নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবী-চরিত্রের এক ঝলক; সীরাতে সারওয়ারে আলম

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৪

ছবিঃ অন্তর্জাল।

নবী-চরিত্রের এক ঝলক; সীরাতে সারওয়ারে আলম

প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনন্য চরিত্র মাধুর্য সকল কালের সকল মানুষের জন্য শিক্ষনীয় আদর্শ। ঘোর শত্রুকে তিনি বুকে টেনে নিতেন। প্রাণের দুশমনকেও তিনি ক্ষমা করে দিতেন অকাতরে। চরম অত্যাচারীদের শত অত্যাচার সয়েও তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিতেন না। নিঃশর্ত ক্ষমা, অভাবনীয় ভালোবাসা আর অপরিমেয় প্রেমময়তা দিয়ে তিনি আপন-পর, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে গোটা মানব সমাজকে আপন করে নিতেন। সাগরের পানি পরিমাপ করা গেলেও তাঁর দয়া-মায়া, প্রেম-ভালোবাসা, ক্ষমা-সহনশীলতা যেন মাপ-জোখের উর্ধ্বে। এ জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা পবিত্র কুরআনে তাকে ভূষিত করেছেন 'রহমাতুল্লিল আলামীন', তথা 'গোটা বিশ্ব জাহানের জন্য দয়া' উপাধিতে।

একটি হাদিস লক্ষ্য করলে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনের অবস্থা উপলব্ধি করা যায়। ইসলামের, শান্তির পয়গাম তুলে ধরার কারণে এত এত শত্রু পরিবেষ্টিত ছিল যার জীবন, তাওহীদের বাণী প্রচার করার অপরাধে(!) যাকে হত্যা করার জন্য আরবের গোত্রপতিরা ছিলেন একাট্টা, অস্বীকারকারী এবং সংশয়বাদীগণের পক্ষ থেকে একের পর এক আঘাতে আঘাতে যাকে সয়ে যেতে হয়েছে নিরন্তর উৎপীড়ন- তিনিই কি না বলেছেন শুভ্র সুন্দর সকলের প্রতি মলিনতা মুক্ত অন্তরের অধিকারী হওয়ার এমন একটি কথা, যা চিন্তার খোরাক যোগায়। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: يَا بُنَيّ، إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ، ثُمّ قَالَ لِي: يَا بُنَيّ وَذَلِكَ مِنْ سُنّتِي، وَمَنْ أَحْيَا سُنّتِي فَقَدْ أَحَبّنِي، وَمَنْ أَحَبّنِي كَانَ مَعِي فِي الجَنّةِ.

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, হে বাছা! যদি তোমার পক্ষে সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটানো সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারও প্রতি মলিনতা নেই, তবে সেভাবে কাটাবে। তারপর বললেন, হে বাছা! এটা আমার সুন্নত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে যিন্দা করল, সে আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সংগে থাকবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৮

বক্ষমান হাদীস দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও জীবনাদর্শের একটি দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। তিনি কতটা ক্ষমাপরায়ন ছিলেন তারও কিছুটা অনুমান করা যায় এই হাদিস থেকে। তিনি নিজে যেমন আলোকিত মহামানব ছিলেন, তেমনি সে ঐশী আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য সরাসরি প্রিয় খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক রা.-কে উপদেশ দিয়েছেন। আর তার মাধ্যমে এ উপদেশ তাঁর উম্মতের সকলের প্রতি পৌঁছে দিয়েছেন। যাতে করে তাঁর উম্মতের প্রত্যেকে এ আলোয় আলোকিত করে নিতে পারেন তাদের জীবনকালের সংক্ষিপ্ত কলেবরকে।

তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রা.-কে উপদেশ দিয়েছেন, যে-কোনও মানুষের ব্যাপারে তার অন্তর নির্মল রাখতে। সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটাবেন যে, তার অন্তরে কারও প্রতি কোনও হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোনও দুঃখ-কষ্ট নেই এবং কোনও রাগ ও ক্ষোভ নেই। যে যত দুঃখ-কষ্ট দিক, মনে যত বড় আঘাতই দিক, অবিলম্বে সে আঘাতের চিহ্ন মুছে ফেলবে। মুখে ক্ষমা ঘোষণা করবে এবং অন্তর পরিষ্কার করে ফেলার চেষ্টা করবে। যেন কোনও দিন তার পক্ষ থেকে সে কোনও কষ্ট পায়ইনি।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস ইবনে মালিক রা.-কে এই উপদেশ প্রদানের পরে বলছেন যে, এটা তাঁর সুন্নত- তাঁর জীবনাদর্শ। তিনি সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়েছেন। কত মানুষ তাঁকে কতভাবে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু তিনি অবারিতভাবে নিয়তই ক্ষমার হাত প্রসারিত করে এসেছেন সকলের প্রতি।

তিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম সত্যবাদী। তা সত্ত্বেও বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে মিথ্যুক বলে গালি দিয়েছে। তাঁর মত সুস্থ-নিখুঁত বুদ্ধি কার কখন ছিল? তথাপি তারা তাঁকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। সর্বকালের সর্বোত্তম সারগর্ভ কথা তিনিই বলতেন। তারপরও তাঁর অমূল্য কথাকে অসার কল্পনা ঠাওরানোর মতলবে তাঁকে জাদুকর, কবি ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করত। মানুষের শ্রেষ্ঠতম দরদী বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তাঁর পবিত্র শরীরে আঘাতের পর আঘাত করেছে, তাঁকে রক্তাক্ত করেছে। তাঁকে জন্মভূমি পর্যন্ত ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে।

কিন্তু তিনি তো রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্ষমার আধার। দয়ার সাগর। কোমল হৃদয় তাঁর সদা ব্যাকুল অবুঝ মানুষদের ইহ জাগতিক মুক্তির চিন্তায়। তাই তিনি ক্ষমা করেছেন তাদের সকল নিষ্ঠুরতা। মার্জনা করেছেন সকল অপরাধ। ব্যক্তিগত কোনো কষ্টের প্রতিশোধ পর্যন্ত তিনি কারও থেকে সারাটি জীবনে কখনও নেননি। বরং আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হওয়া সত্ত্বেও, কষ্টের পরে কষ্ট আসার পরেও, অত্যাচারের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার পরেও কারও জন্য ধ্বংসের দোআ পর্যন্ত করেননি। কারও প্রতি রুষ্ট হয়ে, ক্ষুব্ধ হয়ে, ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেননি। জীবনে একটিবার কাউকে সামান্য একটি গালি পর্যন্ত দেননি। বরং মন থেকে আঘাতের সব চিহ্ন মুছে ফেলেছেন।

মক্কা বিজয়ের পরে প্রাণের শত্রুরা, জানের দুশমনরা যখন আসামীরূপে সামনে হাজির হয়েছে, অতীতের সব মলিনতা ভুলে পরম মমতায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এমন স্নেহ-ভালোবাসা ও এমন ইজ্জত-সম্মান তাদের দেখিয়েছেন যা তারা কোনো দিন কল্পনাও করেননি। কোনো দিন স্বপ্নেও দেখেননি। যার ফলাফল দাঁড়িয়েছে এই যে, এই অভাবিত ক্ষমাপরায়নতার সামনে তাদের পেছনে ফেলে আসা জীবনের সকল শত্রুতা, সকল কলুষ কালিমা, ঘৃণার সকল অন্ধকারকে চিরতরে জলাঞ্জলি দিয়ে, সকল তিক্ততা ভুলে গেছেন এবং একান্ত অনুগত হয়ে তাঁর জন্য নিজেদের জান মাল তামাম কিছু কুরবানি হিসেবে পেশ করেছেন।

শত্রুর শত্রুতা ভুলে তাকে বন্ধুতে পরিণত করা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। আঘাতের বিপরীতে কল্যাণকামনা ও কাদার বদলে সুবাস বিলানোই ছিল তাঁর সুন্নত। অন্তরে মলিনতা পুষে রাখা তাঁর সুন্নতের পরিপন্থী। তিনি নিজে কোনও দিনই তা পুষে রাখেননি এবং তা পুষে রাখাকে অন্যের জন্যও অনুমোদন করেননি।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতগ্রন্থ যারা পড়েছেন, তারা জানেন, জীবনে তিনি কত শত্রুকে ক্ষমা করেছেন, কত নিষ্ঠুরতাকে নিমিষে ভুলে গেছেন এবং অসহনীয় কত আঘাতের চিহ্ন অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেছেন।

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা কে না জানে! বিজয়োন্মত্ত কাফেরগণ মুসলিম মুজাহিদদের সংগে কেমন আচরণ করেছিল সে দিন? শহীদদের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। শহীদদের হাত-পা, নাক-কানসহ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কেটে বিকৃত করে দিয়েছিল তারা। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তম পিতৃব্য হযরত হামযা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর বুক ফেড়ে হৃৎপিন্ড বের করে ফেলেছিল তারা। আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দার উন্মত্ত আক্রোশ তাতেও মেটেনি। তার দাঁতের কামড়ে সে হৃৎপিন্ড ছিন্নভিন্ন হয়েছিল। বিকৃত হয়েছিল। এতেও তাদের হিংস্রতা যেন কোনোক্রমেই তৃপ্তি পাচ্ছিল না। তারা একযোগে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর হামলে পড়েছিল। তাদের আঘাতে প্রিয় নবীজীর মাথায় পরিহিত লোহার শিরোস্ত্রাণ ভেঙে যায়। তার কড়া চোয়ালে ঢুকে পড়ে। আর সে আঘাতে তাঁর দান্দান মোবারক শহীদ হয়ে যায়। এতসব পৈশাচিকতা উহুদের ময়দানে মুসলিম বাহিনীর উপরে যারা চালিয়েছিল, সে বাহিনীর নেতৃত্ব সে দিন কে দিয়েছিলেন, জানেন? নেতৃত্ব যিনি দিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন, মক্কার কাফিরদের তৎকালীন প্রতাপশালী নেতা আবূ সুফিয়ান।

