![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
▬►হ্যালো আমি মোঃ নাহিদ হোসাইন।\n▬►ডাকনাম: \"নাহিদ\"/ \"NHD\"\n▬►অন্যনাম: \"লাভ গুরু\"\n\nবর্তমানে \"বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকে\" \"ইলেকট্রিকাল\" টেকনোলজিতে পড়ছি।\nঅবসর সময়ে কবিতা লিখি, গেমস খেলি, গান শুনি, নিজের গান রেকর্ড করি, গল্প লিখি, কল্পনা জগতের ভাবনাগুলো শেয়ার করি ইত্যাদি। আমার অবসর সময় কাটে ফেসবুক, আর পিসির সাথে। আমার অন্যান্য প্রতিভার বিকাশ ঘটতনা যদি আমি পলিটেকনিক জীবনে প্রবেশ না করতাম। সত্যি অনেক কিছু শিখেছি এই জীবনে আরও শিখছি, After All শিক্ষার কোন শেষ নেই, And I Would Love to Learn New Things.
♥ লিখাঃ মোঃ নাহিদ হোসাইন ♥
বিকাল ৪ টা। নিহাদ বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকের মাঠে অহনার জন্য অপেক্ষা করছে। নিহাদ আর অহনা একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। ওরা খুব ভালো বন্ধু। আজ ওদের বন্ধুত্বের ২ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, তাছাড়া আজ অহনার জন্মদিনও । তাই নিহাদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ অহনাকে তাঁর মনের কথা জানাবে যা এতদিন শত চেষ্টা করেও বলতে পারেনি সে। হাতে অহনাকে নিয়ে লেখা কবিতা, আর একটা হলুদ গোলাপ নিয়ে নিহাদ পায়চারি করছে, হলুদ অহনার প্রিয় রঙ। ডিসেম্বর মাসের পড়ন্ত বিকেলের শীতের মাঝেও নিহাদ ঘেমে ঝোল হয়ে যাচ্ছে। অহনা মেয়েটা খুব রাগী, রাগ উঠলে মেয়েটার মাথা ঠিক থাকেনা। আজ প্রপোজ করার পর অহনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে সেটা কল্পনা করতে করতেই নিহাদের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।
হাতের ঘড়ি দেখল ৪টা বেজে ১০মিনিট। এই নিয়ে ৫০ বার ঘড়ি দেখে ফেলেছে সে। মেয়েটা ফোন ও রিসিভ করছে না।
“কি ব্যাপার মেয়েটা এখনো আসছে না কেন? কোন প্রবলেম হল নাতো?” আপন মনেই বিড় বিড় করছে নিহাদ।
অবশেষে আধঘণ্টা পর নিহাদের রাজকন্যা রাজ্যে আসলো। আজ অহনা নীল শাড়ি পড়েছে, নীল রঙ নিহাদের পছন্দের সেটা অহনা জানে। পড়ন্ত বিকেলের হালকা রোদের আলোয় নীল শাড়িটা ঝিকমিক করছে, মনে হচ্ছে যেন আকাশের তারাগুলো সব অহনার শাড়িতে নেমে এসেছে। অহনাকে আজ সত্যিই রাজকন্যার মত লাগছে, নিহাদ অপলকে অহনার দিকে চেয়ে আছে।
-সরি একটু লেট করে ফেললাম।
-তা লেট কেন হল? সাজগোজ করছিলি নাকি?
-উফ! নিহাদ, তুই না, সবসময় এমন করিস। তোর জন্যই তো লেট হল তুই জানিস আমি শাড়ি পড়তে পারিনা, অনেক কষ্টে পরেছি আর শাড়ি পরতে পরতেই তো লেট হল।
-ওকে বাবা সরি সরি, রাগ করেনা। অহনা শুন.....
-হুম....বল
-হ্যাপি বার্থডে
-মনে আছে তাহলে। অহনা মুচকি হেসে উঠে।
-থাকবে না কেন? আমার বেস্টফ্রেন্ডের জন্মদিন কি আমি ভুলতে পারি?
