![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকদিন পর পিচ টিবি "দানবতার সমাদান" দেখতে বসেছিলাম আজ রাতে। কিছুক্ষণ আগে। শুরুতেই সেই ভিডিও ক্লিপস যেটা নিয়ে আগেও লিখেছিলাম।
.
"একটা ভিডিও ক্লিপস, ওদের নিজেদের তৈরি।
একটা কিশোর ছেলে পাঞ্জাবী পরে মাথায় টুপি দিয়ে বেরিয়েছে পথে। হাঁটছে।
যেতে যেতে পথে সে দেখলো একজন মধ্যবয়স্কা মহিলার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেল এক ছিনতাইকারী। মহিলার আহাজারি দেখতে দেখতে পথ পেরিয়ে গেল সে।
খানিকদূর পর দেখলো একজন সিরিঞ্জ দিয়ে ড্রাগস নিচ্ছে। সেটাও দেখতে দেখতে সে হাঁটতে লাগলো।
আরো কিছু দূর পর দেখলো একদল বসে টাকা দিয়ে জুয়া খেলছে। সেটাও সে পেরিয়ে এলো।
আরো কিছু দূর পর দেখা গেল একদল ছেলে ক্রিকেট খেলছে। সে দিকে খানিক তাকিয়ে ছেলেটা মসজিদে ঢুকলো। কিছুক্ষণ কোরআন পড়লো।
এর খানিক পর নামাযের সময় হলো। সেই কিশোর ছেলেটা ইমামতি শুরু করলো। আর তার পেছনে একে একে এসে দাঁড়ালো সেই ছিনতাইকারী, জুয়া খেলোয়াড়, মাদকসেবী, আর ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা। এদের দর্শকদের কাছে চিনিয়ে দেয়ার জন্য প্রত্যেককে দেখানোর ফ্ল্যাশব্যাকে সে কী করেছে দেখানো হল।
ব্যস, সবাই দাঁড়িয়ে নামায পড়তে শুরু করলো। এখানেই শেষ।
এরপর, পিচ টিবি- দানবতার সমাদান!
.
অনেকক্ষণ মাথার চুল ছিঁড়েও ভিডিও ক্লিপসটার সঠিক মর্মার্থ বুঝতে পারলাম না। কয়েকটা ধারণা শেয়ার করছি।
>
মসজিদের মত উপাসনালয়ে ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের প্রথম দেখাতেই মনে হয়, নামায পড়তে মসজিদে এরাও আসে, এটাই কি বুঝানো হল?
নিজে যা খুশি খারাপ কাজ করে, মসজিদে এসে নামায পড়লেই সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, এই ধারণা যারা পোষণ করে এটা কি তাদের সেই ধারণাকেই আরো শক্তপোক্ত করে দিলো?
>
মসজিদের ইমাম, হোক সে কিশোর, কিন্তু সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবে, সাধারণ মানুষের থেকে বরঞ্চ বেশীই হবে। কিন্তু দেখানো হল, সে কোনো অপকর্মেরই বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করলো না। স্রেফ নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে চলে গেল!
হোয়াট এ ম্যাসেজ!
প্রতিবাদ না করার সংস্কৃতির পীঠ চাপড়ে দেয়া যেন।
>
আর যদি ধরেও নেই যে, এখানে বোঝানো হয়েছে, সবাই ভাল হয়ে গেছে, তাই নামায পড়তে চলে এসেছে। কিন্তু কই, তারা তো কোথাও বললো না, আমরা ভাল হয়ে গেছি, আর করবো না। এমনকি নামায পড়ে বের হয়ে তারা ছিনতাই করা জিনিস ফেরত দিচ্ছে বা ভাল কাজ করছে সেটাও তো দেখানো হল না।
>
সবচেয়ে দৃষ্টিকটু লেগেছে অন্যসব বিষয় আর ক্রিকেট খেলাকে একই সারিতে রাখার ব্যাপারটা।
সব খেলাই নাকি হারাম; মানবতার সমাদান - পিচ টিভি মনে হয় এইটাই ছড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। চেষ্টা করছে আরো ভাল ভাবে এদেশের অশিক্ষিত মানুষদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে।
দিনে দিনে পিচ টিভির মাথাফাঁকা দর্শক এর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে খেলাধুলার বিপক্ষে আঙুল তুলতে আর মনে হয় খুব বেশী সময় লাগবে না..."
