নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবীর আলেকজান্ডারের মৃত্যুকালীন সঠিক উপলব্ধি

১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩


সম্রাট আলেকজান্ডার, যাকে অনেক ইতিহাসবিদ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বলে সম্বোধন করেন। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান। ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের অন্যতম সেরা এক বীর হিসেবে তাঁর নাম লেখা থাকবে।

যুদ্ধের ময়দানে অসম সাহসিকতা আর কৌশলের প্রখরতায় জয় করেছিলেন রাজ্যের পর রাজ্য। কিশোর বয়স থেকেই তার মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠেছিল বীরোচিত সাহস, যার সাথে সংমিশ্রণ ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার।

অ্যারিস্টটলের কাছে প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন আলেকজান্ডার। ঐতিহাসিকদের অভিমত, নিজেকে বিশ্বজয়ী হিসেবে গড়ে তোলার রসদ তিনি পেয়েছিলেন অ্যারিস্টটলের কাছেই, নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব আর মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে। অ্যারিস্টটলকে আমৃত্যু গভীর সম্মান প্রদর্শন করে এসেছেন আলেকজান্ডার। গবেষণার যাবতীয় অনুষঙ্গ যোগাড়, খরচা ইত্যাদির সমস্ত দায়িত্বভার নিজের হাতে দেখভাল করেছেন।

গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “জীবন পেয়েছি পিতার কাছে। কিন্তু সেই জীবনকে কী করে সুন্দর করতে হয়, সে শিক্ষা পেয়েছি গুরুর কাছে।”

আলেকজান্ডারের মায়ের খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তিনি আলেকজান্ডারকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করতেন যে পারস্য সাম্রাজ্য জেতাই তার নিয়তি। আলেকজান্ডারও চেয়েছিলেন পৃথিবীব্যাপী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর এই অদম্য বাসনাকে পূর্ণ করার অতিমানবীয় লক্ষ্যে ক্ষণজীবী এই মানুষটি সারাজীবনের অর্ধেকই কাটিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনি সেতু বন্ধন রচনা করেছিলেন প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের। সেই সুদূর গ্রীস থেকে একের পর এক সাম্রাজ্য জয় করে তাঁর বাহিনী চলে এসেছিল ভারতের বিপাশা নদী পর্যন্ত ।তবে গঙ্গারিডাই জাতির বিরত্বের খবরে পিছিয়ে যায় গাঙ্গেয় সমভূমি বা পদ্মা বিধৌত বঙ্গভূমি তথা বাংলাদেশ জয় না করে। তাঁকে নিয়ে কতো কিংবদন্তী, কতো লোকগাথা! পারস্যের কাছে তিনি পরিচিত ইস্কান্দার বাদশাহ হিসেবে, ভারতবর্ষেও ইস্কান্দারের অপভ্রংশ “সেকান্দার বাদশাহ” নামে খ্যাত তিনি।

দুই হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও আলেকজান্ডারকে নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহে যেন এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। আলেকজান্ডার জয় করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাম্রাজ্য। ভারত, পারস্য ও গ্রীক এই তিনটি অসামান্য সভ্যতার সম্মিলন সম্ভব হয়েছিল, যদিও খুব স্বল্প সময়ের জন্য, কেবল তাঁর বিজয়াভিযানের ফলেই। সেজন্যই ইতিহাসে আলেকজান্ডার এত অভিনন্দিত, এত বেশি আলোচিত।

যদিও আলেকজান্ডার মাত্র ৩৩ বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু এর মধ্যেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় তিনি আসলে সাথে কী নিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে তার শেষযাত্রার অনুষ্ঠানের বর্ণনায়।

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডারের শেষ ৩ ইচ্ছা:

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তার জেনারেলদের ডেকে তিনটি শেষ ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেগুলো হলো-

১. তার কফিন কবরস্থানে বহন করে নিয়ে যাবে তার ডাক্তারেরা।
২. তাকে বহন করার রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে তার অগাধ সম্পদ–টাকা, স্বর্ণ, মনি-মুক্তা–যা কিছু তিনি তার ঈর্ষণীয় সাফল্যমণ্ডিত জীবনে অর্জন করেছিলেন।
৩. তার হাত দুটো কফিনের বাইরে তালু ওপর দিকে রেখে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।

আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত ইচ্ছাগুলো শুনে তার এক জেনারেল অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করলে আলেকজান্ডার ব্যাখ্যা করেন যে, আমি চাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তারেরা আমার কফিন বহন করুক, যাতে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে যে, মৃত্যু যখন আসবে তখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তারেরা একসঙ্গে মিলেও সারিয়ে তুলতে পারবে না। আমি চাই আমার কবরস্থানে যাওয়ার পথ সম্পদে ছড়িয়ে থাকুক, যাতে সবাই দেখতে পায় যে এই দুনিয়ায় অর্জিত সম্পদ দুনিয়াতেই থেকে যাবে। আমি চাই আমার হাত দুটো কফিন থেকে বাইরের দিকে ঝুলে থাকুক, যাতে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে যে আমরা এই দুনিয়ায় খালি হাতে এসেছিলাম, যখন সময় ফুরিয়ে যাবে তখন আবার খালি হাতেই চলে যাব।

অর্থাৎ আমরা দেখছি যে, যাওয়া এবং আসার সময়ে আমাদের হাত থাকে খালি। কিন্তু মাঝখানের সময়টাতে হাত তো খালি থাকে না। হাতে কিছু না কিছু থাকে। সেই কিছু না কিছু কি শুধু নিজের ভোগের জন্যে? নাকি সেখানে অন্যেরও পাওয়ার অধিকার আছে। পরম করুণাময় বলেন যে, অবশ্যই তা আছে। আমার যা-কিছু, যতটুকুই আছে, তা থেকেই দেয়ার নির্দেশ তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। বলা হয়েছে, যদি আমাদের কাছে একটি খেজুরও থাকে, তাহলে তার একটি অংশ অন্যকে দিয়ে খেতে। কারণ দেয়ার মধ্যে রয়েছে আনন্দ। দেয়ার গল্প শোনার মধ্যেও আমরা খুঁজে পাই সুখ।

আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট মৃত্যশয্যায় উপলব্ধি করেছিলেন জীবনের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য- পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়, এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে- মানুষের জন্য কিছু করা।

উল্লেখ্য,আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট ৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রীসের মেসোডোনিয়ায় জন্মগ্রহণ এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে ব্যাবিলনে (বর্তমান ইরাকে) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরেই স্ত্রী রোক্সানার কোল জুড়ে তাঁর পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং উত্তরাধিকারীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে খানখান করে ফেলে। এভাবে কালের পরিক্রমায় গ্রীস এবং প্রাচ্যের সমন্বয়ে গঠিত আলেকজান্ডারের সেই সুবিশাল সাম্রাজ্য হারিয়ে যায়, কিন্তু ‘আলেকজান্ডার’ নামটি অমর হয়ে থেকে যায় ইতিহাসের পাতা জুড়ে।
তথ্য সূত্রঃ একুশে টেলিভিশন এর প্রতিবেদন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩২

নতুন বলেছেন: সম্ভবত এই কাহিনিটা ঐতিহাসিক ভাবে সত্যি না।

কিন্তু আসলেই মানুষ একটা সময় টের পায় যে তার অহংকার করার মতন কিছু নাই। আর জ্ঞানী মানুষের সেই অহংকারটা থাকেনা।

মানুষ যত জ্ঞানী হয় সে ততই বিনয়ী হয়।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:১০

জুন বলেছেন: আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট জন্মেছিলেন ইউরোপে (গ্রীসের মেসিডোনিয়ায়), মৃত্যু হয়েছিল এশিয়ায় ( ইরাকের ব্যাবিলনে) আর শেষ শয্যা পেতেছিলেন ইজিপ্টের আলেকজান্দ্রিয়া নগরীতে। অর্থাৎ তিন মহাদেশ জুড়ে ব্যাপ্তি ছিল তার ৩৩ বছরের জীবন থেকে মৃত্যুকাল যা আর কারও বেলায় ঘটেনি।

৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: এ মহাবীরকে শ্রদ্ধা জানাই।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:২৮

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: মহাবীর কিন্তু মহামানব নয়। খৃষ্টপূর্বাব্দে এই অমানুষটা অজস্র মানুষ হত্যা করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.