![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াকলীন সময়ে এ্যাসেম্বেলীতে হয়তো অনেকেই অংশ গ্রহণ করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে উঠার পরও রোদে ঠায় দাড়িয়ে এ্যাসেম্বেলী করতে হতো। আমাদের স্কুলগুলোর এ্যাসেম্বলী শুরু হয় কুরআন তেলোয়াত দিয়ে। তারপর গীতা পাঠ আবার কখনো ত্রিপেটকও পাঠ করা হয়। এরপর গতানুগতিক ধারার শপথ অনুষ্ঠান এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এ্যাসেম্বেলীর সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
স্কুলে কুরআন তেলোয়াত এর গুরু দায়িত্বটা আমাকেই পালন করতে হতো। আমি যে সূরাগুলোর অর্থ জানতাম শুধু সেগুলোই তেলোয়াত করতাম। যদিও সেগুলো আয়াতের দিক থেকে অনেক ছোট। কিন্তু যখন সংস্কৃত ভাষায় গীতা পাঠ করা হতো তখন ভাবতাম, ও যা পড়তেছে তা কি বুঝে পড়তেছে? নাকি মুখস্ত করে পড়তে হয় বলেই গীতা পাঠ করছে! ত্রিপেটক পাঠ করার সময় আমার ভাবনার জায়গাটা যেন আরো বেশি তালগোল পাকিয়ে যেত। এটা কোন ভাষায় পাঠ করছে? এ ভাষার কিছুই্ তো পরচিতি লাগতেছে না। শুধু সবশেষে বুঝলাম, সাব্বির সত্তা সুখীতা ভবনতে পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক। আমার বোঝার সীমা এই শেষ বাক্যটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কলেজে ওঠার পরও বিষয়গুলো নিয়ে আমি ভাবতাম। আমাদের স্কুলের যে মেয়েটি গীতা পাঠ করতো, ওর নাম মিতা। মিতার সঙ্গে একদিন দেখা হল। ওকে বললাম, আচ্ছা! তুমি যে গীতা পাঠ করতে তা কি বুঝে পাঠ করতে? তুমি কি সংস্কৃত ভাষা বোঝ? সে আমার কথাশুনে হো.. হো.. হো.. করে হেসে উঠল! যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জোকসটা আমি এই মাত্র তার সামনে উপস্থাপন করলাম। ওর আম্মুও ছিল আমাদের স্কুলের শিক্ষিকা। ও হাসতে হাসতে বলল, আমি তো পরের কথা! আমার পিছনে আম্মু দাড়িয়ে থেকে কিছু বুঝতে পারতো কি না দৃঢ় সন্দেহ আছে! আর সংস্কৃত ভাষার আমি ‘স’ ও বুঝিনা। এই গেল সনাতন ধর্মের গীতা পাঠের অবস্থা।
আমার ক্লাসমেট সংকর খালকো। ও বৌদ্ধধর্মের ত্রিপেটক পাঠ করত। সংকরকে বললাম, তুই যে সব বলিস তা কি বুঝে বলিস? সংকর আমাকে যা উত্তর দিল তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সে বলল, ওসব আমাদের বুঝতে হবে না। পবিত্র ভাষা ওসব ভান্তেরাই (ধর্মগুরু) শুধু বুঝতে পারবে। আমি যদি বৌদ্ধ ভিক্ষু হবার শিক্ষা নেই তাহলেই বুঝতে পারবো। না হলে আমাদের মত সাধারণ মানুষ ওসব বুঝতেও পারবে না, আর পড়া তো আরো পরের কথা!
আমাদের সঙ্গে এরিক নামে এক খৃষ্টান ছেলে পড়তো। দেখতে অতিরিক্ত ফর্সা। তার চেহারাই তাকে আলাদা করে উপস্থাপন করে রাখতো। তার শ্বেতাঙ্গদের ন্যায় ফর্সা মুখটা তাকে কেন জানি খৃষ্টান বলেই পরিচয় করিয়ে দিত! যে কারো সঙ্গে নতুন পরিচয় হলে ওরা বলত, তুমি খৃষ্টান! তাই না?
