নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাকিব১

নাকিব১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন আমরা নদী তীরের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াই

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

কিছুদিন আগে লালমনিরহাট ঘুরতে গিয়েছিলাম। কেউ লালমনিরহাট ঘুরতে যাবে কিন্তু তিস্তা নদী দেখতে যাবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন ছিল বাংলায় বৈশাখ মাস। আমি তিস্তা নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম! তিস্তা নদীর অবস্থা দেখে মনের মাঝে বেজে উঠল ছোটবেলায় দুলে দুলে মুখস্ত করা কবিতা। ‘আমাদের ছোট নদী চল বাকে বাকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে! পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’! কবিতার লাইনদ্বয়ের সাথে তিস্তা নদীর সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। নদীতে পানি এত্তো কম যে, মানুষ পায়ে হেটে নদী পার হচ্ছে! মানুষজন তাদের গরুবাছুর কে নদীর এ পাড় থেকে ওপাড়ে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝ নদীতে মানুষ ধান আবাদ করেছে। অথচ তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী! উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট এবং গাইবান্ধা জেলাটি গড়ে উঠেছে এই তিস্তা নদীকে ঘিরেই। এই এলাকার মানুষদের ফসলাদি উৎপাদন নির্ভর করে এই নদীর পানির উপর! অথচ সেই নদীতে পানি নেই। প্রতিবেশী ভারত আমাদের কে ন্যায্য পানিটুকু দিচ্ছে না!

আজকের তিস্তার চিত্র দেখলে আপনার শরীর শিঁউরে উঠবে! প্রচন্ড স্রোত আর ঢেউ এর কারণে পাড় ভেঙ্গে পড়ছে! বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে শত শত গ্রাম! বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীগুলো ভারতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে। সেই সব নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির সাথে এ দেশের বন্যা পরিস্থিতি খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিশেষ করে আসামের পাহাড়ি ঢলের কারনে আমাদের প্রায় বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। মোট ৫৪টি নদ-নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যার ৪৮টিতে ভারতে বাধ দিয়েছে। ভারতে উজানের পানি জমা হলেই ভারত তাদের সবগুলো বাধের দরজা খুলে দেয়। যার কারণে কোন ধরনের বৃষ্টিপাত ছাড়াই কখনো কখনো বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত উজান থেকে ভেসে আসা বন্যার পানি বাংলাদেশে ঢেলে দিচ্ছে! এ বছর বন্ধুর এমন ভালোবাসায় ভেসে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের হাজারো গ্রাম! এই এলাকার মানুষরা আফসোস করে বলছে, ‘যখন চাই তখন পাই না, যখন চাই না তখন পানিতে ভেসে যাই’।


চলমান বন্যা ধীরে ধীরে ১৯৮৮ এর ন্যায় ভয়ানক বন্যায় রূপ নিচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় ছিল ১২৫ সে.মি.। অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের পর এবছরই এমন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আর বাংলাদেশে বন্যাটা নতুন নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এহেন উপহার আমরা প্রায় বছরই পাচ্ছি।

এক হিসাবানুযায়ী দেখা গেছে প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর প্রলয়ংকরী বন্যা দেখা দেয়। গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ সালে এদেশে প্রলয়ংকরী বন্যা হয়ে গেছে। স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যা ছিল ২০০৪ সালের বন্যা। ঐতিহাসিক তথ্যানুযায় পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এদেশে গত ১০৪ বছরে ১৯১০, ৩১, ৫৪, ৫৬, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯৮, ২০০০, ২০০৪, ২০০৭ ও বর্তমান ২০১৪ সহ ১৯ বার বন্যা হয়েছে। গড়ে প্রায় ছয় বছর অন্তর অন্তর একবার বন্যা হয়েছে। তাছাড়া ছোট খাট বন্যা প্রতি বছরই হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হিসাববিহীন পানি উপহার পেয়ে ভেসে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। প্রতিবছর এমন বন্যা হলে উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশটি কিভাবে উন্নতদেশে পরিণত হবে?

লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও হাতীবান্ধায় দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। এখনো পানিবন্দী আছেন ৯৫টি গ্রামের লাখো মানুষ। পানিবন্দী মানুষের অনেকে নিরাপদে চলে আসলেও অধিকাংশই রয়েছেন বিপদজনক অবস্থায়। অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নৌকায় করে নিয়ে আসছেন বন্যামুক্ত এলাকায়।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোর মধ্যে মোগলহাট, সানিয়াজান, গড্ডিমারী, মধ্য গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ী, চর ভোটমারী, গোবর্ধন, বালাপাড়া, কালমাটি, কুলাঘাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন।

তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা নামকস্থানে ভারত একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে যার গেট রয়েছে ৫৪ টি । এ গেটগুলো দিয়ে ভারত নিজেদের ইচ্ছা মতো এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে আসছে। তিস্তা ব্যারেজের উজানে অবস্থিত গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় গত দু’সপ্তাহ ধরে এ জেলায় লাখো মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। এখনো উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় আরো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।

বন্যাকবলিত এলাকার বয়োবৃদ্ধ মফিজুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর একমাত্র প্রবেশ মুখে ভারতের গজলডোবা নামকস্থানে বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ ও বৃষ্টি বা বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে এ প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। পানির আকস্মিক আসা যাওয়ার ঘটনায় তিস্তা পাড়ের মানুষেরা চরম আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন। শুস্কু মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন পানি পাওয়া যায়না । আবার বর্ষা মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন হয় না তখন নিজেদের খেয়াল খুশি মতো পানি ছাড়ছে ভারত।

এই পরিস্থিতিতে নদীতীরের মানুষদের দূর্ভোগের শেষ নেই। আমরা আশা করবো, সরকার দ্রুত বন্যা নিরাময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সেই সাথে অবস্থা সম্পন্ন মানুষদের প্রতি আহব্বান থাকবে, সামথ্যনুযায়ী সেই সকল মানুষদের পাশে দাড়ান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.