নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়,পড়,পড়-৮

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

পড়,পড়,পড়-৭



বাসটা হঠাৎ ঝাকি খেয়ে থেমে গেল। বুঝলাম মেঘনা ঘাটে এসে পড়েছি। আমার ফ্ল্যাশব্যাকও থেমে গেল। ফেরীতে বাস পার হওয়ার সময় ফেরিঘাটে বা ফেরিতে ডিমভাজি-পরোটা খাওয়াট বেশ ভাল। কিন্তু আজ আর আমার মন ভাল নেই। নানান সব কথা মনে পড়ছে। বুয়েট থেকে আমার অগত্যা যাত্রা কী না!

সেদিন অন্যদের শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুয়েট মেডিকেলের সামনে বসে থাকলাম। তারপর ঐ ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। উনি আবার দেখলেন। বললেন – কবে থেকে চশমা?-ক্লাস এইট। -হুম। আচ্ছা। আমার মনে হচ্ছে পারতে পারো। তবে, আমি তো আর এখন কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না। তুমি বরং চীফ মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে দেখা কর।গেলাম। আমার তখন কাপুনি নিয়ে জ্বর আসার অবস্থা। আম-ছালা-ছালা বাঁধার রশি সবই তো শেষ। তিনি সব দেখে শুনে বললেন – কোন একজন চক্ষু প্রফেসরের সঙ্গে দেখা কর। তিনি যদি রাজী হোন তাহলে আমি তোমাকে আর একবার দেখবো। ফরম নিয়ে সেখানে খসখস করে লিখে দিলেন – Report after 7 days with an specialist recommendations।

বুঝলাম কোন লাভ নাই। ঢাকা শহরে চোখের প্রফেসর বলতে প্রফেসর আহমদ শরীফ বা প্রফেসর হারুন। তাদের কারো এপয়েন্টমেন্ট এক মাসের আগে পাওয়া যায় না। চাচার বাড়িতে গেলাম। (এবার আমি একা কারণ আমার সঙ্গে আগে যারা ছিল তারা সবাই মেডিকেলে পড়বে)। চাচা অফিস থেকে ফিরলেন। চাচী গবেষণা করে বের করলেন তার বোন (মানু খালা, শহীদ আনোয়ার স্কুলের শিক্ষক) এবং প্রফেসর আহমদ শরীফের স্ত্রী বাল্যবন্ধু। মানু খালাম্মার বাসায় গেলাম। তিনি একটা দিন বললেন। তার সঙ্গে বকশিবাজারে প্রফেসর আহমদ শরীফের বাসভবন + চেম্বারে। ওনার স্ত্রী, মানু খালাম্মার বান্ধবী জানালেন ওনার একটা বিশেষ ব্যবস্থা আছে। উনি আমাকে নিচে পাঠিয়ে দিলেন।

ঢাকার কোন বড় ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকা আমার এবারই প্রথম। একজন ইতিহাস লিখলেন। মানে আমার কী সমস্যা, কবে থেকে চশমা। বারেক নামে একজন চোখের প্রেশার দেখলো। (আমি ভেবেছিলাম বারেক মনে হয় কম্পাউন্ডার, পরে যা জেনেঝি সেটা না লেখাই ভাল) আর একজন ভিশন টেস্ট করলো। সবশেষে আমি সৌম্য, শান্ত একজন বয়সী ডাক্তারের সামনে বসলাম। ডাক্তারকে দেখে আমার মন ভাল হয়ে গেল।

- বুয়েট না মেডিকেল?

বুজলাম এতে উনি অভ্যস্থ। বললাম। উনি আমাকে দেখে বললেন – চোখে কেমন চাপ পড়বে।

আমি বললাম ইলেকট্রিক্যাল তো মনে হয় চোখের তেমন কারবার লাগবে না। খালি ভোল্টেজের সমস্যা!

