নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

আকাশের দূঃখের সীমা নেই!

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:০৫


আষাঢ় মাসে আকাশ থেকে অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে আর আকাশের দূঃখের সাগর থেকে পানি উপচে দু চোখ দিয়ে ঝরছে। এর মাঝে জনালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা গান শুনে মনের দূঃখ কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করছে আবুল কালাম শমসের (আকাশ)।

ঐ আকাশ হতে বৃষ্টি পড়ে, তাইতো সকলের মনটা নড়ে
এ নয়তো অনাসৃষ্টি, এ যেন বিধাতার শুভ দৃষ্টি
জল পড়ে পাতা নড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে
ঘরের চালে মনোরম বৃষ্টি, বাইরের উঠোনে সজাগ দৃষ্টি

যখন ঘন কালো মেঘ করে, তখনই অনেক বৃষ্টি পড়ে
কোন অনুরাগী বৃষ্টিতে ভিজে খুশিতে তার মনটা ভরে
মেঘ যত জোড়ে ডাক দেয়, বৃষ্টি ততো না হি ঝরে
বৃষ্টি মাখা মৃদু হাওয়া কবির মনে দোলা দেয় রে

আষাঢ় শ্রাবণ মানে নাকো মন, বৃষ্টি কখন পড়ে
মৌসুমী ফসল, বৃক্ষরাজী সবাই তার প্রতিক্ষা করে
প্রকৃতি ফিরে পায় তার প্রাণ, গাই বৃষ্টির জয়গান
বাদল দিনে মন করে আনচান, খুশিতে ভরে ওঠে প্রাণ।।

গান শুনতে শুনতে বর্তমান দূঃখ কিছুটা কমলেও ছোট্ট বেলার স্মৃতি তাকে কাতর করে ফেলেছে। বাবা মারা গেছেন ছোট্ট বেলায়, মা অনেক কষ্টে মানুষ করার চেষ্টা করেছে। বাবা ছাড়া একটা ছেলের জীবন যেন ছাদহীন ঘরে বসবাস বা ছাতা ছাড়া রোদে পোড়া বা ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা। ছোট বেলা জানালার পাশে বসে বৃষ্টি উপভোগ না করলেও বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরা বা হাসের খাদ্য হিসেবে শামুক সংগ্রহের চেষ্টা করে মায়ের অভাবের সংসারে একটু সহযোগিতার চেষ্টা করে যায় ছোট্ট আকাশ।
অভিভাবকহীন আকাশ জীবনযুদ্ধে ভেঙ্গে না পরে নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছে তার স্কুলজীবনের পড়ালেখায়। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে নিজ চেষ্টায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী শেষ করে সরকারী চাকুরী নিয়ে সুখী জীবনে থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখে আকাশ। বিধি বাম , অভাগা যে দিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। কিন্তু আকাশের দূঃখের সাগর না শুকিয়ে আরও চোখের জলে ভরপুর। চাকুরীর দুই বছরের মাথায় বিয়ে করে একজন সহযোদ্ধা বা বন্ধু আনল যাতে করে দুজন মিলে অভাগিনী মায়ের সেবা করে কিছুটা দূঃখ দূর করা যায়। কিন্তু বিধাতার লিখন না যায় খন্ডন। বউ শ্বাশুরীর সেবা না করে নিজেই কয়েকজন সেবাদাসী ডিমান্ড করে আকাশের অসহযোগী হয়ে হয়ে ওঠে আর আল্লাহ পাক বছর না ঘুরতেই মাকে নিয়ে গেল পরপারে আকাশকে একা করে।

ও মা গো, ও মা, আমায় তুমি একা ফেলে
কোথায় গেলে চলে?
সব সময়ই মনটা আমার তোমার কথা বলে...
জন্মের পরই বাবা আমার গেল পরপারে,
তুমিও আমায় চলে গেলে—বড় একা করে।

জগৎ সংসারে আমার আপন কেউ নেই,
আমার দুঃখের সাগরে উথাল-পাতাল ঢেউ...
মা, তোমার ছায়া ছাড়া কেমন করে বাঁচি?
ফিরে আসো, শুধু একবার দেখে যাও!

রাতের আঁধারে শূন্য ঘরে বসে থাকি,
মনে হয় যেন তুমি দেখো না-আমাকে
ছোট্ট হাত দুটি বাড়াই আকাশ পানে,
কিন্তু সাড়া মেলে না তো আর কখনো!

