নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান ২০২০; এই রমজান হোক আমাদের কুরআন শেখার মাস; কুরআন শেখা ও শেখানোর ফজিলত; কুরআন খতমের সহজ পদ্ধতি

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৯



স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান ২০২০; এই রমজান হোক আমাদের কুরআন শেখার মাস; কুরআন শেখা ও শেখানোর ফজিলত; কুরআন খতমের সহজ পদ্ধতি

স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান ২০২০:
আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের অতি সন্নিকটে। আর মাত্র এক দু'দিন পরেই ইনশাআল্লাহ আমরা পেয়ে যাব আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র রমজানের সান্নিধ্য। আমরা হৃদয়-মন উজার করে স্বাগত জানাচ্ছি পবিত্র মাহে রমজানকে।

রমজান মানে কি?
'রমজান' বা 'রমাদান' আরবি শব্দ। 'রমদুন' মূল ধাতু থেকে এসেছে শব্দটি। এর অর্থ- 'পুড়িয়ে দেয়া' বা 'জ্বালিয়ে দেয়া'। মূলত: রমজানে দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনা, তাওবা ইস্তিগফার, ইবাদত-বন্দেগী, আল্লাহ পাকের নিকট বিনীত অন্তরে কায়োমনোবাক্যে রোনাজারি আর কান্না-কাটিরর মাধ্যমে বান্দা তার বিগত জীবনের সমস্ত পাপ-তাপ পুড়িয়ে দিয়ে সাচ্চা হয়, খাঁটিত্ব তথা আত্মশুদ্ধিলাভে ধন্য হয় বলেই এই মাসটির নাম 'রমজান' বা 'রমাদান' রাখা হয়েছে।

গত ক'দিন আগে আমরা শবে বরাতের বিশেষ ফজিলতের রাত অতিবাহিত করেছি। মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে ক্ষমার প্রত্যাশায়, দুনিয়া আখিরাতের কল্যান চেয়ে নিমগ্ন চিত্তে ইবাদত বন্দেগী আর আমলের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের সাথে আমরাও কাটিয়েছি পবিত্র এ রাতটি। আল্লাহ পাক আমাদের অতি সামান্য, অতি নগন্য আমলের ভুল ত্রুটি না দেখে দয়া করে যেন তা কবুল করে নেন।

রমজান তো সন্নিকটে; আমাদের করনীয় কি?
পবিত্র রমজান রহমত, বরকত, ক্ষমা এবং নাজাতের মাস। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসগুলোর একটি ফরজের তুল্য। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তুরটি ফরজের সমান। সুতরাং, আমাদের চিন্তা এবং পরিকল্পনা থাকা দরকার, এত দামি মাসের দামি সময়গুলোকে কিভাবে সর্বাধিক কাজে লাগানো যায়। এ বরকতপূর্ণ মাসেই নাজিল হয়েছে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা ঐশিগ্রন্থ আল কুরআন। এ মাসে খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সকল দরজা। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় দুষ্টু শয়তানকে। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নিয়োজিত একজন ঘোষণাকারী আহ্বান জানাতে থাকেন ভাল কাজের দিকে এবং বিরত থাকতে বলেন নিকৃষ্ট এবং গর্হিত সকল কাজ থেকে। সাথে সাথে এই রমজান হচ্ছে- মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর- যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

