নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়,পড়,পড়-১০

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪

পড়,পড়,পড়-৯



কী মুনির মিয়া, এসে পড়লা দেখছি!

আহসানউল্লাহ হলের গেটের সামনে রিকসা থেকে নামতে দেখা হয়ে গেল রুমি ভাই-এর সঙ্গে। তিনি সম্ভবত বন্ধে বাড়ি যান নাই। আমাকে দেখে ব্যাগ নেওয়ার সহায়তা করলেন।

কী বলবো, বুঝতে পারছি না। তাই চুপ থেকে রুমি ভাই-এর সঙ্গে হেটে ১২৭ নম্বর রুমের সামনে গেলাম। মনে হচ্ছে রুমমেটরা কেও ফিরে নাই। ব্যাগ রেখে হাত-মুখ ধুতে গেলাম। রুমি ভাই দাড়িয়ে আছে।

‘চল, তোমাকে চা খাওয়াই।”

আমি আর রুমি ভাই আহসান উল্লাহ হলের কেন্টিনের দিকে হাটা দিলাম। পথেই দেখা হয়ে গেল রুমি ভাই-এর রুমমেট। ওনাকে আমি আগেই খেয়াল করেছি। তবে, কথাবার্তা খুব একটা হয়নি। রাফু ভাই (স্থপতি কাজি আনিস উদ্দিন ইকবাল, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বিল্ডিং ফর ফিউচার) আমাকে দেখে হাসলেন। বললেন – কি, ফিরে আসলা তাইলা?



বুঝলাম রুমি ভাই আমার না ফেরার প্রত্যয় জনে জনে বলে ফেলেছেন। কী আর করা।



কেন্টিনে বসে রুমি ভাইকে বললাম – আমার ফিরে আসাতে আপনি মোটেই অবাক হোননি। আর যদি জানতেন যে আমি ফিরবো তাহলে তখন বললেন না কেন। আমার প্রায় কান্না পাচ্ছে!



“দুইটি কারণ। প্রথমত আমি চেয়েছি তুমি নিজের বোধে ফেরৎ আসো। আর আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, তুমি ফিরবা কারণ তোমার মত আমিও দুই সপ্তাহ পর বুয়েট থেকে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু জলেশ্বরীতলা যাওয়ার আগেই বুঝে ফেলেছিলাম আমার কোন বিকল্প নাই।”



যাক, আমি তাহলে একা না।



চা খেতে খেতে রুমি ভাই যে কথাগুলো বলেছিলেন তার বেশিরভাগই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়র জন্য দায়ী। আমাদের বেঁচে থাকা যে একটা ঐতিহাসিক দায়িত্ব সেটা আমি সেদিনই অনেকখানি বুঝে ফেলেছিলাম। তবে, সবচেয়ে বেশি বুঝেছিলাম – নিজের কাজটা করে যাওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবাদত, সর্বোত্তম প্রত্যয়। ফলাফল নিয়ে ভাবার কিছু নাই। প্রাণপণ এবং সর্বোচ্চ চেষ্টায় যা হবে সেটাই ফলাফল।

রুমি ভাই আমাকে রুমে রেখে যাওয়ার সময় একটা আপ্ত বাক্য বলে গেলেন। পরে জেনেছি এটা ‘চিনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান’ কমরেড মাও সে তুং-এর একটা বিখ্যাত বানী



পড়, পড় এবং পড়!



তো, আমি বুঝে গেলাম আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বুয়েটে ফেল করতে পারবো, হলের অন্যান্য আদু ভাই-দের মতো হতে পারবো কিন্তু তার চেয়ে খারাপ হতে পারবো না। অন্যদিকে পড় পড়ে আমি যদি নতুন একটা জগৎ বানিয়ে ফেলতে পারি তখন আমার নিজেরই একটা জগৎ হয়ে যাবে। তখন আমাকে কে ঠেকাবে?



এর কয়েকদিন পর, হলের কমন রুমের পাশের রুমটা খোলা দেখে সেখানে উকি মারতে দেখি সেখানে সারি সারি আলমিরা আর আলমিরা ভর্তি বই। একজন দাড়িওয়ালা চাচা মতোন (নামটা মনে নেই) বসে আছেন। তার কাছ থেকে জানলাম এটি “হল লাইব্রেরি।”



কেন যে আগে দেখলাম না।

দেখলাম আমার সব স্বপ্নের বই সেখানে।



নাম শুনেছি কিন্তু কোনদিন পড়তে পারি নাই এমন একটা চরিত্র হর্ষবর্ধন। দীর্ধদিন ধরে জেনেছি “চক্কোরবরতীরা কঞ্জুষ হয়”। কিন্তু চট্টগ্রামে কারো বাসাতে কোনদিন শিবরামের কোন বই দেখি নাই। কিরিটি রায়ের যে অমনিবাস আছে সেটাই তো জানতামই না। রবীন্দ্র রচনাবলী একটা বাসাতে ছিল। কিন্তু মানিক বন্দোপাধ্যায়ের রচনাবলী? কবর ছাড়াও মেট্রিকের ব্যাকরণ বই-এর রচয়িতা মুনির চৌধুরীর যে আরো বই আছে সেটাই বা কে জানতো।

চাঁদে অমাবস্যা নামে লাল-শালুর লেখকের একটা বইও সেখানে আছে। সেটি পড়ার পর এতো আপ্লুত হলাম যে, কয়েকদিন ধরে কিছুই মাথায় ঢুকলো না। আমার অবস্থা দেখে রুমি ভাই বললেন – আরে চাঁদে অমাবস্যাতে এই অবস্থা। আউটসাইডারে তোমার কী হবে?



