নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষানবিশকাল চলছে......

আফরোজ ন্যান্সি

ঈশ্বরী

আফরোজ ন্যান্সি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পর্ক

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০১



সকালটা খুব চমৎকারভাবে শুরু হতে পারতো যেহেতু রাত্রে ভাল ঘুম হয়েছে । শেষ রাতের বৃষ্টিটা ঘুমটাকে আরো রসালো করে দিয়েছিলো। এমন চমৎকার ঘুমের পরে এরকম বিদঘুটে সকাল বেমানান। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সকাল ৮ টা। রিনির আজ গ্রামে যাবার কথা । সকাল সাড়ে আটটায় ওর বাস। এতক্ষণে ওর বেড়িয়ে পরা উচিৎ ছিলো কিন্তু রান্নাঘরের খুটখাট আওয়াজ বলে দেয় রিনি বাসাতেই আছে। শুধুমাত্র এইটুকু ভাবনাই পুরো সকালটা মাটি করে দিলো। মেয়েটা ঠিক কি চাইছে আমি বুঝতে পারছি না।
রিনি আমার স্ত্রী। বছর তিনেক আগে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে এক বছর ভালই কাটছিলো। হঠাৎ রিনির মাথায় এক ধরণের পাগলামি চাপে। ওর কেবলই মনে হতে থাকে আমি অন্য এক নারীর সাথে গোপনে কোনো সম্পর্ক রাখছি। ওর এই ভাবনা দিনে দিনে যত প্রকট হতে থাকে আমাদের দাম্পত্য জীবন ততটাই অসহনীয় হয়ে উঠতে থাকে। প্রথম প্রথম অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি তবে এতে ওর সন্দেহ বেড়েছে বৈ কমেনি। সে যাই হোক তবে কাল সন্ধ্যার কথোপকথনের পরে রিনি যে থেকে যাবে এটা বিস্ময়কর। ওর ব্যক্তিত্বের সাথে এই কম্প্রোমাইজ মেলানো যায় না। ইনফ্যাক্ট বিয়ের পরপরই ওর ব্যক্তিত্বের সুদৃঢ়তাই আমাকে সবথেকে বেশী মুগ্ধ করেছিলো।
নিতান্ত অনিচ্ছা স্বত্ত্বে রান্নাঘরে উঁকি দিলাম। রিনি একমনে রুটি বেলছে । এই সকালের ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এক মুহূর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখে নিয়ে ও আবার কাজে মন দিলো। ওর এই উপেক্ষাটাই সবথেকে বিরক্ত করে আমাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় উপেক্ষা করার এক আশ্চর্য অসহনীয় ক্ষমতা নিয়ে ও জন্মেছে।
অফিসের জন্য বের হবো, দেখি রিনি বেরুচ্ছে। জিজ্ঞেস করাতে বললো বাসের শিডিউল ক্যান্সেল হয়েছে। এগারোটায় বাস । বুকের মধ্যে থেকে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। তিন বছরের পথটা এবার ফুরলো।

***
বাইরে এতটা রোদ ভাবতেও পারিনি। এই রোদে বেশীক্ষন হাটাও মুশকিল । অথচ কোথাও যাবার নেই আমার। যদিও আমি সোহান কে বলেছি আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকবো কিন্ত সেটা নিতান্তই রাগের কথা। বাবা মা মারা যাবার পর গ্রামে আর যাওয়া হয়নি। ভেবেছিলাম বেরুবার আগে অন্তত ও একবার বলবে থেকে যেতে অথচ কি নির্বিকার লোকটা । আমার থাকা না থাকাতে তার যেন কিছুই নয় । ভার্সিটির পরে বন্ধুদের সাথেও একটা গ্যাপ হয়ে গেছে । একমাত্র তমার সাথে কথা হতো মাঝে মধ্যে; শেষবার তাও কথা হয়েছে প্রায় ছ'মাস হলো।
আমার বিয়েটা হয়েছিলো বাবার ইচ্ছেতে। আমার কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ হয়নি । অবশ্য বিয়ের পর সোহানকে নিয়ে আমার কোনো আপত্তিও ছিলোনা কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ক্যামন সব গোলমেলে হয়ে গেলো। যদিও ও বলে এটা একান্তই আমার সাইকোলজিক্যাল সমস্যা কিন্তু আমি এই চিন্তাটা কোনভাবেই মাথা থেকে বের করে দিতে পারিনা। তবুও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম কিন্তু দিন দিন ওর অনাগ্রহটা এত প্রকট হয়ে উঠলো মনে হচ্ছিলো ও আর এক সেকেন্ড আমাকে সহ্য করতে পারছেনা।
***
রাত ন"টা। তমাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ওর ফোনটা অন্য কেউ রিসিভ করে জানালো ও দেশের বাইরে চলে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। সম্ভাব্য আরো কয়েকটা জায়গায় ফোন করেও কাউকেই পাওয়া যায়নি। রাত বাড়লে ঝামেলায় পরতে হবে। আশ্চর্য এতটা সময়ের মধ্যে সোহান একটা বার ফোন করে জানতেও চাইলো না কোথায় আছি। আচ্ছা আমি যদি বাসায় ফিরে যাই সোহান কি বিরক্ত হবে নাকি ওর ভালো লাগবে আমায় ফিরে পেয়ে? আমি জানি ও আমায় ভালবাসে । ফিরে গিয়ে যদি সরি বলি আমার অসুস্থতার জন্য ওকে কষ্ট পেতে হয়েছে বলে ও আর রাগ করে থাকবে না সে আমি নিশ্চিত জানি। কয়েকবার রিং বেজে গেলো সোহান ফোন ধরছে না । আমি কি সোজা বাসায় ফিরে যাবো !!
দরজায় দুবার বেল বাজার পর সোহান দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে চমকে গিয়েও সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে কোনোরকমে বলতে পারলো "ওহ তুমি!" । সোহানকে ক্যামন অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
"আমার কোথাও যাওয়ার নেই। আসলে ...."
"ভেতরে এসো "
দরজা বন্ধ করতে করতে ও খুব দ্বিধান্বিত ভাবে বললো
"বাসায় একজন গেস্ট... আমার পরিচিত.... আসলে একটু বিপদে পরেছে বলে..... "
ওর কথা শেষ হবার আগেই আমি মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। ওর পরনে কালো শাড়ি, চুরো করে খোপা বাঁধা , কালো টিপ কপালে। সোহানের পছন্দের সাজ এটা। আমার ক্যামন নির্লিপ্ত লাগতে শুরু করলো। এতদিন এরকম কিছু কল্পনা করে দিনভর কেঁদে কেটে সোহানকে বিরক্ত করেছি কিন্তু আজ আমার কোনো কান্না পেলো না, রাগ হলো না , সোহানকে ও কিছু বলতে ইচ্ছে করলো না। আমি খুব স্বাভাবিকভাবে বললাম
"এক গ্লাস জল"
সোহান আমার কথা বুঝতে পারছে না এমনভাবে তাকিয়ে রইলো। আমি নিজেই জল ঢেলে খেলাম। আমার এক ধরনের প্রশান্তি লাগছিলো এটা ভেবে যে আমি অসুস্থ নই। ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটার কিছু বেশি, কোনো একটা বাস কিংবা ট্রেন এখনো নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো..... এবার আর ভয় লাগছে না ..... কোনো অনিশ্চয়তা কিংবা দুশ্চিন্তাও নেই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.