মাহে রমজান মহান এক ব্যতিক্রমী বিদ্যাপীঠ; মাহে রমজান আল কুরআনের মাস:
আমরা জানি। রমজানের অসাধারণ ফজিলতের কথাগুলো আমাদের সকলেরই প্রায় জানা। তবু এত এত ফজিলতের পবিত্র রমজান আমাদের অনেকের নিকট যেন নিছক সিয়াম পালন আর তারাবীহ আদায়ের মাস এটি। আমরা সাহরি খেয়ে নিয়মিত রোজা রাখি। ইফতার করার মাধ্যমে আবার রোজা খুলি। আর এভাবেই যথানিয়মে প্রতিবছরের ন্যায় পেরিয়ে যায় আমাদের প্রিয় রমজান মাস। আমরাও মনে মনে তুষ্টি অনুভব করি যে, বেশ হয়েছে! যথেষ্ট হয়েছে! পুরো মাস রোজা রেখেছি! ব্যাস! আর চিন্তা কীসের? এর চেয়ে বেশি ভালো আমল আর কীইবা হতে পারে? হয়তো এটা ভেবেও আমরা আনন্দিত হই, দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি- এটাও কি কম কিছু? না, প্রিয় বন্ধু, মহিমান্বিত রমজানের আবেদন শুধুই এটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। পবিত্র এই রমজানের আমাদের নিকট আরও কিছু চাওয়ার রয়েছে। রমজানের এই স্নিগ্ধ মলয়ের একটি মাস থেকে আমাদের আরও কিছু গ্রহনের এবং অর্জনের রয়েছে। পবিত্র মাহে রমজান শুধু রোজা রাখার একটি মাস নয়; এ যেন বিদ্যার্জনের বিশাল এক মাহেন্দ্রক্ষন। পুরো রমজান মাস যেন জ্ঞানের সন্ধানে জাগরিত হওয়ার নিমিত্তে কিছু আলোকিত মুহূর্তের সমষ্টি। রমজানকে ধরে নেয়া যায় এক মহান বিদ্যাপীঠ আর ব্যতিক্রমী পাঠশালা হিসেবে। বিদ্যার্জনের মোক্ষম সময় পুরো এই মাসটি জুড়ে। পবিত্র এ রমজানে আমরা যেসব নেক আমল করতে পারি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আল কুরআন পাঠ। চেষ্টা করা অর্থসহ বুঝে বুঝে পুরো কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। কুরআনে পাক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খতম দেয়া। কারণ, মাহে রমজান আল কুরআনের মাস। আল কুরআন নাজিলের মাস। আল কুরআন তিলাওয়াতের মাস। আল কুরআন বুঝার মাস। আল কুরআন শিক্ষা করার মাস। আল কুরআন আত্মস্থ করার মাস। আল কুরআন মুখস্ত করার মাস।

হাদিসে এসেছে, রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 'সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে…।'

আরেক হাদিসে এসেছে, 'রমজানে জিবরাইল আলাইহিসসালাম রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরাইল আলাইহিসসালামের কাছে তুলে ধরতেন।'

আল কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত এ জিকির থেকে বঞ্চিত না থাকা।

প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা তো অনেকেই কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি না। এই পবিত্র মাসে কুরআন তিলাওয়াতের বরকত এবং সাওয়াবলাভে আমাদের করণীয় কি?

আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি না আমাদের করণীয়:
আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ, আমাদের উচিত আজই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যে, এই রমজানের একটি মাস কুরআন শেখার পেছনে ব্যয় করবো। প্রতি দিন এক ঘন্টা কিংবা আধা ঘন্টা করে সময় ব্যয় করে এই পবিত্র গ্রন্থ পাঠের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। আলহামদুলিল্লাহ, আজ কাল শহরে গ্রামে প্রায় স্থানেই বয়স্কদের জন্য কুরআন শেখার ব্যবস্থা চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে এই উদ্যোগ অনেকেই গ্রহন করে থাকেন। যারা এই ব্যবস্থা করে থাকেন, তাদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে কল্যানের দুআ। আপনার নিকটবর্তী মসজিদ কিংবা মাদরাসায় খোঁজ নিয়ে আজই যোগাযোগ করে দেখুন, যার তিলাওয়াত সহি এমন একজনের নিকট কুরআন শেখার ব্যব্স্থা করে নিন।

রমজানে কুরআন শেখার জন্য উত্তম সময় কোনটি?
ইশা এবং তারাবীহ নামাজের পরের সময়টাকে অনেকে বেছে নেন কুরআন শেখার জন্য। এছাড়া কর্মব্যস্ত ব্যক্তিগন সাহরি খাওয়ার পরে বাদ ফজর কুরআন শেখার জন্য কিছু সময় বের করে নিতে পারেন। আর যাদের হাতে সময় রয়েছে তারা যুহর বাদ কিংবা দিন রাতের সুবিধাজনক যে কোনো সময় কাজে লাগাতে পারেন।

আচ্ছা, আমাদের প্রত্যেকেরই কি পবিত্র কুরআন শিখে নেয়া জরুরী?
জ্বি, আমাদের প্রত্যেকের জন্য কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক। কুরআনুল কারিমের যতটুকু না জানা থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ফরজ আমলগুলো করা যায় না, ততটুকু শিক্ষা করে নেয়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরজ।

কুরআনুল কারিম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
কুরআনুল কারিম শিক্ষার গুরুত্ব বুঝার জন্য কিছু বিষয় আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। সংক্ষিপ্তভাবে পয়েন্ট আকারে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি-

এক. কুরআন শিক্ষা ফরয:
আমাদের অনেক ভাইদের ধারণা, কুরআন শুধু আলেম হাফেজ প্রমুখ ব্যক্তিগন পড়বেন। এই গ্রন্থ সকলের শিখতে হবে কেন? কিন্তু না, প্রকৃত বিষয় হচ্ছে- প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআনুল কারিম পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١]