সেই এরিককে একদিন বললাম, তুমি কি তোমার বাইবেলটা কখনো পড়েছো? তোমার বাইবেল এর আয়াত গুলো কি তুমি বুঝতে পারো? সে বলল, বাসায় একটা বাইবেল আছে। কিন্তু আব্বু আম্মুকেও কোনদিন বাইবেল পড়া দেখলাম না আর আমিতো পরের কথা! একদিন শুধু আব্বুকে বাইবেল নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। আব্বু বলেছিল, এগুলো আমাদের বোঝার সাধ্য নেই। ফাদাররাই এইগুলো বেশি ভাল বুঝতে পারবেন।
প্রায় সব ধর্মেরই দেখলাম একই অবস্থা। এই অবস্থাটা চালু হয়েছে আরো কয়েকশ বছর আগে থেকে। রোমান শাসকরা চার্চ এবং পাদ্রীদের দ্বারা ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্ঠা করত। রোমান শাসকরাই আইন করে বাইবেল পড়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এই কিতাব সাধারণ মানুষরা পড়ার যোগ্যতা রাখে না। শুধুমাত্র চার্চের সেবকরাই এই কিতাব স্পর্শ এবং পড়ার অধিকার রাখে। এবং চার্চের ফাদাররা যে সিদ্ধান্ত দিবে তাই মেনে নিতে হবে। রোমান সাম্রাজ্য চলাকালীন সময়েই সরকারীভাবে খৃষ্ঠান ধর্মকে বহুঈশ্বরবাদী ধর্মে রূপান্তর করা হয়। সেই সময় থেকে ত্রিঈশ্বর বাদে বিশ্বাসী হয়ে খৃষ্টান ধর্মাবল্বীরা ধর্ম পালন করে আসছে।
ধর্ম এবং ধর্মগুরুরা মানুষের চিন্তাচেতনাকে ধর্মের কঠিন নিয়মের জালে আবদ্ধ রেখে তাদের চিন্তা চেতনাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে মুক্ত চিন্তা থেকে দূরে রাখতে চেয়েছে। ধর্ম মানুষের বুদ্ধির বিকাশ করতে দেয় নি। তাই তো মার্ক্স বলেছেন, “ধর্ম হল নিপীড়িত জীবের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, ঠিক যেমন সেটা হল আত্মাবিহীন পরিবেশের আত্মা। ধর্ম হল জনগণের জন্য আফিম। মানুষের মায়াময় সুখ হিসেবে ধর্মকে লোপ করাটা হল মানুষের প্রকৃত সুখের দাবী করা। বিদ্যমান হালচাল সম্বন্ধে মোহ পরিত্যাগের দাবিটা হল যে – হালচালে মোহ আবশ্যক, সেটাকে পরিত্যাগের দাবি। তাই ধর্মের সমালোচনা হল ধর্ম যার জ্যোতির্মণ্ডল সেই অশ্রু উপত্যকার (এই পার্থিব জীবনের) সমালোচনার সুত্রপাত।“
উপরের ধর্মগুলো বক্তব্যনুসারে আমিও মার্ক্সের কথার সঙ্গে একমত। আফিম যেমন মানুষের চিন্তা চেতনাকে আকড়ে ধরে রাখে। নির্জিব প্রাণীতে পরিণত করে রাখে। তেমনি ধর্মও মানুষের চিন্তা চেতনাকে নিয়ন্ত্রন করবার চেষ্ঠা করে। মানুষকে নির্জিব প্রাণী বানিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়। শোষন করতে চায়। ধর্মই তখন শোষকের ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইসলাম কত বড় শোষক? ইসলাম কতটা ভয়ানক আফিম? ইসলাম কতটা মানুষ নিয়ন্ত্রনকারী?
