নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাকিব১

নাকিব১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ বদর দিবস। আল বদর দিবস নয়(!)

২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪

আজ এতিহাসিক বদর দিবস। দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান অর্থাৎ আজকের এই দিনে, মক্কা শরীফ থেকে কিছুটা উত্তরে, মদিনা শরীফ থেকে কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক স্থানে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। আর এই স্থানের নামনুসারে এই যুদ্ধের নামকরন করা হয় বদর যুদ্ধ।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপটঃ

মক্কায় কাফের মুশরিকদের অত্যাচার এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাসূল (সঃ) মুসলিমদের নিয়ে মদীনায় হিজরত করলেন। মদীনার মানুষরা তাঁদেরকে স্বাদরে গ্রহণ করলেন। সেখানে রাসূল (সঃ) প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন। অন্যদিকে মক্কার কাফের মুশরিকরা এটাকে ভালো ভাবে নিতে পারল না। তারা ভাবল, মুহাম্মাদ এর ইসলাম যেন প্রচার না হয় সে জন্য আমরা তাদের উপর যত রকমের নির্যাতন আছে সবই চালিয়েছি। তারপরও তারা ইসলাম প্রচার থেকে বিরত থাকেনি। এখন তারা মদীনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সমগ্র আরব থেকে আমাদের বাপ দাদাদের পৌত্তলিক ধর্ম নিশ্চিন্হ হয়ে যাবে। অতএব মদীনায় আক্রমন করে মুসলিমদের নিশ্বেষ করে দিতে হবে। এরপর তারা যুদ্ধের জন্য নানা বাহানা করতে লাগল।

এদিকে মদীনায় অবস্থানরত আনসার মুহাজির মুসলিমগন ভাবতে লাগলেন, আমরা চারদিক থেকে শত্রুতে আবদ্ধ! যেকোন সময় কাফের মুশরিকগন আমাদের উপর হামলা চালাতে পারে। আর ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ অনিবার্য। আর এই ভাবনানুসারে সাহাবীগন নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে লাগলেন। অন্যদিকে রাসূল (সঃ) মদীনার সীমান্ত এলাকায় মুসলিম সৈন্য প্রেরণ করলেন। মদীনার নিকটবর্তী রাস্তা দিয়ে মক্কার কাফের মুশরিকদের ব্যবসায়ীক কাফেলা চলাচল করত। আর এই কাফেলা ছিল সেই সকল লোকের যারা রাসূল (সঃ) ও মুসলিমগন মক্কায় থাকা অবস্থায় তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছিল। এরকমই এক কাফেলা বাণিজ্য শেশে মদীনার ঐ পথ দিয়ে মক্কায় ফিরতেছিল। মুসলিম সৈন্যরা সিদ্ধান্ত নিল এই কাফেলাটিকে আক্রমন করা হবে। আর এই সংবাদ বাণিজ্যকারী দলের সর্দার জানতে পেরে যায়। জানতে পারার কারণে সে ভিন্ন পথে মক্কার দিকে চলতে থাকে। আর ওদিকে মক্কায় অবস্থানকারী কাফের মুশরিকরা এই হামলার কথা জানতে পেরে, তারাও অস্ত্র সস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে মদীনার দিকে আসতে থাকে। মক্কার কাফেররা বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। রাসূল (সঃ) তাঁর সমস্ত সৈন্য বাহিনী নিয়ে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন।

বদর প্রান্তরের একদিকে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ১০০০ সৈন্য নিয়ে কাফের বাহিনী প্রস্তুত। অন্যদিকে নামমাত্র অস্ত্র নিয়ে ৩১৩ জন মুসলিম মুজাহিদও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। রাত পোহালেই যুদ্ধ। মুসলিমরােএমন জায়গায় তাঁবু স্থাপন করেছে, যেখানে একটি পানির কূপ রয়েছে। যার কারণে সেখানকার মাটিগুলো নরম। আর নরম মাটিতে যুদ্ধকরা অধিকতর কঠিন। অন্যদিকে কাফের মুশরিকরা যেখানে তাঁবু স্থাপন করেছে সেখানকার মাটিছিল অধিকতর শক্ত। যা যু্দ্ধ করার জন্য দারুন উপযোগী।


যুদ্ধের আগের রাতে রাসূল (সঃ) আ্ল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়া করতে লাগলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে দয়াময় আল্লাহ্, আগামীকালের নীতিনির্ধারণী যুদ্ধে তোমার সাহায্য আমাদের অতি প্রয়োজন। এই যুদ্ধে আমরা তোমার সাহায্য ছাড়া বিজয় লাভ করতে পারব না। আর আমরা যদি পরাজিত হই হয়তো তোমাকে সেজদা করার কিংবা তোমার নাম ধরে ডাকার লোক এই পৃথিবীতে আর নাও থাকতে পারে। অতঃপর তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো কী করবে; কারণ তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মালিক। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের জীবন তোমার পথে উৎসর্গ করলাম। বিনিময়ে তোমার দ্বীনকে আমরা তোমার জামিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তুমি আমাদেরকে বিজয় দান করো। আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই।’

আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়ে গেল। আর এর সাক্ষ্য সুরা আনফালে আল্লাহপাক প্রদান করলেন। আল্লাহপাক বললেন, ‘জবাবে তিনি বললেন, তোমাদের সাহায্য করার জন্য আমি একের পর এক, এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি’।( সূরা আনফাল-৯)