অর্থ: ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’। -সূরা আলাক : ১

কুরআনুল কারিম শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রখ্যাত সাহাবি ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ»

অর্থ:‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’। -মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ:৮৫৭২

দুই. নামাজ আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা অপরিহার্য্য:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঈমানদার বান্দাহদের উপর দৈনিক পাচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। নামাজে কুরআন তিলাওয়াত বাধ্যতামূলক। কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত ব্যতিত নামাজ হয় না। তাই নামাজ আদায় করার জন্য কুরআন শিক্ষা করার বিকল্প নেই। অনেকেই আমরা ছোট ছোট কিছু সূরাহ শিখে নিয়েছি- যাতে সেগুলো দিয়ে অন্তত: নামাজ আদায় করা যায়। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ বাংলা উচ্চারণ দেখে দেখে শিখে নিয়েছি, কিংবা কেউ অপরের তিলাওয়াত শুনে শুনে মুখস্ত করে নিয়েছি, যার ফলে আমরা যারা সহিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম নই, আমাদের অনেকেরই তিলাওয়াত সহি নয়, তবু আপাতত: চলার জন্য এটা ঠিক আছে। এটাকে অবশ্যই ভালো কাজ বলতে হবে। কিন্তু এটাতো সাময়িক। সুদীর্ঘ জীবন নামাজ পড়ার জন্য আপনার অবশ্যই সময় সুযোগ বের করে কুরআনুল কারিম শিখে নেয়া উচিত। কারণ, নামাজ সহি হওয়ার জন্য তিলাওয়াত সহি হওয়া আবশ্যক। কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ فَٱقۡرَءُواْ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]

অর্থ: ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’। -সূরা আল-মুযযাম্মিল: ২০

নামাজে সূরাহ পড়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاََ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ».

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। -সহীহ বুখারী:৭৫৬

তিন. কুরআনুল কারিমের বানী প্রচারের জন্য কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক:
কুরআন মাজীদে কুরআনের বানী প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরাম কুরআনুল কারিমের প্রচার এবং প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। আর এই তাবলীগে দ্বীনের মহান কাজের জন্য প্রতিপালকের নিকট রয়েছে অফুরন্ত প্রতিদান। কিন্তু যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে? সুতরাং কুরআনুল কারিমের বানীর প্রচার এবং প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে পাকে বলা হয়েছে,

﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]

অর্থ: 'হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও।'-[সূরা মায়িদাহ : ৬৭

চার. কুরআনুল কারিম শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি:
মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআনুল কারিমের শিক্ষার মাধ্যমেই আনয়ন করা সম্ভব। কুরআন তিলাওয়াত করলে অন্তরে শান্তি আসে। হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ বয়ে যায়। চক্ষু শীতলতা লাভ করে। তিলাওয়াতে কালামুল্লাহর এমনই তাছির- মৃত অন্তরও এর সংস্পর্শে এসে জিন্দা হয়ে যায়। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,

﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ٢٨ ﴾ [الرعد: ٢٨]

অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’। -সূরা আর-রা‘দ:২৮

পাঁচ.হেদায়াত লাভের জন্য প্রয়োজন কুরআন শিক্ষা করা:
কুরআনুল কারিমের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেজন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআনে হাকিমে বলা হয়েছে,

﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ﴾ [الاسراء: ٩]

অর্থ: ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’। -সূরা বনি-ইসরাঈল:০৯

ছয়. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা:
প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ঘোষিত জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদিসে এসেছে,

«اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ».

অর্থ: 'সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ কবূল করুন। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ কবূল করুন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে।' -মুসনাদ আহমাদ: ৬৬২৬

কুরআনুল কারিম শিক্ষা করা এবং তিলাওয়াতের ফযিলত:
এক. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত আল্লাহ তাআ'লার সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা:
কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত আল্লাহ তাআ'লার সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দু'টিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩، ٣١]

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। -সূরা ফাতির ২৯-৩০

দুই. কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ করে:
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অর্জিত হয় বিরাট সওয়াব। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»

যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। -সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০

তিন. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:
কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»

অর্থ: তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। -[বুখারী: ৫০২৭

চার. কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে:
কিয়ামতের দিন ভয়াবহ অবস্থায় আল কুরআন স্বয়ং তিলাওয়াতকারীর পক্ষে আল্লাহ তাআ'লার নিকট সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

«اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ»

অর্থ:‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ -মুসলিম: ১৯১০

পাঁচ. কুরআন তিলাওয়াত উত্তম সম্পদ অর্জন:
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنْ الْإِبِلِ»

'তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহ তাআ'লার কালাম কুরআন হতে দু'টি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? কেউ যদি এটা করে তাহলে সেটি তার জন্য দু'টি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।' -সহীহ মুসলিম : ১৩৩৬

ছয়. কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে:
কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত বান্দাহর জন্য এমন উপকারী যে, তা তিলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন-

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]

অর্থ: ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’। -সূরা আনফাল:২

সাত. কুরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি:
কোন ব্যক্তি কুরআনুল কারিমের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তিলাওয়াত করলে তার সাথে ঈর্ষা বা তার মত হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে। হাদিসে এসেছে-

«لاََ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهْوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالاً فَهْوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ»

অর্থ: ‘একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ঐ কোরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে’ -সহীহ বুখারী :৭৫২৯

কুরআনুল কারিম শিক্ষা না করার পরিনতি:
এক. আল্লাহ তাআ'লার দরবারে কিয়ামতের দিন রাসূলের অভিযোগ দায়ের:
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ দায়ের করবেন। কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে-

﴿ وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِي ٱتَّخَذُواْ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورٗا ٣٠ ﴾ [الفرقان: ٣٠]

অর্থ: আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। -সূরা আল-ফুরকান-৩০

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসীরবিদ আল্লামা ইবন কাসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- কুরআন না পড়া, কুরআনে বর্ণিত বিধি-বিধান অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা- এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল। আল্লাহ পাক আমাদের এমন দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করুন।

দুই. কুরআন থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, কিয়ামতে অন্ধ হয়ে উঠবে তারা:
কুরআন শিক্ষা করা থেকে যারা বিমুখ হয়ে থাকবে, কুরআনের সাথে সম্পর্কহীন যাদের জীবন, কতইনা দুর্ভাগ্য তাদের! তাদের পরিনতি সম্মন্ধে আল কুরআনে বলা হয়েছে-

﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [طه: ١٢٤، ١٢٦]

অর্থ: 'আর যে আমার যিকর (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশচয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন! তিনি বলবেন, অনুরুপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অত:পর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল।’ -সূরা ত্ব-হা-১২৪-১২৬

তিন. মূক, বধির অবস্থায় ঊঠবে:
সবচেয়ে বড় হেদায়েত আল-কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের কিয়ামতের দিন মূক ও বধির অবস্থায় উঠানো হবে। আল কুরআনে এসেছে-

﴿ وَنَحۡشُرُهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ عُمۡيٗا وَبُكۡمٗا وَصُمّٗاۖ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧]

'আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরও বাড়িয়ে দেব।' -সূরা বনি-ঈসরাইল:৯৭

চার. গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত:
কুরআন শিক্ষা না করা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। আল কুরআনে এসেছে-

﴿أُوْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ ١٧٩ ﴾ [الاعراف: ١٧٨]

অর্থ: ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট। এরাই হলো গাফেল।’ -সূরা আরাফ-১৭৯

পাঁচ. কুরআন দলিল হিসাবে আসবে:
কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :

«وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ»

অর্থ: 'কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল।' -সহীহ মুসলিম: ৩২৮

ছয়. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে:
জাহান্নামের মত ভয়াবহ কঠিন জায়গা আর নেই। কুরআন শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْقُرْآنُ مُشَفَّعٌ ، وَمَا حِلٌ مُصَدَّقٌ ، مَنْ جَعَلَهُ إِمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ.»

অর্থ: ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ -সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪

সাত. আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে:
কুরআন শিক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ وَإِنَّهُۥ لَذِكۡرٞ لَّكَ وَلِقَوۡمِكَۖ وَسَوۡفَ تُسۡ‍َٔلُونَ ٤٤ ﴾ [الزخرف: ٤٤]

অর্থ: 'নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।' -সূরা যুখরুফ : ৪৪

কুরআন শিক্ষায় করণীয়:

[১] ভাল শিক্ষকের কাছে পড়া:
যিনি সহীহভাবে কুরআন পড়তে পারেন তার নিকটই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে যে শিক্ষকের কুরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে তার কাছে পড়লে আরো ভাল হয়।

[২] নিয়মিত পড়া:
সহীহভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেয়া দরকার। যদিও কম সময় হয়। প্রতিদিন শেখার মধ্যে থাকলে সহীহভাবে কুরআন শিক্ষা সহজ হবে এবং যা শেখা হবে তা আয়ত্ত্বে থাকবে।

