নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০২

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১৩



প্রথম পর্বের লিঙ্ক-

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০১

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – তৃতীয় ভাগ

ইলমে হাদিসের কতিপয় পরিভাষাঃ

ইতোপূর্বে প্রথম পর্বে ইলমে হাদিসের কতিপয় পরিভাষা আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আরও কিছু পরিভাষা আলোচনা করা হচ্ছে-

সাহীহঃ

যে মুত্তাসিল হাদিসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবতীয়-গুণ সম্পন্ন এবং হাদিসটি যাবতীয় দোষত্রুটি মুক্ত তাঁকে সাহীহ হাদিস বলা হয়।

হাসানঃ

যে হাদিসের কোন রাবীর যাবতীয় গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাঁকে হাসান হাদিস বলা হয়। ফিকহবিদগণ সাধারনত সহীহ ও হাসান হাদিসের ভিত্তিতে শরী’আতের বিধান নির্ধারণ করেন।

যঈফঃ

যে হাদিসের রাবী কোন হাসান হাদিসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাঁকে যঈফ হাদিস বলে। রাবীর দুর্বলতার কারণেই হাদিসকে দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কোন কথাই যঈফ নন।

মাওযূঃ

যে হাদিসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাঁর বর্ণিত হাদিসকে মাওযূ হাদীস বলে। এরূপ ব্যাক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।

মাতরুকঃ

যে হাদিসের রাবী হাদিসের ক্ষেত্রে নয় বরং সাধারণ কাজে-কর্মে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে বলে খ্যাত, তাঁর বর্ণিত হাদিসকে মাতরুক হাদিস বলা হয়। এরূপ ব্যাক্তির বর্ণিত হাদিসও পরিত্যাজ্য।

মুবহামঃ

যে হাদিসের রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায় নি, যার ভিত্তিতে তাঁর দোষগুণ বিচার করা যেতে পারে, এরূপ রাবীর বর্ণিত হাদিসকে মুবহাম হাদিস বলে। এই ব্যাক্তি সাহাবী না হলে তাঁর হাদিসও গ্রহণযোগ্য নয়।

মুতাওয়াতিরঃ

যে সহীহ হাদিস প্রত্যেক যুগে এত অধিক লোক রিওয়ায়াত করেছেন যাঁদের পক্ষে মিথ্যার জন্য দলবদ্ধ হওয়া সাধারণত অসম্ভব তাঁকে মুতাওয়াতির হাদিস বলে। এ ধরনের হাদিস দ্বারা নিশ্চিত জ্ঞ্যান লাভ হয়।

খবরে ওয়াহিদঃ

প্রত্যেক যুগে এক, দুই অথবা তিনজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসকে খবরে ওয়াহিদ বা আখবারুল আহাদ বলা হয়। এই হাদীস তিন প্রকার। যথা-

মাশহূরঃ

যে সহীহ হাদিস প্রত্যেক যুগে অন্ততপক্ষে তিনজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে মাশহূর হাদিস বলা হয়।

আযীযঃ

যে সহীহ হাদিস প্রত্যেক যুগে অন্ততপক্ষে দুইজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে আযীয বলা হয়।

গরীবঃ

যে সহীহ হাদিস কোন যুগে মাত্রও একজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে গরীব হাদিস বলা হয়।

হাদিসে কুদসীঃ

এ ধরনের হাদিসের মূলকথা সরাসরি আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কিত করে যেমন আল্লাহ্‌ তাঁর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইলহাম কিংবা সপ্নযোগে অথবা জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিজ ভাষায় বর্ণনা করেছেন।

মুত্তাফাকুন আলাইহি

যে হাদিস একই সাহাবী থেকে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রঃ) উভয়ে গ্রহণ করেছেন, তাঁকে মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদিস বলে।

আদালতঃ

যে সুদৃঢ় শক্তি মানুষকে তাকওয়া ও শিষ্টাচার অবলম্বনে এবং মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে তাঁকে আদালত বলে। এখানে তাকওয়া বলতে অশোভনীয় ও অভদ্রোচিত কার্য থেকে বিরত থাকা, যেমন হাট-বাজারে বা প্রকাশ্যে পানাহার করা বা রাস্তা-ঘাটে পেশাব-পায়খানা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও বোঝায়।

যাবতঃ

যে স্মৃতিশক্তি দ্বারা মানুষ শ্রুত বা লিখিত বিষয়কে বিস্মৃতি বা বিনাশ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় এবং যখন ইচ্ছা তা সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারে তাঁকে যাবত বলা হয়।

ছিকাহঃ

যে রাবীর মধ্যে আদালত ও যাবত উভয় গুণ পূর্ণভাবে বিদ্যমান, তাঁকে ছিকাহ ছাবিত বা ছাবাত বলা হয়।

হাদিস গ্রন্থসমূহের শ্রেণীবিভাগ

হাদিস গ্রন্থ প্রনয়নের বিভিন্ন ধরন ও পদ্ধতি রয়েছে। এসব গ্রন্থের নামও বিভিন্ন ধরনের। নিম্নে এর কতিপয় প্রসিদ্ধ পদ্ধতির নাম উল্লেখ করা হলঃ

১। আল-জামি'

