নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি

নাদিয়া জান্নাত

আমি গর্বিত বাংলাদেশী

নাদিয়া জান্নাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়কন্যার গল্পছবি_পর্ব ২

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০৮

গত পর্বের রাত শেষ হয়ে আজ ভোর হচ্ছে দার্জিলিং-এ। হোটেল থেকেই ঘোরাঘুরির প্যাকেজ নিয়ে নিয়েছি। আজ ৪ টা জায়গায় ঘুরাবে ওরা। গতরাতেই সব ঠিক করে নিয়েছিলাম।

১২ মার্চ, ২০১৯

ঘুরতে এসে বেশি ঘুমানো একদম ঠিক না! তাই খুব ভোরেই উঠে পড়েছি ঘুম থেকে। মনে অবশ্য আশা আছে যে বারান্দা দিয়ে কিছুমিছু দেখতে পাওয়া যায় যদি। কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা বলছিলাম। উঠেই বারান্দায় গিয়ে দেখি মেঘের চাদরে ঘুমিয়ে আছে দার্জিলিং। নিচেই একটা সুন্দর মসজিদ আছে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে টালির বাড়িগুলো বেশ সুন্দর দেখতে। প্রত্যেক বাড়িতেই ফুলের গাছ আছেই দেখলাম। ফুল গাছ থাকতেই হবে ব্যাপারটা মনে হয় আবশ্যক এখানে!

১। বারান্দা থেকে সকাল হতে দেখা। মেঘের চাদরে মোড়ানো দার্জিলিং।



জিপে ঘোরার আগেই আমরা একটু ঘুরে আসি বাইরে থেকে। বের হয়ে রাস্তায় খাবার দেখলেই আমার আবার ক্ষুধা পায়! আর গতরাতেই হোটেলে ফেরার সময় দোকানের হরেকরকম রুটি কেক দেখে বলে রেখেছিলাম তাঁকে, "আমি কিন্তু সব খাবো হুম"। তো বের হয়েই আমার চোখ এসব দিকেই যাবে জানা কথা। রাস্তার মোড়ে দেখি স্পাইরাল কি যেন ভাজছে। লাফ দিয়ে বললাম "খাবো ওইটা"। ১০ রুপি দিয়ে খরিদ করলাম। আটা বা চালের গুড়ার তৈরি হালকা মিষ্টি স্বাদের সাথে জিরা দেয়া আছে। খারাপ না খেতে। হাতে নিয়ে খেতে খেতে সামনে আগাই। এবার আবার মোমো দেখে থেমে যাই। আশ্চর্য! খেতে হবে না? এগুলোই কিন্তু আমাদের ব্রেকফাস্ট। উঁচু নিচু সিড়ি আছে পুরো শহর জুড়েই। আর আছে প্রচুর কুকুর। আমাদের নেড়ি কুকুরের মতোই নরমাল কুকুর এগুলা। কিন্তু ঠাণ্ডার কারণে পশমগুলো ফুলে একটা বিদেশি ভাব আসছে আর কি। সাইজ আর চেহারা দেখলেই আমার আত্মারাম খাঁচা ছুটে যায়। সে আবার সোহাগ করে কুকুরের সাথে হিন্দিতে কথা বলে আর ছবিও তোলে। আমি নাই এসবের মধ্যে একদম।

২। সকাল সকাল ফোলা চোখমুখ নিয়েই ভ্রমণে বেরিয়েছি।




হাঁটতে হাঁটতে এলাম ম্যাল রোডে। খোলা একটা চত্বর। এখানে অনেক কবুতর, কুকুর শুয়ে বসে আছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ইউনিফর্ম পরে কবুতর তাড়া করছে। সুন্দর দৃশ্য। রাস্তাগুলোতে হাঁটলে আরো হাঁটতে ইচ্ছে করবে। মেঘ কেটে রোদের হাসি দেখা দিচ্ছে। পাইন গাছ সব আকাশপানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আর পুরো শহর জুড়েই লাল রডোডেনড্রন। লাল ছাড়াও সাদা, বেগুনি, গোলাপিও আছে। তবে লালই বেশি। এত্ত সুন্দর এই ফুলটা। স্কুল দেখলাম কয়েকটা। একদম কল্পনার মতোই সুন্দর।

