নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ সরল সোজা সাদা ভাষায় জীবনের কথা লিখতে পছন্দ করি। কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা একজন নিতান্তই সাধারন মানুষ। মনের কথাগুলি বরাবরই মুখে এসে বের হতে চায় না, কলমে আসতে চায়।

বিজু চৌধুরী

আমি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।

বিজু চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রোমোজম

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২১

১।
ডঃ মোসলেহ উদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে তাকে বেশী ভাল চিনেন ও বোঝেন আমেরিকার মানুষ। বছরে চার মাস দেশে থাকেন। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে - মানুষের আচরনে তার দেহের ক্রোমোজমের প্রভাব ও সম্পর্কের উপরে লেকচার দেন। তবে, তিনি বর্তমানে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। পিতা বা মাতা বা উভয়েরই এই ক্রোমোজমের কোন যোগাযোগ বা সিগন্যালিং লিংক বা নিয়ন্ত্রন থাকে কিনা সন্তানদের উপরে। এটি খুবই প্রাথমিক পর্য্যায়ে আছে। তবে, মোসলেহ উদ্দিন সাহেব যে এটিকে অনেকটাই গুছিয়ে এনেছেন, তা তিনি সেভাবে না বললেও আমেরিকার গুটিকয়েক মানুষ ঠিকই জানে। তাই, তাদের সম্পূর্ণ সহযোগীতা মোসলেহ উদ্দিন সাহেব পেলেও, নজরদারিটা বুঝতে পারেন না। এটি প্রমান করতে পারলে হয়তোবা - একজন মা কি করে সন্তানের বিপদ অনেক সময়ই বুঝতে পারেন? সেটির একটি ব্যাখ্যা আসতে পারে।
এটি অনেকটা RSA কর্তৃক পাসকোড জেনারেশনের মত। পুরোন টেকনোলজি বলা যায়। গ্রাহকের কাছে একটি random number generate করে এমন ডিভাইস থাকে। যে random number generation এর একটি যোগসূত্র (Seed) থাকে Server প্রান্তে। কিন্তু ডিভাইসটিতে কোন ইন্টারনেট সংযোগ নেই বা কম্পিউটারেও কানেক্ট করতে হয় না, স্ট্যান্ড এলোন ডিভাইস। এটি মূলত টাইম ক্লক হিসেব করে কাজ করে। গ্রাহক লগ ইন করবার সময়ে তার নিজস্ব পাসওয়ার্ডের সাথে এই ডিভাইস কর্তৃক জেনারেট হওয়া password ইন্টারনেটে দেন। Server প্রান্তে তার ডিভাইসের বিপরীতে দেয়া Seed থেকে একই নম্বর জেনারেট হয় এবং সেটি চেক করে তাকে secured account এ প্রবেশ করতে দেয়া হয়। random number যদিও randomly generate হয়, তবুও দুজায়গায় একটি সম্পর্ক থাকে seed এর মাধ্যমে। এরকমই দুজন আলাদা মানুষের দেহে থাকা ক্রোমোজমের মধ্যে কোন সিগন্যালিং, নিয়ন্ত্রন থাকলেও থাকতে পারে এই seed জাতীয় কিছুর মাধ্যমে। খুবই জটিল একটি বিষয়। যেমন - মায়ের সাথে সন্তানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুস্পষ্ট তথ্য তার আছে। তবে, তিনি এটির মধ্যে আধ্যাত্নিক কিছুই দেখেন না, সবই বিজ্ঞান।
আধ্যাত্নিকতার ধারে কাছে মোসলেহ উদ্দিন সাহেব নেই। তিনি সম্পূর্ণরুপে নাস্তিক একজন ব্যাক্তি। তিনি ধর্ম এবং অলৌকিকতা এই দুটি বিষয় সম্পূর্ণরুপে অন্ধের মত অবিশ্বাস করেন।

