নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাহিদ হোসাইন

▬►হ্যালো আমি মোঃ নাহিদ হোসাইন।\n▬►ডাকনাম: \"নাহিদ\"/ \"NHD\"\n▬►অন্যনাম: \"লাভ গুরু\"\n\nবর্তমানে \"বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকে\" \"ইলেকট্রিকাল\" টেকনোলজিতে পড়ছি।\nঅবসর সময়ে কবিতা লিখি, গেমস খেলি, গান শুনি, নিজের গান রেকর্ড করি, গল্প লিখি, কল্পনা জগতের ভাবনাগুলো শেয়ার করি ইত্যাদি। আমার অবসর সময় কাটে ফেসবুক, আর পিসির সাথে। আমার অন্যান্য প্রতিভার বিকাশ ঘটতনা যদি আমি পলিটেকনিক জীবনে প্রবেশ না করতাম। সত্যি অনেক কিছু শিখেছি এই জীবনে আরও শিখছি, After All শিক্ষার কোন শেষ নেই, And I Would Love to Learn New Things.

নাহিদ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“সঞ্চিতা”

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

“সঞ্চিতা”

~~লেখকঃ মোঃ নাহিদ হোসাইন~~



সাল ২০১০। নিহাদ ক্লাস টেন এ উঠেছে, ভৈরব টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে পড়ছে। ক্লাসের সবচেয়ে শান্ত, নম্র, ভদ্র ছেলে নিহাদ। কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় না, মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে ঘেমে ঝোল হয়ে যায়, টিচাররা নিহাদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। পুরো কলেজের মধ্যে একমাত্র নিহাদ ই সম্পূর্ণ ড্রেসআপ করে কলেজে আসতো, মাথা নিচু করে হাঁটতো, ক্লাসে সবসময় চুপচাপ থাকতো, আর টিচারদের অনেক সম্মান করত, সকল টিচাররা বিশেষ করে ওদের ডিপার্টমেন্টের “রফিক স্যার” নিহাদকে দেখিয়ে বাকিদের উদাহরণ দিত।প্রথম প্রথম টেকনিক্যাল জীবন ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পরে সে।

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন, জেনারেল ইলেক্ট্রিসিটি (২) ক্লাস চলছে, রফিক স্যার রোল কল করছেন, “রোল নাম্বার ১৭, রোল নাম্বার ১৭” এবার নাম ধরে ডাক দিলেন রফিক স্যার, “সঞ্চিতা”।

সামনের বেঞ্চ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ বলে উঠলো “ইয়েস স্যার” কণ্ঠটা এতটাই মধুর ছিল যে নিহাদ চোখ তুলে মেয়েটার দিকে তাকাল, এই প্রথম কোন মেয়ের দিকে ভালভাবে তাকালে সে, আর তখনি ক্রেশ খেল। মেয়েটার চেহেরায় অদ্ভুত এক মায়া ছিল, চোখে ছিল ভয়, “নিহাদ” অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে “সঞ্চিতা” নামের মেয়েটার দিকে। ধীরে ধীরে মেয়েটার গালে লাল আভা পড়তে লাগলো, আর নিহাদ তা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, আর তার মনে হাজারটা প্রশ্ন উদয় হচ্ছে, একটা মেয়ের চেহেরা এত মায়াবী কেন? এত সুন্দর কেন? মেয়েটার গাল লাল হয়ে যাচ্ছে কেন?

সেদিনের পর থেকে নিহাদ প্রতিদিন সঞ্চিতাকে লক্ষ্য করে। সঞ্চিতা অনেকটা নিহাদের মতই শান্ত-শিষ্ট ছিল, নিহাদের মেয়েটাকে অসম্ভব ভালো লেগে যায়।

ওরা একসাথে ইংলিশ প্রাইভেট পড়তো, মাঝে মধ্যে টুকটাক পড়া সংক্রান্ত কথা হত, আর ক্লাসে চোখাচোখি, একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। নিহাদ ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রেমে পরে যায়, সঞ্চিতার কিছু কিছু আচরন বলে দিত সেও নিহাদকে ভালবাসে। যেমন নিহাদ ক্লাসের ফাকে “Centre Fruit” খেত, তখন সে খেয়াল করত সঞ্চিতাও মুখে Centre Fruit দিচ্ছে, এছাড়া ইতিমধ্যে ৫টা ছেলে সঞ্চিতাকে প্রপোজ করেছে, সে রাজি হয়নি, ফিরিয়ে দিয়েছে, হইত নিহাদের প্রপোজের জন্য অপেক্ষা করছিলো। নিহাদ সঞ্চিতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, ওকে নিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করে, মনের মাঝে ভালবাসার তাজমহল গড়তে শুরু করে।

