নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বীরত্বের সাথে বাঁচতে হবে।

নিশাচর ।

নিশাচর । › বিস্তারিত পোস্টঃ

গভর্নর পদ ছাড়তে হল আতিউরকে।

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৪৪

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গভর্নরকে এভাবে বিদায় নিতে হল এবং তা মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগে। যে রিজার্ভ আতিউরের জন্য ছিল ‘মধুর’, তার একটি ঘটনায়ই তা দৃশ্যত গরল হয়ে উঠল তার কাছে।

আতিউরের উত্তরসূরি হিসেবে সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের এই চেয়ারম্যান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রীর বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিবর্তন আনার ঘোষণার পরও মঙ্গলবার সকালে আতিউর বলেছিলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী বললেই তিনি পদত্যাগ করবেন।

তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসার পর নিজের বক্তব্য পাল্টে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিতর্ক এড়াবার জন্য ‘নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগপত্র দিয়ে এসেছেন তিনি।

আতিউর সরে দাঁড়ানোর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা ও আবুল কাশেমকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমকে পরিবর্তনের কথাও জানানো হয় সাংবাদিকদের, যিনি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

আতিউর সরে দাঁড়ানোর পর দেড় মাসের আগের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা পাচারের অভিযোগে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ডলার ‘হ্যাকিংয়ের’ মাধ্যমে লোপাট হওয়ার খবরটি ফেব্রুয়ারি মাসে গণমাধ্যমে আসার পর থেকে তা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

ওই অর্থের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফেব্রুয়ারির শুরুতে ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হলে দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল তদন্তে নামে, তাতেই বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি প্রকাশ পায়।

শুরুতে টের পেলেও তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাননি আতিউর। ঘটনাটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে হওয়ায় তার উপর ক্ষুব্ধ হন মুহিত। এর মধ্যে গভর্নর ভারত সফরে গেলে তার সমালোচনাও করেন অর্থমন্ত্রী।

এই ঘটনা নিয়ে গভর্নরের পদত্যাগে বিএনপির দাবিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নুহ-উল আলম লেনিনের সুর মেলানোর পর দৃশ্যত চাপ বেড়ে যায় আতিউরের উপর।

অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ আখ্যায়িত করে ‘ক্ষুব্ধ’ মুহিত রোববার বলেন, এই ‘স্পর্ধার’ জন্য ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

এরপর সোমবার তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিলে আতিউরের ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায়।

এর মধ্যে সোমবার বিকালে দেশে ফিরলেও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান গভর্নর। মঙ্গলবার গুলশানে গভর্নরের সরকারি বাড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি যা বলেন, তাতে স্পষ্ট হয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন না তিনি।

“আমি অপেক্ষা করছি, প্রধানমন্ত্রী কী বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। আমি পদত্যাগপত্রও লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব।”

এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান গভর্নর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা তখনই নিশ্চিত করেন, আতিউর পদত্যাগ করেছেন।

গুলশানে গভর্নরের সরকারি বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে গুলশানে গভর্নরের সরকারি বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে
এরপর গুলশানের সরকারি বাড়িতে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে আতিউর আগের বক্তব্য থেকে সরে বলেন, বিতর্ক এড়াবার জন্য ‘নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগপত্র দিয়ে এসেছেন তিনি।

“আমি বীরের বেশে বিদায় নিচ্ছি,” বলেন সাত বছর গভর্নরের দায়িত্বে থাকা বিআইডিএসের সাবেক এই গবেষক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদ হারানোর পর আবার শিক্ষকতায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ।উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক। আশা করছেন, ওই ভূমিকায় সফল হবেন তিনি।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব পান আতিউর।

এরপর তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এভাবে বিদায় যে চাইছিলেন না, তা ফুটে উঠে আতিউরের কথায়- “হয়ত আমার এক্সিটটা আরও ভালো হতে পারত... (মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার) সময়ও তো বেশি বাকি ছিল না। যাই হোক, এখন আর আমি সেগুলো ভাবছি না। মান-সম্মান নিয়ে বিদায়ই নিতে চাচ্ছি।”