২।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি রহস্যের বিষয় তার পরিচিতজনদের কাছে। তবে, দক্ষিনাঞ্চলে তার বাড়ী, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তার সহপাঠিদের দেয়া তথ্য। তিনি মানুষজনের সাথে একেবারেই মিশতে চাইতেন না।
মোসলেহ উদ্দিনের বয়স এখন মাত্র ৪৫। তার বড় মেয়ের বয়স ১৬ আর ছেলের ১০। তার স্ত্রী রুপা তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। রুপা ছিল তার থিসিস সুপারভাইজারের মেয়ে। মোসলেহ উদ্দিনের সাথে যে রুপার বিয়ে দেয়া যেতে পারে, সেটি মোসলেহ উদ্দিনের সুপারভাইজার নয়, ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একজন শিক্ষক কথাটি তুললে, রুপাকে না দেখেই মোসলেহ উদ্দিন রাজী হয়ে যান। বিয়ের সময় মোসলেহ উদ্দিনের বড় বোন শুধু এসেছিল গ্রাম থেকে। সেই বোনও তার পরিবার নিয়ে সেরকম তথ্য কাউকে দেননি।
মোসলেহ উদ্দিন দেশে এসেছেন মাসখানেক হল। রুপা তার নানীর বাসায় গিয়েছে। সেখান থেকে ঘুরে এসে দিন পনের থেকে, তারপরে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাবে ইউএসএ। বাচ্চাদের স্কুল খুলে যাবে। মোসলেহ উদ্দিন যাবেন তার সপ্তাহ তিনেক পরে। বাসায় এখন মোসলেহ উদ্দিন আর তার মেয়ে। ছেলে গিয়েছে মায়ের সাথে। মেয়েটা যেতে চায়নি বাবাকে রেখে। মেয়েটির বড্ড মায়া বাবার প্রতি। মোসলেহ উদ্দিনের ইনসমনিয়া আছে। তাই, ঘুমের ঔষধ খান। কিন্তু খুব একটা কাজে দেয় না। তিনি ঘুমুতে পারেন না। কিছুটা ওজন হারিয়েছেন। এবার আমেরিকায় ফিরে চেকআপ করাবেন। তবে, গত সাতদিন তিনি ভাল ঘুমিয়েছেন। তার ভাল ঘুমের কারণ - তার এই মায়াবী মেয়েটা। মাঝরাতে মেয়েটা উঠে এসে মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের কপালে হাত বুলিয়ে দেন। এক পর্যায়ে মোসলেম উদ্দিন সাহেব গভীর নিদ্রায় চলে যান। ঘুমোবার আগে মোসলেহ উদ্দিন শুনেন, তার মেয়েটি গুনগুন করে বলছে -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
আমেরিকায় থাকলেও ছেলে মেয়ে দুজনেই ভাল বাংলা পারে। এখানে এসে মনে হয় মেয়েটি কারো কাছে এটি শুনেছে। একসময় জিজ্ঞেস করতে হবে।
আচ্ছা, পিতার সাথে মেয়েদের ক্রোমোজমে কি কিছু সিগন্যাল বা নিয়ন্ত্রন থাকতে পারে? মোসলেহ উদ্দিন ভাবতে শুরু করেন।

