নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাকিব১

নাকিব১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিরোশিমা, নাগাসিকা এবং আধুনিক বর্বরতার ইতিহাস!

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৪২

‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ এই শব্দটাকে এখন প্রায় সবাই পাইকারী হারে ব্যবহার করে থাকেন। যেমন কোন ব্লগারকে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হলে তাদের স্বপক্ষের লোকজন, নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে বলেন এ কোন নির্মমতা, এ কেমন বিচার ! এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আবার পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে প্রগতিশীল নারীদেরকে যখন লাঞ্চিত করা হল, তখনো এক শ্রেণির মানুষ এটাকেও মধ্যযুগীয় বর্বরতা বললেন।

আমি ঠিক জানি না, মধ্যযুগে কি আমাদের চেয়ে বর্বর মানুষ ছিল কি না! মধ্যযুগে কি বর্তমান সময়ের চেয়েও আধুনিক প্রগতিবাদি মানুষ ছিল, যারা কিনা নিত্য নতুন পন্থায় মানুষকে হত্যা করতে পারে! মধ্য যুগে কি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ানক অস্ত্র পারমানবিক বোমা ছিল, যা দিয়ে একদিনে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করা যায়! মধ্যযুগে কি পারমানবিক অস্ত্রের ঝান্ডা দেখিয়ে দু’দেশ হুমকি প্রদান করত! ভারত পাকিস্তান দু’টো দেশই যা নিয়মিত করে থাকে। নাহ মধ্যযুগে পারমানিবক বোমা ছিল না! আর তাদের এতো শিক্ষাও ছিল আর ভরি ভরি সার্টিফেকেটও ছিল না যা দিয়ে নিজেদেরকে শিক্ষিত বলে দাবি করতে পারে! কিন্তু আধুনিক সময়ের দাবিকরা শিক্ষিতরাই সবচেয়ে বেশি বর্বর এবং নির্মম! আজকের শিক্ষিতরাই সবচেয়ে বেশি জুলুমবাজ! যা মধ্যযুগকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে।

আজ নাগাসিকা দিবস! মনে পড়ে ইতিহাসের এই দিনটির কথা! আর এর ঠিক তিন দিন আগে চলে গেল,হিরোশিমা দিবস। এই হিরোশিমা এবং নাগাসিকায় যে দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে,তা ম্যানহাটন প্রকল্পে তৈরী করা হয়। ম্যানহাটন প্রকল্প পারমানবিক বোমা তৈরীর জন্য প্রতিষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রকল্পের নাম যাতে যুক্তরাজ্যের সক্রিয় সহযোগিতা ছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত পারমানবিক বোমার মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল। একে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক ও শৈল্পিক প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।এই প্রকল্পের জন্য মোট ১৭৫,০০০ লোক কাজ করেছিল এবং এতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ।

প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জে. রবার্ট ওপেনহেইমার।প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিপ এইচ আবেলসন, হান্স বেটে , সেথ নেডারমেয়ার, জন ফন নিউমান, ইসিদোর ইজাক রাবি, লিও জিলার্দ, এডওয়ার্ড টেলার, স্তানিসল' উলাম, নিল্‌স বোর, জেম্‌স চ্যাডউইক, এনরিকো ফের্মি, রিচার্ড ফাইনম্যান, অটো ফ্রিশ্‌চ, জর্জ কিস্তিয়াকোভ্‌স্কি, আর্নেস্ট লরেন্স, ফিলিপ মরিসন, হ্যারল্ড উরে এবং ভিক্টর ওয়েইজকফ। প্রকল্পে কাজ শুরু করার আগেই এদের মধ্যে ৫ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং যুদ্ধের পর এখান থেকে আরও ৩ জন নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।ম্যানহাটন প্রকল্প ৪টি পারমানবিক বোমা বানিয়েছিল। এর মধ্যে ট্রিনিটি নামক প্রথম বোমাটি নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর নিকটে পরীক্ষামূলকভাবে বিস্ফোরিত করা হয়। অন্য দুটি লিটল বয় ও ফ্যাট ম্যান বোমা ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট এবং ৯ আগস্ট তারিখে যথাক্রমে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত হয়। শেষ বোমাটি আগস্টের শেষ দিকে জাপানের উপর নিক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই জাপান আত্মসমর্পণ করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৪২ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪৬ সালে একে এটমিক এনার্জি কমিশনের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। এর ফলে মূলত ম্যানহাটন প্রকল্পের সমাপ্তি ঘটে।

১৯৪৫ সালের ৬ আগষ্ট হিরোশিমাতে লিটল বয় নামক বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়।

লিটল বয় এর বিস্তারিতঃ

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: ইউরেনিয়াম -২৩৫
ওজন: চার হাজার কেজি, দৈর্ঘ্য: ৯.৮৪ ফুট, পরিধি: ২৮ ইঞ্চি
বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ সুপারফোর্টেস
পাইলট এর নাম : কর্নেল পল টিবেটস
বোমা পতনে সময় লাগে : ৫৭ সেকেন্ড
মূল আঘাত: শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক
বিস্ফোরণের মাত্রা: ১৩ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য