যে সব হাদিসগ্রন্থে (১) আকীদা-বিশ্বাস (২) আহকাম (শরিয়াতের আদেশ-নিষেধ) ৩) আখলাক ও আদব (৪) কুরআনের তাফসীর (৫) সীরাত ও ইতিহাস (৬) ফিতনা ও আশরাত অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা ও আলামতে কিয়ামত (৭) রিকাক অর্থাৎ আত্নশুদ্ধি (৮) মানাকিব অর্থাৎ ফযিলত ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদিস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়, তাঁকে আল-জামি' বলা হয়। সাহীহ বুখারী ও জামি তিরমিযী এর অন্তর্ভুক্ত।

সহীহ মুসলিমে যেহেতু তাফসীর ও কিরাআতের সংক্রান্ত হাদিস খুবই কম, তাই কোন কোন হাদিস বিশারদের মতে তা জামি' শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত নয়।

২। আস-সুনানঃ

যেসব হাদিসগ্রন্থে কেবল মাত্র শরী’আতের হুকুম-আহকাম ও ব্যবহারিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি ও আদেশ-নিষেধমূলক হাদিস একত্রিত করা হয় এবং ফিকহ গ্রন্থের ন্যায় বিভিন্ন অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ সজ্জিত হয় তাঁকে সুনান বলে। যেমন- সুনান আবূ দাঊদ, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবন মাজা ইত্যাদি। তিরমিযী শরীফও এই হিসেব সুনান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।

৩। আল-মুসনাদঃ

যে সব হাদিসগ্রন্থে সাহাবীগণের বর্ণিত হাদিসসমূহ তাঁদের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী অথবা তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী পরপর সংকলিত হয়, ফিকাহের পদ্ধতিতে সংকলিত হয় না তাঁকে আল-মুসনাদ বা আল-মাসানীদ বলা হয়। যেমন- হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত হাদিস তাঁর নামের শিরোনামের অধীনে একত্রিত করা হলে। ইমাম আহমদ (রঃ)-এর আল-মুসনাদ গ্রন্থ, মুসনাদ আবূ দাঊদ তা’য়ালিসী (রঃ) ইত্যাদি গ্রন্থ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

৪। আল-মু’জামঃ

যে হাদিসগ্রন্থে মুসনাদ গ্রন্থের পদ্ধতিতে এক একজন উস্তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদিসসমুহ পর্যায়ক্রমে একত্রে সন্নিবেশ করা হয় তাঁকে আল-মু’জাম বলে। যেমন- ইমাম তাবারানী (রঃ) সংকলিত আল- মু’জামুল কবীর।

৫। আল-মুসতাদরাকঃ

যেসব হাদিস বিশেষ কোন হাদিসগ্রন্থে শামিল করা হয়নি অথচ তা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থকারের অনুসৃত শর্তে পূর্ণমাত্রায় উত্তীর্ণ হয়, সে সব হাদিস যে গ্রন্থে সন্নিবেশ করা হয় তাঁকে আল-মুসতাদরাক বলা হয়। যেমন- ইমাম হাকিম নিশাপুরী (রঃ) -এর আল-মুসতাদরাক গ্রন্থ।

৬। রিসালাঃ

যে ক্ষুদ্র কিতাবে মাত্র এক বিষয়ের অথবা এক রাবীর হাদিসসমূহ একত্র করা হয়াছে তাঁকে রিসালা বা জুয বলা হয়।

৭। সিহাহ সিত্তাহঃ

বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও ইবন মাজা- এই ছয়টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। কিন্তু কতিপয় বিশিষ্ট আলিম ইবন মাজার পরিবর্তে ইমাম মালিক (রঃ)-এর মুওয়াত্তাকে, আবার কিছু সংখ্যক আলিম সুনানুদদারিমীকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (রঃ) ইমাম তাহাবী (রঃ) সংকলিত মা’আনীল আসার (তাবারী শরীফ) গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি ইবন হাযম ও আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশমীরী (রঃ) তাহাবী শরীফকে নাসায়ী ও আবূ দাঊদ শরীফের স্তরে গণ্য করেছেন।

৮। সাহীহাইনঃ

সাহীহ বুখারী ও সাহীহ মুসলিমকে একত্রে সাহীহাইন বলা হয়।

৯। সুনানে আরবা’আঃ

সিহাহ সিত্তার অপর চারটি গ্রন্থ আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবন মাজাকে একত্রে সুনানে আরবা’আ বলা হয়।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – চতুর্থ ভাগ হাদিসের কিতাবসমুহের স্তরবিভাগঃ

হাদিসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তরে বা তাবাকায় ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তাঁর ‘হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগা’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন।

প্রথম স্তরঃ

এ স্তরের কিতাবসমূহের কেবল সাহীহ হাদিসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিঃ মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদিস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদিসই নিশ্চিতরূপে সহীহ।

দ্বিতীয় স্তরঃ

এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারনতঃ সহীহ ও হাসান হাদিসই রয়েছে। যঈফ হাদীস এতে খুব কম আছে। নাসাঈ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনান দারিমী, সুনান ইবন মাজা এবং শাহ ও ওয়ালি উল্লাহ (রঃ)-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমেদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাজহাবের ফাকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।

তৃতীয় স্তরঃ

এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মা’রুফ ও মুনকার সকল প্রকারের হাদিসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আবদুর রাযযাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবারানী (রঃ)-এর কিতাবসমূহের এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত।

চতুর্থ স্তরঃ

হাদিস বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যতিত এ সকল কিতাবের হাদিস গ্রহণ করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমুহে সাধারনতঃ যইফ হাদিসই রয়েছে। ইবন হিব্বানের কিতাবুয যুআফা, ইবনুল-আছীরের কামিল ও খতীব বাগদাদী, আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের কিতাব।

