![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বাংলামেইল’ এর সম্পাদকসহ তিন সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা শুনে বিখ্যাত জার্মান কবি নায়মোলারের কথা মনে পড়ে গেল। আপনারা “নায়মোলারের অনুশোচনা” নামক এই প্রবন্ধটি অনেকেই পড়ে থাকতে পারেন। এই জার্মান চিন্তাবিদের পুরো নাম মার্টিন নায়মোলার। নায়মোলার প্রথম মহাযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ইউ কোট (সাবমেরিন) ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরবর্তি সময়ে তিনি নাৎসি ডিক্টেরশিপের কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেন। সে জন্য ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তাকে নাম মাত্র শাস্তি দিয়ে মুক্তি দিলেও,হিটলার তাকে সহজে ছাড়েননি। হিটলার তার ব্যক্তিগত নির্দেশনায় নায়মোলার কে গৃহবন্দি করে রাখেন। যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে নায়মোলার কে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়। জার্মানির বুদ্ধিজীবীদের নিস্ত্রিয়তা ও সাহসের অভাবে কিভাবে নিজেদের এবং বিশ্বের সর্বনাশ করেছেন,সে কথাই নায়মোলার তাঁর গ্রন্ধে উল্লেখ করেছেন।
নায়মোলার অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছেন, “প্রথমে নাৎসিরা এসেছিল কমিউনিষ্টদের ধরতে,আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি কমিউনিষ্ট ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়ন পন্থিদের ধরতে আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ট্রেড ইউনিয়ন পন্থি ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে,তখনও আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ইহুদি নই।
তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো,তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করবার অবশিষ্ঠ কেউ ছিল না”।
বর্তমান সরকারের সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা মূলত আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দিয়েই শুরু হয়। সাংবাদিকদের মাঝে একটি প্রচলিত রীতি রয়েছে যে, সাংবাদিক হবে বাম আদর্শের! কিন্তু এই মাহমুদুর রহমান বাম আদর্শের ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ধর্মভীরু মানুষ। আর ধর্মভীরুতার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা কোন প্রতিবাদ করেন নি। কারণ মাহমুদুর রহমান তাদের বাম আদর্শের জ্ঞাতি ভাই ছিলেন না। সেই সময় অনেককেই বগল বাজাতে দেখেছি। আর এখনো কেউ কেউ সরকারকে পুরনো কাসুন্দি মনে করিয়ে দিয়ে বগল বাজিয়ে সরকারের নেক নজর আদায় করেন।
এরপর আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু বরাবরেই মতই আমাদের পত্রিকার সম্পাদকরা নিশ্চুপ থেকেছেন। সরকারের সমস্ত কাজে নীরব সম্মতি জানানোর মত মাহমুদুর রহমান মান্নার বেলাতেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন। বিশিষ্ঠ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তার আগে ছয় মাস জেল খাটতে হলো। প্রেসক্লাবের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করা হলো তারপরো কোন সাংবাদিক কিংবা সম্পাদক জোরালো প্রতিবাদ জানালেন না।
আর এইতো সেদিন, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হলো। তিনি নাকি বাংলাদেশে বসে নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রী পুত্রকে হত্যার পরিকল্পনার করেছেন। এরকম এ্কটি ঠুন্ক অভিযোগে এই প্রবাীণ সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হলেও কোন পত্রিকা থেকে প্রতিবাদ করা হয় নি। সাংবাদিকদের মাঝ থেকে প্রতিবাদ করা হয় নি। চলমান সপ্তাহেই কোন কারণ ছাড়াই ৩৫ টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হল।
গতকাল একটি হাস্যকর অভিযোগে বাংলা মেইল পত্রিকার সম্পাদক এবং সহকারী সম্পাদকসহ তিনজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের পত্রিকাওয়ালা যেমন আচরন করে এই গ্রেফতারকৃতদের বেলাতেও সেরকমই আচরন করছে। বরঞ্জ এদের বেলাতে কোন কথাই বলতে চাচ্ছে না। প্রথম আলোকে দেখলাম খুব ছোট্ট করে নিউজ করেছে। বাংলামেইল সম্পাদককে যেমন কারো বেলায় প্রতিবাদ করতে দেখিনি আজ তার জন্যও প্রতিবাদ করবার কোন মানুষ নেই। এ যনে নায়মোলারের অনুশোচনার সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়,দালালী করা যাদের স্বভাব তাদের ভিতরে কি কোন অনুশোচনা জাগবে?
আসুন দেখি বাংলামেইল এর অপরাধ কোথায়?
গতরাতে বাংলামেইল একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর একটি নিউজর এর স্কিনশর্ট দিয়ে বলে,বিমান দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের মৃত্যুর গুজব! সেই স্কিনশর্টা দেখুন,
এমন একটি সংবাদে বাংলামেইল কোন অপরাধটা করল। বরঞ্জ তারা তো সরকার প্রধানের তোষামোদিই করতে গেছে। তারা সেই সংবাদে উল্লেখ করেছে, এমন একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ কি করম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফেসবুকে কে কে আনন্দ প্রকাশ করেছে তাদের নাম এবং স্ত্রীণশর্ট বাংলামেইল দিয়েছিল।
এটাও যে আর আট দশটা নিউজের মত তেলামারা রিপোর্ট ছিল তা যেকেউ বলে দিতে পারবে! এই নিউজ করে বাংলামেইল হয়তো সরকারের নেক নজর আশা করেছিল। কিন্তু তাদের উপর নজর ঠিকউ পড়ল, আর সেটা র্যাবের নজর। তেল মারতে গিয়ে সম্পাদক এবং সহকারী সম্পাদক সহ তিন সাংবাদিককে এখন র্যাবের কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে।
যাইহোক আমরা চাই না, জাতির বিবেক এই সাংবাদিক সমাজ নিগ্রহের স্বীকার হোক। আমরা চাইনা কোন মাধ্যম সরকারের রোষানলের স্বীকার হোক। আমরা এটাও চাই না, বাংলাদেশে আবারো বাকশাল কায়েম হোক। কারণ, গণমাধ্যমের উপর এহেন নগ্ন হস্তক্ষেপ বার বার সেই বাকশালকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:১০
প্রািন্ত বলেছেন: সাংবাদিকদের সাথে এর চেয়ে ভাল কিছু হবে না। কারণ এদেশের তেলবাজি করা সাংবাদিকের অভাব নেই। অভাব নেই ক্ষমতার হালুয়া রুটির উচ্ছিষ্টভোগী সাংবাদিকেরও। এরা ৫% ভোট নিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা আকড়ে ধরলে বাহবা দেয়, দেশে নির্বিচারে অরাধ দমনের নামে বিরোধীদল দমন করা হলেও এরা স্বস্তির ঢেকুর তোলে। এরাও একদিন বুঝবে যেদিন হনুমানের হাতের মস্ত গদাটা এদের পশ্চাৎদেশে স্বজোরে আঘাত করবে। তবে সেদিনও প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না। যদিও আমি নিজেও একজন সাংবাদিক।