রিজার্ভ চুরির মধ্যে সফর নিয়ে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় মনোবেদনাও ফুটে উঠে তার কথায়- “এটাকে বড় একটা ঘটনা ঘটানোর মতো পটভূমি করার প্রয়োজন ছিল না।”

সমালোচিত বিদেশ সফরের ব্যাখ্যায় আতিউর বলেন, “আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইএমএফের ক্রিস্টিন লগার্ডের নিমন্ত্রণে, সেখানে দুটো প্যানেলে আমি অংশগ্রহণ করছি।

পদত্যাগের আগে গভর্নর হাউসে পদত্যাগের আগে গভর্নর হাউসে
“এই বিষয়টি (রিজার্ভ চুরি) নিয়েও আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। সুতরাং সেখানেও আমি কাজ করছিলাম, মাত্র দুদিন বাইরে ছিলাম, আর বাকি দুদিন ছুটির দিন ছিল। আমি সেখানে বসেও অনলাইনে সারক্ষণই কাজ করছিলাম।”

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পদত্যাগ, তদন্ত করে তাতে জড়িতদের শাস্তিও চেয়েছেন পদত্যাগী গভর্নর।

“আমি চাই, যারা এই ঘটনার সাথে দেশে কিংবা বিদেশে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ইনভেস্টিগেশন করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেরিতে জানানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সাইবার অ্যাটাকের পর তা বোঝার জন্য কিছুটা সময় নিয়েছিলেন তিনি।

“আমরা বুঝবার চেষ্টা করছিলাম। বিদেশ থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসেছি, র‌্যাবকে ডেকেছি, এনএসআইকে ডেকেছি, তারা সকলে মিলে চেষ্টা করছে ঘটনাটা কোথায়? তার আগেই আমাকে সাবধান হতে হয়েছে, যাতে যে টাকা আছে তার মধ্যে যেন কেউ হাত দিতে না পারে। যে টাকা বের হয়ে গেছে, সেটা ফেরত আনার চেষ্টা করি। ফেরত আনতে গিয়ে আমাদের একটু সময় লেগেছে।”

গভর্নরের দায়িত্ব পালনের মধ্যে রিজার্ভে উল্লম্ফন, ব্যাংক সেবা প্রান্তিক মানুষের মধ্যে বিস্তারের জন্য প্রশংসিত ছিলেন আতিউর। তার ভাষায়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বিশ্বে মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

আবার দেশ-বিদেশে তার নানা পুরস্কার নেওয়ার সমালোচনাও ওঠে। যে ফিলিপিন্সে অর্থ পাচার হয়েছে, বছর খানেক আগে সে দেশটিতে গিয়েও একটি পুরস্কারে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

গত বছর লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার অব দ্য ইয়ার’ও ঘোষণা করেছিল।


ষাটোর্ধ্ব আতিউরের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৮ নভেম্বর, জামালপুরে। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। পিএইচডি ডিগ্রি পান ১৯৮৩ সালে৷

মাস্টার্স পড়ার সময়ই ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আতিউর রহমান। ১৯৮৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে (বিআইডিএস)। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণ বিপ্লব নিয়ে অনেক গবেষণামূলক লেখা রয়েছে তার। প্রবন্ধের জন্য এ বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, তবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গভর্নর হিসেবে নিজেকে মূল্যায়নে আতিউর বলেছেন, “আমি পুরোপুরি সফল হয়েছি বলব না। তবে নতুন ধারার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমি চালু করার চেষ্টা করেছি। সারা পৃথিবী এখন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটাকে মডেল হিসাবে নিচ্ছে।”

‘গরিবের অর্থনীতিবিদ’ অভিহিত করে ২০১৩ সালে ফিলিপিন্সের গুসি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল আতিউরকে।

এই ধরনের নানা স্বীকৃতি পাওয়া আতিউর বিদায় বেলায় বলেন, “আর কি চাইতে পারি, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনারা জানেন আমি একেবারেই এই মাটির সন্তান, আমি একজন ভূমিপুত্র। আমি সেখান থেকে এই জায়গায় এসেছি, আমি বিধাতার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাজে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখে এই প্রতিষ্ঠানটির (বাংলাদেশ ব্যাংক) দায়িত্ব দিয়েছিলেন............।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.