![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
আমি বলেছিলাম -
বাসেত সাহেব একজন অসৎ শিক্ষক। স্কুলে ভালভাবে না পড়িয়ে প্রাইভেট আর কোচিংয়ে পড়ায়।
সমস্ত শিক্ষক সমাজ -
প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। বলা হল - বাদশাহ আলমগীর যখন তার পুত্রকে শিক্ষকের পা ধুঁয়ে দিতে বলেন, তখন আমি কি করে অসৎ বলি? আন্দোলন হল, স্কুল বন্ধ রাখলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
বাসেত সাহেব আমার গ্রামের একজন অসৎ শিক্ষক।
- আমার ফাসির রায় হল।
আমি বলেছিলাম -
শাহেদ সাহেব একজন ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার।
সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার সমাজ -
ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দেশের উন্নয়ন, রাস্তা ঘাট, পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ সভ্যতার উন্নয়নে যারা কাজ করে, তাদের এত বড় অপমান? হরতাল ডাকলেন। দেশে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার ফাসির রায় হল।
আমি বলেছিলাম -
জাহেদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার।
সমস্ত ডাক্তার সমাজ -
আগুন হয়ে উঠলেন। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়, তাদের লোভী বলা? এবার মারাত্নক আন্দোলন হল।
- আমি এবারও বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার আবার ফাসির রায় হল।
আমি বলেছিলাম -
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা
আপনারা চাষাকে বড় সাধক বলবেন, কিন্তু চাষার ছেলে বলে গালি দিবেন সবাই। কবিরা ভন্ড।
সমস্ত কবি সমাজ -
কেঁদে কেটে অস্থির। শিক্ষক বাদে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সবাই বললেন - চাষার ছেলেকে চাষার ছেলেই তো বলব - ঐ ব্যাটা, তুই একটা অসৎ, তুই একটা ঘুষখোর, তুই একটা লোভী, তুই একটা ভন্ড, এক কথায় তুই ব্যাটা একটা চাষার ছেলে।
শিক্ষক বললেন - আমি তো কথায় কথায় ছাত্রদের চাষার ছেলে বলে গালি দেই। কিন্তু, প্রশ্নপত্রে আমি তো কখনই চাষার ছেলে লিখি নাই। আমার কোন দায় নেই।
কবি সমাজ বললেন - আমরা কখনই চাষার ছেলে বলি না। আমাদের ভন্ড বলেছে, এই বলে কান্না শুরু করলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি এবারও ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার চতুর্থবারের মত ফাসির রায় হল।
আজ আমার ফাসি।
বললেন, শেষ কিছু বলার থাকলে বলতে -
- আপনারা একবারও আমার নাম বা পেশা জিজ্ঞেস করলেন না। কারণ, আমার আসলেই পেশা নাই। আপনাদের একটা বছর একটা পরীক্ষার প্রশ্নে অসৎ, ঘুষখোর, লোভী, ভন্ড বললে অবশ্যই ভুল হয়, যদিও আপনাদের মধ্যে অনেকে তাই। তাহলে ভুলটা কোথায়? ঐ যে বলেছিলাম -
আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি। এটিই ভুল। প্রশ্নপত্রে বলাটা ঠিক হয় নাই।
আপনারা বাস্তবে অনেকেই এই দোষে দুষ্ট, এটি স্বীকার করতে রাজী। কিন্তু প্রশ্নপত্রে আপনারা সহ্য করতে পারেন না, ক্ষোভে ফেটে পরেন।
অথচ, প্রশ্নপত্র নয়, যুগে যুগে আমাদের চৌদ্দ পুরুষকে বইয়ের ভেতরে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন, পরিচয় দিয়েছেন -
- গনি মিঞা একজন দরিদ্র কৃষক।
- জীবনভর এই পেশাটারে আপনারা দরিদ্র মানুষের পেশা বানাইলেন, একদিনও তো আন্দোলন করে নাই আমার বাপ দাদারা। আপনারা সিল মেরে দরিদ্র বানিয়ে রেখেছেন আমাদের চৌদ্দ পুরুষকে -
- আমার নাম গনি মিঞা, পিতা - গনি মিঞা, তার পিতা, পিতার পিতা, আমার সন্তান - সবার নামই গনি মিঞা।
- আপনারা জীবনভর দাদা, বাপ, আমার সন্তানরে পর্য্যন্ত চাষার ছেলে বলে গালি দিলেন। আমরা কিচ্ছু বলি নাই।
- আমরা কিছুই করি না। সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, আপনার খাবারের থালের ঐ সাদা ভাতগুলো ফলাই। আইজ আমার ফাসিতে আমার ছেলে আন্দোলন করবে না। কালকে ভোরবেলা ক্ষেতে নামবে। চোখের জল আর সেচের জলে তৈরী করবে সাদা ভাত। আমরা থাকব গরীব, চাষার ছেলে, মান সম্মানহীন। আপনাদের পেশা নিয়ে কিছুই বলা যাবে না কোথাও। আপনাদের মান সম্মান আছে। আমরা বড় সাধক, জীবনভর গনি মিঞা দরিদ্র কৃষক আর চাষার ছেলে। কিছু বলার নাই। এরচেয়ে ফাসিই ভাল।
চারিদিকে নিঃস্তব্ধতা। পিনপতন নীরবতা। কেউ একজন ফিসফিস করে বলে -
- তাড়াতাড়ি ঝুলায় দে চাষার পোলারে। বড্ড ঝামেলা করতেছে।
আমি শুনি জীবনের শেষ শব্দ ...ক্যাচ.. ক্যাচ..
পায়ের নীচে মাটি নেই।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:১২
বিজু চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:২৫
সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: অপ্রিয় সত্য ফাঁস হয়ে গেলে কার ই বা ভালো লাগে? দারুন লিখেছেন
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:১১
বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫১
অতৃপ্তনয়ন বলেছেন: সুন্দর আলোচনা হয়েছে।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:১১
বিজু চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৩
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: চাষাভুষা কৃষকের মর্যাদা বাড়াতে গিয়েই বুঝি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুর্নীতিবাজদের খতম করতে হবে। গালি দিয়েছিলেন শিক্ষিত সমাজকে। বলেছিলেন, দুর্নীতি আমার দেশের কৃষক করেনা, দুর্নীতি করে শিক্ষিত সমাজ। বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণেই বলেছিলেন, কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি সম্মান পাবে, ওরাই এই দেশের মালিক, ওদের সম্মান করে কথা বলতে হবে। সম্ভবত সেই ভাষণটিই বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ কোনো ভাষণ হয়েছিল। তারপর আর কোনো জনসমাবেশে তিনি ভাষণ দেওয়ার পান'নি। সেই বছরই পনেরোই আগষ্ট এই 'মহানায়ক'কে দুনিয়ার বুক থেকে নৃশংসভাবে বিদায় করে দেয় কথিত কিছু বিপথগামী সামরিক সদস্যের হাতে সেই সব শিক্ষিত আমলা-দুর্নীতিবাজদের প্ররোচনায়।
কৃষকদের পক্ষে কথা বলতে গেলেই দেশের শিক্ষিত-আমলাদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়।