পঞ্চম স্তরঃ

উপরের স্তরেগুলোতে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।

সহীহায়নের বাইরেও সহীহ হাদীস রয়েছেঃ

বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহীহ হাদিসের কিতাব। কিন্তু সমস্ত সহীহ হাদিসই যে বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে তা নয়। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেছেনঃ ‘আমি আমার এ কিতাবে সহীহ ব্যতীত কোন হাদিসকে স্থান দেই নাই এবং বহু সহীহ হাদিসকে আমি বাদও দিয়েছি।’

একরকমভাবে ইমাম মুসলিম (রঃ) বলেনঃ ‘আমি এ কথা বলি না যে, এর বাইরে যে সকল হাদিস রয়েছে সেগুলি সমস্ত যইফ।’

কাজেই এ দুই কিতাবের বাইরেও সহিহ হাদিস ও সহীহ কিতাব রয়েছে। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবীর (রঃ) মতে সিহাহ সিত্তাহ, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ও সুনান দারিমী ব্যতীত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহও সহীহ (যদিও বুখারী ও মুসলিমের পর্যায়ের নয়)-

১. সহীহ ইবন খুযায়মা – আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক (৩১১ হি.)
২. সহীহ ইবন হিব্বান – আবূ হাতিম মুহাম্মাদ ইবন হিব্বান (৩৫৪ হি.)
৩. আল-মুসতাদরাক – হাকিম-আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরী (৪০২ হি.)
৪. আল-মুখতারা – যিয়াউদ্দীন আল-মাকদিসী (৭০৪ হি.)
৫. সহীহ আবূ আ’ওয়ানা – ইয়াকুব ইবন ইসহাক (৩১১ হি.)
৬. আল-মুনতাকা – ইবনুল জারুদ আবদুল্লাহ ইবন আলী।

এতদ্ব্যতীত মুহাম্মদ ইবন মুহাম্মদ রাজা সিন্ধি (২৮৬হি) এবং ইবন হাযম জাহিরীর (৪৫৬ হি)-ও এক একটি সহীহ কিতাব রয়েছে বলে কোন কোন কিতাবে উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ এগুলিকে সহীহ বলে গ্রহণ করেছেন কি না বা কোথাও এগুলির পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান আছে কি না তা জানা যায় নাই।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – পঞ্চম ভাগ হাদিসের সংখ্যাঃ

হাদিসের মূল কিতাবসমূহের মধ্যে ঈমান আহমদ ইবন হাম্বলের মুসনাদ একটি বৃহৎ কিতাব। এতে ৭ শত সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত পুনরুল্লেখ (তাকরার) সহ মোট ৪০ হাজার এবং ‘তাকরার’ বাদে ৩০ হাজার হাদিস রয়েছে। শায়খ আলী মুত্তাকী জৌনপুরীর মুনতাখাবু কানযিল উমমাল-এ ৩০ হাজার এবং মূল কানযূল উমমাল-এ (তাকরার বাদ) মোট ৩২ হাজার হাদিস রয়েছে। অথচ এই কিতাব বহু মূল কিতাবের সমষ্টি। একমাত্র হাসান আহমদ সমরকান্দীর ‘বাহরুল আসানীদ’ কিতাবেই এক লক্ষ হাদিস রয়েছে বলে বর্ণিত আছে। মোট হাদিসের সংখ্যা সাহাবা ও তাবিঈনের আসারসহ সর্বমোট এক লক্ষের অধিক নয় বলে মনে হয়। এর মধ্যে সহীহ হাদিসের সংখ্যা আরও কম। হাকিম আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরীর মতে প্রথম শ্রেণীর সহীহ হাদিসের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। সিহাহ সিত্তায় মাত্র পৌনে ছয় হাজার হাদিস রয়েছে। এর মধ্যে ২৩২৬ টি হাদিস মুত্তাফাকু আলাইহি। তবে যে বলা হয়ে থাকেঃ হাদিসের বড় বড় ইমামের লক্ষ লক্ষ হাদিস জানা ছিল, তাঁর অর্থ এই যে, অধিকাংশ হাদিসের বিভিন্ন সনদ রয়েছে। (এমনকি শুধু নিয়্যাত সম্পর্কীয় হাদিসটিরই ৭ শতের মত সনদ রয়েছে- তাদবীন, ৫৪ পৃ) অথচ আমাদের মুহাদ্দিসগণ যে হাদিসের যতটি সনদ রয়েছে সেটিকে তত সংখ্যক হাদিস বলে গণ্য করেন।

হাদিসের সংকলন ও তাঁর প্রচারঃ

সাহাবায়ে কিরাম (রঃ) মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তাঁর প্রতিটি কাজ ও আচরণ সুক্ষ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতেন এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিস চর্চাকারীর জন্য মহানবীর দুআঃ

হাদিস চর্চাকারীর জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত দু’আ করেছেনঃ

'আল্লাহ সেই ব্যাক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন, যে আমার কথা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখল, তাঁর পূর্ণ হিফাযত করল এবং এমন লোকের কাছে পৌঁছে দিল, যে তা শুনতে পায়নি।' -তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ ৯০

মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দান করে বললেনঃ 'এই কথাগুলো তোমরা পুরোপুরি স্মরণ রাখবে এবং যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তাঁদের কাছেও পৌঁছে দেবে।' -সহিহ বুখারী

তিনি সাহাবীগণকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ 'আজ তোমরা (আমার নিকট দীনের কথা) শুনেছ, তোমাদের নিকট থেকেও (তা) শুনা হবে।' -মুসতাদরাক হাকিম, ১ খ, পৃ ৯৫

