নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০১

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:১৭

ছবিঃ অন্তর্জাল।

বিনীত আহবানঃ

দয়া করে হাদীস সংকলনের সংক্ষিপ্ত এই আলোকপাতটুকুতে কষ্টকর হলেও একবার চোখ বুলিয়ে যাবেন। হাদিস নিয়ে প্রচলিত নানান বিভ্রম, বিভ্রাট ও বিভ্রান্তি দূরিকরণার্থেই এই নিবন্ধটির অবতারণা। হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস না জেনে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পরে যান।

হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে, অথবা শুধু শুনে শুনে কেউ কেউ বলে থাকেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের ২০০ বছর পরে এসে হাদিস সংকলন শুরু হয়। ফলে তাদের ধারণা, গ্রন্থবদ্ধ অধিকাংশ হাদিসই জাল।

এই জাতীয় অমূলক ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস জানার বিকল্প নেই। এই বিষয়গুলো সকলেরই একান্তভাবে জানা থাকা প্রয়োজন।

সুপ্রিয় পাঠক, আপনার সময় নেয়ার জন্য দু:খ প্রকাশের সাথে আগাম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – প্রথমভাগঃ

যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার জন্য। সালাত ও সালাম তাঁর প্রিয় নবী হাবীব মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।

হাদিস পবিত্র কুরআনেরই ব্যাখ্যাঃ

হাদিস শরীফ মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ, ইসলামী শরই’আতের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআন মজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদিস সেখানে এ মৌলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কুরআনুল কারিম ইসলামের আলোকস্তম্ভ, হাদিস তাঁর বিচ্ছুরিত আলো। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে পবিত্র কুরআনকে যদি হৃদপিণ্ড কল্পনা করা যায় তাহলে হাদীসকে ভাবা যায় এ হৃদপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিতধারা প্রবাহিত করে এর অঙ্গ-প্রতঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে হাদিসের বিশাল ভান্ডার। হাদিস একদিকে যেমন কুরআনুল আযীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে তা পেশ করে কুরআনের ধারক ও বাহক নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম -এর পবিত্র জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ, হিদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যই ইসলামী জীবন বিধানে কুরআনে হাকীমের পরপরই হাদিসের স্থান।

হাদিসের উৎস কুরআনুল হাকিমঃ

আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর যে ওহী নাযিল করেছেন, তা হলো হাদিসের মূল উৎস। ওহী-এর শাব্দিক অর্থ ‘ইশারা করা’ গোপনে অপরের সাথে কথা বলা।

ওহী দু প্রকারঃ

ওহী দু প্রকার। যথা:

প্রথম প্রকার ওহী মাতলূ বা প্রত্যক্ষ ওহীঃ

প্রথম প্রকার প্রত্যক্ষ ওহী যার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল-কুরআন’। এর ভাব, ভাষা উভয়ই মহান আল্লাহ্‌র। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হুবহু প্রকাশ করেছেন।

দ্বিতীয় প্রকার ওহী গাইরে মাতলূ বা পরোক্ষ ওহীঃ

দ্বিতীয় প্রকার পরোক্ষ ওহী এর নাম ‘সুন্নাহ’ বা ‘আল-হাদীস’। এর ভাব আল্লাহ্‌ তাআলার, তবে নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজের ভাষায়, নিজের কথায় এবং নিজের কাজকর্ম, জীবনাচার ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর সরাসরি নাযিল হতো এবং তাঁর কাছে উপস্থিত লোকজন তা উপলব্ধি করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তাঁর উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাযিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারতেন না।

আখেরী নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহক, কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে নামব জাতিকে একটি আদর্শ অনুসরণের ও অনেক বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দান করেন নি। এর ভার ন্যস্ত করেছেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর। তিনি নিজের কথা-কাজ ও আচার-আচরনের মাধ্যমে কুরআনের আদর্শ ও বিধান বাস্তবায়নের পন্থা ও নিয়ম কানূন বলে দিয়েছেন। কুরআনকে কেন্দ্র করেই তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান পেশ করেছেন।

হাদিসও যে ওহীর সুত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরী’আতের অন্যতম উৎস কুরআনে তার প্রমানঃ

অন্য কথায়, কুরআন মজীদের শিক্ষা ও নির্দেশসমূহ ব্যাক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পন্থা অবলম্বন করেছেন, তা-ই হচ্ছে হাদিস। হাদিসও যে ওহীর সুত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরী’আতের অন্যতম উৎস কুরআন ও মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম -এর বাণীর মধ্যেই তাঁর প্রমাণ বিদ্যমান। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেনঃ

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى

'আর তিনি (নবী) প্রবৃত্তির তাড়নায় মনগড়া কথাও কথা বলেন না।' -সূরাহ আননাজম, আয়াত ৩

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

'এ তো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়'। -সূরাহ আননাজম, আয়াত ৪

আল কুরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ

'তিনি (নবী) যদি আমার নামে কিছু রচনা চালাতে চেষ্টা করতেন।' -সূরাহ আল হাক্কাহ, আয়াত ৪৪

لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ

'আমি অবশ্যই তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম।' -সূরাহ আল হাক্কাহ, আয়াত ৪৫

ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ

'এবং কেটে লইতাম তাঁর জীবনধমনী।' -সূরাহ আল হাক্কাহ, আয়াত ৪৬

হাদিসও যে ওহীর সুত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরী’আতের অন্যতম উৎস হাদিসে তার প্রমানঃ

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেনঃ 'রুহুল কুদস (জিবরাঈল) আমার মানসপটে এ কথা ফুঁকে দিলেন যে, নির্ধারিত পরিমাণ রিযিক পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ুস্কাল শেষ হওয়ার পূর্বে কোন প্রাণীর মৃত্যু হয় না।' -বাইহাকী, শারহুস সুন্নাহ

'আমার নিকট জিবরাঈল (আঃ) এলেন এবং আমার সাহাবীগনকে উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীল বলতে আদেশ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন।' -নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫৬

'জেনে রেখ, আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে দেয়া হয়েছে এর অনুরূপ আরও একটি জিনিস।' -আবূ দাঊদ, ইবন মাজা, দারিমী

রাসূলের আনুগত্যঃ

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম -এর আনুগত্য করার জন্য আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কুরআনুল করিমে নির্দেশ দিয়েছেনঃ

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

'রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।' সূরাহ আল হাশর, আয়াত ৭ এর অংশ বিশেষ

হাদিস অধ্যয়নের উদ্দেশ্যঃ

হাদিস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন- 'দুনিয়া ও আখিরাতের পরম কল্যাণ লাভই হচ্ছে হাদিস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।'

আল্লামা কিরমানী (রঃ) লিখেছেন- 'কুরআনের পর সকল প্রকার জ্ঞানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম এবং তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ সম্পদ হচ্ছে ইলমে হাদিস। কারন, এই জ্ঞানের সাহায্যেই আল্লাহ্‌র কালামের লক্ষ্য ও তাৎপর্য জানা যায় এবং তাঁর হুকুম-আহকামের উদ্দেশ্য অনুধাবন করা যায়।'

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – দ্বিতীয় ভাগ - হাদীসের পরিচয়ঃ

শাব্দিক অর্থে হাদিস মানে নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন-এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্তূ পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদিস।

হাদিসের আরেক অর্থ হলো কথা। ফকীহগণের পরিভাষায় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাঁকে হাদিস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ হিসেবে হাদিসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়ঃ কাওলী হাদিস, ফে’লী হাদিস ও তাকরীরী হাদিস।

প্রথমত: কাওলী হাদিসঃ

কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদিসে তাঁর কোন কথা বিধৃত হয়েছে তাঁকে কাওলী বা বানী সম্পর্কিত হাদিস বলা হয়।

দ্বিতীয়ত: ফে'লি হাদিসঃ

মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচারণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। অতএব যে হাদিসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাঁকে ফে’লী বা কর্ম সম্পর্কিত হাদিস বলা হয়।

তৃতীয়ত: তাকরীরি হাদিসঃ

সাহাবীগণের যেসব কথা বা কাজ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুমোদন ও সমর্থনপ্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরী’আতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব যে হাদিসে এ ধরনের কোন ঘটনা বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁকে তাকরীরী বা সমর্থনমূলক হাদিস বলে।

সুন্নাহঃ

হাদিসের অপর নাম সুন্নাহ। সুন্নাহ শব্দের অর্থ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবলম্বন করতেন তাঁকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নাত। কুরআন মজীদে মহোত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ বলেতে এই সুন্নাতকেই বোঝানো হয়েছে। ফিকাহর পরিভাষায় সুন্নাত বলতে ফরয ও ওয়াজিব ব্যতিত ইবাদত রূপে যা করা হয় তা বোঝায়, যেমন সুন্নাত সালাত।

হাদিস, খবর ও আসারঃ

হাদিসকে আরবী ভাষায় খবরও বলা হয়। তবে খবর শব্দটি দ্বারা হাদিস ও ইতিহাস উভয়টিকেই বোঝায়।