উনি হেসে দিলেন। তারপর পাওয়ার এডজাস্ট করলেন। এবং বললেন – ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়লে অসুবিধা হবে।-জি। দেড় বছর চলে গেছে। অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারবো না।

-আচ্ছা। তাহলে পড়। আমি লিখে দিচ্ছি। চোখে বেশি প্রেশার দেওয়ার দরকার নাই।

যাইহোক, ডা. আহমদ শরীফের রিকমেন্ডেশন দিয়ে আমি বুয়েটে ভর্তি হয়ে গেলাম। আর বাড়ি ফিরে গেলাম ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি।

জানুয়ারি ১৯৮৬ থেকে চট্টগ্রামে বাড়িতে বসে থাকা। ক্লাস শুরুর কোন খবর নাই। আড্ডা দিয়ে বেড়াব তার সুযোগও নাই। কারণ আলী, শাহেদদের মেডিকেলের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আমার চোখের সামনে দিয়ে ওরা এপ্রোন পড়ে, ভাব নিয়ে যায়। বাদল ভাই-এর সঙ্গেও আড্ডা নাই কারণ উনি ওনার ক্যাম্পাসে। তো, কয়েকজন পরামর্শ দিল কিছু বইপত্র যোগাড় করে পড়ালেখা করতে। সেজন্য মাঝখানে একবার খবর পেলাম কালাম ভাই বুয়েট থেকে এসেছেন। তার কাছে গেলাম। -তুমি ইচ্ছে করলে ক্যালকুলাসটা করতে পারো। তবে, যাই করো না কেন বুয়েটে গিয়ে কিন্তু সেগুলো আবারই পড়তে হবে। আমি দুইটা বই কিনলামও। দুই একদিন চেস্টাও করলাম। পরে ভাবলাম। ধুর। ছুটিটা ছুটিই থাক। অন্য কিছু বরং করা যাক। কী করা যায়? বুয়েট থেকে কোন আইডি কার্ড দেয় নাই। কাজে এখন কোন পরিচয় নাই।

একদিন দুপুরে কী মনে করে হাটতে হাটতে লালদিঘীর পাড়ে গেলাম। সেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি। বললঅম- আমি বুয়েটে ভর্তি হয়েছি কিন্তু কোন আইডি কার্ড নাই। তবে, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পাসের কাগজপত্র আর বুয়েটে ভর্তি ফী দেওয়ার রশিদ আছে। আমি কি মেম্বার হতে পারবো?যার কাছে এই কথাগুলো বলেছি তিনি জীবনে মনে হয় এমন আবদার কখনো শুনেন নাই। অনেকক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর ভিতরে গিয়ে কার সঙ্গে কথা বলে এসে আমাকে একটা ফরম দিলেন। আর বললেন পরের দিন যেন পূরণ করে নিয়ে যাই। আমি তো মহাখুশী। পরেরদিনই ব্রিটিশ কাউন্সিলের মেম্বার হয়ে গেলাম। শুরু হল আমার টাইম পাসের বুদ্ধি। মেম্বার হওয়ার পর আবিস্কার করলাম ওখানে সব ইংরেজি বই!!!!হায় হায় ইংরেজি পড়ে সেটা বোঝার ক্ষমতাতো আল্লাহ আমারে দেয় নাই। পরে ভাবলাম, না বুঝি, হাতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা বই থাকলে সবসময় লোকে আমার জ্ঞান নিয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারবে না।প্রথম যে বইটা দেখে পছন্দ হলো সেটা একটা মোটা বই, আবার বেশি মোটা নয়। নাম- মার্ডার ইন দি ক্লাউড। লেখক আগাথা ক্রিস্টি! এই বইটা পছন্দ করার কারণ হল আগাথা ক্রিস্টির নাম শুনেছি। হারকিউল পয়েরো নামের গোয়েন্দা চরিত্রের স্রস্টা। তো, বানান করে, ডিকশনারী নিয়ে পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে মনে হল আরে এই গল্পতো আমি জানি। কোথায় জানি পড়েছি। পড়তে পড়তে এক সময় মনে হল। ব্যাস, চলে গেলাম রাইফেল ক্লাবের সামনে, বই ভাড়ার দোকানে। এই দোকান থেকে কুয়াশা আর মাসুদ রানা ভাড়া করে নিয়ে আসতাম। আমাকে দেখে দোকানদার বলল- আরে এতদিন কই ছিলেন।-গম্ভীর গলায় বললাম –আমি এখন বুয়েটে পড়ি!যাইহোক, মাত্র কয়েকবারে চেস্টায় কুয়াশা সিরিজের বইটা বের করে ফেললাম। তারপর এ দুই বই ভাড়া নিয়ে আসলাম। পরের কয়দিন মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ে ব্যাপক আনন্দ পেলাম। বুঝলাম, কুয়াশা সিরিজের ঐ দুই পড়ে যে আনন্দ পাওয়া যায় মূল বই পড়ে সেই আনন্দ পাওয়া যায়। পরের কয়েকদিন তাই খালি কাজি আনোয়ার হোসেনকে সালাম দিয়ে কাটালাম।