জগৎ সংসারে আমার আপন কেউ নেই,
আমার দুঃখের সাগরে উথাল-পাতাল ঢেউ...
মা, তোমার মুখের হাসি স্বপ্নে দেখি,
জাগরণে শুধু চোখের জল রই...

তোমার কোলে ঘুমানো সেই সকাল গুলো,
তোমার গল্প, তোমার আদর—সব স্মৃতি আজ ধোঁয়ায়...
মা, যদি একবার ফিরে আসতে পারো,
এই ব্যথা কি তখনো থাকতো?

জগৎ সংসারে আমার আপন কেউ নেই,
আমার দুঃখের সাগরে উথাল-পাতাল ঢেউ...
মা, তুমি থাকলে হতো এই জীবনটা অন্যরকম,
এখন শুধু তোমার ছবি বুকে চেপে রই...

মাকে হারিয়ে আকাশ জগৎ সংসারে বড় একা হয়ে গেল এবং দূঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলো। ছোট্ট বেলা থেকে দূঃখের নদী পাড়ি দিতে দিতে দক্ষ সাতারুর মতো সাগর পাড়ে এসে জীবনসঙ্গীকে সাথে নিয়ে ভব নদী পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর আকাশ। কিন্তু তাদের দুজনের চাওয়া-পাওয়ার বিস্তর ফারাক। আকাশ চায় সাদামাটা গ্রামীণ জীবন আর সহযোদ্ধা চায় বিলাসী শহুরে জীবন। উচ্চ শিক্ষা সহধর্মীনীকে বিনয়ী না করে অহংকারী করে তুলেছে। সংসারের দৈনন্দিন কাজ তার কর্ম নয় এই কাজ বাড়ির চাকর বাকরের সেই শিক্ষা পেয়েছে মাস্টার্স পাশ করে। পর্যাপ্ত চাকর বাকরের ব্যবস্থা করতে না পেরে বউয়ের নিকট থেকে সকল ধরনের স্বামী সেবা প্রত্যাশা না করে সংসারের কাজের পরিধি কমাতে বউকে বলে আকাশের জন্য খাবার রান্না না করে যেন নিজের খাবারটুকু রান্না করে খায়। এভাবে টক ঝাল মিষ্টি উপভোগ করতে এবং ভবিষ্যৎ সুখকর হবে প্রত্যাশায় এক বছর পড় সংসারে নতুন অতিথির আগমন। ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট সংসার সুখের হবে ভেবে ভেবে সময় বয়ে চলল। কিছু দিন পর স্ত্রী শিক্ষার নতুন বয়ান হলো সন্তান লালন পালনও তার কাজ না। রান্না-বান্না, সন্তান পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে অশান্তির ঝড় তুলে সংসারকে নড়কে পরিণত করে । সংসার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করার সুবিধার্থে বউয়ের চাকুরিতে নিরুৎসাহিত করে নিজে কষ্ট করে ভবিষ্যৎ সুখের আশায় সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল দূঃখকে বুকে ধারণ করে কায়ক্লেশে জীবন যাপন করছে আকাশ।

জীবন চলার পথে অনেক মানুষের সাথে চলাফেরা করলেও আকাশের বন্ধুর সংখ্যা কম। কারন চারপাশে প্রকৃত বন্ধুর অভাব। সত্য কথায় বন্ধু বেজাড়। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করার কারনে এবং সকলকে উচিৎ কথা শোনানোর কারনে বন্ধুর সংখ্যা নগন্য। অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো এবং একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো নীতিকে সামনে রেখে জীবন সঙ্গীকে বন্ধু বানিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে বিয়ে করেছিলো আকাশ। কিন্তু বউ তাকে এমন চাপে রাখে যে সংসারের সুখলাভ বা আরও সন্তান লাভের কথা মাথায় না এনে সংসার থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে। বউয়ের আচরণে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে তাকে ত্যাগ করার কথা ভাবে । নানা ধরনের সামাজিক-পারিবারিক টানাপোড়নে ডিভোর্স দেওয়ার চেয়ে আত্মহত্যাকে নিরাপদ প্রস্থান মনে করে আকাশ। আবার ভাবে এভাবে জীবন যুদ্ধ থেকে পলায়ন না করে আরও কিছুদিন ধৈর্য্য ধরা উচিৎ। কারন আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন এবং সবুরে মেওয়া ফলে। সবুরে মেওয়া না ফললেও কয়েকবছর পর আকাশের একটা মেয়ে হলো। ভাবলো এই বুঝি আল্লাহর আশির্বাদ এলো। সংসার সুখে ভরে উঠবে। কিন্তু না সন্তান বা সংসার সুখের চেয়ে বউয়ের আর্থিক চাহিদা বেশি। আকাশ মাসে বেতন যা পায় সারা মাস সুখ সাচ্ছন্দে কাটার কথা। তার জমাও নেই ঋণ ও নেই। আবার মনে সুখও নেই। বউয়ের ধারনা বেতনের টাকা আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে দেয় আর ভাই-বোনের ধারনা আমার সকল টাকা পয়সার বউয়ের পিছনে ব্যয় করে। অথচ আকাশের জীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারনে বেতন যা পায় তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। আবার প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে সমাজ তার নিকট কিছু আশা করে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভুল ব্যবস্থায় একজন সৎ কর্মকর্তা যে কত অসহায় তা ভুক্তভুগী ছাড়া কেউ জানে না।

