নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখ: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ\'লার অনিন্দ্যসুন্দর এবং বিস্ময়কর সৃষ্টি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:০৯



চোখ: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অনিন্দ্যসুন্দর এবং বিস্ময়কর সৃষ্টি

আমি কি তাকে দু'টো চোখ বানিয়ে দেইনি?
আজকে যদি আমাকে বলা হয়, 'আপনাকে এক কোটি টাকা দেওয়া হবে, অথবা, বলা হয় যে, আপনাকে শত কোটি টাকা দেয়া হবে, আর এই বিপুল অর্থের বিনিময়ে আপনার চোখ দুটো বিক্রি করে দেন' -আমি কি রাজি হবো? কিংবা যদি আমাকে বলা হয়, এক কোটি টাকার বিনিময়ে আপনার জিভ এবং ঠোঁট দুটো দিয়ে দেন -আমি কি দিয়ে দিব? কেউই কি আছে যে রাজি হতে পারে এই প্রস্তাবে?

মহান মালিক স্রষ্টার বিনামূল্যে প্রদত্ত কোটি কোটি টাকার সম্পদ আমরা আমাদের ছোট্ট এই শরীরে ধারণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। দৃষ্টিশক্তি, ঘ্রাণশক্তি, বুঝার শক্তি, চলার শক্তি, বলার শক্তি, শ্রবন শক্তি, অনুভূতি কত কিই না তিনি আমাদের দিয়েছেন! বিনিময়ে আমরা তাকে কি দিয়েছি? কি দিতে পারি? কি দেয়ার আছে আমাদের? আমাদের কাছে তিনি কি কিছু প্রত্যাশা করেন এসবের বিনিময়ে? তিনি তো শুধু আমাদের কাছে একটু ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চান না। তিনি চান, আমরা যেন তাকে ভুলে না যাই! আমরা যেন পৃথিবীর রঙরসের এই আসরে এসে তাকে বিস্মৃত হয়ে না যাই! তাকে ছেড়ে না দেই! তাকে দূরে সরিয়ে না দেই! তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে আপন করে না নেই! তার মুহাব্বত ব্যতিত এই অন্তরে আর কারো মুহাব্বতকে স্থান না দেই! তার দয়া ছাড়া অন্য কারো দয়ার প্রত্যাশী না হই! তার রহমত থেকে নিরাশ না হই! তার হুকুমেরই তাবেদারী করি! তার প্রেমে মশগুল থেকে জীবনের প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করি একমাত্র তাকেই!

চোখ মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। কোরআনের ইঙ্গিত দেখুন:

أَلَمْ نَجْعَل لَّهُ عَيْنَيْنِ

‘আমি (আল্লাহ) কি তার জন্য সৃষ্টি করিনি দুই চোখ?’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৮)

আবার জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয় কি কম গুরুত্বপূর্ণ? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন:

وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ

'আমি তাকে দান করিনি জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয়?' (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৯)

চোখ, কান, নাক, হাত, পা, কলিজা, হৃদপিন্ড, ধমনী, মস্তক, ফুসফুস, কিডনি, লিভার - আহ! কত দামী আমাদের শরীরের এসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো! প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ! প্রতিটিই প্রয়োজনীয়! প্রতিটি যথাযথ! সুবিন্যাস্ত! সুশোভিত! সুপ্রতিষ্ঠিত! একটিও এমন নেই, যেটির প্রয়োজন নেই! কিডনি তিনি দু'টি দিয়েছেন! কি বিশাল হিকমত! দু'টি কেন দিলেন? একটিতেই তো চলে যায়! একটি দিয়েই তো কাজ হয়ে যায়! তারপরেও দু'টি কেন? একটি নষ্ট হয়ে গেলে যাতে আরেকটি ব্যবহার করে ছাকনির মত আমাদের শরীরের বর্জ্যগুলো বের করে দিয়ে আমরা যেন সুস্থ্য থাকতে পারি, এজন্য তিনি দু'টি কিডনি দিয়েছেন! একটি রিজার্ভ রেখে দেয়ার অনন্য সিস্টেম! আল্লাহু আকবার! ফাতাবা-রাকাল্লাহু আহসানাল খালিকীন! কতই না মহান স্রষ্টা তিনি!