৩। ম্যাল চত্বরে আয়েশি সকাল।



৪। এই যে কুকুর! একদম সাহেবি মুডে আছে। আমার তো মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমাকে দৌড়ানি দিবে।



৬। এই সুন্দর সিড়িতে উঠতে নামতে ভালোই লাগে। পাহাড়ি মানুষেরা আমাদের মত এতো আরামপ্রিয় হয়না। প্রচুর হাঁটে এরা। আর সুন্দর সুন্দর টালির বাড়ি। খুব সম্ভবত এগুলো সরকারি কোন অফিস হবে। সুন্দর একটা কলেজও দেখলাম।






৭। এই পথ ধরে হাঁটতে ভালো তো লাগতেই হবে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় মিষ্টি রোদে চারিদিক ফুলে ছাওয়া পথে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হেঁটে চলা। মাঝেমধ্যে এই কুকুর দেখলেই আমার পা অটো দৌড় দেয় আর কি!





৮। আমাদের জিপ চলে এসেছে। আমরা প্রথমে এসেছি জাপানিজ বুদ্ধিষ্ট টেম্পলে। এখানেও প্রচুর লাল রডোডেনড্রন। একদম শুভ্র সাদা টেম্পলের চুড়ায় সোনালি রঙের বিশাল মূর্তি।



৯। তারপর আসি পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্কে। মাথায় একটা লাল হ্যাট পড়ে আমি পুরোটা পথ দৌঁড়িয়েছি। একদম ছোটবেলার মত লেগেছে। বাঘ, শিয়াল, চিতা, বানর, ভল্লুক, লাল পান্ডা আরো কত কি। এরা কিন্তু ঝিমাচ্ছিল না মোটেও। লাল পান্ডা দেখে মনে হচ্ছিল নিয়ে যাই দুইটা। এত্ত আদর লাগে দেখতে এদের। সাপের দেখা পেলাম না। তারা নাকি শীতনিদ্রায় আছে।




১০। কাকাতুয়া সকাল সকাল প্রেম মুডে আছে।



১১। আর সাদা চিতা আমাকে ভেংচি দিতে ভোলেনি। আমি কিন্তু কিছুই করিনি। শুধু হ্যালো বলেছি! রয়েল বেঙ্গল তো সেই ভাব নিয়ে ছিল। বানরগুলো ব্যাপক কিউট! শিয়াল মামা ছুটোছুটি করছিল।






ঐ যে খুশিতে বাকবাকুম করে খুব উড়ে বেরিয়েছি। কখন যেন মাথার লাল হ্যাট আমার উড়ে গিয়েছে! মনের দুঃখে আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাই হিমালয়ান মাউন্টেনারিং ইনস্টিটিউটে। এখানে আছে এভারেস্ট জয়ের ইতিবৃত্ত। কত অজানা জানা হল। তেনজিং আর হিলারির এভারেস্ট জয়ের সমস্ত কিছু আছে এখানে। এরপর আমরা যাই দার্জিলিং চা বাগানে। পাহাড় জুড়ে চা বাগানের সারি। কয়েক প্যাকেট চা না কিনলে কি হয়? দোকানিদের খপ্পরে পড়ে এক কাপ চাও খেয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে চা আমার একটুও ভালো লাগেনি।

১২। হিলারির সাথে ছবি তুলে নিয়েছি।



১৩। একটু ভাব নিয়ে চা বাগান দেখি আমরা।



এখানে উল্লেখ্য ঘুরতে ঘুরতে আরো দুই কাপলের সাথে পরিচিত হই আমরা। হোটেলের প্যাকেজ শেষ করে আমরা ছয়জন মিরিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। মিরিক যাওয়ার পথটা আমার মনে হয়েছে এই পথ শেষ না হোক। এত সুন্দর কেন?

