নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলীক মানবী কুয়াশাবৃতা

অলীক মানবী কুয়াশাবৃতা

স্বপ্নবিলাসী মেঘের ছায়ায় যার বসবাস, সে দিন-রাত স্বপ্নে আঁকে সূর্যালোকের স্পর্শ... মেঘের সাথে তার ছলনার সম্পর্কটা বেশ পুরোনো বলা চলে... তার আকাশ থেকে বার বার সরে যাওয়ার কথা বলেও তাকে বৃষ্টি স্নানে ম্লান করে রেখে যায় ছলনাময়ী মেঘের দল; কখনো বা করে রাখে কুয়াশাবৃত... তবুও সূর্যের কাছে তার খোলা চিঠি একদিন মেঘ ভেদ করে উড়াল নেবে এমনটাই অলীক ভাবনা তার মনে-মগজে সর্বদা... সেই মানবী খোলা চিঠিতে কবিতা লিখে রাখে অলীক যতনে, দিয়ে নাম তার কুয়াশাবৃতা......

অলীক মানবী কুয়াশাবৃতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গঃ ভাষা শহীদ

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১০

একদিন আমার ফেবু ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কেউ একজন কোনো এক কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলে বসে,

“যেমনে কইতাছ মনে হয় মাতৃভাষার লাইগা কত কি করছস ....... । এতই যখন মাতৃভাষার লাইগা পেট কান্দে তাইলে বাংলাই পরছ নাই কেন ?????”

তার প্রতিত্তোরে আমি তাকে বলেছিলাম, “আবারও নিবুদ্ধির মত কথা!! মনে রাখিস সালাম রফিক বরকতেরা সবাই বাংলার স্টুডেন্ট ছিল না!!!!”

তারপর পরই আমার মনে আসল, ভাষা আন্দোলনের কথা তো আমরা সবাই জানি কিন্তু এই যে ভাষা শহীদেরা…তাদের সম্পর্কে আসলে আমরা কয়জন সঠিক ভাবে জানি তারা কে কি ছিলেন?

তাই তাদের সম্পর্কে জানানোর একটা ছোট্ট প্রয়াস করেছি এখানে (ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন আগেই বলে রাখি)

#১৯৫২_সালের_২১_ফেব্রুয়ারী (৮_ফাল্গুন_১৩৫৮) বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত দানা বেধে ওঠা আন্দোলন তৎকালীন ১৪৪ ধারা আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত সহ আরও অনেকে। এই শহীদেরা আমাদের ভাষা শহীদ… এবার সংক্ষেপে জানাই তাদের সম্পর্কে –

#রফিকঃ রফিকউদ্দিন আহমদ (১৯২৬-১৯৫২)

পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন।

১৯৫২ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের ( বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

#সালামঃ আবদুস সালাম (১৯২৫-১৯৫২)

পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া।

কর্মজীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের 'পিয়ন' হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিলে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের এলোপাথাড়িভাবে গুলিতে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

#বরকতঃ আবুল বরকত (১৯২৭-১৯৫২)

পিতার নাম মরহুম শামসুদ্দিন, মাতার নাম হাসিনা বেগম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ হয়ে বি.এ. অনার্স পাস করেন। অতঃপর স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন।

১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।

#জব্বারঃ আবদুল জব্বার (১৯১৯-১৯৫২)

পিতার নাম হাসান আলী এবং মায়ের নাম সাফাতুন নেছা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যয়নের পরে দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেন আবদুল জব্বার। পরবর্তিতে এক ইংরেজ সাহেবের সান্নিধ্যে আসেন। সাহেব তাঁকে একটি চাকরি প্রদান করেন।

ক্যান্সারে আক্রান্ত শাশুড়িকে নিয়ে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় আসেন। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক)-এ উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি হয়েছে দেখবার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করেন।

#শফিউরঃ শফিউর রহমান (১৯১৮-১৯৫২)

পিতা মাহবুবুর রহমান।

দেশ বিভাগের পর পিতার সঙ্গে ঢাকায় এসে ঢাকা হাইকোর্টে হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানী পদে যোগ দেন।

১৯৫২-র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন।

#আওয়ালঃ আবদুল আওয়াল (১৯২৬-১৯৫২)

পিতার নাম মোহম্মদ হাশিম।

পেশায় ছিলেন রিক্‌শাচালক।

১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। (বিঃ দ্রঃ ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পরদিন মিছিল হয়। পুলিশ সেখানেও গুলি চালায়। তখন আবদুল আওয়াল নিহত হন।)

#অহিঃ অহি উল্লাহ ( - ১৯৫২)

পিতার নাম হাবিবুর রহমান।

তখন ৮/৯ বছরের বালক।

১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। অহিউল্লাহ সম্ভবত মিছিল দেখতে বেরিয়েছিলেন। মেডিকেলের মর্গ থেকে লুকিয়ে ফেলা লাশগুলোর একজন অহি উল্লাহ।

#এছাড়া ব্যাংক কর্মচারী “মোহাম্মদ সালাউদ্দিন” মিছিলে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। কিছুকাল পর মৃত্যু বরণ করেন। “এক পরিচয়হীন শিশু” ভাষাশহীদদের আন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মিছিলে লেলিয়ে দেয়া ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন।

মোট কতজন নিহত হয়েছিলেন, তাদের পরিচয় বা তার পূর্ণ বিবরণ অবশ্য পাওয়া যায় না। কারন বিক্ষোভের পর পুলিশের গুলিতে নিহত অনেকের লাশ ঐ রাতেই পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মর্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং গুম করে ফেলে।

এতটুকুই জানানোর প্রয়াস চালালাম আজ। সকল ভাষা শহীদদের প্রতি মনে নিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা, বলতে চাই একটাই কথা, বাংলা ভাষা আমার গৌরব, আমাদের গৌরব।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২১

ফিলিংস বলেছেন: বাংলা ভাষা আমার গৌরব, আমাদের গৌরব। সহ মত......।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:১২

অলীক মানবী কুয়াশাবৃতা বলেছেন: (y)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.