ব্রিটিশ কাউন্সিলে আগাথা ক্রিস্টির যত বই ছিল সব পড়ে ফেললাম। অনেকগুলো বুঝিও নাই। আরো কিছু বই পড়তে শুরু করলাম। তবে, সবচেয়ে মজার ঘটনাটি ঘটেছে একদিন। গিয়ে দেখি লাইব্রেরি বন্ধ। কী করি। ভাবলাম অন্যদিকে হেটে যাই। একটু এগুতে দেখি আ একটা দোতলা বাড়ি। ছোট্ট একটা সিড়ি দিয়ে কেও কেও উপরে যাচ্ছে। আমিও সিড়ি বেয়ে উঠে পড়লাম। আরে এটাও দেখি একটা লাইব্রেরি। থরে থরে সাজানো আছে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ম্যাকমিলানের বই আরো অনেক বই। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে পার্থক্য অনেক বাংলা বই। আমি বুঝে গেলাম বুয়েটে ক্লাস শুরু হতে যদি দেরিও হয় আমার কোন ক্ষতি নাই। বাস ততক্ষণে কুমিল্লা পার হয়ে গেছে। হাইওয়ে রেস্টোরেন্ট বলতে তখন বিরতি। তবে, সেখানে গাড়ি দাড়ালো না। তবে, গাড়ি একবার দাড়ালো চৌদ্দগ্রামের কাছে। আমি তখন একটা ঘোরের মধ্যে। কেবল মনে হচ্ছে বুয়েট ছেড়ে এসেছি? কাজটা কী ঠিক হচ্ছে?সব জায়গায় ক্লাস শুরু হয়েগেছে। আলীরা সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেছে। এমন কি, পরের ইন্টারের ছেলে-মেয়েদেরও বুয়েট-মেডিকেল পরীক্ষা শেষ। আমাকে পড়তে হলে পড়তে হবে পাসকোর্সে বিএ। কাজটা কী ঠিক হবে? সবাই কী আমাকে নিয়ে বেশি হাসাহাসি করবে? বুয়েটেই যদি ফেরৎ যাই তাহরে বড়জোড় চারবছরের কোর্স শেষ করতে সালাম ভাই-এর মতো কয়েকবছর বেশি লাগবে? কিনউত বুয়েট তো বলতে পারবো। যতদিন পাস করতে পারবো না ততদিন টিউশনি করতে পারবো? আমার কী হবে?গাড়ি যখন আবার চলতে শুরু করলো তখন চোখে কিছুটা ঘুম আসি আসি। ঘোরের মধ্যে চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটি কমনীয় মুখ! হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আচছা ও কী বলে? বলছে বুয়েট না পরলে আর পাত্তা দিবে না? কিন্তু আমি কি তাকে কখনো বলেছি তার হাসিটা আমার হতে পারে?একিদন তাকে নিয়ে ভোরের আকাশে খালি চোখে ধুমকেতু দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। ধুর ছাই, আমি কী জানি কোথায় খুঁজতে হবে!!! কিন্তু তখনো কি আমি ধুমকেতু দেখেছিলাম না তাকে?





চৌদ্দগ্রাম থেকে গাড়ি যতই চট্টগ্রামের দিকে এগোলো ততই আমার চোখের সামনে কেবল তারই ছবি!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১০

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: হাউকাউ

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০১

আহ্‌মেদ সামাদ বলেছেন: সালাম ভাই ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৬৭ এ, পাশ করেছিলেন ১৯৮৭ এ আমাদের সাথে। পাক্কা ২০ টি বছর ! কী অপরিসীম ধৈর্য্য !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.