তিনি আরও বলেনঃ 'আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদিস শুনতে চাবে। তাঁরা এই উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাঁদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাঁদের নিকট হাদিস বর্ণনা করো।' -মুসনাদ আহমদ

তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ 'আমার নিকট থেকে একটি বাক্য হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।' -সহিহ বুখারী

৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরের দিন এবং ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের ভাষণে মহানবী (সঃ) বলেনঃ 'উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট আমার কথাগুলো পৌঁছে দেয়।' -সহিহ বুখারী



প্রধানত কয়েকটি শক্তিশালী উপায়ে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিস সংরক্ষিত হয়ঃ

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উল্লেখিত বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তাঁর সাহাবীগণ হাদিস সংরক্ষনে উদ্যোগী হন। প্রধানত নিম্নোক্ত শক্তিশালী উপায়গুলো অবলম্বনে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিসগুলো সংরক্ষিত হয়ঃ

(১) উম্মতের নিয়মিত আমল,
(২) রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর লিখিত ফরমান,
(৩) সাহাবীদের নিকট লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদিস ও পুস্তিকা এবং
(৪) হাদিস মুখস্থ করে স্মৃতিভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, তারপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরম্পরায় তাঁর প্রচার।

উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল, পারম্পারিক পর্যালোচনা, শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদিস সংরক্ষিত হয়। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবীগণ সাথে সাথে তা কার্যে পরিণত করতেন। তাঁরা মসজিদ অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদিস আলোচনা করতেন। আনাস ইবন মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, 'আমরা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট হাদিস শুনতাম। তিনি যখন মজলিশ থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শ্রুত হাদিসগুলো পরস্পর পুনরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদিসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তুরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত।' -আল-মাজমাউয-যাওয়াইদ, ১খ, পৃ ১৬১

তদানীন্তন আরবদের স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে প্রখর ছিল। কোন কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখবার জন্য একবার শ্রবণই তাঁদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাঁদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিলেন। হাদিস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবীগণ পরিপূর্ণ মনযোগ, বিপুল আগ্রহ এবং নিঃখাদ আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। তদানীন্তন মুসলিম সমাজে প্রায় এক লক্ষ লোক রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বানী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, 'আমরা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিস মুখস্থ করতাম।' -সহীহ মুসলিম, ভূমিকা, পৃ ১০

মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে স্বয়ং নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবদ্দশায় যে শিক্ষায়তন গড়ে উঠেছিল সেখানে একদল বিশিষ্ট সাহাবী যাদেরকে বলা হতো আহলুস সুফফা, তারা সার্বক্ষণিকভাবে কুরআন-হাদিস শিক্ষায় রত থাকতেন। হাদিস সংরক্ষণের জন্য যথাসময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লেখনী শক্তিরও সাহায্য নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন মাজীদ ব্যতিত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হত না। পরবর্তীকালে হাদিসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। 'হাদীস নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তাঁর ইন্তেকালের শতাব্দী কাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারনা কোন কোন মহল থেকে প্রচার করার পায়তারা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে মূলতঃ তাঁর আদৌ কোন ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কুরআনের সঙ্গে হাদিস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশংকায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায় রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেনঃ 'আমার কোন কথাই লিখ না। কুরআন ব্যতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্য কিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।' -সহিহ মুসলিম

কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশংকা ছিল না, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সকল ক্ষেত্রে হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন।

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, 'হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি হাদিস বর্ণনা করতে চাই। তাই আপনি যদি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।'

তিনি বললেনঃ 'আমার হাদিস কণ্ঠস্থ করার সাথে সাথে লিখেও রাখতে পার।' -দারিমী

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আরও বলেন, 'আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবী আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন।'

তারা এ কথা বলার পর আমি হাদিস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ 'তুমি লিখে রাখ। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।' -আবূ দাঊদ, মুসনাদ আহমাদ, দারিমী, হাকিম, সুনানে বায়হাকী

তাঁর সংকলনের নাম ছিল ‘সাহীফায়ে সাদিকা’। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সাদিকা হাদীসের একটি সংকলন – যা আমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট শুনেছি।' -উলূমুল হাদীস, পৃ ৪৫

উল্লেখ্য, এই সংকলনের এক হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ ছিল।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস – ষষ্ঠ ভাগঃ

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, এক আনসারী সাহাবী রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আরয করেলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ 'তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।' তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন- -তিরমিযী, হাদিসটি যঈফ

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দিলেন। আবূ শাহ ইয়ামানী (রঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ ভাষণ আমাকে লিখে দিন। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণটি তাঁকে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেন। -বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ

হাসান ইবন মুনাব্বিহ (রঃ) বলেন, আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আমাকে বিপুল সংখ্যক কিতাব (পাণ্ডুলিপি) দেখালেন। তাতে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিস লিপিবদ্ধ ছিল। -ফাতহুল বারী

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সংকলনের একটি কপি (ইমাম ইবনে তাইমিয়ার হস্তলিখিত) দামেশক এবং বার্লিনের লাইব্রেরিতে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে।

আনাস ইবন মালিক (রঃ) তাঁর (স্বহস্ত লিখিত) সংকলন বের করে ছাত্রদের দেখিয়ে বলেন, আমি এসব হাদিস নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট শুনে লিখে নিয়েছি। পরে তাঁকে তা পড়ে শুনিয়েছি। -মুসতাদরাক হাকিম,৩য় খ, পৃ ৫৭৩

