নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসীমুল বারী-র প্রযুক্তির উঠোনে স্বাগতম

নাসীমুল বারী

ঢাকার আজিমপুরে জন্মেছি। বেড়েও উঠেছি এখানে। ঐতিহ্যবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি সনদপ্রাপ্ত আমার পৈত্রিক নিবাসটা কিন্তু ‘ইলশে পাড়া’- চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার সাদরা গ্রামে।

নাসীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বিশ্বজয় [ছোটগল্প]

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০১

(বিশ্ব মানবতাকে ধিক্কারিত উৎসর্গ)
।। নাসীমুল বারী।।

হাতড়ে হাতড়ে সামনে এগোয় কিশোরটি। মাথার জখমের রক্তে চোখ দুটো প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। পা-ও জখম, রক্ত ঝরছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। একটু পানির জন্য হাতড়ে হাতড়ে আগাচ্ছে। আশপাশে কে আছে বা কারা আছে ঠিক বুঝতে পারছে না। নাকি জনমানবশূন্য! মাঝে মাঝে ইট পাথরে ধাক্কা খায়।
খুব খুব কষ্ট করে বলে, একটু পানি হবে। পানি খাওয়ার পর আমি একটা ইসরাইলী সৈন্যকে মারবো।
কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছে, কিন্তু কোনো মানুষের আওয়াজ পাচ্ছে না। আবার একটু জোরে বলে, কেউ কি নেই কাছে?
-আমি তো আছি।
এক যুবক বলে ওঠে।
-তোমার কাছে কি পানি আছে?
-না, আমি চারদিকের ভাঙ্গা দেয়ালের মাঝখানে আটকে আছি। আমার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বেরুতে পারছি না। এ কুঠুরিতে কখন যে আবার ইটচাপা পড়ি. . .
'ও তো আরও বিপদে' মনে মনে কথাগুলো বলে কিশোরটি। আর হাঁটতে পারছে না। বসে পড়ে একখণ্ড ধ্বসে পড়া দেওয়ালের উপর।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলের ভয়াবহ অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে এ কিশোর-যুবকরাও আহত। ঈদের দিন থেকে শুরু হয়ে গতকাল পঁচিশের পাঁচ এপ্রিলেও চালাচ্ছে অবিরত হামলা। এ হামলায় মানবিক বিপর্যয় চরমে; আর মুসলিম বিশ্ব আছে ঈদ-আনন্দের পরমে। ঈদ থেকে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ-ছয় দিনে ২৪টি পানির কূপের মধ্যে ২২টি-ই ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ আর মরুর উত্তাপে জীবন-তৃষ্ণা মেটাতে একটু পানি দরকার সেটাও ইসরাইলী বর্বররা ধ্বংস করে ফেলেছে। এ যেন কারবালার এজিদেরই প্রতিরূপ। এজিদেরই প্রেতাত্মার আগমন ঘটেছে ফিলিস্তিনের এ গাজায়।
পানির অভাবে পানির জন্যে কাতরাচ্ছে ওই কিশোরটি। ধ্বংসস্তূপের উপর বসেই কিশোরটি আবার বলছে, একটু পানি হবে কারো কাছে? পানি না পেলে যে আমি ওদের মারতে পারবো না। মরার আগে অন্তত একটা ইসরাইলীকে মেরে মরতে চাই।
আহত যুবকটি বলে, আমি তো বের হতে পারছি না। আমি বেরোতে পারলে তোমার সাথে যোগ দিয়ে আরেকটা ইসরাইলীকে মারতাম।
যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কিশোরটি, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে যুবকটিও। শরীরের এ যন্ত্রণার চেয়েও আরও বড় যন্ত্রণা ওদের মনের মধ্যে৷ ইসরাইলীকে মারতে হবে অন্তত মরার আগে। একজন ইসরাইলীকে মারাও এখন বড়ো সভ্যতা। বড়ো আনন্দ।
