নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাকিব১

নাকিব১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত, আজকের মিডিয়া সমাজ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

পৃথিবীতে শারীরিক অসুস্থতা যেমন দেখা যায় তেমনি মানসিক অসুস্থতাও দেখা যায়। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হয় এবং কবর জীবনে পদার্পন করতে হয়। আর মানসিক অসুস্থতা নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে তাকে পাগলা গারদে অবস্থান নিতে হয়। সেই মানসিক অসুস্থতা গুলোর মধ্যে একটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার। বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলো হঠাৎ করে জেগে ওঠা মুডের ফলে যে মানসিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে 'ম্যানিয়া' বলা হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা . এম এ. হামিদ বলেছেন ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার এক ধরনের গুরুতর আবেগজনিত মানসিক রোগ যাকে দ্বিপ্রান্তিক মানসিক ব্যাধি বলা যেতে পারে। ‘বাই (Bi) অর্থ হচ্ছে ‘দুই’ আর ‘পোলার (Polar)’ বা পোল হচ্ছে প্রান্ত। এ অসুখের এক প্রান্তে থাকে ‘ডিপ্রেশন’ (Depression) বা বিষণ্যতা এবং অন্য প্রান্তে থাকে ম্যানিয়া (Mania)।

ডিপ্রেশনে মনের আবেগের উদ্দীপনা কম থাকে। মনে বিষণতা অনুভব হয়। কোনো কাজ ভালো লাগে না। শরীরে ও মনে অবসাদ অনুভব হয় আর অন্যদিকে ম্যানিয়াতে মনের আবেগের উদ্দীপনা অতিরিক্ত অনুভূত হয়। সব কিছু বেশি বেশি ভালো লাগে। মনে অতিরিক্ত উত্তেজনা কাজ করে ইত্যাদি। একই ব্যক্তির যদি এক সময় ম্যানিয়া (Mania) আর অন্য সময় ডিপ্রেশন (Depression) হয় তখন তাকে আমরা বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলে থাকি। এ রোগটা এপিসোডিক (episodic) অর্থাৎ রোগীর জীবদ্দশায় মাঝে মাঝে ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে এবং মাঝখানের সময়টা রোগী সম্পূর্ণ ভালো থাকবে’।

আমাদের মিডিয়ারা আজ বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামক মানসিক রোগে ভুগছে। তারা এক দিক থেকে হতাশা গ্রস্থ আবার ভিন্ন দিক থেকে তারা এই হতাশার তাড়না থেকেই অতিরিক্ত আবেগপ্রবন হয়ে পড়ছে।



আমরা যে যাই বলি না কেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মিডিয়ারা সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে। তারা উৎকন্ঠায় থাকে এই বুঝি কোন ভুল হয়ে গেল। আর সেই ভুলের খেসারত হিসেবে একুশে টেলিভিশনের সাবেক মালিক এবং এক সময়ের শেখ রেহানার একান্ত আস্থভাজন আব্দুস সালামের মত জেলে যেতে হবে! সেই সাথে নিজের অজান্তেই টিভি চ্যানেলটাও বিক্রি হয়ে যাবে। এরকম একটি ভয়ের কারণেই আমাদের মিডিয়াওয়ালারা হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। আর সেই হতাশা তাদের দিকে আর একটি নতুন দিক উন্মোচন করে দিয়েছে। সেই দিকটি বর্তমানে বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে আক্রান্ত রোগীর মত অতিরিক্ত আবেগী করে দিচ্ছে। সেই আবেগের তাড়নায় মিডিয়াওলারা এবং সেই সাথে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার এথিকসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। যা আগামী প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্যে কাল হয়ে দাড়াবে।

মিডিয়ার হতাশার কথাটা তো বললাম। এইবার বলি অতি আবেগের জায়গাটির কথা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিডিয়ার অতি আবেগের জায়গাটা কোন ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই জামায়াত ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্রশিবির দখল করে নিয়েছে। সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হত্যাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে এক যোগে শিবির কর্মী গ্রেফতার শুরু হয়ে যায়। ঘটনা ঘটল রাজশাহীতে আর তার প্রভাব পড়ল ৫৬ হাজার ৯৭৭ বর্গমাইলের গোটা বাংলাদেশে। কয়েকহাজার শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করা হল। ঠিক তখনই মিডিয়ারা তাদের আবেগের জায়গাটা কিছুটা আঁচ করতে পারল।

তারপর আসল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করে যখন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল তখন মিডিয়া তাদের আবেগের স্থানটির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হল। এই আবেগ কাজে লাগিয়েই তারা হতাশা কিংবা বিষন্নতাকে দমিয়ে রাখতে পারবেন। সেই প্রমাণও মিলেছে। আন্তর্জাতিক ট্টাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে স্কাইপি সংলাপ ফাঁস হওয়ার পর মিডিয়া যেন হঠাৎ করেই নীরব হয়ে গেল। হতাশাটা আরো বেশি জেকে বসল। এখন এই কেলেঙ্কারি নিয়ে জল ঘোলা করলে তো আমার মিডিয়া ব্যবসাটার জলটাও সরকার ঘোলা করে দিবে! তখন আমার পেটের কি হবে?