এই অমূল্য সম্পদগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের দিয়েছেন। বিনামূল্যে দিয়েছেন। না চাইতেই দিয়েছেন। এগুলো অর্জন করার জন্য আমাদেরকে কিছুই করতে হয়নি। এই সম্পদগুলো কেনার জন্য আজকে পৃথিবীতে অনেক অসুস্থ, বিকলাঙ্গ মানুষ তাদের সহায় সম্পদ সমস্ত কিছু দিয়ে দিতেও রাজি আছে। অথচ এগুলো আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়েও এগুলোর কদর করি না। একবার ভেবেও দেখি না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কত কত বিপুল বিচিত্র বেহিসাব নেআমতের ভান্ডারে ডুবে আছি আমরা! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী! সুবহানাল্লাহিল আজীম! আহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রতি কতই না কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা ছিল আমাদের! আমরা কি এসবের জন্য একটুও শোকরগুজার হচ্ছি? কত মানুষকেই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদেরই চারপাশে দৃষ্টান্ত স্বরূপ ত্রুটিপূর্ণ, বিকলাঙ্গ বানিয়ে রেখেছেন! আমাদের বুঝার জন্য, আমাদের শেখার জন্য, আমাদের শোকরগুজার, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ দেয়ার জন্য!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দেয়া এই অঙ্গগুলো ব্যবহার করেই আমরা আমাদের যাবতীয় সম্পদ অর্জন করি। এগুলো না থাকলে আমাদের জীবনে কোনো অর্জনই থাকতো না। যার চোখ নেই তার পৃথিবী অন্ধকার! নিষ্পাপ ফুলের হাসি তাকে আলোরিত করে না! শ্বেত বলাকার ভেসে বেড়ানোর মুগ্ধ দৃশ্য তাকে বিমোহিত করে না! নদী-সাগর-পাহাড়ের বিমলিন সৌন্দর্য্য আভা তাকে আনন্দিত করে না! যার দু'টি পা নেই তার পৃথিবীটা যেন স্থির অচঞ্চল! মায়াময় পৃথিবীর বিচিত্র বিমুগ্ধ পথ-প্রান্তর তাকে টানে না! যার দু'টি হাত নেই তার যেন অধরাই থেকে যায় পৃথিবীর সৌন্দর্য্য সুষমা! জগতের কোনো কিছুই ছুঁয়ে দেখার স্বাদ-প্রত্যাশা তার হৃদয়ে নতুনের পরশ আনে না! যার শ্রবনেন্দ্রীয় অকার্যকর তার পৃথিবীটা গুমোট শব্দহীন। ঝর্ণার কুলুকুলু রবও তাকে সচকিত করে না! পাখিদের কিচিরমিচির কুহুতান তাকে আন্দোলিত করে না! অথচ এগুলো ব্যবহার করে সম্পদ অর্জন করার পর হঠাৎ করে কীভাবে যেন সব সম্পদ ‘আমার’ হয়ে যায়। সকল সম্পদের মালিক বনে যাই আমি এবং আমরা! সম্পদ আকড়ে ধরে পরে থাকি তখন! ভুলে যাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাকে! তাঁর ইহসান দয়াকে! তাঁর সীমাহীন দান এবং রহমকে! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দেয়া তাওফিকে অর্জিত সম্পদের মালিক মনে করে সামান্য কিছু তাঁর পথে ব্যয় করতেও আমাদের কুন্ঠা হয়! হায় হায়, আমাদের মত এমন অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে!