৩।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেব গতকাল রাতে লঞ্চে রওনা করে ভোরে বরগুনায় এসেছেন। মাইক্রো সারাদিনের জন্য ভাড়া করে সকাল এগারোটার মধ্যেই চলে এসেছেন - শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলো দুরে আরও দুটি নদী পেরিয়ে তার জন্মস্থলে। তার পিতার নাম আনসারউদ্দিন। ক্লাস টেন পর্য্যন্ত তার পিতার নাম ছিল আফসারউদ্দিন। মেট্রিকের রেজিষ্ট্রেশনের আগের দিন তার বাবা তাকে বলেন -
- বাবা, আমি তোর চাচা। তোর বাবা মারা গিয়েছেন তোর জন্মের সাতদিন পরে।
মোসলেহ উদ্দিনের কোন বিকার হয়নি এটি শুনে এবং তার চাচাও জানতেন যে, এই ছেলের কাছে এটি অবাক হবার মত কিছুই হবে না। কারণ, ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই সম্পূর্ণ অন্যরকম।
তখন সরকারী কাজে মায়ের নাম লেখার কোন চল ছিল না। পরবর্তীতে যখন মায়ের নাম লেখার প্রয়োজন হয়, তখন মোসলেহ উদ্দিন স্বেচ্ছায় তার চাচি আয়শা খানমের নাম লিখেন। এই চাচির দুগ্ধ পান করেই মোসলেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন। তখন মোসলেহ উদ্দিনের চেয়ে সাত মাসের বড় - চাচীর বড় মেয়ের জন্ম হয়েছিল।
মোসলেহ উদ্দিন শুধু তার মা সম্মন্ধে জানেন - ওনার ডাক নাম মুক্তা ছিল। পনের বছর বয়সে বিয়ে হয় এবং ষোল বছর বয়সে মোসলেহ উদ্দিনের জন্ম হয়। তার মা ও বাবা একই দিনে মারা যান। বাবা খুন হন আর মা আত্নহত্যা করেন। তবে, তার মাকেও হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন তিনি কলেজে ওঠার পরে শোনেন। তার মাকে হত্যার ব্যপারে তার দাদার হাত ছিল। তার দাদার ধারনা হয়, তার ছেলের বৌয়ের কারণেই তার ছেলে খুন হন।
এটি শুনে মোসলেহ উদ্দিন তার দাদাকে খুন করার জন্য দা হাতে এগিয়ে গেলে, এই চাচা চাচী এগিয়ে এসে আটকায়। তার বাবারুপী চাচা সেদিন উত্তেজিত হয়ে মোসলেহ উদ্দিনকে চড় মেরে বসেন। এরপরে মোসলেহ উদ্দিন বাড়ী ত্যাগ করেন। তার চাচা পরবর্তীতে তার বাবার সম্পত্তির সমস্ত টাকা মোসলেহ উদ্দিনকে বুঝিয়ে দিলে, সেটি দিয়েই মোসলেহ উদ্দিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিশ্চিন্তে পার করেন। এরপরে দুবার তিনি এসেছিলেন শুধু এই চাচীর টানে। চাচী যেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন -
- বাবা, তুই আসিস না, তোর বিপদ হতে পারে।
সেদিনের পরে আজ এলেন, মাঝে ২৬টি বছর। এখন চাচা বেঁচে নেই। মোসলেহ উদ্দিন বাড়ী ত্যাগের দুই বছরের মধ্যে তার দাদা মারা যান। চাচী থাকেন মোসলেহ উদ্দিনের চেয়ে বছর চারেকের ছোট, তার একমাত্র ছেলে নয়নের সাথে। নয়নের মুদি দোকান ও পৈতৃক সম্পত্তিই আয়ের উৎস। একেবারেই খারাপ নয়, মধ্যবিত্ত পরিবার বলা যায়। নয়নের তিন ছেলে। বড় ছেলের ১৫, এরপরে ১২ ও ১০ বছর দুজনের। মোসলেহ উদ্দিনকে দেখে চাচী কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। নয়নের কাছে তিনি শুনেন, তার দেহে অনেক রোগ বাসা বেঁধেছে। তিনি এসেছেন শুনে নয়নের বড় বোন, যে বোন ও মোসলেহ উদ্দিন - তার চাচীর দুগ্ধ একত্রে পান করে বড় হয়েছেন, যে বোন তার বিয়েতে গিয়েছিলেন, সে এসেছে। পাশের গ্রামেই তার বাড়ী। মোসলেহ উদ্দিন রাতেই ফিরবেন। তাই দুপুরের পরেই চলে যাবেন বরিশাল। সেখান থেকে রাতের লঞ্চে ঢাকা।
দুপুরে খাবার পরে, মোসলেহ উদ্দিন আজ প্রথম তার চাচীর কাছে তার মা সম্মন্ধে জানতে চান। তার মা তার জন্মের পরে তাকে কিভাবে খাওয়াত বা ঘুম পাড়াত, এক কথায় বিশদ। চাচী অবাক হয়ে যায়। খুব বেশী স্মৃতি নেই। মোসলেহ উদ্দিন যে সাতদিন তার মাকে পেয়েছিলেন, সেই সাতদিনের গল্প আর কতটুকুই বা হতে পারে? মোসলেহ উদ্দিনের মায়ের কিছু মানসিক সমস্যা ছিল। বিভিন্ন রকম উল্টোপাল্টা কথা বলতেন। যেমন মোসলেহ উদ্দিনকে ঘুম পাড়ানোর সময় বলতেন -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
কোন মানে নেই। বলে চাচী হাসতে শুরু করেন।
মোসলেহ উদ্দিনের মাথাটা চিনচিন করে ওঠে ব্যাথায়। তিনি চাচীকে ২০ হাজার ডলার ও তার দুগ্ধ পানের সাথী বড় বোনকে ১০ হাজার ডলার দিয়ে মাইক্রোতে উঠে রওনা করার সময় শুনতে পান, কেউ একজন বলছে - ৮০ টাকা দিয়ে গুন করতে হবে। এর সেকেন্ড পাঁচেক পরেই ঘরের ভেতর থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে। মোসলেহ উদ্দিন বোঝেন সেটি গুনফলের কারণে। কিন্তু তিনি তাড়াতাড়ি রওনা করেন, তার মাথার ভেতরের ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বারবার দুটি লাইন তার মস্তিস্কে আঘাত করছে -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।

