নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়, পড়, পড়-৬

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০২

পড়, পড়, পড়-৫



পড়তে আসছি ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু ওমা এখানে দেখি বলে তড়িৎ কৌশল। আর পড়তে দিসে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, অংক, ইংলিশ, অর্থণীতি এরকম সব হাবিজাবি বিষয়। সারাদিনই এসবের ক্লাস। ফাকে একটা বেসিক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আর বেসিক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। মনে খুবই কস্ট নিয়ে ক্লাসে যাই। সেসময় বিটিভিতে খালি বিজ্ঞাপন দেখাতো। বলা হতো বিজ্ঞাপনই সেখানে আসল। বাকী সব ফিলার। আর আমি এসে দেখলাম ফিজিক্স/কেমিস্ট্রি ম্যাথের ফাকে সামান্য করে ইঞ্জিনিয়ারিং করানো হচ্ছে!!!

আমি পড়ে এসেছি চট্টগ্রাম কলেজে। ওখানে প্রত্যেক পিরিয়ডে আমাদের এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং-এ যেতে হত। আর এখানে, একটা ড্যাম খাওয়া বিল্ডিং-এর মধ্যে ২১৬ নম্বর রুমেই সব করে ফেলছি। ওখানে বেশিরভাগ সময় যারা ক্লাস নিতে আসেন তাঁরা কেও ইঞ্জিনিয়ার নন। অংক করতে হবে, অর্থনীতি মুখস্ত করতে হবে, কেমন করে চিঠি বা টেন্ডার নোটিশ লিখতে হয় সেগুলো শেখার জন্য বুয়েটে আসছি!!!বাসায় গিয়ে কী বলবো। এক আরপি ওয়ার্ড দিয়ে কতটুকু কী করা যাবে।

আবার একটাই ল্যাব যেটার সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে সেটার নাম মডেল ল্যাব। মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে সেই ল্যাবে প্রথমদিন গিয়ে মনে হল যাক অন্তত এই ল্যাবের কথা গ্রামে গিয়ে বলা যাবে। হা হতোম্ভি। প্রথমদিনেই বলা হল এটা মডেল ল্যাব, রিয়েল ল্যাব না। মানে ওখানে নানান ধরণের মডেল আছে। আর ক্লাসটাও সহজ। গ্রুপ স্টাডি করে একটা রিপোর্ট লিখতে হবে আর ভাইভা দিতে হবে। রিপোর্ট শুনু বুঝলাম একটা টপশীট লাগবে। পরক্ষনে বুঝলাম না এটাতে টপষীঠ লাগবে না কারণ সবগুলো রিপোর্ট একটা খাতাতে হবে। তবে, এখানে রিপোর্ট লিখতে হবে ল্যাবে বসে। আড়াইঘন্টা সময়, বই পত্র ঘেটে, রিপোর্ট লিখতে হবে। এইটুকু ঠিক ছিল। কিন্তু যখন বলা হল একেক গ্রুপ একেক ল্যাব করবে তখন একেবারে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ ক্লাসে মাত্র বয়লার পড়ানো শুরু হয়েছে আর আমার গ্রুপের ভাগে পড়েছে টারবাইন!!! টারবাইনের টওতো রশীদ স্যার ক্লাসে পড়াবেন না এখন তাহলে কেমনে পারবো? হলে ফিরে যখন অন্যদের কাছে সবক নিতে গেলাম তখন বলা হল – আরে তোমাদের তো আসল কথায় স্যাররা বলেন নি।সেটা কী?-রিপিট। মানে হল মডেল ল্যাবে স্যাররা মোটামুটি যেটা দ্যান সেটার নাম হল বাঁশ। কঠিন বাঁশ। যাহোক সব শুনেটুনে বুঝলাম এটা আর আমার পাস করা হবে না। যতদিন মডেল ল্যাব করেছি প্রতিদিনই ব্যাপক টেনশনে থাকতাম। কারণ এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন করা হতো যে একটা উত্তর দিতামই। যে কয়জন স্যার ছিলেন তার মধ্যে ম তামিম স্যার ছিলেন (২০০৭-৮ সালের প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারি) অসাধারণ। ওনার চেহারা দেখে কখনোই বোজা যেত না আমার উত্তরটা হয়েছে কী না। যেমন একবার আমাদের জাহাঙ্গীর (ড. জাহাঙ্গীর এখন ফিনল্যান্ডে মনে হয়) যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরৎ আসলো। বললো- আজকে স্যার খুশী হয়ে ওর পিঠ ছাপড়ে দিয়েছে। কাজে আজকে ও ১০-এ ৯। (স্যার কাউকে ১০-এ ১০ দিয়েছেন এমনটা আমি মনে করতে পারছি না)। আমি জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলাম প্রশ্নটা কী ছিল দোস্ত।- সোজা। স্যার জানতে চাইছে – পেট্রোল ইঞ্জিনে একটা কার্বুরেটর থাকে। ডিজেল ইঞ্জিনে কয়টা থাকে?-তুই কী বললি। -কেন। যেটা সত্য। দুইটা।- আমি আর সাকিব মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। স্যার কেন পিঠ চাপড়েছে সেটা আমি অনুমান করতে পারলেও বলতে পারলাম। দিন শেষে স্যার যঅন নস্বর বললেন তখন দেখা গেল জাহাঙ্গীরকে রিপিট (মানে আবার ঐ ল্যাব করতে হবে) দিয়ে রাখছে।মডেল ল্যাবে যাবার সময় আমরা সব জানা দোয়া পড়ে ফেলতাম যাতে তামিম স্যারের হাতে না পড়ি। বেশরিভাগ দিনই দোয়া কাজে লাগতো না। (তামিম স্যার সম্পর্কে আমার ভয় কিছুটা কাটে সেকেন্ড ইয়ারে, আর পুরাপুরি কেটে যায় যখন তিনি কম্পিউটার সেন্টারে কিছুদিন সিস্টেমস এনালিস্ট ছিলেন তখন। ২০০৭-৮ সালে স্যার যখন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি তখন আমি সেখানেই চাকরি করি। সেই অভিজ্ঞতা আলাদা।)