বউ ঘরে নানান সমস্যা করে, আত্মীয় স্বজন আসলে রান্না করে খাওয়াতে পারবে না বলে আকাশকে অনেকবার সতর্ক করেছে। ভুল করে দুই একজন আসলে মুখের উপর কিছু না বললেও এমন আচরণ করেছে যে দ্বিতীয়বার সেই আত্মীয় তার বাসায় আসতে চায়নি। বাইরে গেলে রিক্শা ভাড়া দশ-বিশ টাকা বেশি দেওয়া যাবে না আবার অপ্রয়োজনীয় খাতে দশ হাজার টাকা খরচ করতে পিছপা হয় না।

বউয়ের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে আকাশ বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে। বিভিন্ন সামাজিক কাজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সমাজে তো বেশিরভাগ লোক ভাল মানুষের মুখোস পড়ে ঘুরে বেড়ায়। নিজে ভালো কাজ করবে না এবং কাউকে ভালো কাজ করতেও দিবে না এই হলো বর্তমান সমাজের নীতি। তাইতো যতেষ্ট চেষ্টা করেও ভালো কিছু করার সুযোগ পায় না। বাইরের কাজে সফল না হয়ে ঘর-সংসার এ ব্যস্ত থাকতে চায়। সেখানে কিছু করার সুযোগ নেই। আকাশের অবস্থা দোলকের ববের মতো। এদিক ওদিক দুলতে থাকে। ঘরের ধাক্কা খেয়ে বাইরে যায় আবার বাইরের ধাক্কা খেয়ে ঘরে যায়।

আকাশ ছোট্ট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে তাই সে ভালো করে জানে যে বাবা ছাড়া একজন সন্তান পৃথিবীতে কত অসহায়। তাইতো শত প্রতিকূলতার মাঝে আকাশের চিন্তা যেন তার সন্তান বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়। একটা ব্রোকেন ফ্যামিলর সন্তান কতটা অসহায় তা সকল সচেতন নাগরিকই জানে। কিন্তু জানে না বা বোঝে না আকাশের বউ। যে সন্তানের দিকে তাকিয়ে তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সকল অমানবিক আচরণ হজম করে কলুর বলদের মতো সংসারের জন্য খেটে যাচ্ছে আকাশ সেই সন্তানের সাথে খারাপ আচরন করতে একবারও ভাবে তার বউ। বউয়ের ঝগড়া-ঝাটি, বাপের বাড়ির ঝামেলা মাথায় নিয়ে নিজের সংসারের পরিবেশ নষ্ট করে যে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে তা বুঝতে পারছে না। তাকে বোঝানোর ও কেউ নেই। আকাশের সবচেয়ে বড় দূঃখ হচ্ছে তার দূঃখের কথা বলার মতো কোন যায়গা নাই। যে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সন্তানদের মায়ের সকল অন্যায় আচরণ মেনে নিচ্ছে আকাশ সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে আকাশ। আশাবাদী মানুষ আকাশ এখন জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আত্মহত্যা না করলেও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত। সংসারের মায়া কাটিয়ে দেশ ও দশের কল্যানে নিজের জীবন উৎসর্গ করে জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে ফিরছে আকাশ।

আমু

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.