নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।
আল্লাহ তাআ'লা ক্ষমাশীল, আশা রাখুন, তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন; ইসলাম মানবতা এবং প্রকৃতির ধর্ম, একে উপস্থাপন করুন সহজভাবেঃ
জানালার বাহিরের আকাশটা আজ অন্যরকম। অনেক কালো। মেঘ জমে একাকার। শীতল একটা বাতাসে সজনে গাছের সাদা ফুলগুলো তিরতির করে কাঁপছে। হাসনাহেনার সবুজ পাতাগুলো বারবার ঝুঁকে পড়ে মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছে। বোধহয় একটু পরেই ঝুম বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টিস্নাত সবুজ পত্রপল্লব স্নিগ্ধ মুগ্ধতা আনে পোড়া চোখেও।
প্রকৃতির নিয়মে আকাশের বুকজুড়ে মেঘ জমে। সারিসারি মেঘেদের ভেসে বেড়ানো দেখে মনে হয় যেন পেজা পেজা তুলাদের অনর্গল ছুটে চলা। জনপদ থেকে জনপদে। দিগন্ত থেকে দিগন্তে। আচ্ছা, মেঘেরা শুন্যে ভাসতে ভাসতে ক্লান্ত হয় কখনো? তা না হলে গগনবিদারি গর্জন তোলে কেন তারা? গর্জনে ফেটে পড়ে তাদের কান্নারই প্রাক প্রকাশ ঘটায় তারা? অতঃপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে অঝোর ধারায়? তারপরে মাঠ ঘাট, গাছপালা, পাহাড় গিরি - ধুয়ে সাফ করে দিয়ে যায় সব। পৃথিবীর পথে ঘাটে জমে থাকা ক্লেদ, গ্লানি আর অশুদ্ধতাকে দূর করে দিয়ে যায় পরম যত্নে।
আমার বুকের মাঝেও জমে ওঠে ক্লেদের ঢেউ। গ্লানির প্রস্রবন। অশুদ্ধতা অসূচিতার আবর্জনা। আমারও তো নিজেকে পরিশুদ্ধ করা দরকার। ইশ! আমার বুকের মধ্যেও যদি অনুতাপের মেঘেদের এমন আনাগোনা থাকতো! মেঘে মেঘে ভরে যেত আমারও বুকের পাটাতন! বুকফাটা আর্তনাদে আমিও যদি গর্জন করে কাঁদতে পারতাম মেঘেদের মতন! অতঃপর অশ্রু হয়ে অঝোরে ঝরে পড়তো ভারী ভারী সেই মেঘগুলো! আমার অন্তর তো ভারী হয়ে গেছে! কঠিন হয়ে গেছে! অনেক কঠিন! অনেক শক্ত! পাথরের চেয়েও কঠিন! শিলার চেয়েও শক্ত!
কিন্তু পাথর ফেটেও তো মাঝে মাঝে ঝরনা বের হয়ে আসে। وَإِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الأَنْهَارُ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَاء وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللّهِ 'কিছু কিছু পাথর তো এমনও রয়েছে, যা থেকে ঝরনা প্রবাহিত হয়, এমন পাথরও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হয় এবং এমনও পাথর আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে!' For among rocks there are some from which rivers gush forth; others there are which when split asunder send forth water; and others which sink for fear of Allah. -আল কুরআন, সূরা আল বাক্কারাহ, আয়াত ৭৪।
কিন্ত আমার অন্তর তো আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর স্মরনে বিগলিত হয় না। শেষ কবে নামাজে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল হয়েছি, পাপের কথা মনে করে একটু কেঁদেছি, মহান রব্বে কারিমের সামনে নত মস্তকে কৃত অপরাধের ক্ষমা চেয়ে আরাধনায় নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে একাকার করেছি- মনে পড়ে কি? গোপনে লুকিয়ে বারবার করা পাপ কাজটার জন্য গভীর রাতে, একাকি জায়নামাজে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে শেষ কবে ক্ষমা চেয়েছি, স্মরণে আসে কি?