-থ্যাংকু। চল বসি।
দুইজনে পাশের বেঞ্চিতে বসে পড়ে। শেষ বিকেলের সূর্যের হালকা আভা অহনার গালে পড়ছে, অহনার রুপ যেন আরো বেড়ে গেল। নিহাদ আবার অহনার রুপের অতল সাগরে হারিয়ে যায়।
-এই যে মিস্টার, কি দেখিস?
অহনার ডাকে কল্পনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে সে।
-না কিছুনা। অহনা তোকে একটা কথা বলতে চাই।
-বল
-তুই রাগ করবি নাতো?
-আগে কথাটা শুনি, রাগ করার মত না হলে করবো না।
-তোর তো অনেক রাগ তাই জিজ্ঞেস করলাম।
-ঠিক আছে বল
-না মানে আসলে?
-কি?
-আসলে আমি..................
নিহাদ উঠে অহনার সামনে যায়, হাঁটু গেড়ে বসে।
-কি হল, বল কি বলবি?
নিহাদ বুক ভরে একটা নিশ্বাস নেয়.. হাতের গোলাপটা অহনার দিকে এগিয়ে বলে,
-অহনা আমি তোকে অনেক অনেক ভালবাসি, তোকে অনেক অনেক ভালবাসি অহনা।
বলেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে নিহাদ। অহনা এই কথা শুনার পর সাথে সাথে নিহাদের বাম গালে ঠাস করে চড় মারে। নিহাদ গালে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। অহনা অগ্নিশর্মা হয়ে নিহাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন এখনি নিহাদকে গিলে খাবে। নিহাদ গালে হাত দিয়ে ভাবছে, চড় খেলাম গালে তাহলে কোমরে ব্যাথা করছে কেন? চড়টা কি তাহলে কোমরে খেয়েছি? নিহাদ দেখল অহনা তাকে ডাকছে...
-নিহাদ, উঠ।
অহনার কণ্ঠটা কেমন যেন বদলে গেছে, হঠাৎ করে চারপাশটা কেমন যেন ঘোলাটে হতে শুরু করেছে, নিহাদ অহনার দিকে তাকিয়ে আছে, অহনার মুখটা ঘোলাটে হতে হতে ওর মায়ের মুখ ধারণ করল।
-এই নিহাদ, উঠ।
নিহাদ হা করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হচ্ছে।
-একি আম্মা আপনি? আপনি কোথা থেকে আসলেন?
-কি আজাবাজে বলছিস? তোর রুমে ধূপ করে কিছু একটা পরার শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলাম, এসে দেখি তুই পরে আছিস? তুই খাট থেকে পড়লি কিভাবে?
-মানে আমি..................
নিহাদ চারপাশে তাকিয়ে দেখে এটা ওর রুম, আর নিজেকে মেঝেতে আবিস্কার করে। তারমানে সে এতক্ষন দুঃস্বপ্ন দেখছিল। এটা স্বপ্ন ছিল!!! যাক বাবা বাঁচলাম। নিহাদ ভেতরে জমে থাকা বাতাসটা বের করে দেয়।
-এখন উঠে ফ্রেশ হো। তোর ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
উঠতে গিয়ে কোমরে হালকা ব্যাথা অনুভব করল নিহাদ, খাট থেকে পড়ে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়েছে।
নিহাদ গোসল করছে আর ভাবছে, কি মেয়েরে বাবা! স্বপ্নেও থাপ্পড় মারে? এই মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
এখন অফ পিরিয়ড তাই নিহাদ ক্যাম্পাসের বাগানে বসে আছে, অহনাকে ওর দিকে আসতে দেখে ও উঠে যায়, এখন কেন যেন মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছে নিহাদ।
-ঐ নিহাদু, কয় যাস?
-দেখ আহু তোকে না বলেছি আমাকে নিহাদু ডাকবি না।
-ডাকবো হাজারবার ডাকবো, তুই আমাকে আহু ডাকলি কেন?