উপরের ধর্মগুলো নিয়ে চিন্তা করার পর ইসলামকে নিয়ে আমার মনে এই প্রশ্নগুলোর জন্ম হয়েছে। আসুন দেখি প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।
আমি এ্যাসেম্বেলীতে অধিকাংশ দিন সূরা ফাতিহা তেলোয়াত করতাম। কারণ আমি এই সূরার অর্থ জানতাম। এই সূরা আমাকে অনুপ্রাণিত করত। কিভাবে? আসুন তাহলে পুরো সূরাটি অনুবাদ করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি।
সুরা নং- ০০১ : আল-ফাতিহা
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ — বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম
বাংলা অনুবাদ : শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ -লামি-ন।
বাংলা অনুবাদ: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’ আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বাংলা উচ্চারণ : আররাহমা-নির রাহি-ম
বাংলা অনুবাদ : যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
বাংলা উচ্চারণ : মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন
বাংলা অনুবাদ : বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
বাংলা উচ্চারণ : ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন
বাংলা অনুবাদ : আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
বাংলা উচ্চারণ : ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম
বাংলা অনুবাদ : আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
বাংলা উচ্চারণ : সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ—ল্লি-ন।
বাংলা অনুবাদ : সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। – আমিন।
সূরা অর্থগুলো খেয়াল করুন। প্রথমেই আছে, ‘শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু’। আমি আমার আল্লাহর নাম নিয়ে আমার দিনটি শুরু করছি। আমি এইকথাটি বুঝে শুনেই তেলোয়াত করছি এবং এই কথাটি বিশ্বাস করছি। মাঝখানে খেয়াল করুন আয়াতে বলা আছে, ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখাও’। এই আয়াতটির মর্মার্থ যদি ব্যাখ্যা করতে যাই তাহলে আজকের মূল আলোচ্য বিষয়টাই আর লিখতে পারবো না। এই কথাটি এতো বিশদ এবং অর্থবহ যা দিয়ে পুরো একটি বই লেখা সম্ভব।
এইবার আসি ইসলামের ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন কি বলে? ইসলামও কি সাধারণ মানুষকে কুরআন থেকে দূরে থাকতে বলে? শুধু মৌলবী মোল্লারাই কুরআন পড়তে পারবে? এই ব্যাপারে আল্লাহপাক কুরআনে বলেছেন, “ আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে এবং সত্য-সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে?" [সূরা বাকারাঃ ১৭০]
আবার আল্লাহপাক বলেছেন, “ (এই সত্যটি চিহ্নিত করার জন্য যদি কোন নিদর্শন বা আলামতের প্রয়োজন হয় তাহলে) যারা বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাত্রদিনের অনবরত আবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টিধারার মধ্যে, যা আল্লাহ বর্ষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করেন এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে ”। [সূরা বাকারা- ১৬৪]
এরপর আল্লাহপাক আবারো বলেছেন, “ কেন এরা কুরআন নিয়ে ভাবে না?” “এরা কি লক্ষ্য করে না কুরআনের প্রতি?” “আমরা স্পষ্টভাবে আয়াতগুলো বর্ণনা করি যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো”। [সূত্রঃ সূরা মুহাম্মাদ-২৪। সূরা নিসা-৮২। সূরা হাদীদ-১৭]
এখানেই অন্যান্য ধর্ম এবং ইসলামের মাঝে পার্থক্যটা খুঁজে পাবেন। অন্য ধর্মগ্রন্থগুলো যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে ভিন্ন দিকে স্বয়ং আল্লাহপাকই কুরআনের মাধ্যমে মানুষের চিন্তার দ্বার খুলে দিচ্ছেন। তিনি মানুষকে চিন্তা করতে আহব্বান করছেন। গবেষণা করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা কেন কুরআন নিয়ে ভাবো না?
অন্যান্য ধর্মগুলো আফিমের ন্যায় মানুষের চিন্তা বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রন করলেও ইসলাম মানুষের চিন্তা বুদ্ধির উন্মুক্ত করে দিয়েছে। মার্ক্সের তত্বানুসারে অন্যান্য ধর্মগুলোকে আফিমের সঙ্গে তুলনা করা গেলেও ইসলামকে কষ্মিনকালেও আফিমের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। যদি তারপরও কেউ ইসলামকে আফিমের সঙ্গে তুলনা করে কটাক্ষ করবার চেষ্ঠা করে তবে বুঝতে হবে তার ভিন্ন কোন মতলব রয়েছে। তার লক্ষ্যই হল ইসলামকে আঘাত করা আর অন্য কিছু নয়। কারণ ইসলাম একটি চিন্তার ভান্ডার। গবেষনার ভান্ডার। ইসলাম বিজ্ঞানের তত্বের ভান্ডার। পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
আশাবাদী অধম বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। মাশাআল্লাহ।