হিরোশিমার ওপরে ফেলা লিটল বয়-এর বিস্ফোরণে উদ্ভূত ব্যাঙের ছাতার মেঘ।


এর ঠিক তিনদিন পর নাগাসিকা শহরে ফ্যাট ম্যান বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়

ফ্যাট ম্যান এর বিস্তারিতঃ

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: প্লুটোনিয়াম-২৩৯
ওজন: চার হাজার ৬৩০ কেজি, দৈর্ঘয: ১০.৬ ফুট, পরিধি: পঁাচ ফুট
বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ বক্সকার
পাইলট এর নাম : মেজর চার্লস ডব্লু সুইনি
বোমা পতনে সময় লাগে : ৪৩ সেকেন্ড
মূল আঘাত: মিতসুবিশি স্টিল ও অস্ত্র কারখানা এবং মিতসুবিশি-উরাকামি সমরাস্ত্র কারখানার মাঝে
বিস্ফোরণের মাত্রা: ২১ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য নাগাসাকির

নাগাসাকির ওপর ফেলা ফ্যাট ম্যান নামের নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণে উদ্ভূত ব্যাঙের ছাতার মেঘ অধিকেন্দ্র থেকে ১৮ কিমি (১১ মাইল বা ৬০,০০০ ফুট) ওপরে উঠছে

অনুমান করা হয় যে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যান। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন।জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ । নাগাসাকি আক্রমণের ছয় দিন পর ১৫ আগস্ট মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয় জাপান। সফল হয় ম্যানহাটন প্রজেক্ট'!

মাত্র দু’টি বোমা যখন এতোগুলো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় তখন কি আপনি তাকে বর্বরতা বলবেন না! এটা কি মধ্যযগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় না? আমরা শিক্ষিত হচ্ছি বটে কিন্তু ক্ষমতার মোহ আমাদের কে সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ক্ষমতার মোহ আমাদেরকে বর্বরতার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। এই হিরোশিমা এবং নাগাসিকা এখনো আমাদেরকে এই সব বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরী থেকে বিরত রাখতে পারিনি! এইসব মরণাস্ত্র তৈরী করতে গোটা বিশ্ব হাজার হাজার কোটি কোটি ডলার খরচ করছে। তার একটি ছোট্ট বিবরন দিচ্ছি।

* আমেরিকা পারমানবিক অস্ত্র গবেষনায় প্রতি বছর ২৭ মিলিয়ন ডলার ব্যায় করছে।

*এই মুহূর্তে ‍পৃথিবীতে ১১ হাজার সক্রিয় পারমানবিক অস্ত্র আছে। যা হিরোসিমার হিসেবে, ২৬০,৭০০,০০০ মানুষ মারতে সক্ষম। সক্রিয় বোমাগুলোর মধ্যে ৬৩৯০ টা আমেরিকা , ৩২৪২ টা রাশিয়া এবং ২০০ টা বৃটেনের দখলে রয়েছে।

*আমেরিকা পারমানবিক স্থাপনার জন্য ১৫,৬৫৪ বর্গমাইল ব্যবহার করছে যা বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগের সমান।

* আরো চারটি দেশ বর্তমানে পারমানবিক অস্ত্রের মালিক হয়েছে বা হচ্ছে - তারা হলো ভারত, পাকিস্থান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া।

* পাঁচটি দেশ পারমানবিক শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেদের দাবী করে - তারা হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, বৃটেন এবং আমেরিকা।

* ১৯৫২ সালে Elugelab, Micronesia নামে একটি দ্বীপ পারমানবিক পরীার সময় বাস্পীভুত হয়ে যায়।

* সবচেয়ে ছোট পারমানবিক বোমাটির নাম “ÒDavy Crockett" যার দৈর্ঘ্য ১৬ ইঞ্চি মাত্র।

* বর্তমানে চল্লিশটা দেশের পারমানবিক প্রযুক্তি অর্জন করেছে - যাদের মধ্যে মিশর এবং দনি কোরিয়া অন্তর্ভূক্ত।

* ইসরায়েল এই যাবৎ ২০০ টি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসেস করেছে।

* ভারত এই যাবৎ ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রস্তুতি নিয়েছে।

* পাকিস্থান ৭৫টি অস্ত্রের প্রস্তুতি নিয়েছে।

* চেরনোবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়ের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ তার তেজষ্ক্রিয়তা হারাতে ৯০০ বৎসর সময় লাগবে।

( BILL DIETRICH, Seattle Times staff reporter থেকে সংগৃহিত)

এইসব কিছু আমাদেরকে বলে দেয়, আমরা আধুনিক সমাজের মানুষ সেই সাথে হিংস্রতা ও বর্বরতাকেও আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: বর্বরতার ধরনটা বদলেছে মাত্র ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.