ইসলাম সহজ এবং মানবতার ধর্মঃ
ইসলাম মানবতার ধর্ম। প্রকৃতির ধর্ম। মানব বিশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এর বিধানাবলী সহজ। সহজে পালনযোগ্য। ব্যক্তি জীবন, সামাজিক পরিমন্ডল, রাষ্ট্রীয় পর্যায় - সকলক্ষেত্রে ইসলাম পরিপালন সহজ। ইসলাম মানবতা এবং প্রকৃতির ধর্ম; একে কঠিন করে তুলছি আমরাই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামগ্রিক জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই ইসলাম যে সহজ এবং মানবতার জীবন বিধান তার প্রমান পাওয়া যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن أنس بن مالك -رضي الله عنه- مرفوعاً: «يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، وَبَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا».
[صحيح.] - [متفق عليه.]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা ‘আনহু থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে) সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন কর না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, তাদেরকে দূরে ঠেলে দিও না।” -মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জন্য সকল কাজে হালকা ও সহজ করা পছন্দ করতেন। তাঁকে দু’টি জিনিসের মধ্যে কোনো একটি পছন্দ করতে বললে তিনি হারাম পর্যায়ের না হলে অধিকতর সহজটিই নির্বাচন করতেন। তাঁর বাণী “তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না।” অর্থাৎ সব ব্যাপারে তোমরা সহজকে অবলম্বন করো এবং তাঁর বাণী, “মানুষকে সুসংবাদ দাও, তাদেরকে দূরে ঠেলে দিও না।” সুসংবাদ হচ্ছে, কল্যাণের সংবাদ দেয়া, দূরে সরিয়ে দেওয়া এর বিপরীত। দূরে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম হচ্ছে অকল্যাণ ও অনিষ্টকর সংবাদ দেওয়া।
এ হাদিসের মর্মার্থ অনেক গভীর। এর শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজের সকল স্তরে। সাধারণ মানুষ এমনকি আলেম উলামা, মসজিদের ইমাম খতীব, ইসলামী চিন্তাবিদ, দায়ী ইলাল্লাহর দায়িত্বপালনকারী প্রত্যেকের ভেতরে এই অনুভূতি জাগ্রত করে দিতে হবে যে, ভয় দেখিয়ে নয়, আশার আলো দেখিয়ে, মানুষকে পজিটিভলি দ্বীনের প্রতি উদ্বুদ্ধ কতে তুলতে হবে। মানুষকে দ্বীনের দিকে ডাকতে হবে- জাহান্নামের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করে নয়, বরং তার বিপরীতে জান্নাতের অনিঃশেষ নাজ নেআমতের বর্ণনা উপস্থাপন করে।
কাউকে এই ভয় দেখানোর ভেতরে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা নেই যে, 'আপনার তো অপরাধের ফিরিস্তি বিশাল, আপনার ক্ষমা নেই'।
বলি, ভাই- কার ক্ষমা আছে, কার নেই - সেই ঘোষনা দেয়ার আমি আপনি আমরা তো কেউ নই! ক্ষমা করারও আমরা কেউ নই! ক্ষমা নেই সে কথা বলার অধিকার আমাকে আপনাকে কে দিয়েছে? আল্লাহ পাক স্বয়ং বলেছেন, 'তোমার পাপরাশি যদি আসমানের কিনার ছুঁয়ে যায় আর এ অবস্থায় তুমি আমার কাছে ফিরে আসো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব।' -হাদিসে কুদসী।
তো স্বয়ং আল্লাহ পাক বলছেন, বান্দা ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর সকাশে হাত বাড়ালে তিনি আকাশ প্রমান অপরাধও ক্ষমা করবেন, আর আপনি আমি আমরা তো বলছি বিপরীত কথা!
আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল, তিনি ভালোবাসেন আমাদেরঃ
আল্লাহ পাক ভালোবাসেন আমাদের। কিন্তু কতটুকু ভালোবাসেন তিনি আমাদেরকে? কতটুকু? তাঁর ভালোবাসা কি পরিমাপ করা যায়? তাঁর ভালবাসা কি ওজন করা যায়?
