| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়সটা তখন ১৫-১৬। বড়রা বলে ভূলের বয়স, চোখে রঙ্গিন চশমা পড়ে থাকার বয়স। সে বয়সে নাকি যা করা হয় সবটাকেই ঠিক মনে হয়। বাবা-মার সব কথাকেই ভূল মনে হয়। বাবা-মাকে বড় অত্যাচারী মনে হয়। আজ ৩৫ পেরোনো মেঘলার সে বয়সের কথা মনে পড়লে হাসি পায়। বাবা-মা ছাড়া কে আছে বন্ধু তার!! বড় ভাই যেন আজো তার দুষ্টুমির সঙ্গী। কিন্তু শুধুই কি হাসি পায়। ফেলে আসা সেই ১৫-১৬ বছর কি আর কোন অনুভূতি তাকে দেয় না? বুকে কাঁপন জাগানো এক অদ্ভুত অনুভূতি, যার দেখা সেই বয়সে সে প্রথম পেয়েছিলো।
মেঘলার সাথে ধ্রুবর পরিচয় বাংলা ক্যাফেতে। ভাই এর কম্পিউটারে লুকিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো সে। তখন তো কম্পিউটার ব্যবহার করাই তার মা বিশেষ পছন্দ করতেন না। গেম খেলছি বলে মেঘলা ঢুকতো বাংলা ক্যাফেতে। সেখানেই পরিচয় হলো ধ্রুবর সাথে। একটি দুটি কথা। তারপর রোজ তার সাথেই কথা। সময়ও ঠিক করে নিলো তারা কোন সময় কথা বলবে। ধ্রুবর কন্ঠ শোনার জন্য পাগল হয়ে উঠল মেঘলা। একদিন বলে বসলো-‘আপনার ফোন নম্বরটা দিন তো’। ধ্রুব দিয়ে দিলো।
ফোন করা আর হয়ে ওঠে না। বাসার ফোন, মায়ের মোবাইল কোনটা দিয়েই ঠিক সুযোগ হয়ে ওঠে না। আবার সুযোগ হলেও এমনি বুক ধ্বক ধ্বক করে মেঘলার যে সাহস করে উঠতে পারে না। ধ্রুবর কথা ভাবলেই কেন যেন বুকে অজানা এক কাঁপন ওঠে। কি সেটা? এটাই কি প্রেম? নাকি কিছুই না?
বাংলা ক্যাফেতে কথা চলতে থাকে। একদিন সন্ধ্যা বেলা হঠাৎই ফোন করে ফেলল মেঘলা। কেবল একটি কথাই বলতে পারলো সে-‘আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে ভালবাসি’? আবেগে গলা বুজে এলো তার। ফোনটা কেটে দিলো। ধ্রুবও আর ফোন করলো না। হয়তো বাসায় ফোন করে বিপদে ফেলতে চায়নি মেঘলাকে। তার বাবা-মা যে অনেক কড়া তা জানতো সে।
পরদিন ধ্রুবর সাথে বাংলা ক্যাফেতে কথা হলো মেঘলার। ধ্রুব বললো- ‘আমি বুঝতে পারছিলাম তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলছো। আমার হয়তো তোমাকে আটকানো উচিৎ ছিলো। কিন্তু কেন যে পারলাম না কে জানে। হয়তো আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি বলে।’ মেঘলা সেদিনই জানতে পারল ধ্রুবর বয়স ২৯। সে তার থেকে অনেক বড়। মনের কাছে যুক্তি কাজ করলো না। মেঘলার মনে হলো এ মানুষটিকে ছাড়া সে বাঁচবে না। ধ্রুব ম্যাচিওর মানুষ। বার বার বোঝালো মেঘলা তোমার বাসায় মানবে না। তুমি ভেবে দেখো। মেঘলার মনে হলো সে এ মানুষটিকে নিয়ে দ্বিতীয় আর কিছুই ভাবতে চায় না। কেবল ভালবাসতে চায়, পাশে পেতে চায়।
অতি দ্রুত খুব আপন হয়ে উঠল তারা। দেখা করার তো কোন উপায় নেই। কখন কোচিং এ যাবে মেঘলা, সে রাস্তায় এসে দাঁড়াতো ধ্রুব। এক পলকের দেখা। স্কুলের সামনে একটু দেখা। বেশ চলছিলো। কিন্তু ওই যে!! ১৫-১৬ বছরের উচ্ছলতা। প্রকাশ করে দিলো বাসায় ধ্রুবর অস্তিত্ব। নেমে এলো ভয়ানক দুর্দিন। মা-বাবার কঠোরতা মাত্রা ছাড়ালো। সব আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে গেল কি ভয়ানক পাপ করেছে সে। মেঘলার মা মেঘলাকে বললেন-তুই যদি এ সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে না আসিস, তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো। কি হতো মেঘলা জানেনা। যদি মা সত্যি সত্যিই... মাকে কথা দিল সে ধ্রুবর সাথে সম্পর্ক রাখবে না। মেঘলা কথা রেখেছিল। ধ্রুবর - চলে এসো আমার কাছে, তোমার সব দায়িত্ব আমার- এ আহ্বান তুচ্ছ করে সে ফিরিয়ে দিয়েছিলো ধ্রুবকে। ওইটুকু বয়সেই যেন মেঘলা হঠাৎই অনেক বড় হয়ে গেল।
মেঘলা জানেনা ধ্রুব কেমন আছে। হয়তো সংসারী হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাল আছে। আবেগ ভরে স্ত্রীকে ডাকছে-আমার অথৈ, আমার অথৈ। ঠিক যেভাবে মেঘলাকে ডাকত। অথবা সে হয়তো আজও মন প্রাণ উজাড় করে মেঘলাকেই ভালবাসে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে তাকে ভাবে। ঠিক মেঘলার মতো।
©somewhere in net ltd.