রাফি’ ইবন খাদীজ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিস লিখে রাখার অনুমতি দেন। তিনি প্রচুর হাদিস লিখে রাখেন। -মুসনাদে আহমেদ

আলী ইবন আবূ তালিব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুও হাদিস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত তাঁর প্রণিত সংকলনটি তাঁর সঙ্গেই থাকতো। তিনি বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট থেকে এ সহীফা ও কুরআন মজীদ ব্যতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখিয়েছিলেন। এতে যাকাত, রক্তপাত (দিয়াত), বন্দীমুক্তি, মদীনার হরম সম্পর্কিত বিষয়সহ আরও অনেক বিষয়াদির বিধানাবলীর উল্লেখ ছিল। -বুখারী, ফাতহুল বারী

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর পুত্র আবদুর রহমান একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসে শপথ করে বললেন, 'এটা ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর সহস্তে লিখিত।' -জামি’বায়নিল ইলম, ১খ, পৃ ১৭

স্বয়ং নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদীনায় পৌঁছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন (যা মদীনার সনদ নামে খ্যাত), হুদাইবিয়ার প্রান্তরে মক্কার মুশারিকদের সাথে সন্ধি করেন, বিভিন্ন সুময়ে যে ফরমান জারি করেন, বিভিন্ন গোত্র-প্রধান ও রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের যে দাওয়াতনামা প্রেরন করেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোত্রকে যেসব জমি, খনি ও কুপ দান করেন তা সবই লিপিবদ্ধ আকারে ছিল এবং তা সবই হাদিসরূপে গণ্য।

এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমানিত হয় যে, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময় থেকেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয়। তাঁর দরবারে বহু সংখ্যক লেখক সাহাবী সবসময় উপস্থিত থাকতেন এবং তাঁর মুখে যে কথাই শুনতেন, তা লিখে নিতেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আমলে অনেক সাহাবীর নিকট স্বহস্তে লিখিত সংকলন বর্তমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ, আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর 'সাহীফায়ে সাদিকা', আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর সংকলন সমধিক খ্যাত।

সাহাবীগণের সংস্পর্শে থেকে তাদের নিকট থেকে সরাসরি হাদিস সংরক্ষন করেন তাবিঈগণ

সাহাবীগণ যেভাবে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট থেকে হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন। তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবীগণের কাছে হাদিসের শিক্ষা লাভ করেন। একমাত্র আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর নিকট আটশত তাবিঈ হাদিস শিক্ষা করেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব, উরওয়া ইবনু জুবাইর, ইমাম যুহরী, হাসান বসরী, ইবন সিরীন, নাফি, ইমাম যয়নুল আবেদীন, মুজাহিদ, কাযী শুরাইহ, মাসরূহ, মাকহুল, ইকরিমা, আতা, কাতাদা, ইমাম শা’বী, আলকামা, ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) প্রমুখ প্রবীণ তাবিঈর প্রায় সকলে ১০ম হিজরীর পর জন্মগ্রহন করেন এবং ১৪৮ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। অন্যদিকে সাহাবীগণ ১১০ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, তাবিঈগণ সাহাবীগণের দীর্ঘ সাহচর্য লাভ করেন। একজন তাবিঈ বহু সংখ্যক সাহাবীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবনের ঘটনাবলি, তাঁর বানী, কাজ ও সিদ্ধান্তসমূহ সংগ্রহ করেন এবং তা তাঁদের পরবর্তীগণ অর্থাৎ তাবে-তাবিঈনের নিকট পৌঁছে দেন।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু থকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র উম্মতের মধ্যে হাদিসের জ্ঞান পরিব্যাপ্ত করে দেন। এ সময় ইসলামী বিশ্বের খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদিস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান জারি করেন। ফলে সরকারী উদ্যোগে সংগৃহীত হাদিসের বিভিন্ন সংকলন রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলীফা সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন। এ কালের ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)-এর নেতৃত্বে কূফায় এবং ইমাম মালিক (রঃ) তাঁর মুওয়াত্তা গ্রন্থ এবং ইমাম আবূ হানীফার দুই সহচর ইমাম মুহাম্মদ ও আবূ ইউসুফ (রঃ) ইমাম আবু হানীফার রিওয়ায়াতগুলো একত্র করে ‘কিতাবুল আসার’ সংকলন করেন। এ যুগের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিস সংকলন হচ্ছেঃ জামি’ সুফইয়ান সাওরী, জামি’ ইবনুল মুবারক, জামি’ ইমাম আওযাঈ, জামি’ ইবন জুরাইজ ইত্যাদি।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদিসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে হাদিসের প্রসিদ্ধ ইমাম-বুখারী, মুসলিম, আবূ ঈসা তিরমিযী, আবূ দাঊদ সিজিস্তানী, নাসাঈ ও ইবন মাজা (রঃ)-এর আবির্ভাব হয় এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদিস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রঃ) তাঁর 'কিতাবুল উম্ম' ও ইমাম আহমাদ (রঃ) তাঁর 'আল-মুসনাদ' গ্রন্থ সংকলন করেন। হিজরীর চতুর্থ শতকে 'মুসতাদরাক হাকিম', 'সুনান দারি কুতনী', 'সহীহ ইবন হিব্বান', 'সহীহ ইবন খুযায়মা', তাবারানীর 'আল-মু’জাম', 'মুসান্নাফুত-তাহাবী' এবং আরও কতিপয় হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়। ইমাম বায়হাকীর 'সুনানু কুবরা' ৫ম হিজরী শতকে সংকলিত হয়।

চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদিসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদিসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের শাখা-প্রশাখার উপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংকলের মধ্যে 'তাজরীদুস সিহাহ ওয়াস সুনান', 'আত-তারগীব ওয়াত তারহীব', 'আল-মুহাল্লা', 'মাসাবীহুস সুন্নাহ', 'নাইলুল আওতার' প্রভৃতি সমধিক প্রসিদ্ধ।

উপমহাদেশে হাদিস চর্চাঃ

বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কাল (৭১২ খৃ) থেকেই হাদিস চর্চা শুরু হয় এবং এখানে মুসলিম জনসংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইসলামী জ্ঞান চর্চা ব্যাপকতর হয়। ইসলামের প্রচারক ও বাণী বাহকগণ উপমহাদেশের সর্বত্র ইসলামী জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। খ্যাতনামা মুহাদ্দিস শায়ক শরফুদ্দীন আবূ তাওয়ামা (মৃ ৭০০ হি) ৭ম শতকে ঢাকার সোনারগাঁও আগমন করেন এবং কুরআন ও হাদিস চর্চার ব্যাপক ব্যবস্থা করেন। বঙ্গদেশের রাজধানী হিসেবে এখানে অসংখ্য হাদিসবেত্তা সমাবেত হন এবং ইলমে হাদিসের জ্ঞান এতদঞ্চলে ছড়িয়ে দেন। মুসলিম শাসনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল। বরং বর্তমান কাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। দারুল উলূম দেওবন্দ, মাযাহিরুল উলূম সাহারানপুর, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া- ঢাকা, ছারছিনা দারুসসুন্নাত মাদরাসা, নেছারাবাদ আলিয়া মাদরাসা- পিরোজপুর, মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালাবাগ প্রভৃতি হাদিস কেন্দ্র বর্তমানে ব্যাপকভাবে হাদিস চর্চা ও গবেষণার কাজ করে চলেছে। এভাবে যুগ ও বংশ পরম্পরায় মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদিস ভাণ্ডার আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং ইনশাল্লাহ অব্যাহতভাবে তা অনাগত মানব সভ্যতার কাছে পৌঁছতে থাকবে।

কৃতজ্ঞতায়: বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত হাদিস সংকলনের ইতিহাস গ্রন্থ, ইষৎ সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত।

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালোই ।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৯

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: চমৎকার আলোচনা

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



মোবারকবাদ। ভালো থাকার দুআ।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। মুসলমানের দুই টা হাতিয়ার কুরআন আর হাদীস। আল্লাহর হুকুম নবীর সুন্নত। দুই টি আকড়ে ধরলেই চূড়ান্ত সফলতা। দুই জাহানে সফল হতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:১৩

নতুন নকিব বলেছেন:



মুসলমানের দুই টা হাতিয়ার কুরআন আর হাদীস। আল্লাহর হুকুম নবীর সুন্নত। দুই টি আকড়ে ধরলেই চূড়ান্ত সফলতা। দুই জাহানে সফল হতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।

হাদিসে এই কথাটিই এসেছে। কুরআন এবং সুন্নাহ ছেড়ে দেয়ার কারণেই আজ আমাদের জলে স্থলে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। আল্লাহ পাক আমাদের অবস্থা সুসংহত করুন। কুরআন সুন্নাহ আঁকড়ে ধরে সহিহভাবে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।

অনেক ভালো থাকুন। কৃতজ্ঞতা।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: হাদীস সংরক্ষনের ইতিহাস কলেজে একবার প্রশ্ন এসেছিলো।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



নবী বা রসুল বলতে ১ জনই ছিলেন, তিনি মুসা (আ: ); উনি শিক্ষিত ছিলেন, নিজে সবকিছু লিখে রেখে গেছেন; সেইজন্য ইহুদীরা বিশ্বে এখনো সেরা; শুধু ছোট একটা মিথ্যা বলে গেছেন যে, আল্লাহের সাথে উনার কথা হয়েছিলো।

৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০২

নতুন বলেছেন: হাদিসের মূল কিতাবসমূহের মধ্যে ঈমান আহমদ ইবন হাম্বলের মুসনাদ একটি বৃহৎ কিতাব। এতে ৭ শত সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত পুনরুল্লেখ (তাকরার) সহ মোট ৪০ হাজার এবং ‘তাকরার’ বাদে ৩০ হাজার হাদিস রয়েছে। শায়খ আলী মুত্তাকী জৌনপুরীর মুনতাখাবু কানযিল উমমাল-এ ৩০ হাজার এবং মূল কানযূল উমমাল-এ (তাকরার বাদ) মোট ৩২ হাজার হাদিস রয়েছে। অথচ এই কিতাব বহু মূল কিতাবের সমষ্টি। একমাত্র হাসান আহমদ সমরকান্দীর ‘বাহরুল আসানীদ’ কিতাবেই এক লক্ষ হাদিস রয়েছে বলে বর্ণিত আছে। মোট হাদিসের সংখ্যা সাহাবা ও তাবিঈনের আসারসহ সর্বমোট এক লক্ষের অধিক নয় বলে মনে হয়। এর মধ্যে সহীহ হাদিসের সংখ্যা আরও কম। হাকিম আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরীর মতে প্রথম শ্রেণীর সহীহ হাদিসের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। সিহাহ সিত্তায় মাত্র পৌনে ছয় হাজার হাদিস রয়েছে। এর মধ্যে ২৩২৬ টি হাদিস মুত্তাফাকু আলাইহি। তবে যে বলা হয়ে থাকেঃ হাদিসের বড় বড় ইমামের লক্ষ লক্ষ হাদিস জানা ছিল, তাঁর অর্থ এই যে, অধিকাংশ হাদিসের বিভিন্ন সনদ রয়েছে। (এমনকি শুধু নিয়্যাত সম্পর্কীয় হাদিসটিরই ৭ শতের মত সনদ রয়েছে- তাদবীন, ৫৪ পৃ) অথচ আমাদের মুহাদ্দিসগণ যে হাদিসের যতটি সনদ রয়েছে সেটিকে তত সংখ্যক হাদিস বলে গণ্য করেন।