এই চিন্তা থেকে তারা অপেক্ষা করতে লাগলেন! সবুরে মেওয়া ফলে বলে নাকি একটা কথা আছে। অপেক্ষার কারণে মিডিয়ার জন্য সেই মেওয়া ফলেছিল। সেই মেওয়াটি ছিল আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। স্কাইপি সংলাপ যারা করল তাদের নিয়ে টু শব্দটিও হল না কিন্তু যত উচ্চবাচ্য হল মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে মাহমুদুর রহমান আজও কাশিমপুর কারাগারের ভিআইপি সেলে মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

এরকম নানাবিধ ঘটনার মধ্য দিয়ে মিডিয়ারা নিশ্চিন্ত হল, যাই ঘটুক জামায়াতকে বাঁশটা দিতে পারলেই সরকারের আস্থাভাজন হওয়া যাবে। তখন পেটে লাত্থি খাওয়ার ভয়টা তুলনামূলক অনেক কমে যাবে। যা ভাবা সেই কাজ। জামায়াতের পিছনে দিন রাত ক্যামেরার লেন্স ফিট করে রেখেছে আমাদের মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা। জামায়াত ভাত খেলেও দোষ বের করে আনবার চেষ্ঠা করে। আবার সেই ভাতের চাল যুদ্ধাপরাধী কিনা সেটারও অনুসন্ধান ‍শুরু করে। জামায়াত যে টুপি পরে নামায পড়ে সে টুপি পাকিস্তান থেকে আসল কিনা এই বিষয়টা নিয়েও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির অনুসন্ধান মূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’ হয়তো একটি এপিসোড বানাতে পারে। এরকম যদি কিছু হয়েও যায়, তাতে দেশবাসীসহ আমার হতবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ এর চেয়ে আরো অনেক বিষয়ে মিডিয়ারা আমাদেরকে হতবাক করেছে।

ব্যারিষ্টার তুহিন মালিক বলেছিলেন, আওয়ামিলীগ হল এক আজব ফিল্টার। আওয়ামিলীগের ভিতর দিয়ে যা কিছুই ঠোকানো হোক না কেন তা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়ে আসে। আর জামায়াতের ভিতরে যা কিছুই প্রবেশ করানো হোক না কেন শেষ মেষ সে যুদ্ধাপরাধী হয়ে বের হয়ে আসে। সত্যিই এ এক আজব ফিল্টার। আর সেই আজব ফিল্টারের নতুন করে দেখা মিলল, সম্প্রতি জামায়াত কতৃক মকবুল আহমাদ কে নতুন আমীর হিসেবে ঘোষনার পর।

যুদ্ধাপরাধের বিচার একদম শেষ পর্যায়ে। জামায়াতের সাবেক নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অনেকটা স্বত্বির নিঃশ্বাস ফেলছেন সরকারের মন্ত্রীমহল থেকে শুরু করে আওয়ামিলীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। আর দুই একজন জামায়াত নেতার বিচার বাকি আছে। এই আমলে সেটাও হয়ে যাবে। কিন্তু নতুন করে আর এক উটকো ঝামেলা ‍জুটল। জামায়াত তাদের নতুন আমীরের নাম ঘোষনা করল। নতুন আমীরকে তো দেখে বেশ বয়স্কই লাগতেছে। অতএব তাকেও যুদ্ধাপরাধী বানানো যায়। আর এই যুদ্ধাপরাধী বানানোর কাজটা করছে দরবেশ বাবা সালমান এফ রহমানের মিডিয়া ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন।



সংবাদের ভিতরে মকবুল আহমাদকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর অর্থ দাড়ায় মকবুল আহমাদ একজন অপরাধী। কোন ধরনের অনুসন্ধান এবং তদন্ত ছাড়াই আমাদের মিডিয়ারা জামায়াতের নব নির্বাচিত আমীরকে রাজাকার বানিয়ে দিলেন।

ভাই আমি জানি, ইতিমধ্যেই অনেকেই আমাকে গালি দেবার জন্য সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলেছেন। কারণ আমরা বাঙ্গালীরা যাকে দেখতে পাই না তার হাটা চলাও দেখতে পাই না। তার সামান্য হাটা দেখলেই পিত্ত জ্বলে যায়। এতোক্ষনে নিশ্চয়ই আমাকে রাজাকার গালি দিয়ে ফেলেছেন। আমি সাংবাদিক বিভাগের ছাত্র। আমি কোন দলকানা মানুষ নই। আমি যে প্রফেশনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি সেটাকে পরিষ্কার দেখতে চাই। সেটাকে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর মত মানসিক রোগ থেকে মুক্ত দেখতে চাই। মিডিয়াকে হতাশা এবং অতি আবেগের দোদুল্যমান অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে চাই। এই চাওয়া গুলো যদি হয় অমূলক কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী হয়, তাহলে আমাকে রাজাকার বলতে পারেন! বিশ্বাস করুন, আমার এক বিন্দুও আফসোস থাকবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

নির্ঝরের_স্বপ্ন বলেছেন: কঠিন সত্য কথা বলেছেন - এখন সামলাবেন কি করে তাই ভাবুন।

জামায়াত আওয়ামী লীগের কোন ক্ষতি করেনি, সাইজেও তার আওয়ামী লীগের চেয়ে কত ছোট! তারপরেও তাদের নেতা উপনেতা পাতিনেতা থেকে শুরু করে প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশ বিরতিহীন ভাবে জামায়াতের পেছনে লেগে রয়েছে তাদের সর্বনাশ করার জন্য। তদের কি লজ্জাও করেনা এজন্য!

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৪০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অতিরিক্ত চর্বিত চর্বনের জন্যই আমরা এগুতে পারি না। মিডিয়া আর বুদ্ধিজীবিরাও অনেকাংশে দায়ী...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.