![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যপ্রাচ্যসহ আফগানিস্তানে
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের (ওয়ার
অন টেরর) নামে এক তরফা হামলা,
আল-কায়দা উপাখ্যান, লাদেন
চরিত্র সৃষ্টি এবং তার মধুরেনু
সমাপয়েৎ। আরব্য বসন্তের নামে
মিশর এবং লিবিয়ায় অভ্যুত্থান
ঘটিয়ে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই
ধ্বংস করে দেয়া; আইসিস সৃষ্টি করে
ইরাক এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে
সমগ্র আরব বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার
নিদর্শন ধ্বংসসহ নারকীয় হত্যা,
ধর্ষণ, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা
হয়েছে।
এই যে এতো যুদ্ধ, এত হাঙ্গামা,
এতো রক্ত, এসব কেন? বড় প্রশ্ন হচ্ছে,
যুদ্ধ বাঁধলো কেন? পৃথিবীতে বড় বড়
যুদ্ধ বাঁধে কেন? (১) শক্তিধর
রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে
(সহজ কথায় আয়-উন্নতিতে) টান
পড়লেই যুদ্ধ বাঁধে কিংবা তারা
যুদ্ধ বাঁধায় (২) ক্ষমতার ভারসাম্য
নষ্ট হয়ে গেলেও যুদ্ধ বাঁধে (৩)
যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করার জন্যও যুদ্ধ
বাঁধানো হয়।
শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর আরো সম্পদ
চাই, কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে
থেকে সেই পরিমাণ সম্পদ অর্জন
করা যখন সম্ভব হয় না, তখন তারা
বিশ্ব ব্যবস্থাকে নিজেদের
স্বার্থে ঢেলে সাজাতে চায়।
উদাহরণ দেয়া যাক, ১৯৯০ সালে
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর
দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থারও
পতন হয়। যুক্তরাষ্ট্র একমেরুকেন্দ্রিক
বিশ্ব ব্যবস্থা কায়েম করে। বিশ্ব
রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি
ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। সোভিয়েত
ইউনিয়ন ভেঙ্গে অনেকগুলো দেশ হয়,
তাদের একেকটি দেশের কাছে
বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-সামরিক
সরঞ্জাম, কিন্তু রক্ষনাবেক্ষণ করার
সামর্থ্য ছিল না। অন্যদিকে
রাশিয়া ব্যতীত অন্য দেশগুলোর
তেমন কোনো শত্রুও ছিল না।
সুতরাং অস্ত্র-গোলাবারুদ বিক্রি
করতে হবে। কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন
ডলার মুল্যের সেই অস্ত্র কোথায়,
কিভাবে, কার কাছে বিক্রি করা
যায়? প্রকাশ্যে সেই অস্ত্র বিক্রি
করা সম্ভব ছিল না।
যেহেতু সেই সময় পৃথিবীর কোথাও
তেমন কোনো যুদ্ধ ছিল না, তাই যুদ্ধ
দরকার হয়ে পড়লো। যুক্তরাষ্ট্র
তাদের সামরিক বেসামরিক এজেন্ট
(সিআইএ) দিয়ে আফ্রিকার খনিজ
সমৃদ্ধ দেশ লাইবেরিয়া, উগান্ডায়
গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে, তাদের কাছে
সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই অস্ত্র
গোপনে সরবরাহ করলো। এটা ছিল
অত্যন্ত ছোট প্রকল্প।
আমার কথা আপনার অবিশ্বাস হতে
পারে তাই কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর
চিন্তা করুন, প্লিজ। (১) গত ২৫ বছরে
কে বা কারা যুদ্ধের দ্বারা
লাভবান হয়েছে? (২) কে বা কারা
যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র বিক্রি করছে? (৩)
কারা যুদ্ধরত দেশগুলির খনিগুলোতে
ইচ্ছামত সম্পদ উত্তোলন করে
নিজেদের উদোর পূর্তি করছে?