লক্ষাধিক হাদিস্বাহরুল আসানীদ কিতাবে আছে কিন্তু সিহাহ সিত্তায় মাত্র পৌনে ছয় হাজার হাদিস আছে।

তবে বাকি হাদিস সহী নয়? বাকি হাদিসে ঝামেলা আছে?

১০০০০০ হাদিসের মাঝে যদি ৫৭৫০ হাদিস ঠিক থাকে তবে ৫.৭৫% সহী বাকি ৭৪.৫% এ ঘাপলা আছে???

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২০

নতুন নকিব বলেছেন:



এতে ঘাপলার কিছু নেই। যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে অনেক হাদিসের পুনরুক্তি বা পুনরুল্লেখ, তাতো স্পষ্ট করে বলেই দেয়া হয়েছে।

নতুন ভাই,
এই সিরিজটির পেছনে আপনার ভূমিকা রয়েছে। সেজন্য কৃতজ্ঞতা। সাথে থাকুন। সামনের পর্বগুলোয় আরও সমৃদ্ধ ঘটনাবলি আসবে ইনশাআল্লাহ।

আপনার সূক্ষ্ম যুক্তি এবং দারুণ দৃষ্টিচালন আনন্দিত করে।

ভালো থাকুন।

৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩০

শের শায়রী বলেছেন: নকিব ভাই, লেখার আগে যদি এই সিরিজের আগের লেখার লিঙ্ক দিয়ে দিতেন তবে অনেক ভালো হত। আমার প্ল্যান হল এই সিরিজের লাষ্ট পোষ্ট টা আমি আমার প্রিয়তে নিয়ে রাখব তাই সেখানে যদি আগের লিঙ্ক গুলো দিয়ে রাখেন তবে অনেক উপকার হত। সুন্দর একটা সিরিজের জন্য ধন্যবাদ।

৮| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩১

মা.হাসান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ এই উপকারী লেখাটির জন্য। কয়েকটি বিষয়ে বলার লোভ সামলাতে পারছি না।

শেষ সময়ে শুধু আরবদেশে না গোটা পৃথিবীতেই লিখতে বা পড়তে পারতো এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম ছিল। লেখার মিডিয়াম ছিল মূলত পাথর বা চামড়া বা চওড়া হাড়। চীন দেশে দ্বিতীয় শতকে কাগজ আবিষ্কার হলেও সপ্তম শতকের আগে কাগজ এর কথা চীনের বাহিরে কেউ জানতো না। যেহেতু লেখক এবং লেখার মিডিয়াম দুটোরই প্রাপ্যতা দুর্লভ ছিল, বাধ্য হয়ে মানুষকে স্মৃতি শক্তির ব্যবহার করতে হতো। গোত্রপতিদের আদেশ নির্দেশ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কনভে করতে স্মৃতিশক্তিই ভরসা ছিল। তবে সংবাদ বহনকারীরা সাধারণত গোত্রপতিদের আংটি জুতা ইত্যাদি কোন চিহ্ন সাথে রাখতেন যা থেকে সংবাদ বহনকারীদের অথেন্টিসিটি বোঝা যেত।

হাদিসের চেইন বা সনদে যদি কোন দুর্বল স্মৃতিশক্তির লোক থাকে তবে ওই হাদীসকে সহীহ হিসাবে গ্রহণ করা হয় না।

একজন মানুষ ধর্ম মানবে কি মানবে না এই বিষয়ে দুনিয়াতে আল্লাহ তাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন।কিন্তু যিনি নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে বলেন -আমি কোরআন মানবো, হাদিস মানবো না - তিনি বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। হাদীস ছাড়া কোরআন থাকেনা। কোরআন আমাদের কাছে এসেছে নবীর মাধ্যমে । নবীর কথাকেই যদি স্বীকার না করি, তবে কোরানকে স্বীকার করব কেমন করে?

বিদায় হজের ভাষণে নবীজী বলে গেছেন আমাদের জন্য দুইটি বিষয় তিনি রেখে গেলেন- কোরআন এবং সুন্নাহ। বিদায় হজের ভাষণ একটি মুতাওয়াতির হাদিস অর্থাৎ অসংখ্য চেইন দ্বারা প্রমাণিত হাদিস , এত অধিক সংখ্যক লোকের কোন ভুল বিষয়ের উপর একমত হওয়া বাস্তবসম্মতভাবে সম্ভব না। নবীজি নিজেই যদি হাদিস মানতে বলে যান তবে আমরা নিজের গো থেকে না মানলে আমাদের সমস্যা।