কেমিস্ট্রি ক্লাসে একজন শাদা-চুলের আইনস্টাইন ক্লাস নিতে আসলেন। দেখতে একেবারে আইনস্টাইনের মত। হাতের লেখা ছোট। ক্লাসে এসেই প্রথমে ব্ল্যাকবোর্ডের কোনায় লিখতেন PV=nRT । এটি আদর্শ গ্যাসের সূত্র। তারপর বলতেন প্রকৃতিতে কোন আদর্শ গ্যাস নাই। ফলে ঐ সূত্রে ঝামেলা আছে। ঔ ঝামেলাটা সলভ করাটাই হল স্যারের ক্লাসের উদ্দেশ্য। বেশিরভাগ কথাই বুঝতাম না। কিন্তু সব কিছু লিখে নিয়ে আসতাম। এই সময় আমাদের ক্লাসের একজন শুকনা পাতলা ছাত্রের সঙ্গে আমার একটু খাতির হল- আয়ম খান। রাজশাহী বোর্ড থেকে ডাবল স্ট্যান্ড করে এসেছে। তো, সে দেখতাম তেমন একটা কিছু ক্লাসে লিখি টিখে না। ব্যাপারকী?-দূর মুনির। লিখে কোন লাভ নাই। পরীক্ষার আগে “চোথা” যোগাড় করলেই হবে। -“চোথা আবার কী?”-চিনে যাবে। জিনে যাবে চিন্তা নাই।আমার অবশ্য ততদিনে অন্য চিন্তা শুরু হয়েছে। আমি বুঝে ফেলেছি বুয়েটর পড়ালেখা খুব কঠিন। এখানে পাস করা আমার পক্ষে অসম্ভব। প্রতিদিন বিকালেই শুধু যে ল্যাবের অত্যাচার তা না। ক্লাসটেস্ট নামে একটা পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। পরীক্ষা হচ্ছে ক্লাসের মধ্যে। শুনে তেমন একটা ভয় পাইনাই। কারণ ৬০ জন। পাশের জনের হেল্প তো পাওয়া যাবে। তো সার্কিট পরীক্ষা দিতে গিয়ে সে গুড়ে বালি। কারণ দুইটা রেসিস্ট্যান্সের ভ্যালু হচ্ছে “তোমার রোল নম্বর”। বোঝ ট্যালা। এর মধ্যে একদিন শুনলাম একটা খুশীর খবর। মিডি সেমিস্টার ব্রেক নামে দুই সপ্তাহের ছুটি হবে মার্চের ২২-২৩ তারিখে। রুমি ভাই-এর সঙ্গে আলাপ হয় যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটা আমার কর্ম না। আমি চলে যাবো দেশে। আমি দিন গুনতে থাকি। ভাবি কয়েকদিনের মধ্যেই আমার মুক্তি। ২২ তারিখ রাতে রূপালী এক্সপ্রেসের একটা টিকেট কেটে আনি। আমার ব্যাগ গুছাই। একবার ভাবলাম মশারী, তোষক নিয়ে বের হয়। পরে ভাবলাম এগুলো নিয়ে যেতে গেলে সবার চোখে পড়বে। ব্যাগ গুছানোর পর দেখলাম কিঞ্চিৎ জায়গা আছে। ওয়ার্ড সাহেবের আর কয়েকটি বই নিলাম। সবাইকে বলতে পারবো আমি ৬ সপ্তাহ বুয়েটে পড়েছি। বিশ্বাস না করলে সে বইগুলো দেখাতে পারবো।যেদিন ছুটি হল সেদিন আমি খুবই উত্তেজিত। কারণ আজকেই বুয়েটে আমার শেষদিন। আমি যে একেবারে চলে যাচ্ছি বাড়িতে এটা কেবল রুমী ভাই জানেন। তিনি বললেন – ঠিক আছে যাও্আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাইখো। আমিতো এই বছর আছি, কাজে হলের ঠিকানায় চিঠি লিখলে আমি পাবো।রুমী ভাই আমাকে হলের গেট পার করে রিকসায় তুলে দিলেন। আমি ফুলবাড়িয়ায় এসে রুপালীর বাসে উঠে পড়লাম। রাত ১১টার দিকে বাস ছাড়লো। আমি একটু পেছন ফিরে তাকালাম।আমার চোখ দিয়ে কি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছে? চোখের কোন কি ভিজে উঠেছে?বলতে পারবো না।

ততক্ষণে গাড়ি রওনা হয়ে গেছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে বুয়েটকে বিদায় জানালাম। মনে কোন কষ্ট নাই অবশ্য। কারণ আমি তো বুয়েটে পড়ার মত না। কাজে আগে চাটগাঁয় যাই।



বিদায় বুয়েট।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ ! বেশ কাহিনী তো।!

তো পরে কি হল?

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৭

গ্রীনলাভার বলেছেন: শেষটাতো আমরা জানি স্যার B-)) B-)) B-)) B-))

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:০৫

মুনির হাসান বলেছেন: শিরোনাম পড়!

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭

লিখেছেন বলেছেন: Interesting story of a budding engineer

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.