আউল্লাহর কমনরুমে একসঙ্গে এতো ম্যাগাজিন আর পত্রিকা দেখেতো আমার মাথা খারাপ হওয়ার দশা! কাজে প্রতিদিন ক্লাস শেষে আমার অবধারিত গন্তব্য ছিল কমন রুম। সেখানে ক্যারম খেলতে গিয়ে একজন দুইজনের সঙ্গে পরিচয় হতে শুরু করেছে। তবে, বেশিরভাগই সিনিয়র কারণ নতুনরা সবাই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত!



তো, বাবু ভাই আর আনিস ভাই-এর সঙ্গে দেখা হওয়ার ১-২ দিনের মধ্যেই জাতীয় ছাত্রলীগের নবীনবরণ। আমি জানি আমাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকা হবে। কিন্তু আমার কি সেখানে বক্তৃতা দেওয়া ঠিক হবে? আমি তো এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওখানে এই কাজ করে ফেলেছি।



তো, কী করি? গেলাম সিনিয়র কালাম ভাই, শাকিল ভাইদের ওখানে। ওনারা সব মুনে বললেন, পুরো নীনবরণ অনুষ্ঠানটা তুমি এই বারান্দায় (তিতুমিরের ২০৮ নম্বর রুমের) বসে দেখ। তোমাকে ডাকলে তুমি যাবানা। কারণ সবার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া যায় না।



কাজে জাতীয় ছাত্রলীগের মঞ্চ থেকে মুনিরের নাম ধরে ডাকাডাকি হলেও তাকে পাওয়া গেল না। আমি বরং গান শুনে রুমে ফেরৎ গেলাম। কাজটা ভাল হলো না খারাপ সেটা অবশ্য বুঝলাম না।



এর মধ্যে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসাবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগ মিছিল হয়। আমি মিছিল গুলোতে যোগ দেই। তবে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মিছিলে যায় না, জাতীয় ছাত্রলীগেরটাতেও না। এমনকী যখনই এনামুল ভাই চিৎকার করে বলতেন – প্রতিরোধে প্রতিশোধ কিংবা রক্তে নেব প্রতিশোধ তখন কিন্তু রক্ত চনবন করে উঠতো, কিন্তু দলীয় মিছিলে যেতাম না। অপেক্ষা করতাম কখন আলাদা আলাদা মিছিলগুলো নজরুল ইসলাম হলের কেন্টিনের সামনে জড় হবে এবং সেটি হয়ে যাবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিল। তখনই মিছিলে ঢুকে পড়তাম।



সুবীরদার কথা আগে বলেছি। ওনার সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা হতো। তিনি কখনো আমাকে বলতেন না যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগ দাও। রাজনীতির আলাপই হতো কিন্তু কখনোই আমাকে প্রভাবিত করতেন না। এমনকি আমাদের হলে থাকেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াসেল কবীর (কবীর ভাই) মিছিলে যাবার সময় হাই-হ্যালো করেন, কিন্তু চলো এটা বলেন না। বলেন - মিছিলে যাবা নাকি, মুনির?



ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে পরিচয় হল একজন লম্বা মত সিনিয়রের সঙ্গে। আহসানউল্লা হলে ঢুকে করিডর দুইদিকে গেছে। সোজা গেলে রুম শুরু হয় ১২৭ থেকে। সেখানেই আমি থাকি। আর ডানদিকদিয়ে সোজা গিয়ে একটু বামে গিয়ে মাঠ দিয়ে বের হয়ে কেন্টিনের পথ। ঐদিকে প্রথমে অতিথি কক্ষ এবং তারপর ১২০, ১১৯ হয়ে ১১১। তারপর হলের অফিস। খাওয়ার রুম ইত্যাদি। মেসে খাওয়ার ব্যাপারটাও শুরু হয়ে গেছে। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তবে সেটা এখন থাক।

বলছিলাম আমার মত আর একজন যিনি কিনা কোন দলের মিছিলে যান না কিন্তু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে যান। ১১৯ নম্বর রুমে থাকেন। টুকটাক কথা বলার পর জানতে চাইলেন – হোয়াট ইজ টু বি ডান পড়েছ? কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো? সংশপ্তক?

খাইছে। কয় কি। এইগুলার নামই তো শুনি নাই। এই সব আবার কিসের বই। সংশপ্তক পড়ি নাই। কিন্তু বিটিভির কারণে কানকাটা রমযানের নাম মনে আছে।

আমার চেহারা দেখে বুঝলেন। বললেন – তোমাকে তো আমি সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে দেখি। ছাত্রলীগের নবীনবরণে নাকি এরশাদকে ব্যাকরনের পাঠ দিয়েছো আর এই সব কিছুই পড় নাই।



তো, মাহমুদুজ্জামান রুমি ভাই আমাকে প্রথম বললেন, তুমি সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে আসো এটা ভাল। কিন্তু তুমি যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাও তাহলে তোমাকে কোন না কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। নাহলে তুমি এই প্রসেসের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবে না।

-তিনিও কেন একই কাজ করেন না। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন তার দলের কোন শাখা বুয়েটে নাই দেখে তিনি সরাসরি সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে যোগদেন।

পরের কয়েকদিন আমি খুব ভাবলাম। তারপর বুঝলাম যে, ওনার কথাই ঠিক। আমাকে অবশ্যই কোন না কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এর মধ্যে গোলাম মোস্তফা নামে কেমিকেলের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা ছাপা হয়েছে বলে নিজেকে একটু-আধটু লেখক ভাবতাম। তো মোস্তফার গল্প দেখলাম ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছে। সেটার কাটিং সে হলে নিয়ে এসেছে। নিজের লেখালেখির কথা চেপে গেলাম। মোস্তফার সঙ্গে আলাপের অনেক খানি জুড়ে থাকতো জাতীয়তাবাদের কনসেপ্ট নিয়ে। আমরা বাঙ্গালি না বাংলাদেশি। বুয়েটে ছাত্রদলের তেমন একটিভিটি নাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পলাশী যুদ্ধের সময় তৎকালিন ঢাকার মেয়র হাসনাত বুয়েট ছাত্রদের বিরোধিতা করেছিলেন। সেই কারণে ছাত্রদলের তেমন একটা বেইল নাই। পলাশী যুদ্ধের সময় যারা ফার্স্ট ইয়ারে ছিল তারা মাত্র গতবছরে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। তারমানে এখন যারা দ্বিতীয় বর্ষে তাদের মধ্যে পলাশী যুদ্ধের অভিজ্ঞতালাভকারীরা কেও নাই।পলাশী যুদ্ধের ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ছিল আশির দশকের বুয়েটে। তবে সেটা মনে হয় আমার নোটের সঙ্গে যায় না!



যাইহোক আমি আমার রাজনীতির ভবিষ্যৎ ভাবি। আমার পথ কী হবে? বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র? প্রতিরোধে প্রতিশোধ? রক্সে নেব প্রতিশোধ? প্রকৌশলী সিরাজ শিকদারের দেখানো পথ? নাকি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ? না কি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ?



বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই যদি থাকি তাহলে কোথায় থাকবো? জাতীয় ছাত্রলীগ না কি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ?









প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তর ওতো জানা!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
সুন্দর

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯

হাসান রেজভী বলেছেন: সুন্দর .... :)

বাংলাদেশ আর জাতীয় ছাত্রলীগ .... এদের সম্পর্কে আরেকটু জানতে আগ্রহী .....

পলাশীর যুদ্ধ মানে পলাশীর মোড়ে কোন সংঘর্ষ???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.