আসার শব্দটিও কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিস নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদিস ও আসার-এর মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে সাহাবীগণ থেকে শরী’আত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ভূত হয়েছে তাঁকে আসার বলে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, শরী’আত সম্পর্কে সাহাবীগণ নিজস্বভাবে কোন বিধান দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁদের উদ্ধৃতিসমূহ মূলত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এরই উদ্ধৃতি। কিন্তু কোন কারণে শুরুতে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নাম উল্লেখ করেন নি। উসূলে হাদিসের পরিভাষায় এসব আসারকে বলা হয় ‘মাওকূফ হাদিস’।

ইলমে হাদিসের কতিপয় পরিভাষা

ইলমে হাদিস মূলতঃ বিশাল এবং সুবিস্তৃত একটি বিষয়। গভীরভাবে এই বিষয়টি উপলব্ধিতে আনয়ন করতে হলে হাদিসের কতিপয় পরিভাষা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা একান্ত প্রয়োজন বিধায় এখানে সংশ্লিষ্ট কিছু পরিভাষা সম্মন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করছি-

সাহাবিঃ

যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাহাবী বলে।

তাবীঈঃ

যিনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কোন সাহাবীর নিকট হাদিস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবিঈ বলে।

মুহাদ্দিসঃ

যে ব্যাক্তি হাদিস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদিসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞ্যান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।

শায়খঃ

হাদিসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলে।

শায়খাইনঃ

সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বকর ও উমরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমাকে একত্রে শায়খাইন বলা হয়। কিন্তু হাদিসশাস্ত্রে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রঃ)- কে শায়খাইন বলা হয়।

হাফিজঃ

যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্তসহ এক লক্ষ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয় ।

হুজ্জাতঃ

অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়।

হাকিমঃ

যিনি সব হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাকিম বলা হয়।

রিজালঃ

হাদিসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাঁকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।

রিওয়ায়তঃ

হাদিস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদিসকেও রিওয়ায়ত বলা হয়। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়ত (হাদিস) আছে।

সনদঃ

হাদিসের মূল কথাটুকু যে সুত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাঁকে সনদ বলা হয়। এতে হাদিসের বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।

মতনঃ

হাদিসের মূল কথা ও তাঁর শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।

মারফূঃ

যে হাদিসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাঁকে মারুফূ হাদীস বলে।

মাওকূফঃ

যে হাদিসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, অর্থাৎ যে সনদ-সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাঁকে মাওকূফ হাদিস বলে। এর অপর নাম আসার।

মাকতূঃ

যে হাদিসের সনদ কোন তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাঁকে মাকতূ হাদিস বলা হয়।

তা’লীকঃ

কোন কোন গ্রন্থকার কোন হাদিসের পূর্ণ সনদকে বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদিস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলা হয়। কখনো কখনো তা’লীকরূপে বর্ণিত হাদিসকেও তা’লীক বলে। ইমাম বুখারী (রঃ)-এর সহীহ গ্রন্থে এরূপ বহু তা’লীক রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে, বুখারীর সমস্ত তা’লীকেরই মুত্তাসিল সনদ রয়েছে। অনেক সংকলনকারী এই সমস্ত তা’লীক হাদিস মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন।

মুদাল্লাসঃ

যে হাদিসের রাবী নিজেই প্রকৃত শায়খের (উসতাদের) নাম উল্লেখ না করে তাঁর উপরস্থ শায়খের নামে এভাবে হাদিস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শায়খের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট হাদিস শুনেন নি, সে হাদিসকে মুদাল্লাস হাদিস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদলিস’, আর যিনি এইরূপ করেন তাঁকে মুদাল্লিস বলা হয়। মুদাল্লিসের হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, যে পর্যন্ত না একথা নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, তিনি একমাত্র ছিকাহ রাবী থেকেই তাদলীস করেন অথবা তিনি আপন শায়খের নিকট শুনেছেন বলে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন।

মুযতারাবঃ

যে হাদিসের রাবী হাদিসের মতন বা সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদিসকে হাদিসে মুযতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভভপর হয়, সে পর্যন্ত এই সম্পর্কে অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে না।

মুদরাজঃ

যে হাদিসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদিসকে মুদরাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়। ইদরাজ হারাম। অবশ্য যদি এর দ্বারা কোন শব্দ বা বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হয়, তবে দূষণীয় নয়।

মুত্তাসিলঃ

যে হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে, কোন স্তরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি তাঁকে মুত্তাসিল হাদিস বলে।

মুনকাতিঃ

যে হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাঁকে মুনকাতি হাদিস, আর এই বাদ পরাকে ইনকিতা' বলা হয়।