অতঃপর যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরে তাদের
দ্বিতীয় প্রকল্পটি হাতে নিল। কারণ
(১) যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তাদের
বিরাট সামরিক বাহিনী পোষার
খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে
পড়েছিল (২) যুক্তরাষ্ট্রের
অর্থনীতিতে সম্পদের যোগান
নিশ্চিত করা (৩) স্নায়ুযুদ্ধকালীন
প্রস্তুতকৃত অস্ত্র-গোলা বারুদের
মজুদের পুরাতন মডেল শেষ করা। তাই
তাদের দরকার ছিল নতুন কিছু
ধর্ণ্যাঢ্য দেশ, যারা উক্ত
উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করবে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
থেকে কোরীয় উপদ্বীপে,
জার্মানিতে, জাপানে,
সিঙ্গাপুরে এবং তাইওয়ানে
আমেরিকান সৈন্য মোতায়েন আছে।
সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের দেশে
মোতায়েনকৃত আমেরিকান সৈন্যের
ব্যয় ভার বহন করে।
সুতরাং পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে
লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার একান্ত
বাধ্যগত সাদ্দাম হোসেনকে দিয়ে
কুয়েত দখল করিয়ে উপসাগরীয়
অঞ্চলে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিল। খেলা
শুরু, সৌদি আরবের কাছে বিপুল
অস্ত্র-গোলা-বারুদ-যুদ্ধবিমান-
যুদ্ধজাহাজ-ট্যাংক বিক্রি করা
হলো। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের
দেশগুলোতে ভাড়াটে পাকিস্তানি
সেনাবাহিনী দ্বারা সীমান্ত
রক্ষার কন্ট্রাক্টটি যুক্তরাষ্ট্র
হাতিয়ে নিল। এক কথায় যুক্তরাষ্ট্র
বেশ ভালো মতো উড়ে এসে জুড়ে
বসলো। কিন্তু এতো কিছুর পরেও
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অশনি
সংকেত দেখা দিতে থাকলো। যে
কোনো সময় অর্থনৈতিক ধস হতে
পারে। সমাধানের উপায়? যেখান
থেকে যেভাবে পারা যায় সম্পদ
আনতে হবে। তাই তারা নতুন মিশন
হাতে নিল।
অভুতপূর্ব নাটকীয়তায় ওয়ান-
ইলেভেনে ‘প্রজেক্ট আল-কায়দা’
ওরফে ‘লাদেন প্রকল্প’ উন্মোচন করা
হলো। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে,
আফগানিস্তানসহ আরব বিশ্বকে
পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্র বানাবার আগে
প্রথমেই টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা
হয়েছিল। নিউইয়র্কের আরো শত শত
বিল্ডিং থাকতে টুইন টাওয়ার কেন?
কারণ ঐ বিল্ডিং এ বিশ্ব বাণিজ্য
সংস্থার অফিস। যুক্তরাষ্ট্রের
স্বার্থে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে
নতুন করে সাজানো দরকার। কিন্তু
সেটা তো এমনি এমনি কেউ
তাদেরকে দিয়ে দেবে না, তাই
প্রেসিডেন্ট বুশ ‘ওয়ার অন টেরর’
নাম দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন।
অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, আমেরিকা
যাতে আরো অধিক সম্পদের মালিক
হতে পারে, কিংবা
অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান
হতে পারে।
কিন্তু যুদ্ধের ফলে কি হয়? অনেক
কিছুই হয়। দেশ দখল বা বেদখল,
রক্তপাত, শরণার্থী হয়। রাজনৈতিক-
অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা
ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি বিশ্ব
অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৩০ সালে বিশ্ব
অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছিল। এবারো
তার ব্যতিক্রম হলো না, যুক্তরাষ্ট্র
তার অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে
পারলো না। ২০০৯ সালে বিশ্বমন্দা
দেখা দিল। মহান সম্রাট আশোকের
সেই বানী [‘যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না’]
পৃথিবীবাসীর কাছে পৌছালো,
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কানে তা
পৌছালো না। যুক্তরাষ্ট্র শুধু নড়ে
চড়ে বসলো, লাদেন প্রকল্প নিয়ে
ভাবতে শুরু করলো।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বারাক
ওবামা ভীষণ অজনপ্রিয় হয়ে
পড়লেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার ২০১২
সালে নির্বাচনে জেতার জন্য তাই
বড় একটি ট্র্যাম্পকার্ড দরকার হয়ে
পড়লো। লাদেনকেই ট্র্যাম্পকার্ড
বানানো হলো। ২০১১ সালে
লাদেনকে হত্যা করে বারাক
ওবামা জনপ্রিয়তা ফিরে পেলেন।
২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি
আবার জিতে গেলেন। কি মনে
হচ্ছে? সবই সাজানো খেলা, তাই
না? ঘটনা এখানেই শেষ নয়,
লাদেনকে হত্যা করার পর ‘আল-
কায়দা সিনেমা’ দিয়ে
বিশ্ববাসীর মনোযোগ আর কতদিন
ধরে রাখা যায়? টানা ১০ বছর তো
একই মুভি দেখানো হয়েছে, তাই নতুন
প্রোডাকশন দরকার। ২০১১ সালেই
সিরিয়াতে ‘আইসিস প্রকল্প’
উদ্বোধন করা হলো।
©somewhere in net ltd.