নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাকিব১

নাকিব১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৫ মিনিটের সেই ঝড় আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করছে।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১৪

শহীদ আব্দুল মালেক। এই নামটির সঙ্গে আমার জন্ম থেকে পরিচয়। এই মানুষটির জীবনী পড়তে গিয়ে আমি অনেকবার কেঁদেছি! এমন মানুষ বাংলা আর কখনো পাবে কি না তা আমি জানি না। এই মানুষটির জন্য স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী এই আব্দুল মালেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍তুখোড় ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম আব্দুল মালেক শহীদ।

তৎকালীণ পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের নতুন শিক্ষানীতি চালু করার কথা ঘোষনা দিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালে ১০ সদস্যের একটি টিম গঠন করে শহীদ আব্দুল মালেক তৎকালীণ শিক্ষামন্ত্রী এয়ার মর্শাল নুর খানের সাথে দেখা করেন এবং ইসলামী শিক্ষানীতি চালু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। শহীদ আব্দুল মালেকের পর দেশের অন্যান্য অনেক সংগঠনও একই দাবি করেন। আর এই দাবির উপর জনমত জরিপে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালের ২রা আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন(নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এই আলোচনা সভায় বাম পন্থিরা ব্যাপকহারে বক্তব্য রাখেন! কিন্তু বিপরীতে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। আর এই ৫ মিনিটেই তিনি বিচারকদের মন এবং মগজকে নাড়িয়ে দেন। বিপ্লবী ঝড় সৃস্টি করেন। তিনি বলেন, "Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum- it must impart a unique and integrated system of education which can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam. We need Common set of cultural values, not one set of cultural values- তিনি বক্তব্যের এই অংশটিকে যুক্তি সহকারে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমন্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা শহীদ আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে একটি সার্বজনিন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ অথচ সংক্ষপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখা বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী বক্তাদের। সকল বক্তার বক্তব্যের মাঝ থেকে নীতি নির্ধারক এবং উপস্থিত শ্রোতা-সুধীমন্ডলী যখন আবদুল মালেকের বক্তব্যকে পুর্ণ সাপোর্ট দেয় তখন আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে শহীদ আব্দুল মালেকের উপর।

নিপার আলোচনা সভায় বামপন্থিরা নিজেদের দাবিকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে না পারায়, তারা ডাকসু-র মাধ্যমে ১২ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভায় আব্দুল মালেক বক্তব্য রাখতে চাইলে তাকে বক্তব্য দান থেকে বিরত রাখা হয়। সেই আলোচনা সভায় বামদের এক বক্তা ইসলামকে আঘাত করে একটি মন্তব্য করলে সাধারণ ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আর এই পরিস্থিতিতে বাম-রামরা একত্রিত হয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর আক্রমন চালায়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাাঁচার জন্য সঙ্গিসাথীদের দ্রুত বিদায় করে দিয়ে, টিএসসির পাশ দিয়ে নিজ হলে ফিরতেছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক। হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের উপর মাথা রেখে উপরে ইট ও লোহার রড- হকিষ্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়।


তিনদিন পর ১৫ আগষ্ট শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তিপুর্ণ বক্তব্য দেয়া ইসলামের এই সুমহান বক্তা। ১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট বিশ্বের যে প্রান্তেই শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছেছে ইসলাম প্রেমিক প্রতিটি মানুষের চোখের পানি সেখানে ঝরেছে। কেঁদেছে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনতা। কেঁদেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট পাথর! যেখানে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ইসলামী শিক্ষার প্রসারের কাজে ছুটে বেড়িয়েছেন এই অসাধারণ মানুষটি।


শহীদ আব্দুল মালেকের সেই আত্নত্যাগ বৃথা যায় নি। লক্ষ তরুনের ইসলামী আন্দোলনে সামিল এবং ইসলামী শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে তারা শহীদ আব্দুল মালেকের স্বপ্ন পূরন করে যাচ্ছে। শহীদ আব্দুল মালেক মরেনি। তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ তরুনের ইসলামী চেতনার মাঝে। তিনি বেঁচে আছেন তরুনদের ইসলামী শিক্ষার প্রতি ভালোবাসার মাঝে। লক্ষ তরুন আজকের এই দিনটিকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসেবে তাদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.