মুরসালঃ

যে হাদিসের সনদের ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবীঈ সরাসরি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উল্লেখ করে হাদিস বর্ণনা করেছেন তাঁকে মুরসাল হাদিস বলা হয়।

মুতাবি ও শাহিদঃ

এক রাবীর হাদিসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদিস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদিসকে প্রথম রাবীর হাদিসের প্রথম রাবীর হাদিসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদিসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যাক্তি হন। তবে এইরূপ হওয়াকে মুতাবা’আত বলে। যদি মূল রাবী একই ব্যাক্তি না হন তবে দ্বিতীয় ব্যাক্তির হাদিসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহাদত বলে। মুতাবা’আত ও শাহাদত দ্বারা প্রথম হাদিসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।

মু’আল্লাকঃ

সনদের ইনকিতা' প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাঁকে মু’আল্লাক হাদিস বলা হয়।

মা’রুফ ও মুনকারঃ

কোন কোন রাবীর বর্ণিত হাদিস অপর কোন মকবুল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদিসের বিরোধী হলে তাঁকে মুনকার বলা হয় এবং মকবুল রাবীর হাদিসকে মা’রুফ বলা হয়। মুনকার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।

কৃতজ্ঞতায়: বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত হাদিস সংকলনের ইতিহাস গ্রন্থ, ইষৎ সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত।

হাদিস সংকলনের সবগুলো পোস্টগুলো এক নজরে-

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০১

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০২

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০৩

ছবিঃ অন্তর্জাল।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সকল প্রসংশা একমাত্র বিধাতার

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, শুকরিয়া।

সুন্দর বলেছেন।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব কষ্ট করে হাদীস সংরক্ষন করা হয়েছে।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৩

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস না জেনে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পরে যান।

না জানার কারণে, অথবা শুধু শুনে শুনে কেউ কেউ বলেন, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম সালামের ইনতিকালের ২০০ বর পরে এসে হাদিস সংকলন শুরু হয়। ফলে তাদের ধারণা, গ্রন্থবদ্ধ অধিকাংশ হাদিসই জাল।

এই জাতীয় অমূলক ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস জানার বিকল্প নেই। এই বিষয়গুলো সকলেরই একান্ত প্রয়োজন।

ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

আরোগ্য বলেছেন: নিঃসন্দেহে পোস্টটি প্রিয়তে যাবে। সময় সুযোগমত পড়ে নিবো ইনশাআল্লাহ।
আশা করি ভালো আছেন নকিব ভাই।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি সকলকে নিয়ে। পোষ্ট প্রিয়তে নেয়ায় এবং সময় করে পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করায় দুআ ও শুকরিয়া।

সাবধানে থাকুন। ভালো থাকুন।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ভালো পোস্ট। স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইয়ে কিছু কিছু ধারণা দেয়া ছিলো।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ আপনাকে।

ভালো থাকুন।

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৪

মা.হাসান বলেছেন: নকিব ভাই , অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এই পোস্টের জন্য।
যারা বিরূপ মন্তব্য করেন এরা একটু কষ্ট করে সত্য খোঁজার চেষ্টা করতে আগ্রহী না। পক্ষান্তরে দেখি এমনকি ইহুদি রাবি বা খ্রিস্টান মিশনারিরাও হাদিস সংগ্রহের পদ্ধতির উপরে বিতর্ক করে না এবং মুসলমানদের সাথে বিতর্কের সময়ে সহিহ হাদিসের রেফারেন্স দেয়ার চেষ্ট করে। (ক্যাথলিক মিশনারিদের কঠিন সিলেবাস শেষ করতে হয়। এই সিলেবাসে ধর্মতত্ত্ব থাকে এবং যারা মুসলিম দেশগুলোতে পোস্টেড হয় তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে ইসলাম ধর্মের উপর কোর্স করতে হয়। অনেক প্রিস্ট ভালো আরবি জানেন।)

আশা করি পরের পর্বে হাদিস সংগ্রহের শুরু কিভাবে হলো, মুহাদ্দিসদের কষ্ট এবং ক্লাসিফেকেশন সম্পর্কে আলোচনা করবেন।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫২

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ ভাই। আসলেই তাই। বিরূপ মন্তব্য করেন অনেকেই কিন্তু তারা একটু কষ্ট করে সত্য খোঁজার চেষ্টা করতে আগ্রহ দেখান না। এজন্যই মূলত: এই পোস্ট।

আশা করি পরের পর্বে হাদিস সংগ্রহের শুরু কিভাবে হলো, মুহাদ্দিসদের কষ্ট এবং ক্লাসিফেকেশন সম্পর্কে আলোচনা করবেন।

-ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে। দুআ চাই। আপনিও সকলকে নিয়ে ভালো থাকবেন এটাই কামনা।

৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৭

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: দারুন প্রচেষ্টা, চালিয়ে যান লেখা

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। সাথে থাকার জন্য এবং আশা জাগানিয়া মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।

আল্লাহ পাক আপনাকে কুশলে রাখুন সর্বাবস্থায়।

৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৮

মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: ভাই পড়ি নাই। প্রিয়তে নিলাম। জানিবার বিষয় রহিয়াছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার উপস্থিতি প্রেরণার। অনেক ভালো থাকবেন। দুআ প্রার্থী।

৮| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৩৩

শের শায়রী বলেছেন: পোষ্টে ভালো লাগা, আর এই সিরিজ শেষ হলে, শেষ সিরিজে সব গুলো পার্ট কাইন্ডলি দিয়ে দেবেন সেক্ষেত্রে সেই পর্বটা প্রিয়তে নিয়ে রেখে দেব। ভালো লাগা জানুন।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার কথা রাখার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।

পোস্ট ভালো লাগায় কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকার দুআ সবসময়।

৯| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: সকলের জানার দরকার আছে।
বিশেষ করে প্রতিটা মুসলমান নরনারীর।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২০

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবসময়।

১০| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫

নূর আলম হিরণ বলেছেন: লেখক বলেছেন, "তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, শরী’আত সম্পর্কে সাহাবীগণ নিজস্বভাবে কোন বিধান দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁদের উদ্ধৃতিসমূহ মূলত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এরই উদ্ধৃতি।
জুমা'র নামাজে যে বাড়তি আজান যোগ করা হয় এটা ওসমান রা: করেন। যা এর আগে থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়না। এই ক্ষেত্রে এই বিধানের ব্যাপারে কি বলবেন?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৪

নতুন নকিব বলেছেন:



অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর এই প্রশ্নটি রেখে যাওয়ার জন্য। আসলে জুমুআর দিনে দু'টি আযান দেওয়ার প্রচলন রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে ছিল না। উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁর খিলাফতের সময়ে মূল আযানের পূর্বে আরও একটি আযান দেয়ার নিয়ম চালু করেছিলেন ৷আর এটা তিনি করেছিলেন বিশেষ প্রয়োজনে তাদিদে। সেটা হচ্ছে - মুসলিমদের সংখ্যা তখন দিনকে দিন অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে যারা দূরে অবস্থান করতেন তারাও যাতে আযানের আওয়াজ শুনে মসজিদে আসতে পারেন। এ লক্ষ্যে মসজিদে নববীর অদূরে 'যাওরা' নামক বাজারে তিনি এ আযান দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে উক্ত আযান শুনে লোকেরা যথাসময়ে মসজিদে উপস্থিত হতে পারেন ৷

সায়েব বিন ইয়াযীদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, 'জুমুআর দিন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর ও উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমার যুগে যখন ইমাম মিম্বরে বসতেন তখন প্রথম আযান দেওয়া হত ৷ অতঃপর যখন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল তখন ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যাওরাতে দ্বিতীয় আযান বৃদ্ধি করেন।' (বুখারী: 912, জুমুআ অধ্যায়, তিরিমিযি: 516)

খলিফা ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর এই হুকুম ছিল স্থানিক প্রয়োজনের কারনে একটি সাময়িক রাষ্ট্রীয় ফরমান মাত্র ৷সে কারনে মক্কা, কূফা ও বসরাসহ ইসলামী খেলাফতের বহু গুরুত্বপূর্ন শহরে এ আযান তখন চালু হয়নি ৷হযরত ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এটাকে সর্বত্র চালু করার প্রয়োজন মনে করেন নি বা উম্মতকে বাধ্যও করেন নি ৷ তাই সর্বদা সর্বত্র চালু করার পিছনে কোন যুক্তি নেই ৷অতএব, তিনি যে কারনে দ্বিতীয় আযান যাওরাতে চালু করেছিলেন, সে কারন এখনও বিদ্যমান থাকলে তাকে নাযায়েজ কিংবা বিদাআত বলা যাবে না ৷কিন্তু উক্ত কারন যদি না থাকে তাহলে বিদাআত হিসেবে গন্য হবে। (বিস্তারিত আলোচনা সালাতুর রাসূল (সা) 194 -196 পেজ)

বর্তমানে মূলত: দু'টি আযানের প্রচলন অব্যহত থাকার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, সাহাবায়ে কিরামের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি প্রদর্শন।

অনেক ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.