আবূ সুফিয়ানের অতীত জীবনের কুখ্যাতি অনেক। সে জীবনে তিনি ছিলেন বহু কুকর্মের হোতা। মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র তিনি চালিয়েছেন। অনেক অঘটন তখন তিনি ঘটিয়েছেন। তার সে জীবনের দুষ্কৃতির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। কিন্তু তার উপর্যুপরি দুষ্কর্মের ধারাবাহিকতায় একসময় ছেদ পড়ে। আর এর পেছনে যে জিনিসের ভূমিকা ছিল, তা কেবলই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই সুন্নত, যা তিনি জীবনভর সকল শত্রুর সংগে রক্ষা করেছেন।

মক্কা বিজয়কালে আবূ সুফিয়ান ধৃত হয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নীত হন। দুর্ধর্ষ এ আসামীর সংগে সেদিন তিনি কী আচরণ করেছিলেন? প্রতিশোধ গ্রহণ করলেন? অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ধিক্কার দিলেন? প্রচন্ড রকম তিরষ্কার করলেন? না কি, তাকে হত্যা করে মক্কার অলিতে গলিতে টানার নির্দেশ দিলেন? এমন কিছু হওয়াই কি স্বাভাবিক ছিল না? কিন্তু নবী-জীবনে এ জাতীয় সংকীর্ণ স্বাভাবিকতার কোনও স্থান নেই। তিনি যা করলেন, স্বয়ং আবূ সুফিয়ানের কাছেও তা ছিল স্রেফ অকল্পনীয়। তিনি তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দিলেন। শুধু তাকে ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হলেন না, তাকে বানিয়ে দিলেন অন্যসব শত্রুরও প্রাণরক্ষার ঠিকানা। ঘোষণা করে দিলেন- আজ যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপদ।

একটিবার ভাবা যায়, এমন মহানুভবতা কে-কবে-কোথায় দেখেছে? মন থেকে শত্রুর আঘাত-চিহ্ন কতটা মুছে ফেললে এমন মহানুভবতা দেখানো সম্ভব? এ মহানুভবতারই সুফল যে, আবূ সুফিয়ান আর শত্রু আবূ সুফিয়ান থাকেননি। এর পর থেকে তিনি হয়ে যান হযরত আবূ সুফিয়ান রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, যিনি ইসলাম গ্রহণ করে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবীদের তালিকায় নিজের স্থান করে নেন। এবার তিনি তাঁর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করতে থাকেন এত দিনকার লালিত শিরক ও কুফরের বিরুদ্ধে আর এভাবে ঈমানে উদ্বেলিত রক্ত ঢেলে অতীতের সব গ্লানি মুছে ফেলতে থাকেন। তিনি যুদ্ধ করেছেন হুনায়ন ও তায়েফে। তায়েফের যুদ্ধে তিনি এক চোখ হারিয়েছেন। তাঁর সে চোখ দ্বীনের সেবায় উৎসর্গিত, যার প্রতিদানে তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে পান জান্নাত লাভের আশ্বাস। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পরও তিনি ইসলামের সেবায় সমর্পিত থেকেছেন। যুদ্ধ করেছেন ইয়ারমুকে। এ যুদ্ধেও ছিল তাঁর বলিষ্ঠ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা। এ যুদ্ধে তাঁর দ্বিতীয় চোখেরও শাহাদাত নসীব হয়। মলিনতা মুছে ফেলার সুন্নত এভাবেই এককালের ঘোরতর শত্রুকে দ্বীনের একজন পরম সেবকে পরিণত করেছে। আজ আমরা মহান এ সাহাবীকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকি।

হযরত ইকরিমা রা.-এর কথাও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যঃ

এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায় হযরত ইকরিমা রা.-এর নামও। তিনি আবূ জাহেলের পুত্র। আবূ জাহেলের পরিচয় কারও কাছে নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে কি? তাকে তো বলা হয়, এ উম্মতের ফির‘আউন। বদরের যুদ্ধে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে তার পক্ষে যা-কিছু সম্ভব ছিল সবই সে করেছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালাগালি করেছে। সাহাবীগণের উপর অত্যাচার করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশের লোকজনকে বয়কট করেছে। তার সে বর্বরতা মানবেতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। সবশেষে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে, যে কারণে তিনি হিজরত করতে বাধ্য হন। ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে তার সীমাহীন আক্রোশ ও বিদ্বেষ তার পুত্রের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল। সুতরাং সকল জুলুম-অত্যাচারে ইকরিমাও তার বাবার এক অন্ধ সহযোগী হয়ে থেকেছে। উহুদের যুদ্ধে ইসলামী মুজাহিদদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল, তার পেছনে তারই ছিল বিশেষ ভূমিকা। সে তার শত্রুতা কোনওক্রমেই পরিত্যাগ করতে পারছিল না। মক্কা বিজয়কালে যখন অসহায় মুশরিকগণ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, তখনও সে তার একদল সহযোগীসহ প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বলতে গেলে রক্তপাতহীন সে বিজয়ে কিছুটা হলেও যে রক্ত ঝরেছিল, সে জন্য ইকরিমা অনেকাংশেই দায়ী। তারপর সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হল। দলে দলে মক্কাবাসী ইসলাম গ্রহণ করতে থাকল। কিন্তু ইকরিমার অন্তর থেকে ইসলামবিদ্বেষ কিছুতেই নামে না। পণ করল, ইসলামের অধীন মক্কায় সে থাকবেই না। থাকা সম্ভবও ছিল না। কারণ মক্কাভূমি এখন ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত। শিরকের অন্ধকার নিয়ে এখানে অবস্থান সম্ভব নয়। অগত্যা মক্কা ছেড়ে ইয়ামান অভিমুখে যাত্রা করল। কিন্তু তার পক্ষে সেখানে পৌঁছা সম্ভব হল না। মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয় ইকরিমা। নিরুপায় ইকরিমা সোজা গিয়ে হাজির হয় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে। তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী আচরণ তার সাথে করলেন? দর্পিত বিজেতাগণ যা করে, সেরকম কিছু? না, মহাহৃদয়ের মহানবী উঠে তাকে স্বাগত জানালেন। বললেন-