নানান ভাষায় চোখ:
কত কত অর্থ চোখ শব্দটির। এর সমার্থবোধক শব্দগুলোও দারুন। সুন্দর। শ্রুতিমধুর। দেখুন না- চক্ষু, চোখ, লোচন, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, আঁখি। বাহ! কি চমতকার! কি মুগ্ধকর! প্রতিটি শব্দের ভেতরেই যেন একটা অন্যরকম অনুভূতির স্পর্শ! ভিন্নতর আবেশের ছোঁয়া! আপনার কাছে কেমন লাগছে শব্দগুলো শুনতে? প্রত্যাশা, আপনিও বলবেন- 'নিশ্চয়ই ভালো'। আচ্ছা, চোখকে আরবিতে কি বলে? এই যা, কি বলতে কি বলে ফেললাম! আরবি কথাটাই তো এখন অন্যরকম! আরবি শব্দটাতেই তো অনেক এলার্জি অনেকের। তো 'চোখ' শব্দের আরবি অর্থ বললে আবার কারো কোনো আপত্তি থাকবে না তো? বলা তো যায় না। দিন কাল যা পড়েছে। কোন কথায় কোথায় যে দোষ হবে, আর কোন কথায় কোথায় যে ভ্যাজাল বেধে যাবে বলা এখন সত্যি মুশকিল। কুরআনুল কারিম, ফাজায়েলে আমাল আর ফাজায়েলে সাদাকাত বইকে যে দেশে জিহাদী কিতাব সাব্যস্ত করে এসব কিতবাদি সংরক্ষনের অপরাধে বাহককে জঙ্গী জিহাদির তকমায় অপমান অপদস্ত এবং নাজেহাল করা হতে পারে, সে দেশে চোখ শব্দের আরবি বলার অপরাধে যেনতেন একটা ঝাকুনি টাকুনি খাওয়া বিচিত্র আর এমন কি? যাই হোক, ঝাকুনি বা ঝক্কি ঝামেলা নিয়ে কেউ সদয় হয়ে এগিয়ে আসতে চাইলে আসুন, তাকে আগাম স্বাগত। চোখের আরবি হচ্ছে আইনুন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চোখের আরবি শব্দ 'আইনুন' এর সমার্থবোধক শব্দের সংখ্যা প্রায় শ'খানিক।

চোখের হিন্দি বললে কোনো ঘাপলা হবে না নিশ্চিত করে বলা কঠিন কিছু নয়। এর কারণ বহুবিধ। সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে সংক্ষেপে শুধু বলি, হিন্দি হচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী এবং নিকট প্রতিবেশী বন্ধু(!) দেশের মানুষের মুখের ভাষা। তো হিন্দিতে চোখকে বলে 'আঁখ'। অবশ্য 'নাইন' এরও ব্যবহার রয়েছে।

ইংলিশ বলা তো সহজ। কারণ, আমাদের ছোট বাচ্চারাও জানে যে, চোখের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'আই'। ফারসিতে 'চশমো'। উর্দুুতে আবার 'চশমা' মানে 'ঝরনা'। বাংলায় তো 'চশমা' বললে চোখের সামনে অটোমেটিক 'চোখের গ্লাস'ই চলে আসে। ভাষার এই রূপমাধুর্য যুগপত অদ্ভুত আবার মজাদারও।

জাপানি ভাষায় চোখের অর্থটা দারুন। তারা চোখকে বলে 'মে'।

জিনজিয়াং প্রদেশের আনুমানিক কম করে হলেও লাখ দশেক মুসলিমকে বন্দি করে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে রাখা চায়নিজরা চোখকে বলে 'ইয়েনজিং'। চাইনিজরা সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসের উদ্ভাবক। বাদুর, সাপ, চামচিকা, বিড়াল, কুকুর, শেয়াল থেকে শুরু করে হেন প্রাণি নেই যা এরা গলধঃকরণ করে না, তো সর্বভূক এই চাইনিজদের হাতেই ভবিষ্যত-পৃথিবীর ধ্বংস ত্বরান্বিত হয় কি না, কে জানে! ফরাসিরা তাদের ভাষায় চোখকে বলেন 'লই'।

জার্মানরা কী বলে জানেন? 'ডাস আউগা'। ইতালিয়ানরা বলে 'লোকিউ'।

চোখের মূলত: যে কাজ:
মানবদেহের পরিচালনা করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কে তথ্য সরবরাহ করে অনেক সেন্টার। এর মধ্যে চোখ অন্যতম। চোখ দেখে, বহুদূর পর্যন্ত অবজারভ করে মস্তিষ্কের কাছে তথ্য পৌঁছায়। চারপাশের দৃশ্যাবলি চোখের সহায়তায় মস্তিষ্কে দৃশ্যকরণ করে তথ্য পাঠায়। মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চোখের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

চোখের পরিষ্কার সক্ষমতা ৫৭৬ মেগাপিক্সেল:
ডিএইসএলআরের সক্ষমতা কত ফিক্সেল? আমাদের চোখের পরিষ্কার সক্ষমতা ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। উন্নত ক্যামেরা আঁধার রাতের ছবি ক্লিয়ার করতে পারে না। আপনি কিন্তু অন্ধকারে পরিষ্কার না হলেও বোধগম্য চিত্র দেখতে পারেন। এটাই সুপারপাওয়ার চোখের কারিশমা।