-তুই আমার নাম নিয়ে ভেঙালি তাই আমিও ভেঙালাম।
-ঐ আমি যা করি তোকেও তাই করতে হবে নাকি? আমি থাপ্পড় মারলে তুই ও আমাকে থাপ্পড় মারবি।
থাপ্পড়ের কথা শুনে নিহাদের সপ্নের কথাটা মনে পরে যায়, নিজের অজান্তে গালে হাত দিয়ে ফেলে।
-একি! তুই গালে হাত দিয়ে আছিস কেন? তোকে তো এখনো থাপ্পড় দিইনি নিহাদু।
বলেই হি হি করে হাসতে থাকে অহনা। নিহাদ অপলকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, অহনার হাসিটা আসলেই অনেক সুন্দর, কে বলবে এই মেয়ের অনেক রাগ।
-কিরে হা করে তাকিয়ে কি দেখিস?
-না কিছুনা।
-আজ তুই ক্লাসে আমার পাশে বসলি না কেন? আর এখন আমাকে দেখে চলে যাচ্ছিস কেন?
-না মানে আসলে.....
-থেমে গেলি কেন? বল বল আসলে কি?
অহনা চিৎকার করে উঠে, রেগে গেলে ওর গাল আর কান লাল হয়ে যায়। নিহাদ স্পষ্ট দেখতে পেল দুইটাই লাল হয়ে গেছে। ভয়ে নিহাদ দুই পা পিছিয়ে আসে। রেগে গেলে মেয়েটা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একাই পক পক করতে থাকে। এবারো তার বেতিক্রম হলনা।
-আজ তুই সারাদিন আমাকে পাত্তা দিলিনা, অথচ তোর কাছ থেকে এমনটা আমি আশা করিনি, তুই জানিস আজ আমার বার্থডে, গিফট দেয়াতো দূরের কথা একবার উইশ পর্যন্ত করলি না।
বলতে বলতে অহনার চোখে পানি এসে যায়, মেয়েটির আরেকটি গুন হল খুব সহজেই চোখে পানি আনতে পারে। সূর্যের আলোতে চোখের পানি মুক্তোর মত টলটল করছে কিন্তু চোখ থেকে পড়ছে না। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে আজ সারাদিন নিহাদ অহনার কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছে, টেনশনে ওর জন্মদিনের কথা ভুলে গেছে, এখন অহনাকে ঠাণ্ডা করার একটাই উপায়, সেটা হল কবিতা। নিহাদের কবিতাগুলো অহনা খুব পছন্দ করে, ওদের বন্ধুত্বটা শুরু হয়েছিল কবিতার মাধ্যমে। কলেজের একটা প্রোগ্রামে নিহাদ কবিতা আবৃত্তি করেছিল, কবিতাটি অহনার অনেক ভালো লাগে। তারপর অহনা নিজে থেকেই নিহাদের সাথে বন্ধুত্ব করে। সেই বন্ধুত্বের আজ ২ বছর পূর্ণ হল।
-সরি অহনা, আসলে আজ একটা টেনশনে সব ভুলে গিয়েছিলাম, ভুলে গিয়েছিলাম তোর জন্মদিন আর আমাদের বন্ধুত্বের ২ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা।
-কি এমন টেনশন তোর? যার কারণে এত ইম্পরট্যান্ট একটা দিনের কথা ভুলে গেলি?
-না কিছুনা।
-না বল তোর কি টেনশন। তোকে বলতেই হবে।
মেয়েটার মাথায় কোন কিছু একবার ঢুকলে উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত প্রশ্ন করতেই থাকে।
-অহনা একটা কবিতা শুনবি? কাল রাতে তোর জন্য লিখেছি।
নিহাদ প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করে।
-পড়ে শুনবো, আগে বল তোর কিসের এত টেনশন।
-ওকে বলছি, আগে বল তুই রাগ করবিনা, আর আমাকে মারতে মারবিনা।
-ওকে।
-আজ ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্নে তুই আমাকে চড় মেরেছিলে, তাই আজ তোর কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছি যদি সত্যি সত্যিই চড় মারিস।
নিহাদের কথা শুনে অহনা হেসে হেসে..