مَرْحَبًا مَرْحَبًا بِالرّاكِبِ الْمُهَاجِرِ!

‘আরোহী মুহাজিরকে স্বাগতম, স্বাগতম!’।

এ মহানুভবতা ইকরিমার জীবন বদলে দিল। ইসলামের ঘোরশত্রু ইকরিমা সেদিনের সেই মুহূর্তটি থেকে ইসলামের পরম সেবক। কুফুরির অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত থেকে বেরিয়ে এসে পা রাখলেন অনন্ত আলোকের পথে। হয়ে গেলেন প্রিয়তম রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একনিষ্ঠ সহচর। নামের সাথে তাঁরও যুক্ত হল 'রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু'। জন্মগত বীরত্ব তো ছিলই। ঈমানের স্ফূলিঙ্গ তাতে বাড়তি তেজ যোগাল। এতদিন তো ইসলামের বিরুদ্ধে শক্তিক্ষয় করছিলেন, এবার শুরু করলেন দ্বীন প্রতিষ্ঠায় রক্তদান। প্রাণ বাজি রেখে একের পর এক রণক্ষেত্রে ছুটে যান ইকরিমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। অক্লান্তভাবে জিহাদ করতে থাকেন। পরিশেষে ইসলামী ইতিহাসের এ বীর মুজাহিদ আজনাদাইনের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। এ আর কিছুই নয়, অন্তর থেকে মলিনতা মুছে ফেলার সুফল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঘাতের বদলে ভালোবাসা দানের সুন্নত দ্বারা এরকম বহু শত্রুর জীবন বদলাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যাদের বদলে ফেলা সে জীবন ইসলামের সোনালি ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মনের মলিনতা ভোলার আচরণ তিনি করেছিলেন মুনাফিকদের সাথেও। মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবন উবাঈয়ের প্রতি দেখানো তাঁর মহানুভবতার নজির কে কোথায় পাবে? এ মুনাফিক কী না করেছে? কখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছে, কখনও সামনাসামনি অপমানকর উক্তি করেছে, কখনও ইহুদীদের উস্কানি দিয়েছে, কখনও আত্মকলহ সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে, কখনও নবী-পরিবার সম্পর্কে ন্যক্কারজনক কথা বলেছে- এমন অপবাদ রটিয়েছে, যা ক্ষমা করার শক্তি কম মানুষেরই থাকে, এমনকি সে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে। এতকিছু সত্ত্বেও তিনি তাকে কেবল ক্ষমাই করে গেছেন। জানা আছে সে একজন মুনাফিক। মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলে, কিন্তু খাঁটি মনে কখনও ঈমান আনেনি। ওই যে মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলত, সেদিকে তাকিয়ে দয়ার নবী সর্বদা তার মুক্তি কামনা করতেন। যখন তার মৃত্যু হয়ে গেল, তিনি তার জানাযাও পড়ালেন। হযরত ‘উমর ফারূক রা. তাঁকে বার বার জানাযা পড়াতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু ফেরাতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যদি তার জন্য সত্তর বারও ক্ষমা চান, তাও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, যদি জানতাম সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, আমি তাও করতাম। শত্রুর দেওয়া আঘাতের কথা মনে রাখলে এতটা উদারতা দেখানো কখনও সম্ভব? কারও প্রতি যদি মনে সামান্য কালিমাও থাকে, তখনও কি সম্ভব এতটা মহানুভবতা প্রদর্শন?

বস্তুত সকল আঘাত ভুলে যাওয়া এবং মন থেকে সব মলিনতা মুছে ফেলা ছিল তাঁর সারা জীবনের আচরিত ধর্ম। ঘোরতর শত্রুর প্রতিও তাঁর এ আচরণে কোনও ব্যতিক্রম ছিল না। ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই তিনি এটা বজায় রেখেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর যখন প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ তাঁর সামনে, যারা তাঁকে হত্যা করতে সচেষ্ট ছিল, দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, দেশত্যাগের পরও সমানে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল, বিদ্বেষপরায়ণ সেই শত্রুগণ আসামীরূপে সামনে হাজির, দশ হাজার সশস্ত্র হুকুম বরদার আজ্ঞা পালনে প্রস্তুত, আঙ্গুলের এক ইশারায় হাজার হাজার শত্রুর শিরñেদ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন রাহমাতুল্লিল-আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক কণ্ঠ থেকে যে ফরমান উচ্চারিত হয়েছিল, তা ছিল তাঁর শুভ্র সফেদ হৃদয়েরই বাণী। তাঁর অমলিন অন্তর থেকে সে ধ্বনিই উৎসারিত হয়েছিল, যা বহুকাল আগে মহান নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস-সালাম, যারা তাঁর প্রাণনাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, সেই ভাইদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেদিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশে বলেছিলেন-

لَا تَثْرِیْبَ عَلَیْكُمُ الْیَوْمَ، یَغْفِرُ اللهُ لَكُمْ، وَ هُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ، اذْهَبُوْا فَأَنْتُمُ الطّلَقَاءُ.

আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। [সূরা ইউসুফ (১২) : ৯২] সুতরাং তোমরা যেতে পার। তোমরা মুক্ত।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একান্তভাবে চাইতেন, যাতে কখনও কারও প্রতি তাঁর মন খারাপ না হয়। সকলের প্রতি তিনি সন্দেহমুক্ত ও অমলিন হৃদয়ের হয়ে থাকতে চাইতেন। তাই তিনি এটাও পসন্দ করতেন না যে, কেউ তাঁকে কারও সম্পর্কে অপ্রীতিকর কিছু শোনাক। কেননা তাতে সেই ব্যক্তির প্রতি তাঁর মন খারাপ হয়ে যেতে পারে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَا يُبَلِّغُنِىْ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَصْحَابِىْ شَيْئًا، فَإِنِّىْ أُحِبّ أَنْ أَخْرُجَ إِلَيْكُمْ وَأَنَا سَلِيْمُ الصّدْرِ

কেউ যেন আমার সঙ্গীদের কারও সম্পর্কে কোনও (বিরূপ) কথা আমাকে না শোনায়। কেননা আমি পরিষ্কার মন নিয়ে তোমাদের কাছে আসতে পসন্দ করি। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৫৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৬৬৭৫; শারহুস-সুন্নাহ, হাদীস ৩৫৭১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. এ হাদীস শোনার পর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে পরস্পর আলাপচারিতায় লিপ্ত পেলেন। তারা দু’জন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অশোভন উক্তি করছিল। তারা তাঁর সম্পর্কে যা বলছিল তিনি সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আবার ফিরে আসলেন এবং তাদের সে কথা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করলেন। কিন্তু তিনি এটা পসন্দ করেননি। -প্রাগুক্ত

বলাবাহুল্য, বিরূপ মন্তব্যকারী ব্যক্তিদ্বয় খাঁটি মুমিন ছিল না। তারা ছিল মুনাফিক। হযরত ইবনে মাসঊদ রা.-এর মত একজন খাঁটি মুমিন ও আশেকে রাসূলের পক্ষে তাদের বেআদবীপূর্ণ উক্তি শুনে চুপ করে যাওয়া সম্ভবপর হওয়ার কথা নয়। তাঁর ইশক ও মহব্বতের দাবি তো এটাই ছিল যে, সে কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দেবেন। তিনি তা জানানোর আগে এ কথা উল্লেখও করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদেরকে কারও সম্পর্কে কোনও কথা আপনাকে জানাতে নিষেধ করেছেন। তার মানে এ নিষেধাজ্ঞা পালনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ সচেতন। তা সত্ত্বেও যে তিনি লোক দু’টির স্পর্ধিত উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন, তা ইশক ও মহব্বতের দাবি অনুসারেই করেছিলেন। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সে ইশক ও মহব্বত সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তথাপি এটা অপসন্দ করা ছিল তাঁর মহত্তর চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি যে সকলের ব্যাপারে কতটা স্বচ্ছ ও নির্মল হৃদয়ে থাকতে চাইতেন, এটা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।

সকলের প্রতি অন্তর অমলিন রাখার যে আদর্শ তিনি লালন করতেন, প্রিয় সাহাবীদেরকেও তাতে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। এ হাদীসে যেমন দেখা যায় প্রিয় খাদেমকে উৎসাহ দিচ্ছেন, যেন তিনিও সর্বক্ষণ নিজ মন সকলের প্রতি নির্মল রাখেন। কারও প্রতি মনে কোনও কষ্ট, ক্ষোভ ও বিদ্বেষ পোষণ না করেন।

এ হাদীসে আমাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। তা হচ্ছে অধীনস্তদের তালীম তারবিয়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ; বিশেষত খাদেম ও ভৃত্য-অনুচরদের জন্য।