চোখের আরেক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চোখে ঘুম নামে। ঘুমের মাধ্যমে আমরা ক্লান্তি কাটিয়ে সজীবতায় ফিরে আসি।

তন্দ্রা নিদ্রা ঘুম এসবের স্থান নেই জান্নাতে। সেখানে এগুলো থাকবে না। চোখ বড় করার কিছু নেই। জান্নাতে শ্রান্তি-ক্লেশ এসবও থাকবে না। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায়- জড়তা, ক্লান্তি ইত্যাদি না থাকলে তো ঘুমের দরকারও নেই। কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ নেই, আপনার কোনো চাওয়া সেখানে অপূর্ণ থাকবে না। ইচ্ছে হলে অবশ্যই রাজ্যের ঘুম আপনার চোখের পাতায় এসে ভর করবে। আপনি ঘুমুতেও পারবেন মন প্রাণ ভরে।

চোখে যথাযথ ঘুম না হলে শরীর অস্বাভাবিক হয়। চেহারা, শরীর ও মন তছনছ হয়ে যায়। চোখের কোণে কালি জমে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।

চোখের আরেক বৈশিষ্ট্য, চোখ কাঁদে। আমাদের মন বিষন্ন ও বিধ্বস্ত হলে চোখে অশ্রু নামে।

যদি চোখের অশ্রু ব্যবস্থাপনা না থাকতো, মানুষ দুঃখে মরে যেত। কিছু কিছু কষ্টের প্রশমন অশ্রু ছাড়া সম্ভবপর নয়।

চোখের জলজ ব্যবহার আমাদের মনকে হালকা করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে পাপবোধের অশ্রু বেশি মূল্যবান।

চোখের পানি জাহান্নামের অগ্নিকে নির্বাপিত করে দেয়ঃ
হাদীস শরীফে আল্লাহর ভয়ে ঝরা চোখের পানির ফযীলত এসেছে-

لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبّ إِلَى اللّهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ...، قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوع فِي خَشْيَةِ اللّهِ... (قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ)

দুটি ফোঁটা আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে প্রিয়; (তন্মধ্যে) একটি হল, আল্লাহ্র ভয়ে প্রবাহিত অশ্রুফোঁটা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৬৬৯

আরেক হাদীসে এসেছে-

عَيْنَانِ لاَ تَمَسّهُمَا النّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللّهِ. (قال الترمذي: وَحَدِيثُ ابْنِ عَبّاسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ)

দুটি চোখকে (জাহান্নামের) আগুন স্পর্শ করবে না; এক. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। দুই. যে চোখ রাত জেগে আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৬৩৯

আর আল্লাহর ভয়ে অশ্রু প্রবাহিত হওয়া- আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় যে, এর পুরস্কার স্বরূপ তিনি ঐ ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত-

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللّهُ فِي ظِلِّه يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهُ الْإِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّه وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتّى يَعُوْدَ إِلَيْهِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَاَةٌ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّىْ أَخَافُ اللّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّق بِصَدَقَةٍ فأَخْفى حَتّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِينُه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

‘আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা সেদিন (ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মাসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে।' (মুত্তাফাকুন আলাইহি) -সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৬০

হাদিসের ভাষ্যে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআ'লার ভয়ে প্রবাহিত অশ্রুফোঁটা আল্লাহ পাক অনেক পছন্দ করেন এবং যে চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু প্রবাহিত হবে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আর তওবার সময় গড়িয়ে পড়া অশ্রুধারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সন্তুষ্টির পরিপুষ্ট কমল। যে চোখ কাঁদে না, তা কম সুন্দর। আসলেই অশ্রু চোখ ধুয়ে দিলে বর্ষা ধোয়া সবুজাভ পত্রের মতো লাগে নেত্রপল্লব।

চোখ মানবদেহের অন্যতম সুন্দর অঙ্গ। পৃথিবীর সব সাহিত্যে চোখের বিপুলকায় বর্ণনার ছড়াছড়ি।

চোখের তারা, ভ্রু, পাপড়ি, পাতার সৌন্দর্য ও রূপ বিশ্লেষণ করতে করতে সাহিত্যিকরা ক্লান্ত। তবু চোখের সুষমাময় ব্যাখ্যা শেষ হয় না।