.
এরপর শুরু হল অনুষ্ঠান। শিক্ষার ফজিলত! দারুন, তাদের মুখে শিক্ষার বাণী, ভেরি ভেরি ফানি, জানি। তাও শুনলাম। কষ্ট হচ্ছিলো খুব। তবুও শেষ পর্যন্ত, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে।
.
আর যা বুঝলাম।
"এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু ছেলেরা মেয়েদের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে, সামনে দিয়ে ভিসি, প্রফেসররা গেলেও কিছু বলে না। এইসবের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করা উচিৎ।"
"যেসব মেয়েরা শিক্ষিত হয়েও মাথা ঢেকে রাখে না তারা আসলে অশিক্ষিত!!"
সঠিকভাবে শিক্ষিত না বলে এখন ডাক্তার বাড়তি টাকা নেয়, উকিল নেয়, এইসব কথাও উঠে আসছিলো। বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, এই শতকরা ৯৯ জন বিশ্বাসীর দেশেই না এই অবস্থা, কই শতকরা ৯০ জন অবিশ্বাসীর দেশে তো এমন অবস্থা না, তাহলে শিক্ষিতটা কে, শুনি...
.
নবীর দুটো কথা দেখলাম মিলে গেছে!
"মারামারি, হানাহানি অনেক বেড়ে যাবে। যারা মরলো তারা জানবে না কেন মরলো আর যারা মারলো তারাও জানবে না যে কেন মারলো।"
একদম। ধর্ম নিয়ে হানাহানি উচ্চে, আর যারা মারছে তারা আসলে অনেক সময় জানেও না কেন মারছে, আর যারা মরছে তারাও জানে না তাদের কী দোষ।
.
আর "মানুষ মূর্খের কাছে জ্ঞানের জন্য যাবে"।
ঠিক যেমন জোকার নালায়েকের কাছে মানুষ দল বেঁধে যায় colonthree emoticon
.
শুনতে অবাক লাগতে পারে, পুরো আধ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে প্রায় চার থেকে পাঁচবার বলা হয়েছে মূর্তি ভাঙার কথা!
যারা শিক্ষিত তারা নাকি মূর্তি গড়ে নিজেদের অশিক্ষিত প্রমাণ করছে। সব নবীরা মূর্তি ভেঙেছে, তাই আমাদেরও উচিৎ মূর্তিভাঙ্গা। একদম সরাসরিই বলা হয়েছে কয়েকবার মূর্তি ভাঙার কথা। মূর্তি ভাঙার সাথে শিক্ষার কী সম্পর্ক সেটা আমার অশিক্ষিত মাথায় ঢোকেনি।
এভাবে প্রকাশ্যে চ্যানেল খুলে অন্য ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কি সরকার দেখে না? নাকি তখন চোখ বন্ধ থাকে? নাকি এটা তাদের অধিকার? যদি তা-ই হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কেন আমরা পাবো না?
.
এই গাঁজাখুরি অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, জোকার নায়েক আর তার সাঙ্গপাঙ্গগুলাকে চরমতম শাস্তি যদি দিতে পারতাম তাহলে একটা মানসিক সান্ত্বনা পেতাম।
.
"শিক্ষা মানুষের চোখ খুলে দেয়। নিশ্চয়ই শিক্ষিত আর অশিক্ষিত মানুষ এক নয়।"
বারবার পুনরাবৃত্তি করা এই কথাটা যদি সত্যিই ওরা বুঝতো। আহ! যদি সত্যিই বুঝতো শিক্ষা কাকে বলে। যদিও ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখতে যুগে যুগে ধর্মগুরুরা কখনোই সাধারণ মানুষকে "পরিপূর্ণ শিক্ষা"-র ধারে কাছেও যেতে দেয়নি। প্রশ্ন করাকে পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। তবে, এই পৃথিবীতে আর সেই সুযোগ নেই। যে জানতে চায় তাকে হাইকোর্ট দেখানোর বা ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখার সুযোগ নেই। দরকার শুধু জানার খিদেটা তৈরি করে দেয়া। সে নিজেই বুঝবে কোনটা সঠিক আর কোনটা সঠিক নয়..
©somewhere in net ltd.