আনাস ইবনে মালিক রা. কে দেখুনঃ

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাস খাদেম। ঘরে-বাইরে সর্বত্র খেদমতের জন্য তিনি তাঁর সংগে সংগে থাকতেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছ থেকে কেবল খেদমত গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হতেন না; প্রয়োজনীয় শিক্ষা-দীক্ষাও তাঁকে দান করতেন। তত্ত্ব ও তথ্যমূলক জ্ঞানের পাশাপাশি তাঁর চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা ও আখলাক-চরিত্র গঠনের প্রতিও লক্ষ রাখতেন। অর্থাৎ তালীমের পাশাপাশি তারবিয়াতও দান করতেন। এ হাদীসটি তাঁর সে তারবিয়াতেরই অংশ। তিনি নিজে যেমন সকলের প্রতি ‘সালীমুস-সাদ্র’ তথা অমলিন মনের হয়ে থাকতে চাইতেন, প্রিয় খাদেমও যেন সদা-সর্বদা সেরকম থাকেন, সেই সবক এতে তাকে দান করেছেন। কী গভীর স্নেহ-মমতার সম্বোধন এতে লক্ষ করা যায়। يا بني! ‘ওহে আমার প্রিয়পুত্র! বাছা হে!’ এভাবে পরম যত্নের সাথে তিনি প্রিয় খাদেমকে মনের মত করে গড়ে তুলেছিলেন। ফলে পরবর্তী জীবনে তিনি সারা জগতের মাখদূমে পরিণত হয়েছিলেন। আজ সারা জাহানের মুসলিম গভীর শ্রদ্ধার সংগে হযরত আনাস ইবনে মালিক রা.-এর নাম নিয়ে থাকে। শত শত বছর যাবৎ কত অগণিত মানুষ তার থেকে তালীম ও তারবিয়াতমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। কত শত শত হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন। নবী-জীবনের কত তথ্য তিনি মানুষের কাছে সরবরাহ করেছেন। এ আর কিছুই নয়, প্রিয় খাদেমকে শিক্ষা-দীক্ষায়, আচরণে, আখলাকে মনের মত করে গড়ে তোলার যে প্রযত্ন তিনি নিয়েছিলেন, কেবল তারই ফল। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও আমাদের অধীন, বিশেষত খাদেম-সেবকদের তালীম তারবিয়াতের প্রতি যত্নবান হব কি?

যাহোক, কথা হচ্ছিল মানুষের প্রতি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে। এটা ছিল তাঁর মহান চরিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জীবন গড়ার নমুনা। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকই সারা জাহানের মানুষের জন্য আদর্শ। প্রতিটি মানুষের কর্তব্য সে অনুযায়ী নিজ জীবন গড়া। যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন ও মুসলিম বলে বিশ্বাস করে, তার যে এ ব্যাপারে কত বেশি যত্নবান থাকা উচিত তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বলা যতই বাহুল্য হোক না কেন, নৈতিক অবক্ষয়ের যে পর্যায়ে আমরা পৌঁছে গেছি, তাতে এ কথা কেবল বলাই নয়; বারবার বলা এবং শতমুখে বলা অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের অবস্থা নিয়ে কি আমরা ভেবে দেখি কখনো?

আজ আমরা কথায় কথায় একে অন্যের প্রতি মন খারাপ করে ফেলি। তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয়ে মন এত বেশি মলিন হয়ে যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভালো কিছুর প্রতিবিম্ব তাতে আর ধরা পড়ে না। এ ব্যাপারে আপন-পরেরও কোনও বালাই থাকে না। কথা তো ছিল পরের ব্যাপারেও সর্বদা ইনসাফের পরিচয় দেব। তার মন্দটি কেবল সেই মন্দতেই সীমাবদ্ধ রাখব। কিন্তু আমরা তা করি না। তার একটি মন্দ আমাদের অন্তরকে এমন ছায়াচ্ছন্ন করে ফেলে যে, ওই অন্তরের আয়নায় সে ব্যক্তির কোনও ভালো গুণ আর ধরা পড়ে না। ওই একই অবস্থা আমাদের আপনজনদের ক্ষেত্রেও। কোনও এক ব্যাপারে আপনার কারও সাথে বিরোধ দেখা দিলে বা তার কোনও এক অপ্রীতিকর আচরণের সম্মুখীন হলে তার শুভ সবকিছু বেমালুম ভুলে যাই। তার ব্যাপারে মন সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। অতপর তার কোনওকিছুই প্রীতিকর থাকে না। তার মুখ দেখতে মনে চায় না। তার কথা শুনতে ভালো লাগে না। তার প্রতিটি বিষয়ই বিস্বাদ ঠেকে। যেন সে আমার চিরদিনের শত্রু। এমন তো কিছুতেই হওয়া উচিত ছিল না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের সংগে এ স্বভাবের কোনও মিল নেই।

মন হওয়া দরকার অনেক বড়ঃ

তাঁর সুন্নত অনুযায়ী মন হওয়া দরকার অনেক বড়। কারও ব্যাপারে সহজে তা মলিন হওয়াই উচিত না। যদি কোনওক্রমে মলিন হয়েও যায়, তবে সে মলিনতা যত দ্রুত সম্ভব দূর করে ফেলা উচিত। সমস্ত মানুষ এক আদম সন্তান। সব মুসলিম ভাই ভাই। অন্যের প্রতি আচরণেও থাকা উচিত ভ্রাতৃত্বের স্পর্শ এবং অন্যের আচরণ গ্রহণেও চাই ঔদার্য্যরে ছোঁয়া। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত তো আমাদের সে শিক্ষাই দান করে। এ সুন্নতের অনুসরণ করলে আমাদের জীবন হতে পারে অনেক সুন্দর, অনেক শান্তিময়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

তাওফিক কামনা করতে হবে আল্লাহ তাআলার নিকটঃ

এ গুণ অর্জনের আশায় আমরা দুআ পড়তে পারি-

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ.

হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদেরকে এবং আমাদের সেই ভাইদেরকেও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছেন এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনও হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০০

এ আর ১৫ বলেছেন:
মানুষের ছবি পোস্ট করেছেন দেখেছি, কাব বিন আশরাফের হত্যাকান্ড ঘটনায় আপনি তো নবী জী ( সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর লিখা লিখেছিলেন, ভুলে গিয়েছেন।
আপনি জীবিত প্রাণীর ছবি দিয়ে এই পোস্টটা কেন দিয়েছেন?

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



ছবি কেন দিয়েছি সেইটাই কথা। ইহা আমি কি করিলাম। এই দেহেন, মুফতি সাহেব, এইয়ার লাইগ্যা আমি অহন কান্তাচি। ক্যারে ছবি দিলাম?

আ্চ্ছা, ছবি কি সত্যই দেল্লাম? দিয়া থাকলে তো সর্বনাশ! এর লাইগ্যা কি শাস্তি হইতে পারে, জনাব মুফতি সাহেব? ইহা আমার তরফ হইতে বিনীত একখানা প্রশ্ন আপনার সমীপে। আর ছবি যদি দিয়াও থাকি, তাহা ভুলেও হইতে পারে। সামুতে যে এত বড় মুফতি(!) সাহেবানদের আনাগোনা, ঐআ মনে কয়, ভুইলা টুইলা গিয়েছিলাম।

প্রিয় ভাই, ছবি যুদি পুস্ট কইরাই থাহি, হেয়া অইলে নিশ্চিত কইরা কইতাছি, আমার ভিরাট(!) অফরাদ(!) হইচে(!)। অমার্জনীয় নাফরমানি কইরালচি(!)। মাপ(!) কইরা দিয়েন। ক্ষ্যামা(!) কইরা দিয়েন।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:



তিনি যখন মদীনা ও মক্কা বিজয় করলেন, এর আগে যারা মদীনা ও মক্কার জমিদার ছিলো, তাদের মালিকানার কি হলো?

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৪৪

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।

যারা জাহিলিয়্যাতের যুগের অন্যায়-অপকর্ম ত্যাগ করে সুপথে ফিরে এসেছেন তাদেরকে সসম্মানে নেতৃত্বে বহাল রেখেছেন। তাদের জমিদারি বলেন আর নেতৃত্ব বলেন সবই ইসলামী যুগেও বহাল তবিয়তে টিকে ছিল। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে অন্যায়ভাবে অপমান অপদস্ত করেননি। কারও সম্পদ সম্মান কেড়ে নেননি। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, এই নিবন্ধে আলোচিত আবু সুফিয়ান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। ইসলাম পূর্ব সময়ে তিনি মক্কার নেতৃস্থানীয় লোক ছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামের ঘোর শত্রুদের অন্যতম। ইসলাম ধর্ম এবং প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে তার শত্রুতার পরিমান নির্ণয় করতে গেলেও রীতিমত শিউরে উঠতে হয়। কিন্তু মক্কা বিজয়ের সময় তিনি নিজের জীবনের ভুল বুঝতে পেরে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার পরে তার পেছনের জীবনের শত অপরাধ ক্ষমা করে দেন প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। শুধু অপরাধ ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি। তাকে মক্কাবাসীর নেতৃত্বের আসনেও বহাল রাখেন তিনি। ইতিহাসে এরকম ঘটনার নজির আরেকটি নেই।

একইরকম মক্কায় আবু জাহেলের চেয়ে অধিক বর্বর কোনো নেতা ছিল না ইসলামের শত্রুতায়। সেই আবু জাহেলের পুত্র ইকরিমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যখন নিজের ভুল বুঝে সত্যের পথে ফিরে এলেন, তাকেও নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা করে দিলেন। শুধু ক্ষমা করেছেন তাই নয়। তাকেও তার যথাযথ সম্মান, মর্যাদা এবং নেতৃত্ব প্রদান করে পৃথিবীবাসীর সামনে নতুন বিস্ময় উপহার দিয়েছেন।

দু'একটি নয়, মক্কা এবং মদিনার এ ধরণের অসংখ্য ব্যক্তির ঘটনায় ইতিহাসের পাতা সমুজ্জ্বল। কিন্তু আপনি দেখবেন, ইসলাম বিদ্বেষী বন্ধুরা এসব ঘটনা দেখেও কিন্তু সবসময়ই না দেখার ভান করে থাকেন। আসলে, জেগে জেগে ঘুমালে তাদেরকে সজাগ করার ব্যাপারটা রীতিমত কঠিনই হয়ে থাকে, তাই নয় কি?