বিশ্ব সভ্যতা দিকে দিকে মানবতার ফেরি করে বেড়ায়। কোথাও, কোনো দেশে মানবতার ন্যূনতম বিচ্যুতি দেখলেই মায়াকান্না শুরু করে। কুম্বিরাশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ওই দেশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবরোধের নামে নতুন মানবতা বিরোধী কর্মসূচি দিয়ে নিজেদরকে মানবতার বাহক হিসেবে জাহির করে। ওদের এসব চোখ একদিকেই তাকায়। একদিকেই মানবতা খোঁজে।
কিন্তু বর্বর ইসরাইলীরা এখন জাতি নিধন করলেও তাদের নাকি মানবতা লঙ্ঘন হয় না। তারা অসভ্য হয় না। ভূতের পা পেছনে ঘুরানো থাকে। ইসরাইলীদের ব্যাপারেও মানবতার ফেরিওয়ালাদের পা পিছনে ঘুরানো৷ তাই ইসরাইলীদের তৈরি ইচ্ছাকৃত চরম মানবিক বর্বরতাকে ওই মানবতার ফেরিওয়ালারা দেখে না। দেখতে চায় না।
হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। কিশোরটি বসা থেকেই শুয়ে পড়ে ইট-পাথরের আড়ালে। চেতনা লোপ পায়নি। ধোঁয়া আর বালিতে একাকার। ধোঁয়া ভেদ করেই ভেসে আসছে করুণ আর্তচিৎকার। খুব বেশি নয়, অল্প। ইসরাইলী বর্বরতার বোমা এখানকার সাধারণ জনগণের উপর এসে পড়েছে। 'কতজন মরেছে এবার?' মনে মনে আওড়ায় কিশোরটি। পরক্ষণেই রুক্ষ একটা হাসি দিয়ে বলে, মরবে কোত্থেকে? মানুষ থাকলে তো! গাজাবাসি কেউ থাকলে তো!
ভাঙ্গা দেয়ালের কুঠুরিতে আটকে থাকা আহত যুবকটি বলে, এই কে যেনো তুমি পানি চাচ্ছিলে? আছো কি?
-আছি।
-কোথায়? দেখতে পারছি না তো।
-এই যে এখানে ভাঙ্গা ইটের স্তুপের পেছনে শুয়ে পড়েছি বোমা থেকে বাঁচতে।
-একটু এসে আমাকে ছাড়ানোর কিছু করতে পারবে? বড় যন্ত্রণা। কিন্তু ছাড়া পেলে ওই যন্ত্রণা মাড়িয়ে একটা ইসরাইলীকে মারার জন্য পাথর মারতাম।
-রক্তে যে আমার চোখের পাতা দুটো আটকে গেছে৷ ঝাপসা দেখছি, তুমি কোথায়? তোমাকে তো দেখছি না।
কথাগুলো বলে দাঁড়ায় কিশোরটি। এখনো ধোঁয়া বালি উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছুই দেখতে পারছে না। আবার ডাকে, ভাই এই তুমি কোথায়?
-আমি তো হাসপাতালের এক বিল্ডিং পেছনে ছিলাম। হাসপাতাল আর আমাদের বিল্ডিং দু জায়গাতেই ওরা বোমা মেরেছে। আমার বাবা কোথায় জানি না? আমি এখানে দেওয়ালের মধ্যে আটকা পড়েছি।
-আমি তো মনে হয় তোমারই কাছে। হাসপাতালে ছিলাম। ওখানেও রেহাই পাইনি।
-হাসপাতালে! তুমিও কি খুব আহত?
-হাঁ, হাতে। আর এখন মাথায়।
-ইস. . . ! আমিও! ওরা আমাদের চিকিৎসাও নিতে দিবে না।
-অসভ্যদের আবার মায় আছে নাকি? কষ্ট হলেও আমি আসছি। তোমাকে বের করব। তারপর ওই ইসরাইলীদের একটা হলেও মেরে তারপর মরবো।
এতেই আমাদের বিশ্বজয়।
#
৩ এপ্রিল ২০২৫

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩২

ঊণকৌটী বলেছেন: এতো মানবতা গাজার জন্য কিন্তু পাশের রোহিঙ্গা দের জন্য কোন আওয়াজ নাই, এই দুই নম্বরী কেন?

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ইজরায়েল কে গালমন্দ করছেন। আসলে গালমন্দ করার দরকার হামাস কে।
হামাসের জন্যই আজ এই অবস্থা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.