[৩] মশক করা:
কোন যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করলে পড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মশক হলো- শিক্ষক পড়বে তারপর সেভাবে ছাত্রও পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিডির মাধ্যমেও মশক করা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী মানশাওয়াভীর কুরআন প্রশিক্ষণ সিডির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

[৪] পরিবার পরিজন ও সন্তানদের শিক্ষা দেয়া:
প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে এসেছে,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا ﴾ [التحريم: ٦]

অর্থ:‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও’ -সূরা তাহরীম-৬

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,

«عَلَيْكُم بِالْقُرْآَن ، فَتَعَلَّمُوه وَعَلَّمُوه أَبْنَائِكُم ، فَإِنَّكُم عَنْه تُسْأَلُوْن ، وَبِه تُجْزَوْن»

অর্থর্: কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। -শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬

[৫] ফযিলাতপূর্ণ সূরাগুলো বেশী বেশী করা:
ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِى لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ. قَالُوا :وَكَيْفَ يَقْرَأُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ قَالَ : (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) يَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ.»

‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে তিনি বললেন, (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।’ -সহীহ বুখারী: ৫০১৫

অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরয নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া। আল্লাহ তা‘আলা পাঠকসহ আমাদের সকলকে কুরআন শিক্ষার তাওফীক দিন।

যে পদ্ধতিতে কুরআন খতম করা অতি সহজ:
আমরা যারা আল কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি এবং এই পবিত্র মাস রমজানে কুরআন তিলাওয়াত করে খতম করতে চাই আমরা প্রতিদিন কিভাবে এবং কতটুকু করে পড়লে পবিত্র মাস রমজানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার পবিত্র কালাম আল কুরআন পাঠ শেষ করতে পারবো, আসুন আজ এই বিষয়ে সুন্দর একটি কৌশল শিখে নিই। প্রত্যাশা রাখি, আমাদের নিতান্ত ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টা এবং পরামর্শ আপনাদের সামান্য হলেও কাজে আসবে। আল্লাহ পাক সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

আমাদের উদ্দেশ্য:
পবিত্র রমজান মাসে সম্পূর্ণ কুরআনুল কারিম অর্থসহ বুঝে পাঠ করা বা তিলাওয়াত করা।

কিভাবে পাঠ করতে হবে?
অর্থসহ বুঝে বুঝে প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে ৪ পৃষ্ঠা করে পড়ুন। তাতে ফলাফল কি দাঁড়ায়? ৫ ওয়াক্ত নামায x ৪ পৃষ্ঠা = ২০ পৃষ্ঠা। ২০ পৃষ্ঠা = ১ পারা।

১ পারা x ৩০ দিন = পুরা কুরআন শরিফ তিলাওয়াত খতম। আলহামদুলিল্লাহ, মা-শাআল্লাহ! কতই না সহজ! কতই না উত্তম!

হিম্মতে বলিয়ান হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজই:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের আসন্ন রমজানের রহমত, বরকত এবং খাইরিয়্যাতকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করার তাওফিক দান করুন। আমরা যারা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম আমাদের এই ঐশি বানীর মর্মার্থ বুঝে পবিত্র রমজানে পুরো কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করার কিসমত দান করুন। আর যারা এখনও পর্যন্ত সুমধুর এ বানীর পাঠ শিখে নিতে পারিনি, হে প্রভূ মহিয়ান, আপনার দরবারে বিনীত প্রার্থনা, আপনি আমাদের অন্তরে এই পরিমান ভালোবাসা কুরআনে কারিমের প্রতি জাগরুক করে দিন যাতে ব্যক্তিগত, সাংসারিক, পারিবারিক এবং অন্যবিধ সকল বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে সমাগত রমজানে পবিত্র এই কালামুল্লাহ শিখে নেয়ার হিম্মতে দৃঢ়পদ হয়ে আজই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে নিতে পারি। হে প্রভূ মহিয়ান, আপনি দয়া করে এ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আপনার বান্দার দুআ কবুল করুন।

নিবন্ধটি তৈরিতে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা: কুরআনের আলো ডট কম, ইমাম ডট বিডি ডট পোর্টাল ও অন্যান্য।

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: স্বাগতম মাহে রমজান-২০২০।

আমলে পরিপূর্ণ হোক এবারের সিয়াম সাধনা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৫

নতুন নকিব বলেছেন:



তাই হোক, আমিন।

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Ramadan mubarek

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৫

নতুন নকিব বলেছেন:



স্বাগতম।

৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ইনশাল্লাহ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৮

নতুন নকিব বলেছেন:



ইনশাআল্লাহ রোজাগুলো রাখবো। তারাবিহ পড়বো। কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত চালু রাখবো। তাই তো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.