একটি গল্প বলি। এক মায়ের ছেলে হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুজির পরেও ছেলেকে পাওয়া গেল না। অস্থির, উদভ্রান্ত অধীর মা পাগলপ্রায়। এমন সময় পাওয়া গেল বুকের মানিক হারানো ছেলেকে। মা পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে। ভালোবাসার অশ্রু তার দু'গাল বেয়ে অঝোরে নামছে। রোদ পড়ে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো। এই মায়ের পক্ষে কি এই অবস্থায় সাত রাজার ধন এই ছেলেকে আগুনে ফেলে দেয়া কোনোক্রমে সম্ভব? কোনোভাবেই সম্ভব? কোনো যুক্তিতে সম্ভব?
সম্ভব নয়। কখনোই সম্ভব নয়। কোনো মায়ের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই মায়ের চেয়েও অনেক অনেকগুন বেশি ভালোবাসেন। বাবা মার অবাধ্য হলে, তাঁদের কথা না শুনলে, তাঁদের মনে কষ্ট দিলে সন্তানদের প্রতি তাদের ভালোবাসায় সাময়িক ভাটা পড়ে যায়, বাবা মা মুখ ফিরিয়ে নেন সন্তানের উপর থেকে। কখনো কখনো প্রিয় সন্তানকে ত্যাজ্য করার ঘটনাও চোখে পড়ে সমাজ সংসারে। কিন্তু আল্লাহ তাআ'লার ভালোবাসায় কখনো ভাটা পড়ে না। কখনো কমে যায় না। কখনো তিনি তাঁর দয়াকে বান্দার জন্য, বান্দির জন্য, সংকুচিত করেন না, দয়ার অবারিত ধারাকে থামিয়ে দেন না, পাপী তাপি সকলের জন্য তিনি সমানভাবে আলোবাতাস বিলিয়ে যান অবিরাম অবিরত।
কতই না দয়ালু স্রষ্টা তিনি!
আমি যখন আল্লাহকে স্মরণ করি, আল্লাহও আমাকে স্মরণ করেন। যখন তাঁকে ভুলে যাই, তাঁর অবাধ্যতা করি তখনো তিনি আমাকে মনে রাখেন, আমাকে আগলে রাখেন, আমাকে নিরাপত্তা দেন, নিরুপদ্রব রাখেন, দয়ার চাদরে জড়িয়ে রাখেন। আমার জন্য ক্ষুধায় খাদ্য দেন, তৃষ্ণা নিবারণে সুমিষ্ট শীতল পানীয় দেন, বুক ভরে শ্বাসপ্রশ্বাসে দেন মুক্ত বাতাস।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন কখন আমি তাকে ডাকবো। মনের অজান্তেই একবার ইয়া রব্ব বলে ডাক দিলেই তিনি আনন্দিত হয়ে সাড়া দেন – ইয়া আবদি! হে আমার বান্দা বলো, বলো তোমার কি চাই?
আমি যখন আল্লাহর দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাই, আল্লাহ আমার দিকে দশধাপ এগিয়ে আসেন, আমি আল্লাহর দিকে হেঁটে গেলে তিনি দৌঁড়ে আসেন। আল্লাহ সুযোগ খোঁজেন আমাকে ক্ষমা করে দেবার। অজুর পানির মাধ্যমে তিনি আমার পাপগুলো ঝরিয়ে দেন, দুই সলাতের মাধ্যমে মাঝের সময়গুলোতে করা পাপ গুলো ক্ষমা করে দেন। তিনি রাতে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন দিনের পাপীদের জন্য, আর দিনে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে রাখেন রাতের পাপীদের জন্য।
আকাশ সমান পাপও তিনি ক্ষমা করেনঃ
তিনি ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন, কেউ যদি তার সঙ্গে আকাশ সমান উঁচু পাপ নিয়েও দেখা করে কিন্তু শিরক না করে তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক জান্নাতে যা কোন চোখ দেখেনি, কোন অন্তর চিন্তাও করেনি। আল্লাহ তাআলার অমোঘ ঘোষনা-
আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দাগণ জান্নাতের বিভিন্ন প্রকার চিরস্থায়ী নেয়া’মতের মাঝে অবস্থান করবেন। হে মুসলিম ভাই! মুসলিম বোন! জান্নাতের নেয়া’মত এবং তার মধ্যে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যা কিছু তৈরী করে রেখেছেন তার পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। যতই দীর্ঘ বর্ণনা দেয়া হোক না কেন অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। তাই এখানে সকল বর্ণনাকে একত্রিতকারী হাদীছটি উল্লেখ করা হলো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাদীছে কুদছীতে বলেনঃ
)أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ( فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ(
অর্থঃ “আমি আমার প্রিয় বান্দাদের জন্যে এমন নেয়া’মত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, যার বর্ণনা কোন কান শ্রবণ করেনি এবং যা কোন মানুষের হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনা। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পাঠ কর,
)فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ(
অর্থঃ কোন ব্যক্তিই জানেনা যে মুমিন বান্দাদের জন্য কি ধরণের চক্ষু শীতলকারী বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। (সূরা সিজদাহঃ ১৭)[83]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ কিভাবে সেই জান্নাতের বর্ণনা দেয়া সম্ভব হবে যার বৃক্ষসমূহ আল্লাহ নিজ হাতে রোপন করেছেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্যে উহাকে বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি দিয়ে উহাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, যার নেয়া’মত অর্জন করাকে মহান সাফল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন, যার রাজত্বকে বিশাল রাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, যাতে সকল প্রকার নেয়া’মত গচ্ছিত রেখেছেন এবং যাকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রেখেছেন!!!
গোনাহগারদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন তিনিঃ
বস্ততঃ তিনি আমাদের মত গোনাহগারদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন বলেই তো আশার বাণী শুনিয়েছেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আয যুমার, আয়াত-৫৩
Say: "O my Servants who have transgressed against their souls! Despair not of the Mercy of Allah. for Allah forgives all sins: for He is Oft-Forgiving, Most Merciful.
এই যে আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, তাসবিহ পড়ি, আমার এই সলাত, আমার সিজদাহ, আমার তাসবীহ এসবের কোন কিছুরই কি প্রয়োজন আছে আল্লাহর? তিনি কোনোকিছুরই মুখাপেক্ষী নন। তিনি আমাদের সামান্য ভালোবাসা চান, তাঁর অফুরন্ত ক্ষমা আর ভালোবাসায় আমাদের সিক্ত করতে চান।
বিশ্বাসীদের পারলৌকিক আনন্দঃ
মুমিনদের মৃত্যুর সময় শান্তনা ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়ার জন্যে আল্লাহর পক্ষ হতে রহমতের ফেরেশতা আগমণ করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ(
“নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে বলতে থাকেনঃ তোমরা ভয় করোনা, চিন্তা করোনা এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্যে আনন্দিত হও। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমাদের মন চায় এবং তোমরা যা দাবী কর। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন। -সূরা হামীম সাজদাহ, আয়াত- ৩০-৩২
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “মৃত্যুর সময় ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। কাতাদা ও মুকাতেল (রঃ) বলেনঃ মুমিনগণ যখন কবর থেকে বের হয়ে হাশরের মাঠের দিকে রওয়না করবেন তখন ফেরেশতাগণ তাদের সাথে থাকবেন। অকী ইবনে জাররাহ (রঃ) বলেনঃ তিন স্থানে ফেরেশতাগণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিবেন। মৃত্যুর সময়, কবরে এবং কবর থেকে উঠার সময়।
ইবনে কাছীর (রঃ) উক্ত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ মুমিনদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ বলবেনঃ আমরা দুনিয়াতে তোমাদের বন্ধু ছিলাম। দুনিয়াতে আল্লাহর আদেশে আমরা তোমাদেরকে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকতে সহযোগিতা করতাম এবং তোমাদেরকে সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে হেফাযত করতাম। পরকালেও আমরা তোমাদের সাথে থাকব। কবরের নির্জনতায় ও একাকীত্বে এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সময় আমরা তোমাদেরকে অভয় দিব। পুনরুত্থান দিবসে তোমাদেরকে নিরাপদে রাখব ও তোমাদেরকে সাথে নিয়ে পুলসিরাত পার হবো এবং তোমাদেরকে অসংখ্য নেয়া’মতে পরিপূর্ণ জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিব।
মুমিন ব্যক্তির রূহ্ কবজের অবস্থা ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মালাকুল মাউত তাঁর মাথার পাশে এসে বসবেন এবং বলবেনঃ ওহে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এসো আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পানপাত্র থেকে পানি যেমন সহজভাবে বের হয় মুমিনের আত্মাও ঠিক তেমনই সহজভাবে বের হয়ে আসে। রূহ্ বের হওয়ার পর আকাশ ও যমিনের ফেরেশতাগণ তাঁর জন্যে মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার জন্যে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।
মৃত্যুর সময় আল্লাহর দিদারের সুসংবাদে বিশ্বাসীদের আনন্দঃ
ফেরেশতারা যখন পরহেজগার মুমিনগণকে আল্লাহর সাক্ষাতের সুসংবাদ দিবেন, তখন তাঁরা আনন্দ প্রকাশ করবেন। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ فَقُلْتُ يَانَبِيَ اللَّه أَكَرَاهِيَةَ الْمَوْتِ فَكُلُّنَا نَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ لَيْسَ ذَاكِ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرَحْمَةِ اللَّهِ وَ رِضْوَانِ اللَّهِ وَجَنَّتِهِ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ وَأَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا بُشِّرَ بِعَذَابِ اللَّهِ وَسَخَتِهِ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ وَكَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ
“যে আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসবে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ ভালবাসবেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করবে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করবেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরা সবাইতো মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি। উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এমনটি নয়; বরং মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে ভালবাসেন। আর কাফেরকে যখন আল্লাহর আযাবের সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করেন।
সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
إِذَا وُضِعَتِ الْجِنَازَةُ وَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ قَدِّمُونِي وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الْإِنْسَانَ وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ
“যখন জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন মৃত ব্যক্তি সৎ হয়ে থাকলে বলে আমাকে তাড়াতাড়ি আমার গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাও। আর অসৎ হলে তার আপনজনকে বলতে থাকে হায় আমার ধ্বংস!! আমাকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? তার একথাটি মানুষ ব্যতীত সকলেই শুনতে পায়। কোন মানুষ তা শুনতে পেলে বেহুঁশ হয়ে যেত।
চলুন, একটি হাদিস দিয়ে শেষ করি-
একটি হাদিস শুনিয়ে আলোচনা শেষ করছি। সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন মহান আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআ'লা বলবেন, ‘তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দেই?’
তারা বলবে, ‘আপনি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দেননি? আমাদেরকে আপনি জান্নাতে প্রবিষ্ট করেননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেননি?’
তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আবরণ সরিয়ে দেবেন (এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতবাসীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন অর্থাৎ, দীদারই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।' -সহিহ মুসলিম ১৮১
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:০৬
নতুন নকিব বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৫
জাফরুল মবীন বলেছেন: এ ধরনের লেখা পড়লে মনে প্রশান্তি অনুভব করি।
ধন্যবাদ ভাই নতুন নকিব দরকারি বিষয়ে সুন্দর আলোচনা করার জন্য।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৮:৩২
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া, প্রিয় ভাই।
আসলে মহান রব্বে কারিমের দয়া আর সীমাহীন অনুগ্রহে প্রশান্তির পরশে হৃদয় যাদের সিক্ত, এমন পোস্ট তো শুধুমাত্র তাদের অন্তরকেই স্পর্শ করবে, বিচূর্ণ-বিগলিত-বিমোহিত করবে। স্বস্তি, শান্তি এবং প্রশান্তির অদেখা আবরণ ঢেকে দিবে একমাত্র তাদেরকেই।
আপনারা ব্লগে আছেন দেখেই ব্লগটা সজীব এখনও। আপনাদের পদচারণা রয়েছে বলেই এই আঙিনায় হাজারো ফুল পাঁপড়ি মেলে প্রতিনিয়তঃ। সুস্বাস্থ্যে আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
দুআ নিরন্তর।
৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৪
মরুর ধুলি বলেছেন: মাদরাসায় অপ্প কিছুদিন পড়লে কয়েক পৃষ্ঠা লেখা যায়- বিশিষ্ট ব্লগার চাঁদগাজী ।
রাজীব বাবুর আজকে কি হইলো কে জানে। তিনি হঠাৎ পিছনের দিকে হাঁটা শুরু করলেন মনে হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহিত বুঝ দান করুন।
৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহি বুঝ দান করুন।
-আমিন। আপনার প্রতি দয়াময়ের অবারিত রহমত বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: শেষের হাদীসটা অতি মনোরম।