খ্যাত গীতি। বলা হয় মুখের কথার চেয়ে চোখের কথা গভীরতর।

চোখের সৌন্দর্যের সঙ্গে চোখের ভাষা আছে। এ ভাষা বেশ সমৃদ্ধ। মুখের ভাষার চেয়ে শক্তিশালী। কিছুটা জটিলও বটে।

চোখের চাহনি, ইশারা ও ওঠা-নামায় ব্যাপক অর্থ থাকে।

মুখের ভাষা সুসংগঠিত। চোখের ভাষা বৃষ্টির মতো এলোমেলো। চোখের ভাষা বুঝতে ও বোঝাতে মানুষ হরদম ভুল করে। চোখ নিমিষেই সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ

‘...তারা যেন তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে আপনাকে আছড়িয়ে ফেলবে...।’ (সুরা : ক্বলাম, আয়াত : ৫১)

ফারসিতে প্রবাদ আছে, শাইখের সুনেত্রে শিষ্যের পাথেয় হয়ে যায়।

চোখের ভাষা এত ব্যাপক, অভিধান তা সংকুলান করতে পারে না।

চোখের কারিশমা জানা নারীর কৌশলজালে কত পুরুষ বিলীন হয়েছে জানা নেই। পুরুষও কম যান না।

আই কন্টাক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোয়েন্দারা মুখের ভাষার চেয়ে চোখের কথা বেশি লক্ষ্য করেন।

মুখে মিথ্যা বলা সহজ, চোখের ভাষায় মিথ্যার মিশ্রণ কঠিন। কারো ভাষার সঠিকতা বুঝতে চাইলে চোখে চোখ রাখুন। চোখের ভাষা পড়তে পারলে তার মনের ভাষা বুঝা সহজ। মানুষ চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারে না। অথবা কম পারে।

রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখে চোখ রেখে সজীব ও সহজ করে কথা বলতেন। এটা সুন্নত।

চোখের মাঝ দিয়ে আমরা আল্লাহকে চিনি, বুঝি ও ভাবি।

চোখ মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। কোরআনের ইঙ্গিত দেখুন :

أَلَمْ نَجْعَل لَّهُ عَيْنَيْنِ

‘আমি (আল্লাহ) কি তার জন্য সৃষ্টি করিনি দুই চোখ?’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৮)

চোখের মাধ্যমে সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার কথা যেমন কুরআন মজিদ বলেছে, তেমনি চোখকে নাজায়েজ ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে সরিয়ে রাখার কথাও আল কুরআনে বিবৃত হয়েছে।

মানুষ একসময় ভাবতো, চোখের বিকিরণ বস্তুতে গেলে বস্তু দৃশ্যমান হয়।

মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনু হাইশাম এসে এই ভ্রান্তি দূর করেন। তিনি চশমার উদ্ভাবক। আমাদের চোখে বস্তুর আলো এসে পড়লে আমরা তা দেখি। তাহলে অন্ধত্ব কী? বস্তুর আলো গ্রহণ করার অক্ষমতা। এ জন্য আকাশপটে তারা যখন দেখি তা মিনিমাম পাঁচ মিনিট আগের তারা। কারণ, কম করে হলেও পাঁচ মিনিট সময়ের প্রয়োজন আকাশের নক্ষত্রের আলো চোখের তারায় এসে পড়তে। বহু নক্ষত্রের আলো আজও পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়নি। নীহারিকাপুঞ্জ আরও দূরে। দূর বহু দূরে। সুদূরে অবস্থিত।

চোখের ভাষার ব্যবহারে সমঝদার হওয়া উচিত। চোখে সংযম রাখা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। চোখের অপব্যবহার মানুষের ভেতর-বাইর নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু কিছু চোখ গোলাপের মতো পবিত্র, লাজুকলতার মতো সলাজ। কিছু চোখ বেহায়া ও বীতশ্রদ্ধ।

চেহারার সৌন্দর্যের এক আজব কারিগর চোখ। ডাগর চোখে ভ্রমর ভ্রু হলে দেখতে ভালো লাগে।

চোখ সুন্দর মানুষের কান্না পর্যন্ত সুন্দর। তারা হাসলে চোখের চৌপাড় হেসে কুটিকুটি হয়।

চোখ মানুষকে বোঝার বিশেষ শাখা। কারো চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালে তার অবস্থা বোঝা যায়।