আপনার পোস্টে আপনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন , হাদিস দ্বারা প্রমাণিত , নবীজি হাদিস লিখে রাখতে নিষেধ করেছেন , আবার হাদিস দ্বারা এটাও প্রমাণিত নবীজি হাদিস লিখে রাখতে বলেছেন। ব্যাখ্যার দিকে তাকালেই বোঝা যায় বিষয় দুটো আসলে সংঘাতপূর্ণ না । নিচে অল্প কথায় এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

সাহাবীদের মধ্যে লিখতে পারতেন এমন সাহাবী খুব বেশি ছিলেন না। এদের মধ্যে কেউ কেউ ওহী অর্থাৎ কোরআনের আয়াত লিখে রাখতেন। লেখার মিডিয়ামের স্বল্পতার জন্য এরকম সম্ভাবনা ছিল যে একই জায়গায় কোরআনের আয়াত এবং হাদীস লেখা হয়ে যেতে পারে যা পরবর্তীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী হাদিস লেখার অনুমতি দেননি। যে সমস্ত ক্ষেত্রে এই ধরনের সম্ভাবনা ছিল না সেসব ক্ষেত্রে হাদিস লেখার অনুমতি ছিল।

প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে কোরআন কম্পাইলেশন এর কাজ শেষ করা হয় । কোরআনের সাথে হাদিসের মিক্স আপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রোহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাঃ আমল থেকেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয় । কিন্তু আমরা যেটাকে মলাটবদ্ধ বই বলি , সেই আকারে হাদিসের ব্ই আসতে আরো বেশকিছু সময় লেগে যায়।

মুসলমানরা চীনাদের কাছ থেকে কাগজ তৈরির কৌশল শিখে অষ্টম শতকে। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত মালিক বিন আনাস রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জন্ম অষ্টম শতকের শুরুর দিকে, ৯৩ হিজরী সনে।

ইমাম মালেক অল্প বছর বয়সে কোরআন হেফজ করেন এবং ১৭ বছর বয়সে হাদিসে পারদর্শিতা অর্জন করেন। ইমাম শাফি ওনার ছাত্র ছিলেন । আব্বাসীয় খলিফা মনসুরের বারংবার অনুরোধ সত্বেও তিনি হাদিস সংক্রান্ত গ্রন্থ লিখতে প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করেন, কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করে ৪০ বছর পরিশ্রমের পর হাদীস শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ মুয়াত্তা রচনা করেন। আমাদের দেশের লোকেরা মূলত হানাফী মাযহাব অনুসরণ করেন বলে মুয়াত্তার কথাএখানে অতটা আলোচিত হয় না ।

মুয়াত্তা তে প্রায় আঠারোশো হাদিস স্থান পেয়েছে ।তাহলে প্রশ্ন করা যায় , ইমাম মালেক কি ধরে নিয়েছিলেন মাত্র এই কয়েকটি হাদীস ই সহি? উত্তর হল, মোটেও না। ইমাম মালিক এই বইটির হাদীসগুলো সংকলন করেছিলেন মূলত ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স এর প্রয়োজনে ।ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কোন হাদিস সঙ্গত কারণে বইটিতে স্থান পায়নি।

যে হাদীসগুলোতে সনদ মতনে বা কোনোভাবে কোন রকমের সন্দেহ আছে সেগুলি সহীহ হাদীস হিসেবে মুহাদ্দিসরা ক্লাসিফাই করেননি।সহি হাদিস নয় এমন কোন হাদিস থেকে শরীয়তের মাসলা নেয়া হয় না।

জাল হাদিস আর দুর্বল হাদিস এক না।

নবীজির ওফাতের ৩০০ বছর পর হাদিস সংকলন করা হয়েছে কথাটি ঠিক না । নবীজির জীবদ্দশাতেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয়েছিল। নবীজির ওফাতের দু আড়াইশো বছর পরেও মুহাদ্দিস রা চষে বেড়িয়েছেন, অন্য মুহাদ্দিস খুঁজে পাননি এমন কোন হাদিস যদি খুঁজে পাওয়া যায় এই আশায়।


৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৩

নতুন বলেছেন: রাসুল সা: এর সময়ে হাদিস লিখে সংকলন করা হয় নি।

রাসুল সা: নিজে কোরান সংকলন করে যান নি। সেটা করতে কোন নিদেশ`নাও দিয়ে জান নাই।

সেই সময়ে রাসুল সা: একটা কথা বলেছেন বা করেছেন সেটা লিখে রেখেছিলো সেটা বলা কতটুকু বাস্তব?

সাহাবারা মনে রেখেছিলেন এবং সেটা পরে সংগ্রহ করা হয়েছিলো।

আন্তরিকরা ছিলো সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

কিন্তু বত`মানে হাদিসের উপরে ভিক্তি করে যখন কোন বিষয়ের উপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই ভেবে যে এই হাদিস ১০০% সহী তখন প্রশ্ন আসতেই পারে।

যেমন গান বাজনা হারাম বলে কিন্তু কোরানে গান বাজনা হারাম উল্লেখ নাই।
পদা` করা ফরজ কিন্তু নারীদের চোখ,মুখ,হাতমোজা, পায়ে মোজা পরে থাকতে হবে সেটা হাদিসের ভিক্তিতে প্রচার হয়।

এমন অনেক বিষয় হাদিসের ভিক্তিতে প্রচার হয় কিন্তু যেখানে হাদিস ১০০% সত্যি নাও হতে পারে।

১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৮

মা.হাসান বলেছেন: ৮ নম্বরে ভুল করে হজরত মালেক বি আনাসকে তাবেয়ী লিখে ফেলেছি। উনি প্রকৃত পক্ষে তাবে তাবেইনদের একজন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.