রাসূল (সঃ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করার পর সেই রাত্রে মরুর বুকে ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। যা মরুর বুকে প্রায় অসম্ভব। আর এই বৃষ্টির কারণে তদ্রাচ্ছন্ন শীতল পরিবেশ তৈরী হয়ে গেল। এবং কাফিরদের পায়ের নিচে অবস্থানরত শক্ত মাটিগুলোও কাঁদায় পরিণত হয়ে গেল। যার কারণে সেখানে দাড়িয়ে যুদ্ধ করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে গেল। এরপর কাফিররা যখন মুসলিম তাঁবুগুলোর দিকে তাকালো তখন তাদের চোখে সেটিকে অনেক বড় মনে হতে লাগল! এক সময় এমন দেখাচ্ছিল, যেন উভয় এ সমান সমান। আর মুসলিমদের চোখে কাফিরদের তাঁবু গুলোকে খুব কম মনে হচ্ছিল। একসময় মুসলিমরা দেখতে পেল তারা উভয়ই সমান সমান। আর এটি হয় আল্লাহর নির্দেশে। যেন মুসলিমরা মনোবল হারিয়ে না ফেলে। আর এর বর্ণনা কুরআনেও পাওয়া যায়, ‘ আর সেই সময়, যখন আল্লাহ‌ নিজের পক্ষ থেকে তন্দ্রার আকারে তোমাদের জন্য নিশ্চিন্ততা ও নির্ভীকতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর পানি বর্ষণ করেছিলেন’। (সূরা আনফাল-১১)

এরপর আরব যুদ্ধনীতিনুসারে প্রথমে তিন জন করে যুদ্ধ শুরু হল। আর এই যুদ্ধে তিনজন কাফেরই নিহত হল। এরপর দুই দল একে অপরের উপর সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। আর সেই সময় আল্লাহপাক ফেরেশতাদের যুদ্ধ করার জন্য হুকুম প্রদান করেন। ‘আর সেই সময়, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে ইঙ্গিত করেছিলেন এই বলেঃ “আমি তোমাদের সাথে আছি, তোমরা ঈমানদারদেরকে অবিচল রাখো, আমি এখনই এ কাফেরদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিচ্ছি। কাজেই তোমরা তাদের ঘাড়ে আঘাত করো এবং প্রতিটি জোড়ে ও গ্রন্থী-সন্ধিতে ঘা মারো।” (সূরা আনফাল-১২)

বুখারীর বর্ণনায় পাওয়া যায়, সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলিম সাহাবীরা বলেছিলেন, আমরা কাউকে দেখিনি! কিন্তু আমাদের পাশে অনেক বড় বড় অস্ত্র যুদ্ধ করছে তা লক্ষ্য করেছি। আর এভাবেই আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের সাহায্য করলেন। আর আল্লাহর এই সাহায্যের কারণে মুসলিমরা প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করলেন। এই যুদ্ধে কাফির সর্দার আবু জেহেল সহ ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দি হলেন। আর মুসলিমদের ১৪ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করলেন।

এ এমনই এক যুদ্ধ ছিল, যাতে রাসূল (সঃ) প্রথম সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই অসম সৈন্য নিয়ে তখনই জয়লাভ করা সম্ভব যখন শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করা যায়। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা যায়। বদর দিবস আমাদের আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়, তোমাদের নিজেদের কোন কিছুই করার ক্ষমতা নেই যদি না আল্লাহপাক চান। তাই কোন কিছুতে হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত সেই সাথে আল্লাহপাকের সাহায্য এবং আল্লাহপাকের উপর ভরসা রাখা উচিত।

বদর ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি যুদ্ধ রমজান মাসে সংঘঠিত হয়েছে। হিজরী ১ম সালের প্রথম রমজানে সর্বপ্রথম হামযাহ বিন আব্দুল মোত্তালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে ছোট একটি মোজাহিদ বাহিনী মদীনায় পাঠানো হয়। এরপর ওবায়দাহ বিন হারেস বিন আব্দুল মোত্তালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে আরও একটি মোজাহিদ বাহিনীকে মদীনায় অভিযানে পাঠানো হয়। আর এ অভিযান ছিল মদীনার ইহুদীদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজানে বদর যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
তৃতীয় হিজরীতে উহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যদিও ৭ শাওয়ালে উহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয় কিন্তু পুরো রমজান মাস জুড়েই মুসলিমরা উহুদের জন্য প্রস্তূতি গ্রহণ করে।
৫ম হিজরীর রমজান মাসে মুসলিমরা আহযাব তথা খন্দক যুদ্ধের প্রস্তূতি গ্রহণ করে। দিও খন্দক সংগঠিত হয় শাওয়াল মাসে।
৬ষ্ঠ হিজরীর রমজান মাসে মুসলিমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুজাহিদ বাহিনীকে বিভিন্ন অভিযানে পাঠায়। তাদের মধ্যে ওক্কাসা বিন মামফী,আবু ওবায়দা বিন জাররাহর নেতৃত্বে দু’টো দল ‍দু’টো অভিযানে যায়।
৭ম হিজরীতে গালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে ১৩০ জন মুজাহিদ, বনি আবিদ বিন ছাকিলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বের হন।
৮ম হিজরীর ২০ রমজান মক্কা বিজয় সংগঠিত হয়।
৯ম হিজরীর রমজান মাসে তাবুক যুদ্ধের কিছু কিছু ঘটনা সংগঠিত হয়।
১৫ হিজরীর ১৩ রমজান হযরত আবু ওবায়দা বিন জাররাহ (রাঃ) এর নেতৃত্বে জেরুজালেম জয় করেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

অশ্রুকারিগর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে বদর দিবস নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা লেখার জন্যে।

বদর দিবস আমাদের আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়, তোমাদের নিজেদের কোন কিছুই করার ক্ষমতা নেই যদি না আল্লাহপাক চান। তাই কোন কিছুতে হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত সেই সাথে আল্লাহপাকের সাহায্য এবং আল্লাহপাকের উপর ভরসা রাখা উচিত।

বদর দিবসের এই শিক্ষাটা সকল মুসলমানের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.