৪।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেব বরিশাল শহর আসার আগেই বুঝতে পারেন, তার শরীরে খারাপ কিছু ঘটছে। তিনি ড্রাইভারকে নির্দেশ দেন সরাসরি বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে যেতে। মোসলেহ উদ্দিন ঢাকা ও আমেরিকায় দুটো ফোন দিয়ে, সিটের সাথে হেলান দিলে তার মনে হয় -
- পুরো গাড়ীটি ঘুরছে, আর ভেতরে চারদিক থেকে গুনগুন করে তার মা ও মেয়ে দুজনে সুর করে বলছে -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের একটি বড় স্ট্রোক হয়ে গেল।
বরিশাল মেডিকেলে মোটামুটি হৈচৈ পড়ে গেছে। মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের আমেরিকায় যে কত বড় সম্মান আর ক্ষমতা, সেটি সবাই বুঝতে পারে। তিনি দেশে যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, সেখান থেকে একজন শিক্ষক আর দুজন কর্মচারী পাঠিয়েছেন ভিসি মহোদয়। তারা মনে করেছেন এই বেশী, নিতান্তই ভদ্রতা। কিন্তু পরবর্তীতে তিনজন ভিসিই ছোটেন বরিশালে, যখন দেখেন মোসলেহ উদ্দিনকে নিয়ে সরকার ও আমেরিকার দুঃশ্চিন্তা। আমেরিকান এম্বেসি থেকে যেভাবে খোঁজ নেয়া হচ্ছিল, তাতে একজন সচিব ও একজন প্রতিমন্ত্রী বাধ্য হয়ে এসেছেন। ঢাকা থেকে বড় দুজন নিউরোলজির প্রফেসর, একজন হার্টের প্রফেসর এসেছেন। মোসলেহ উদ্দিনের জ্ঞান ফেরা মাত্রই যেন ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, সেজন্য হেলিকপ্টার বরিশালে অপেক্ষারত। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে চিন্তার বিষয়। চব্বিশ ঘন্টা পরে মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের জ্ঞান ফিরে এল। তিনি মা, বাবা, স্ত্রী বা ছেলে মেয়ে কারও কথা না বলে, বলতে থাকলেন -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
ঢাকায় নিয়ে এসে সিএমএইচে মোসলেহ উদ্দিনকে দুদিন রাখা হয়েছে। মোসলেহ উদ্দিন নিষেধ থাকায়, তার ল্যাপটপটা না পেয়ে, প্যাডের কাগজে তার যাবতীয় চিন্তা ভাবনা খুবই দ্রুত লিখে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনের ঘটনায় তিনি তার গবেষনার একটি বড় অগ্রগতি করতে পেরেছেন। তিনি গুছিয়ে এনেছেন অনেক কিছু। তার গবেষনার এমন ভীষন অগ্রগতিতে তিনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তিনদিন পরে তিনি বাসায় এসে সবার সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ্যভাবে কথা বলেছেন। আমেরিকার এম্বাসেডর সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে দেখে গিয়েছেন। তার সাথে দেখা করবার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, তাই মোটামুটি পারিবারিকভাবে খুব ভাল একটি সময় কাটাচ্ছেন মোসলেহ উদ্দিন। আজ রুপা নিজ হাতে রান্না করেছে। রুপা ও বাচ্চারা বাধ্য হয়ে তিন সপ্তাহ ছুটি বাড়িয়েছে, এক সাথেই ফিরবে। মোসলেহ উদ্দিন সাহেব আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে। রুপা এক পর্যায়ে বলে -
- আমি যে কয়দিন ছিলাম না, সে কয়দিন মনে হয় তুমি অনিয়ম করেছ। ঘুম হয়নি, তার উপরে লঞ্চের জার্নি, সবমিলে এটি হয়েছে।
- আরে না। সেই কয়দিন বেশ ভালই ঘুম হয়েছে। আমার লক্ষী মেয়েটা প্রতিরাতে ঘুম পাড়িয়ে দিত মাথায় হাত বুলিয়ে আর বলত -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
এই বলে মোসলেহ উদ্দিন সাহেব হাসতে শুরু করলে, মেয়ে রুপাকে বলে -
- বুঝলে মামুনি, বাবা আমাকে কতটা ভালবাসে? আমি তো একদিনও বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেইনি। আর, এইসব কি বলছে বাবা? -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
বাবা, তুমি খুব রসিক হয়ে গেছ।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেব একটি শুকনো হাসি দিলেন। ইতোমধ্যে তার সমস্ত চিন্তায় নতুন যে জট লেগে গিয়েছে, সেটি খুলতে গিয়ে তিনি দেখলেন - তার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে প্রায়। কিন্তু, মানুষের মৃত্যুর পরেও ক্রোমোজমের নিয়ন্ত্রন যেমন তার কাছে ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে, ঠিক তেমনি তিনি সেটিতে অলৌকিকতা থাকায় নিজের সাথেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করেছেন। রুপার ডাকে তিনি সম্বিৎ ফিরে পান। কিন্তু তিনি চারদিকে তার মাকে দেখতে পান। চাচীর বর্ণনা মোতাবেক মায়ের হাঁটাচলা কথা বার্তার ধরন, মোসলেহ উদ্দিনের মেযের সাথে অনেক মিল আছে। তাই, মোসলেহ উদ্দিন সাহেব বুঝতে পারেন না, তিনি তার মাকে নাকি মেয়েকে দেখছেন?
মোসলেহ উদ্দিন সাহেবকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিএমএইচে। সম্পূর্ণ সুস্থ্য মানুষটির, হটাৎ করেই দ্বিতীয় দফায় আবার বড় একটি স্ট্রোক হয়ে গেছে।