নিহাদ প্রতিদিন বাসা থেকে নিয়ত করে বের হয়, আজ যেভাবেই হোক সঞ্চিতাকে মনের কথা বলবে, কিন্তু ওর সামনে গিয়ে সব ভুলে যায়, শুধু দূর অপলকে চেয়ে থাকে আর দূর থেকে ওকে ভালবেসে যায়।



একবার ওদের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেমন খুশি তেমন সাজো” ইভেন্টে ওদের ডিপার্টমেন্ট অংশ নেয়, সবাই মিলে যৌতুকের কুফলের উপর একটি নাটিকা করার সিদ্ধান্ত নেয়, নাটকটির পরিচালনায় ছিল শিমুল। ঐ নাটকে সঞ্চিতা বৌ সাজে, সবাই ওদের ডিপার্টমেন্টে বসে আলোচনা করছিল কাকে বর বানানো যায়, আর নিহাদ সঞ্চিতার পাশেই একটা চেয়ারে বসে ওকে দেখছিল, লাল শাড়িতে ওকে দারুন লাগছিলো।

হটাৎ শামিম বলে ওঠে,

- নিহাদকে বর বানালে কেমন হয়?

শিমুল বলে,

- মন্দ হয়না

সবাই ঘুরে নিহাদের দিকে তাকাল। শামিমের ডাকে নিহাদের ধ্যান ভাঙল।

- কিরে নিহাদ, সঞ্চিতার জামাই হবি?



বলেই শামিম হেসে ফেলল, সাথে অন্যরাও যোগ দিল। সঞ্চিতাও হাসছে, নিহাদ তার হাসি দেখছে আর মনে মনে ভাবছে এতো সুন্দর করে মেয়েটা কি করে হাসে? নিহাদ যতই সঞ্চিতাকে দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে, আর যতই দিন যাচ্ছে সঞ্চিতাকে নিয়ে ওর মনের ভেতর একটা স্বপ্ন বাসা বুনছে।

- কিরে বেটা জামাই হবি? দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে শামিম।

নিহাদ কিছু বলে না, মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসছে। এবার শামিম সঞ্চিতাকে জিজ্ঞেস করল,

- সঞ্চিতা, নিহাদকে তোমার জামাই বানাই?

- হুম, বানালে তো ভাল হয়, নিহাদকে জিজ্ঞেস করো হবে কিনা।

- করছি তো, ও তো কিছু বলে না। ঐ হারামি, হবি নাকি জামাই?

শামিম এবার চিৎকার করে উঠে, এবার নিহাদ মাথা তুলে তাকায়, আর বলে,

- নাহ, হব না। বলেই সঞ্চিতার দিকে তাকাই, মেয়েটার হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায়।



নাটক শুরু হয়ে গেছে, ওরা মাঠের মাঝখানে, সবাই ওদেরকে ঘিরে আছে, শেষ পর্যন্ত শামিমকেই বর করা হল। নিহাদ নাটিকাটি ঘুরে ঘুরে ভিডিও করছে, আর ভাবছে বড় ধরনের একটা ভুল করে ফেলেছে, শামিম সঞ্চিতার পাশে বসে আছে, একবার রাজি হয়ে গেলেই নিহাদ বসতে পারতো।

-“ধুর এটা কি করলাম আমি? নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে ওর। যৌতুক হিসেবে নিহাদের সাইকেল টা আনা হল।

নাটিকাটি সফল ভাবে শেষ হল, ওদের ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হল। নিহাদ তার কাজ শেষ করে মোবাইলটা জামাদুল্লাহ কে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে চলল, কোন এক অজানা কারণে ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল।

দেখতে দেখতে এস.এস.সি পরীক্ষা এসে গেল, বিদায় অনুষ্ঠানের পর সবাই যার যার মত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরীক্ষা শেষে প্রতিদিন সঞ্চিতাকে দূর থেকে দেখত, ইচ্ছে করত মনের সব কথা ওকে বলে দিতে, ইচ্ছে করত দেখিয়ে দিতে ওর জন্য কত ভালবাসা জমা আছে, কিন্তু কাছে যাওয়ার মত সাহস পেত না নিহাদ।



পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, এখন “ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং” এর জন্য প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৫ জনকে ঢাকা পাঠানো হল, ওদের মধ্যে নিহাদ ও ছিল। নিহাদের ইচ্ছে ছিল ভৈরব ট্রেনিং টা করার কিন্তু ওর বাবা জোর করে ঢাকা পাঠালো। ফার্মগেটে একটা মেসে উঠলো ওরা, ২৭ দিনের ট্রেনিং । জীবনে প্রথমবার ঢাকায় এসে থাকা, সবকিছু যেন অসহ্য লাগছিলো নিহাদের কাছে।

এখানে এসে নিহাদ বুঝতে পারে সে আসলে সঞ্চিতাকে কত ভালবাসে, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড ও শুধু সঞ্চিতাকে নিয়ে ভাবতো, ঘুমের মধ্যে সঞ্চিতাকে ওকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো, নিহাদের ভাবনার সবটা ছুয়ে সঞ্চিতা যেন মিশে গেছে ওর হৃদয়ে, নিহাদ যেন কিছু বুঝেনা, কিছু জানেনা শুধুমাত্র সঞ্চিতার ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকে।

নিহাদ সিদ্ধান্ত নেয় ট্রেনিং শেষ করে বাড়ি ফিরেই সে তার মনের কথা সঞ্চিতাকে জানাবে। দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে এলো আজ ওদের ঢাকায় শেষ দিন, সবাই অনেক খুশি। ওরা সবাই মিলে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছে।

পরদিন ওরা সবাই কলেজ যায়, নিহাদ সঞ্চিতাকে খুঁজছে আজ সে তার মনের কথা ওকে বলবে। নিহাদের হাতে সঞ্চিতাকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা। সঞ্চিতা নিহাদের দিকে আসছে, আজ ওকে খুব সুন্দর লাগছে, কপালের কালো টিপটা ভীষণ মানিয়েছে, নীল জামা পরায় সঞ্চিতাকে দারুন লাগছিলো। নিহাদ অপলক নয়নয়ে তাকিয়ে আছে।

- কেমন আছো? সঞ্চিতার কথা শুনে বাস্তবে ফিরে আসে।

- ভাল তুমি?।

- এইতো ভাল। বলেই সঞ্চিতা মুচকি হাসল।

নিহাদের হার্টবিট বেড়ে গেছে, ও ঘামতে শুরু করেছে।

- কিছু বলবা? এতো ঘামছো কেন?

- না মানে, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। রাগ করবে নাতো?



- কি কথা?



_____সঞ্চিতা একটু এদিকে আসো তো। ক্লাসরুম থেকে কে যেন ডাক দেয়।

-নিহাদ জাস্ট ৫মিনিট। বলেই ও ভিতরে চলে যায়। নিহাদ বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে, হটাৎ ইমরান আসে।

- কি মিয়া কি খবর? কেমন কাটছে দিনকাল?

- ভাল।

- খবর শুনছো?

- কিসের?

- আমাদের সঞ্চিতা পিয়ালের প্রেমে পড়েছে।

নিহাদের মুখটা মলিন হয়ে যায়। পিয়াল ওদের ক্লাসমেট, সেকেন্ড শিফটে পড়ত, আর ওরা ফার্স্ট শিফটে।

-তাই নাকি? কিন্তু পিয়াল তো সেকেন্ড শিফটে পরে।

-ট্রেনিং দুই শিফটের একসাথে পরেছিল, আর তখন থেকেই পিয়াল সঞ্চিতাকে প্রপোজ করা শুরু করে, একসময় সঞ্চিতা রাজি হয়ে যায়। এই আর কি।

-ও আচ্ছা, বলেই নিহাদ ক্লাসরুমের দিকে হাটা দেয়। রুমে ঢুকতে যাবে তখন দেখে পিয়াল আর সঞ্চিতা কি যেন একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে, নিহাদকে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সঞ্চিতা বের হয়ে আসে।

-তুমি যেন কি বলতে চাইলা?

-সঞ্চিতা, তুমি পিয়ালকে ভালোবাসো?

-ও হ্যা, তোমাকে তো বলায় হয়নি, জানো পিয়ালটা সেই কবে থেকে প্রপোজ করতেছে, কাল হে বলে দিলাম। আমাকে অনেক ভালোবাসো।

-ও। নিহাদের মাথায় যেন একটা বাজ পড়ল, ভিতরে যেন কালবৈশাখী তুফান শুরু হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে কান্নাটা চেপে রেখেছে।



-তোমার হাতে ওটা কি?

- কিছুনা ভাল থেক। বলেই নিহাদ হাটা দেয়। হাতে সঞ্চিতাকে নিয়ে লেখা কবিতা, আর চোখের জল নিয়ে নিহাদ চলল বাড়ির দিকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:

ভালো লাগলো।

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৯

নাহিদ হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.