নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাঈমা সুলতানা চাঁদনী, অসাধারণ সব মানুষদের মধ্যে খুব সাধারণ একজন। লেখালেখি আমার কাছে শিল্প। শৈল্পিক সৃষ্টির ভক্ত আমি। লেখালেখি তেমন একটা পারি না, শিখার তীব্র ইচ্ছা থেকে মাঝে মাঝে ভুলভাল কিছু বর্ণ সাজাই, সাধারণ সব শব্দে মনেরমতো বাক্য সৃষ্টির চেষ্টা করি।

নাঈমা সুলতানা চাঁদনী

নাঈমা সুলতানা চাঁদনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই পর্যালোচনা : একাত্তরের দিনগুলি, জাহানারা ইমাম

০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৪

বুক রিভিউ
লেখা : নাঈমা সুলতানা চাঁদনী

বই : একাত্তরের দিনগুলি
লেখক : জাহানারা ইমাম
প্রকাশনী সংস্থা : সন্ধানী




জাহানারা ইমাম এর ‘একাত্তরের দিনগুলি ’ বইটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থ। বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমাম এই বইয়ে প্রকাশ করেছেন ব্যক্তিগত দিনলিপি, যা ১৯৭১ সালের ১ মার্চ এর ঘটনা থেকে শুরু এবং সমাপ্তিতে রয়েছে সেই বছরেরই ১৭ ডিসেম্বরের ঘটনা। এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এরপর আরো অনেকবার পুনঃমুদ্রিত হয়।

জাহানারা ইমাম ছিলেন একজন বাংলাদেশী লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী।
তিনি বাংলাদেশে শহীদ জননী হিসেবে পরিচিত।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’-তে মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং বর্ণিত মাসগুলির মধ্যে ১৬৮ দিনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। এই বইটি সাধারণ দিনলিপি নয়। এই দিনলিপি এমন একটি বই, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি দলিল। লেখিকার এই লেখনি বাংলাসাহিত্যের এক উচ্চ মর্যাদাশীল সাহিত্য-কর্ম। এই দিনলিপির লেখক একজন বাঙালি মা,যিনি দেশের বিজয়ে নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করেছেন। সেই সন্তান আর কেউ নয়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শুধু একজন রুমি শহীদ হয়নি, শহীদ হয়েছে শতশত রুমী।
লেখিকার মতো সন্তানহারা হয়েছে অনেক মা। বাঙালি মায়েরা বুকে পাথর চেপে কাটিয়েছে প্রহর।

লেখিকার এই লেখা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে সেইসময়কার ভয়ংকর চিত্র।
তার হাহাকার মিশে আছে প্রতিটি বর্ণে বর্ণে।এই লেখায় উল্লেখিত দিনগুলির মধ্যে ফুটে উঠেছে বাঙালি জাতির ক্ষোভ, সকল মানুষের মিলেমিশে আন্দোলনে যোগ দান দেওয়া ও সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষের অবদান,সকলের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন,মায়ের ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, দেশের শত্রুদের অত্যাচারের নির্মম চিত্র, গণহত্যার ভয়াবহ বর্ণনা,গেরিলাদের একের পর এক সাহসী অভিযান, নারীদের প্রতি হানাদার বাহিনীর নির্মম অপমান ও অত্যাচার,অনবরত কারফিউ, বিহারিদের নৃশংসতা, ধর্ষণ, সাধারণ জনগণের হতভম্বের মতো এদিক ওদিক ছোটাছুটি,অবরুদ্ধ ঢাকা নগরীর চিত্র,সাধারণ জনগণের অসাধারণ হয়ে উঠার গল্প, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগ, সমাজের উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সাহায্যের চিত্র এবং কিছু অসাধু মানুষদের স্বার্থপরতার চিত্র।

এই লেখায় প্রকাশ পেয়েছে,
একজন শহীদ জননীর আত্নকথা যেখানে মিশে রয়েছে আবেগমিশ্রিত যুদ্ধকালীন সময়ের ত্যাগ, ধৈর্য্য ও স্নেহ-প্রীতি। যা মার্চ থেকে ডিসেম্বর এই দশমাসের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে দিনলিপিতে ভালোবাসার স্বর্নাক্ষরে হয়েছে লিখিত।

বইটি পড়তে পড়তে অশ্রুসিক্ত নয়নে মস্তিষ্ক বার বার জানান দিচ্ছিলো এক দেশপ্রেমী মায়ের রিক্ততার যন্ত্রণা, সেইসাথে সন্তানকে দেশের জন্য ত্যাগ করে দেশ ও সন্তানের সম্মান রক্ষার এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত এবং বাঙালি মায়ের আপোষহীন লড়াই।

বইটি পড়তে পড়তে যা জানলাম,১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন
লেখিকার জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী
রুমীর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাওয়া ঠিক হয়ে ছিল। শহীদ রুমি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে চান্স পায়। কিন্তু দেশের এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে সে আর বিদেশে যেতে চায় না। মায়ের কাছে তাই সে বিদেশে পড়তে যাওয়ার বদলে অনুমতি চায় যুদ্ধে যাওয়ার। লেখিকা তখন বলেছিলেন ‘দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা।’ মেঘালয় থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পরে সে। সেইথেকে রুমি দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। রুমি গেরিলা অপারেশনে যুক্ত হয় এবং পরপর কয়েকটি সফল অপারেশনের চির সাক্ষী।

তারপর একটা সময়ে রুমি গ্রেফতার হয়। কিন্তু, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রুমি মাথা নিচু করে না। দেশের সম্মান রক্ষার্থে নিজের বেঁচে থাকার জন্য সুপারিশ করেনা এবং পরবর্তীতে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে লেখিকার জীবনে বিষাদের কালো ছায়া প্রবেশ করে। সন্তানহারানোর এক বুক ব্যথা নিয়ে লেখিকা লড়াই করে যায় শেষ পর্যন্ত।

তারপরে, লেখিকার ছোট ছেলে জামি এবং স্বামী শরীফ ইমাম ও যুদ্ধে অংশ নেয়। তথাকথিত ‘দেশপ্রেমিক নাগরিক’ রাজাকারদের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জামী,শরীফ সাহেবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসাথে প্রেপ্তার হয় আরও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে। উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। সবার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এক সময় শরীফ সাহেব ও জামী, অন্যান্যরা বাড়ি ফিরে আসেন।

আবার, আগষ্টের শেষের দিকে, লেখিকা স্বামীহারা হন। বাংলার মুক্তিসংগ্রাম লেখিকাকে বিজয় এনে দেয় কিন্তু কাছের মানুষদেরকে জীবন থেকে চিরতরে দূরে পাঠিয়ে দেয়, লেখিকা হয়ে যায় নিঃস্ব।

১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করার পর রুমীর বন্ধুরা লেখিকা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷

সবশেষে আমি মনে করি, ‘একাত্তরের দিনগুলি’ পাঠ করা উচিত সবার। লেখার প্রতিটি পাতায় পাতায় মিশে থাকা উদ্দীপনা ,সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, বেদনা, মহাত্ম, দেশপ্রেম সম্পর্কে সকলের অবহিত হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্য-পাঠ্য গ্রন্থ।
বাংলার মুক্তিসংগ্রাম আমাদের গৌরবের ইতিহাস, এ ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে কখনোই সুনাগরিক হওয়া সম্ভব নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.