নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়াহ্শীকে নবীজীর ক্ষমা প্রদর্শণ : ইসলাম যে প্রকৃতার্থেই মানবতার মুক্তির পথ তার অনন্য একটি প্রমান - রিপোস্ট

২৩ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:২০

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ওয়াহ্শীকে নবীজীর ক্ষমা প্রদর্শণ : ইসলাম যে প্রকৃতার্থেই মানবতার মুক্তির পথ তার অনন্য একটি প্রমান - রিপোস্ট

ওয়াহ্শী! হ্যাঁ, সেই ওয়াহ্শীর কথা বলছি, যিনি উহুদের যুদ্ধে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পিতৃব্য হযরত হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে শহীদ করেছিলেন। মর্মান্তিক এই শাহাদাতের ঘটনা ওয়াহ্শীর কুখ্যাতিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। জঘন্য এই ঘটনাটির কারণে ওয়াহ্শীর নাম জানেন না, এমন লোক সম্ভবতঃ কমই আছেন। অবশ্য পরবর্তী জীবনে পাল্টে গিয়েছিলেন তিনি। ইসলামের সুশীতল ঝান্ডাতলে আশ্রয় নিয়ে শামিল হয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরামের নূরাণী কাফেলায়। সমাসীন হয়েছিলেন 'রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু' খেতাবের সম্মানজনক আসনে। প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন প্রিয়তম হাবিব, দোজাহানের সরদার রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর।

কিন্তু, কিভাবে ফিরে আসতে পেরেছিলেন ওয়াহশী!

কিন্তু, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আপন চাচার হত্যাকারী-হন্তারক হয়েও কিভাবে তিনি ভীরে যেতে পারলেন সাহাবায়ে কেরামের কাতারে? কিভাবে প্রিয়পাত্র হতে পারলেন রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর? এত বড়, এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা, অভূতপূর্ব এরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন কিভাবে সম্ভব হতে পারে? কিসের কারণে? কোন্ লাভ অথবা লোভের আশায়, কোন্ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষমা করে দিলেন আপন চাচার হন্তারক ওয়াহশীর মত দুর্ধর্ষ খুনিকে? সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে উট চলে যাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে, কিন্তু আমাদের সাধারণ মানব প্রকৃতি তো এমনই যে, আমরা এ ধরণের মর্মান্তিক অপরাধীকে বিন্দু পরিমান ছাড় দিতে কক্ষনোই রাজী হবো না, প্রতিশোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দাউ দাউ করে আমাদের বুকের পাঁজরে জ্বলতেই থাকবে, নিজের রক্ত সম্পর্কিয় আপন চাচার হত্যাকারীর প্রতি কিভাবে ক্ষমাসুলভ আচরণ করা সম্ভব হতে পারে? পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আরেকটি ঘটনা এ যাবত ঘটেছে বলে কেউ প্রমান দিতে পারবেন? শুধু বিগত পৃথিবীর ইতিহাসে নয়, আগত পৃথিবীতে এর দ্বিতীয় নজির হিসেবে আরেকটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে সামান্য ধারণা পর্যন্ত করা সম্ভব?

সম্ভব নয়। আদৌ সম্ভব নয়। সম্ভব কি করে হতে পারে? ইসলামের এই অসাধারণ ক্ষমাশীলতার পেছনে রয়েছে গোটা মানব জাতির ইহ-পারকালীন মুক্তির চিন্তা, যা অন্য কোথাও নেই। এখানেই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি। এখানেই ইসলামের সত্যতার প্রমান উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দিতেই ছিল তাদের সকল প্রচেষ্টাঃ

হযরত হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু। রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অতি প্রিয়জনদের একজন। শুধু প্রিয়জন বললেও কিছু কম বলা হবে। একাধারে চাচা, দুধ ভাই এবং বন্ধুত্বের প্রাগাঢ় আত্মিক সেতুবন্ধনে আবদ্ধ। তাঁর ইসলাম গ্রহণে নবতর শক্তির সঞ্চার হয়েছিল ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের অত্যাচারিত, নির্যাতিত এবং স্বল্প সংখ্যক মুসলিমের দুর্বল শিবিরে। কিন্তু সাহসী এই সত্যের সৈনিককে হত্যা করেছিল ওয়াহ্শী।