-আমি তোকে স্বপ্নে চড় মেরেছি, হা হা..... কেন মেরেছি?
-তোকে প্রপোজ করেছিলাম।
-কি?
-অহনা আমি তোকে অনেক ভালবাসি।
-ও আচ্ছা এটা বলে স্বপ্নে প্রপোজ করিছিলি?
-আমি তোকে সত্যিই অনেক ভালবাসি অহনা।
অহনার হাসি থেমে যায়, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এবার সত্যি সত্যিই নিহাদের গালে চড় মারে, তবে সপ্নের অহনার মত ঠাস করে নয়, আস্তে করে।
-এতদিনে বললি স্টুপিড। তুই জানিস তোর মুখ থেকে এই কথাটা শুনার জন্য আমি কতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম।
-তারমানে তুই ও আমাকে ভালবাসিস?
-হুম
-তাহলে এতদিন বলিসনি কেন?
-সবকিছু আমাকেই কেন বলতে হবে?
-তুই আমার সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব করলি, আমার টেককেয়ার করিস, সবসময়ে প্রথমে তুই ঝগড়া করিস। তাই আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে আগে বলবি।
-ঠিক আছে এখন বললাম।
-কই বললি, আগে তো আমি বলেছি।
-আমিও তোকে ভালবাসি স্টুপিড।
-আমার মনে হয়না তুই আমাকে ভালবাসিস।
-কেন?
-তোর ভালবাসি বলার মধ্যে রোমান্টিকতা নেই আহু।
-এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে নিহাদ।
একথা বলেই হাতটা মারমুখি করে নিহাদের দিকে ছুটে আসে অহনা। নিহাদ দৌড়ে গিয়ে বাগানের বেঞ্চিতে বসে পড়ে, তারপর অহনা নিহাদের পাশে বসে কিল মারতে থাকে।
-আস্তে অহনা লাগছে তো?
-লাগুক। তুই বলিস কেন আমার ভেতর রোমান্টিকতা নেই?
-আরে ওটাতো মজা করলাম। কে বলল আমার অহনার মধ্যে রোমান্টিকতা নেই?
-তুই বলেছিস স্টুপিড।
-আর বলবনা বাবা এই কান ধরলাম।
-হুম গুড বয়। এখন কবিতা শুনা।
নিহাদ কবিতা শুরু করে....
অহনা নিহাদের কাঁধে মাথা রেখে কবিতা শুনতে থাকে..
[আমি চাঁদের সাথে করবোনা তোমার তুলনা,
তুমি যে অতুলনীয় অনন্যা।
তুমি সেই আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা,
তোমার জন্যে রেখেছি ভালবাসার চাদর বোনা।
কেন ইচ্ছেগুলো স্বপ্ন হয়ে আকাশেতে ভাসে?
কেন মনের মাঝে তোমার স্মৃতি বারে বারে আসে?
কেন তোমার মাঝে হারায় আমি বারবার?
কেন তোমায় পেয়ে করি আমি অহংকার?]
কবিতা শেষ করার পর নিহাদ বলে উঠে,
-ও হো একটা জিনিস ভুলে গেছি।
-কি?
-হলুদ গোলাপ। স্বপ্নে আমার হাতে হলুদ গোলাপ ছিল। আর তুই নীল শাড়ি পরা ছিলি।
-সন্ধার পার্টিতে গোলাপ নিয়ে আসিস, আর আমিও নীল শাড়ি পরবো।
-অবশ্যই আনবো
-না আনলে খবর আছে কিন্তু।
নিহাদ মুচকি হাসি দেয়, নাহ মেয়েটাকে যতটা রাগী ভেবেছিল ততোতা রাগী না, প্রেমে পড়লে সবাই নরম হয়ে যায়।
►গল্পের লেখক নাহিদও স্বপ্নে একইভাবে চড় খেয়ে বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল, তবে যে মেয়েটা চড় মেরেছিল তাকে লেখক চিনে না।
ফেসবুকে আমি
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৯
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন:
ভালো লাগলো