আউটসাইডার? আলবেয়ার কামু? ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স? সামুয়লেসনের ইকোনমিক্স? চানক্যের অর্থশাস্ত্র?

এসবের মানে কি। এতসব বই আমি কেমনে পড়বো? সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত জটিল বিষয়!

কী হবে অতো ভেবে। বরং আমি পড়তে শুরু করি।



এর মধ্য রুমি ভাই একদনি খবর দিলেন ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আরো একটা লাইব্রেরি আছ-সিডিএল। ওতো দূরে যাওয়ার সামর্থ কেমনে হবে। হল থেকে হেটে সায়েন্স ল্যাব। তারপর বাস শংকর। মেম্বার হয়ে আসলাম।



শুরু হল আমার নতুন জগতের কাজ। মুজতবা আলী আদ্রে জিঁদের কথা কেন বলেছিলেন সেটা বুঝতে শুরু করেছি। আর এর পর একদিন জানতে পারি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কথা। এই নোটের প্রথম পর্বে রয়েছে সেই কথা।



ততদিনে বুঝে ফেলেছি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস না করলেও জগত বানাতে আমার কস্ট হবে না।



ক্লাস টেস্ট কিংবা সেমিস্টার পরীক্ষা আসুক।



আসুক পরীক্ষা। পরীক্ষারে আর ডরাই না।



[যারা আমার ১০ পর্বের এই সিরিজ নোট পড়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। কী বোর্ড যদি কখনো ফিরিয়ে আনে তাহলে একদিন হয়তো আমার বুয়েট লাইফের অন্য গল্পগুলোও করা যাবে। স্মৃতিচারণই তো বুড়োদের কাজ! ততদিন পর্যন্ত সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

সোহানী বলেছেন: হাঁ মুনির ভাই, মনে হয় বুড়োই হয়ে যাচ্ছি.......... ইদানিং মনে হয় স্মৃতিচারণ বেশি করছি....।

বরাবরের মতই ভালো লেগেছে কিন্তু এতো ছোট লিখা পোসায় না আর মাত্র ১০ পর্ব !!!!!!! নতুন কোন পর্বের অপেক্ষায়......

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৯

মুনির হাসান বলেছেন: আমি তো বুড়া হইছি সোহানী। আমার এখন ৫৪+। সেই ১৯৯৪-৯৫ সালে ডাক্তাররা একবার আমাকে জবাব দিয়েছেন। এরপর তো বোনাস লাইফ।

সেই অর্থ স্মৃতিচারণ করার মনে হয় এখনই সময়। নতুন করে লিখবো অচিরে তবে এত জায়গায় লেখাটা মুশকিল। তাই হয়তো নিজের ব্লগেই রেগুলার হয়ে যাবো।

ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

মদন বলেছেন: আগের সিরিজগুলো মিস করেছি।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১০

মুনির হাসান বলেছেন: ্রত্যেক পর্বে আগের পর্বের লিংকটা দিছি। সেভাবে আগালেই হয়তো সব পড়া যাবে।

ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

বেলা শেষে বলেছেন: ....small but beautiful writing, may be i am wrong but i feel.....
ততদিনে বুঝে ফেলেছি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস না করলেও জগত বানাতে আমার কস্ট হবে না।
"ইঞ্জিনিয়ারিং" is most importent then others.....
excuse me Sir.....

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

মুনির হাসান বলেছেন: এই সিরিজের উপজীব্য কিন্তু আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া নয়, অন্য জগতের খোঁজ পাওয়া। আমি বলেছি বই পড়ে আমার যে জগৎ হতে শুরু করেছে সেটা আমাকে কোথাও না কোথাও নেবে।
আর প্রথম পর্বে সিনিয়রা বুয়েটের পড়ালেখার অনেক ভয় দেখাতো। সেজন্য বলতাম - খুব বেশি কী আর খারাপ হবে। ফেল করবো।

ঐ অর্থ বলেছি প্রথাগত কোন ডিগ্রী না হলেও কাজ চারিয়ে নিতে পারবো।

তবে, আমি যে আজকের আমি তার জন্য সম্ভবত ড. আবদুর রশীদের ফিলসফির কাছে আমি ঋণী। কাজে বুয়েটে না আসলে আমি আজকের মুনির হাসান হতাম না।

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে!!










ধন্যবাদ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩১

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার একটা সিরিজের সমাপ্তি। খুব ভালো লেগেছে প্রতিটা পর্ব। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

মুনির হাসান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.