৫।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেবের নাকে কেমন জানি একটি গন্ধ এসে ঠেকে। তিনি বুঝতে পারেন এম্বুলেন্সের ভেতরে তিনি। আবার হটাৎই দেখেন, তিনি একটি বাগানে। সেই বাগানে তার মা তার হাত ধরে ঘুরছেন। আবার তিনি কখনও তার মেয়ের গলা শুনতে পাচ্ছেন -
- বাবা, কথা বল বাবা।
মোসলেহ উদ্দিন সাহেব চাইলেই কথা বলতে পারেন। কিন্তু তার বলতে ইচ্ছে করছে না। তিনি এই মায়ের সাথে ঘোরা আর মেয়ের ফিরে আসবার আহবানের দ্বন্দ্বটা বেশ উপভোগ করছেন। কারণ, তার মাথার শেষ জটটি খুলে গেছে। ক্রোমোজমের তত্ত্বটি এখন তার কাছে একশত ভাগ পরিস্কার। এখন শুধু তাকে বিষয়টি গুছিয়ে লিখে যেতে হবে। তাহলেই এক যুগান্তকারী তত্ত্বের আবিস্কার হবে এই বিশ্বে। মোসলেহ উদ্দিন সাহেব হটাৎ তার চারদিকে দুজন মেয়ে মানুষের, তার মেয়ে ও মায়ের সেই ডাক শুনতে পান -
- মশা, মাছি, মোসলে
ঘুম বুঝি আসলে।
সেই ডাক তীব্র হতে হতে একসময় মোসলেহ উদ্দিন আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারান।
দেশের বড় সব ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত বোর্ড এবার বেশ শংকিত মোসলেহ উদ্দিনের জ্ঞান ফেরার ব্যপারে, কিন্তু ফেরার সম্ভাবনাও আছে। এই মুহুর্তে ডাক্তারদের কিছুই করার নেই। এখন শুধুই -
- "বাহাত্তর ঘন্টা অপেক্ষা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

রাজিহাপি বলেছেন: খুব ভাল লাগলো।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২১

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগল।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৩

কাক ??? বলেছেন: ভাল লাগা রইল..

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:২৫

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.