শুভকামনা।

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:

অনেক সুন্দর একটি পোস্ট।

তবে, ইয়াযিদ আর সিমারকে কেন যেন ক্ষমা করতে মন চায় না।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:১৪

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, শুকরিয়া। চমৎকার অনুভূতি আপনার। বিশ্বাসের আলোয় উজ্জ্বল-উজ্জীবিত প্রতিটি হৃদয়েই এমন হিরন্ময় অনুভূতি আভা ছড়ানোর কথা।

ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এবং তাঁর পরিবার পরিজনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর হৃদয়ে আঘাত করেছে। তবে, যারা এই ঘৃণ্য কাজটি করেছেন তাদের কর্মকান্ড নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষনে না গিয়ে, কে দোষী আর কে নির্দোষ সেসব প্রমানের দিকে না যেয়ে আমরা আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ তাআ'লার কাছে এর বিচারের ভার রেখে দেয়াকে শ্রেয় মনে করি। হাদিসের আলোকে এটাই আমাদের জন্য সঠিক পথ। কারণ, সাহাবায়ে কেরামগণের সকল বিষয়ে হাদিসের নির্দেশনাকেই আমাদের অনুসরণ করা উচিত।

জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা।

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীকে পেতে হবে।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, ঠিক বলেছেন। আপনি জ্ঞানী ব্যক্তির মত কথা বলেছেন। কিন্তু আপনার ওস্তাদ উপরের কমেন্টে কেমন প্রশ্ন রেখে গেলেন, দেখলেন তো? এখন তো দেখছি, শাগরেদের কাছ থেকেই ওস্তাদকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। :)

কৃতজ্ঞতা।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আপনিকি সেই লোক যে মানুষকে শিয়ালের সাথে তুলনা করে।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৪৩

নতুন নকিব বলেছেন:



অবান্তর কথা বলা থেকে বিরত থাকা শ্রেয় মনে করি। যদিও আপনার পরিচয় এই ব্লগের অধিকাংশ লোক কম বেশি জানেন। এককথায় বললে, আপনি ইসলাম ধর্মের ভুল ধরতে পছন্দ করেন। আপনার মতামতের প্রতি সম্মান রেখে আপনাকে বিনীতভাবে কিছু কথা বলছি, আশা করছি, মাইন্ড করবেন না।

আপনি যদি ধর্মে বিশ্বাস করতে আগ্রহী না হয়ে থাকেন, সেটা আপনার একান্তই নিজের ব্যাপার। ইচ্ছে করলে আপনি ধর্ম থেকে দূরে থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে জোরজবরদস্তি করা অপরের কাজ নয়। দায়িত্বও নয়। কিন্তু আপনি ধর্ম ফলো না করলেও প্রায়শই দেখা যায়, ইসলাম ধর্মের বিবিধ বিষয়ে আপনার ঘোর আপত্তি আপনি তুলে ধরে থাকেন। আপনার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে,

শুধু নির্দিষ্ট একটি ধর্ম ইসলাম -এর সমস্যাগুলো আপনার চোখে পড়ার কারণ কি?

আপনার দৃষ্টিতে অন্যান্য ধর্মে কোনো অসঙ্গতি থাকতে পারে কি? থেকে থাকলে সেগুলো বলেন না কেন?

ভালো থাকুন।

৬| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: মহানবী হজরত মুহম্মাদ (সা.) ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ।
নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকরাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে,
মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্ব কালের, সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব।
রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ৪)।
অর্থাৎ নৈতিক চরিত্রের সর্বোচ্চ মানের ওপর আপনি অধিষ্ঠিত।
রাসুলুল্লাহ (সা)-এর নৈতিক চরিত্রের মান নিয়ে মক্কার মুশরিকদেরও
অভিযোগ ছিল না। তাঁর বিশ্বস্ততা ও উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে
তাদের ছিল না কোনো দ্বিমত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নৈতিক চরিত্রের
সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়ে হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘কোরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র।’
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুনিয়ার তাবৎ মানুষের সামনে শুধু কোরআনের শিক্ষাই পেশ করেননি।
বরং তিনি নিজেকে কোরআনের জীবন্ত নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
কুরআন মজিদে যে নৈতিক গুণাবলীকে উৎকৃষ্ট কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে,
সেসব গুণে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ গুণান্বিত।

আমরা মুসলমান। আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের প্রভূ একমাত্র আল্লাহ।
আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এর উম্মাত।
আমাদের কর্তব্য হলো রাসূল (সা.) এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করা।
তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। তাঁকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা। আল্লাহ তা’লা কুরআনের একাধিক
আয়াতে রাসূল (সা.) কে সৃষ্টিজগতের সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে বলেছেন। আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘
বলো, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন,
তোমাদের বংশ-গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান, যাকে তোমরা পছন্দ কর, (তা যদি) আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করবেন না।’ (সূরা আত তাওবাহ: ২৪) অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ।’ (সূরা আল আহযাব: ৬)

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



মা-শাআল্লাহ। চমৎকার। কৃতজ্ঞতা।

৭| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


নূর মোহাম্মদ নূরু ,

আল্লাহ কারো সম্পর্কে কোন কিছুই বলেননি; সবার সম্পর্কে মানুষ লিখেছেন।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আল্লাহ কারো সম্পর্কে কোন কিছুই বলেননি; সবার সম্পর্কে মানুষ লিখেছেন।

-'আল্লাহ যে কারো সম্পর্কে কোন কিছুই বলেননি' -এটা আপনি জানলেন কিভাবে? আপনার কাছে এই তথ্য কে জানিয়েছে? আপনি নিজেও তো অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে বেড়াচ্ছেন। অনুমান নির্ভর কথাবার্তা বলে চলেছেন।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.