মাতা-পিতা চোখের দিকে তাকিয়ে সন্তানের সুখ-দুঃখ বুঝে ফেলেন।

প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখে সুরমা দিতেন। এটা সুন্নত। ভ্রু কাটাকাটি অপছন্দনীয় কাজ। পৃথিবীর সৃষ্টির সুন্দরতম মানুষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর চোখও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখ।

তাকিয়ে দেখো, দৃষ্টি প্রসারিত করো, চিনে নাও তোমার স্রষ্টাকে:
আমাদের চোখ আছে কিন্তু আমরা দেখি না। সৃষ্টির গভীর গহীন রহস্য আমরা দেখতে চোখ খুলি না। আমরা শুধু আমাদের সামনে থাকা বস্তুনিচয় অবলোকন করি। আমাদের চোখের ক্ষমতাকে আমরা সীমিত এবং সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরে আটকে রেখেছি। কিন্তু কিছু চোখ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাকে চেনার জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নিখুঁত সৃষ্টি অবলোকন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমন চোখ সম্পর্কে আল্লাহ পাকের অমীয় বানী,

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَّا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِن تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِن فُطُورٍ ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِأً وَهُوَ حَسِيرٌ

‘যিনি স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।’ (সুরা: আলমুলক, আয়াত : ৩-৪)

যে চোখ আল্লাহকে চেনে না, সে হতভাগা চোখ। যে চোখ আল্লাহকে জানে না, সে অভিশপ্ত চোখ। যে চোখ ওহির জ্ঞান বঞ্চিত, সে চোখ অবাঞ্ছিত। যে চোখে প্রাণের জন্য প্রাণময়তা নেই, মমতার চাহনি নেই, সে চোখ কঠিন কঠোর! যে চোখে মানুষের জন্য ভালোবাসার দৃষ্টি নেই, মানবতার জন্য অশ্রু নেই, বিপন্নজনের জন্য শিশির নেই, জলের ধারা নেই, শ্রাবন-প্লাবন নেই সেই চোখ মরু চোখ। এমন চোখ হতে পানাহ মাগি রব্বে কারিমের কাছে!

মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অশ্রুর বান আনে না যে চোখ, মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অমীয়বানী দর্শনে ভিজে ওঠে না যে চোখের পাপড়ি-কোনা, জাহান্নামের বিভীষিকাময় বর্ণনা শ্রবনে সিক্ত হয়ে ওঠে না যে চোখ, জান্নাতের অনাবিল অফুরান নাজ নিআমতের আলোচনায় হেসে ওঠে না যে চোখ, এমন চোখ থেকেও পানাহ চাই তাঁরই নিকট।

ছবি: অন্তর্জাল।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ই আল্লাহর অসাধারণ নেয়ামত।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আলহামদুলিল্লাহ।
যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দু’টি উদ্যান।
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
সূরা আর-রাহমান আয়াতঃ ৪৬-৪৭

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: মহান প্রভু আমাদের শরীর অতি নিখুঁত করে বানিয়েছেন।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫০

ST COVER SONG বলেছেন: আমার ব্লগে আমার কন্ঠে গাওয়া ইসলামী গানের লিংক আছে। সময় থাকলে শুনে আসবে।

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:২৬

মলাসইলমুইনা বলেছেন: নতুন নকিব,
মানুষ কে দেয়া আল্লাহর এটা খুবই বড় একটা নিয়ামত ।
আল্লাহ মানুষকে খলিফা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন । তার জন্য রাজকীয় একটা নিয়ামত হলো চোখ ।যেই নিয়ামতের মতো রাজকীয় নিয়ামত কোনো মানুষ কোনোদিনও কাউকে দিতে পারবে না । সারা পৃথিবীর সব দিলেও শুধু এই নিয়ামতের সমান রাজসিক হবে না সেটা -কাৰণ এই চোখকে কার্যকর করতে ছয় কোটি মাইল দূরে আল্লাহ একটা সূর্য আকাশে রেখেছেন । যেটা উপস্থিত না থাকলেই মানুষের দেখার কাজটা সুচারু করে কখনোই করা যেত না । কি বড় নিয়ামত এটি যা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন, সুবাহানাল্লাহ !

ভালো লাগলো আল্লাহর অসীম নিয়ামত চোখ নিয়ে এই লেখা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.