১৪। শেষ বিকেলে মিরিকের পাহাড়ি পথ।



১৫। আর এই দৃশ্য দেখে গাড়ি থামাতে বাধ্য হলাম। মসৃণ কার্পেটের মত চা বাগান। উপরে পাইনের বন।



চর্মচক্ষে যা ধারণ করেছি তা কি আর ক্যামেরায় ধারণ করা যায়? প্রতি মূহুর্তে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। মিরিক পৌঁছে পুলকিত হওয়ার মত কিছু পাইনি আসলে। একটা লেক আর পাইন বন। কিছু সুন্দর সাদা ঘোড়া আছে এখানে। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। আমাদের দুপুরের খাওয়াও হয়নি। এখান থেকে চওমিন আর মোমো খেয়ে রওনা হলাম আবার।
এখানে নেপাল ভারতের সীমান্ত রয়েছে। বর্ডার পার হয়ে নেপালেও যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভারতীয় পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স আবশ্যক।

১৬। মিরিক লেক। পড়ন্ত বিকেলে সুনসান নিরবতা। এখানকার শুভ্র সাদা ঘোড়াগুলো কিন্তু দেখতে বেশ। আস্তাবলের গন্ধও বেশ!!




১৭। চওমিন আর মোমো।




দার্জিলিং ফিরতে সন্ধ্যা হল। কি ভাবছেন আমরা হোটেলে ফিরে যাবো। একদম না। ঘুরতে এসে ক্লান্ত হলে তো একদম চলবেনা! বাসার সবার জন্য তো কিছু কিনতে হবে। আবার সেই ম্যাল রোডে যাই আমরা। বলে রাখছি চা কেনার জন্য সবচেয়ে ভালো দোকান হচ্ছে দার্জিলিং টি কর্ণার। ম্যাল চৌরাস্তায় অবস্থিত এই দোকানটা সরকারি। তারপর এখানে ক্যাফেতে কফি নিলাম।

১৮। চায়ের দোকানের পাশেই কফিশপ। এককাপ উষ্ণতা।




১৯। রাতের সুনসান ম্যাল চত্বর।



২০। এখানে চত্বরের পাশেই দেখতে পেলাম দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্মৃতিঘেরা এই রাস্তাটা। আর একটু আগে আসলে যাওয়া যেত।



২১। সকালেই সে বলেছিল গ্লেনারিজে যাবে। দার্জিলিং এর বিখ্যাত গ্লেনারিজের সামনে প্রসেনজিৎ আর ঋতুপর্ণার দেখা পেলাম এক ঝলক। ক্যাফেতে লাইভ গান হচ্ছে। ইংলিশ গানের সুরে আর চামচের টুং টাং শব্দ। আমার সে তো পুরো ভাবে আছে তার প্রিয় অঞ্জন দত্তের গ্লেনারিজে এসে। এখানে সুপ আর জুস খেলাম।




২২। আলো ঝলমলে দার্জিলিং এর রাতের দৃশ্য।



ফিরতে হবে তো এবার! প্রচুর টোটো করা হল সারাদিন। সেই সকাল সাতটা থেকে শুরু করেছি। এখন প্রায় সাড়ে নয়টা। আবার সেই হাঁটা। হাতে ব্যাগের বহর নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা গুটুর গুটুর গল্প করতে করতে আগাই। বারফি মুভির সেই ঘড়িটা ঢং ঢং আওয়াজ করে সময় জানান দেয় আমাদের।

২৩। রাতের নিরবতা ছাপিয়ে ঘড়ি কথা বলে।



২৪। রাত হচ্ছে। এদের কি ঘুম আসেনা? নাকি আমাকে ভয় দেখাবার জন্য জেগে আছে!!




২৫। রুমে ফিরেই বারান্দা হতে তোলা রাতের ঝিকিমিকি দার্জিলিং।



ঘুমুবার পালা এবার। কাল কাঞ্চন দেখতে বের হব মধ্যরাতে। পরের পর্বে আসছি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে

আগের পর্ব!
পাহাড়কন্যার গল্পছবি_পর্ব ১

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০০

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: আপনার গল্প লেখার হাত নিখুঁত! মম কিসের ছিল!!

২| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩

নাদিয়া জান্নাত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া!! মোমো ভেজিটেবল আর চিকেনের ছিল।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আগের পর্বের মতোই উপভোগ্য !!

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: দারুন হয়েছে আপি। মন্তব্যের উত্তর দিতে ..। মন্তব্যের নিচে সবুজ তীর চিহ্ণতে ক্লিক করে মন্তব্যের উত্তর দিবেন।

১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:২৯

নাদিয়া জান্নাত বলেছেন: ধন্যবাদ আপু

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.