আলো-আঁধারের প্রভেদ যেমন চিরকালীন। সত্য-মিথ্যের দ্বন্ধও তেমনি আবহমান কালের ধারায় চলমান। বাতিলের সঙ্গে সত্যানুসন্ধানীদেরও। ইসলামের আলো পৃথিবীতে ফুটে ওঠার পর হতেই এর প্রতি বিরূপ মক্কাবাসী বাতিলপন্থী কাফির, মুশরিকগণ ও মূর্তিপুজারিগণ। তারা কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন, যে কোনো প্রকারে ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দিতেই হবে। তারা একের পর এক মুসলিমদের উপর আঘাত হানতে থাকেন। হামলার পরে হামলা। অত্যাচারের উপর অত্যাচার। বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করেও তাদের আশা মেটেনি। মক্কা থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করেও তারা নিবৃত্ত হতে পারেননি। তাদের জিঘাংসা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। মুসলিমদের সমূলে বিনাশের উদ্দেশ্যে তারা নব উদ্যমে মাঠে নামেন। পরিকল্পনা হাতে নেন, মদিনা আক্রমন করার। মক্কা থেকে মদিনার দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। অস্ত্রশস্ত্রের বিপুল সমাহারে যুদ্ধের সাজে সুসজ্জিত মক্কার পৌত্তলিকদের বিশাল বাহিনী। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা এসে উপনীত হয়েছেন মদিনার উপকন্ঠে। উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে এসে হামলে পড়েছে মক্কার অত্যাচারী নিপীড়ক গোষ্ঠী। যুদ্ধের দামামা বেধে উঠেছে চতুর্দিকে।

হঠাৎ করে কোথায় গেলেন হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু! পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে!

উহুদের যুদ্ধের দিন। মুসলিমদের অস্তিত্বের লড়াই। পৃথিবীতে ইসলাম থাকবে কি থাকবে না, সে ফায়সালার দিন অবশেষে এসে গেল। দেখতে দেখতে প্রতিরোধের ডাকে সারা দিয়ে নিরস্ত্র মুসলিম জনতাও সমবেত হলেন প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহবানে। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি স্বয়ং রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। উহুদের প্রাঙ্গনে। যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছিলেন। তিনি দেখছিলেন- মুসলিমগণ সংখ্যায় কম হলেও, প্রতিপক্ষের তুলনায় অস্ত্রশস্ত্রে দুর্বল হলেও যুদ্ধ করে চলেছিলেন বীর বিক্রমে। হযরত হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে কিছুক্ষণ পূর্বেও যুদ্ধের ময়দানে দেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ হযরত হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে দেখছেন না তিনি। একটু আগেও দু’হাতে তরবারি নিয়ে শত্রুর ভীষণ ভিড়ে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে যাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেছেন, হঠাৎ করে তিনি কোথায় গেলেন!

অবশেষে সাহাবায়ে কেরাম তাকে খুঁজে পেলেন, তিনিও ছিলেন শহীদদের মাঝেঃ

চিন্তার রেখা প্রিয়তম রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখে মুখে। অনতিবিলম্বে দু'জন সাহাবীকে হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু -এর খোঁজে পাঠালেন। সাহাবীদ্বয় এদিক সেদিক খুঁজে অবশেষে পাহাড়ের পাদদেশে এক স্থানে গিয়ে দেখলেন যে, হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু শহীদ হয়ে গেছেন। তারা দেখলেন, তিনি শুধু শহীদই হননি, বরং তাঁর বুক চিড়ে ফেলা হয়েছে। পেট ফাড়া; বের করে আনা হয়েছে নাড়িভুড়ি; কলিজা চিড়ে ফেলা হয়েছে এবং কামড়ে-চিবিয়ে তা ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে; ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে তার সমস্ত দেহ। এই নিষ্ঠুর-নির্মম ও বিভৎস দৃশ্য দেখে সাহাবীদ্বয় শোকে-দুঃখে যেন বোবা হয়ে গেলেন। তারা অতি তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে। হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হামজা কোথায়? কী অবস্থা তাঁর?

শোকে মুহ্যমান সাহাবীদ্বয় নিরুত্তর। বোবামুখ। তাঁরা এই নির্মম সত্যের কি উত্তর দিবেন? কোনো উত্তরই দিতে পারলেন না। শুধু বললেন, ‘দয়া করে আপনি নিজে গিয়ে দেখে আসুন, ইয়া রাসুলুল্লাহ’।

শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনিঃ

সাহাবীদ্বয়ের অবস্থা প্রত্যক্ষ করে হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, মর্মান্তিক এমন কিছু একটা ঘটেছে যা তারা বর্ণনা করতে পারছেন না তাঁর সামনে। অবশেষে তিনি গেলেন সেখানে। দেখলেন, প্রিয় পিতৃব্যের ছিন্নভিন্ন এবং বিকৃত করা লাশ। বিভৎস এই দৃশ্যদর্শনে তিনি যেন হয়ে যান নির্বাক-ভাষাহীন! তাকিয়ে থাকেন। প্রিয় পিতৃব্যের দিকে। নির্মিমেষ। নিষ্পলক। তাঁর ঠোঁট কাঁপছে। হৃদয় কাঁদছে। অশ্রুসজল হয়ে উঠছে দু'চোখ। অঝোর ধারায় ঝড়ে পড়ছে পানি। তিনি ধীরে ধীরে বসে পড়লেন। লাশের ওপর হাত রাখলেন। চাচার রক্তাক্ত দেহে হাত রাখতেই তাঁর হাতে চলে এলো তাজা রক্ত। অনেকক্ষণ সেই রক্তের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। তেইশ বছরে যা তিনি দেখেননি, যে অসহনীয় নির্মমতা প্রত্যক্ষ করেননি, তা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। শিশুর মতো উচ্চকিত স্বরে এতো জোরে কাঁদলেন যে, সে শব্দ পৌঁছে গেল বহু দূর পর্যন্ত। সাহাবারা ছুটে এলেন দূর থেকে। সকলের চোখে মুখে শোকের ছায়া। বিস্ময় বিহবল শোকাকুল তারা। কারণ, তারা তাদের প্রিয় নবীকে এত বেশি শোকাভিভূত হতে আর কখনও দেখেননি। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদছেন, হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কাঁদছেন, কাঁদছেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমগণ। চারদিকে কান্নার রোল। হৃদয় বিদারক মর্মস্পর্শী অন্যরকম এক দৃশ্য। অসহ্য এক বেদনায় গুমরে গুমরে কাঁদছেন হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এমন সময় আসমান থেকে নেমে এলেন বার্তাবাহক জিবরাইল আমিন আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি দুঃখ করবেন না। আমি হামজাকে আরশে নিয়ে গেছি'। আর হামজা হচ্ছেন, ‘হামজাতু আসাদুল্লাহি ওয়া আসাদু রাসুলিহী। হামজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বাঘ’।

তবুও ওয়াহ্শীর জন্য মন কাঁদে তাঁর; আহ! কেমন দরদি ছিলেন তিনি!

দিন পাল্টে যায়। এক সময়ে মক্কা থেকে রিক্ত হস্তে বহিষ্কৃত মুসলিমগণ মাথা উঁচু করে দাড়াতে সক্ষম হন গোটা আরবে। বিজিত হয় পবিত্র মক্কা নগরী। মক্কা বিজয়ের পর ওয়াহ্শী জীবন বাঁচানোর চিন্তায় পালিয়ে যান তায়েফে। তায়েফ মক্কা থেকে প্রায় দুইশত কিলোমিটার দূরের একটি শহর। ওয়াহ্শী পালিয়ে চোখের আড়ালে চলে গেলেও তাকে ভুলে যাননি প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন সাহাবীকে তিনি সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। আর তাকে বলে দিলেন যে, 'যাও, ওয়াহ্শীর সঙ্গে দেখা করো। তাকে বলো, সে যেন কালিমা পড়ে নেয়। আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দেবেন। সে জান্নাতে যাবে’।

দূত পাঠালেন ওয়াহ্শীকে ফিরিয়ে আনার জন্যঃ

হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান-মহৎ ও অতি দয়ালু, তিনি ভুলে গেলেন প্রতিশোধ নেয়ার কথা। তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যকে বড় মনে করে; প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে সহ্য করে উম্মতের হেদায়াতের জন্য, পরকালের অন্তহীন জীবনে মুক্তির চিন্তায় সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। দূত পাঠানো হলো, তাকে ইসলামে দীক্ষিত করার আহবান জানানোর জন্য।

ওয়াহশী বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, তিনি ক্ষমা পাবেনঃ

প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত সেই বার্তাবাহক সাহাবী (রা.) তায়েফে পৌঁছে দেখা করলেন ওয়াহ্শী’র সাথে। প্রিয় নবীর পয়গাম শোনালেন তাকে। তিনি বললেন, ‘আমি এই কালিমা পড়ে কি করবো? আমি তো শিরক্ করেছি। আমার গুনাহ মাফ হবার নয়’।

সাহাবী বললেন, ‘আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন’।

ওহাশী বললেন, ‘আমি চুরি করেছি, ব্যভিচার করেছি, মানুষ খুন করেছি। এমনকি আমীর হামজার হত্যাকারীও আমি নিজে। আমি মদ পান করেছি। আমার আর মাফ পাবার কোনো রাস্তা নেই। অন্য কোনো কথা বলার থাকলে বলো। তুমি ফিরে যাও’।

হায় হায়! ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা দূতকে নবীজী আবারও পাঠালেন ওয়াহশীর কাছেঃ

অবশেষে ফিরে এলেন সেই দূত এবং হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াহশী’র সর্ব কথা শোনালেন। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় ওই দূতকে বললেন, ‘তুমি ফিরে যাও তায়েফে। আর ওয়াহ্শীকে এ কথা বলো যে, আমার মহান প্রতিপালক একথা বলেন ‘তাওবা করো, ঈমান আনো, সৎ কর্ম করো। দয়ালু আল্লাহ তায়ালা গুনাহকে নেকিতে পরিণত করবেন’।

দূত আবার গেলেন তায়েফে। শুধু একজনের মুক্তির পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য। ওয়াহশীর। হ্যাঁ, ওয়াহ্শী শুনে বললেন, ‘এ বড় কঠিন শর্ত। ঈমান আনো সৎ কর্ম করো- এতসব আমাকে দিয়ে হবে না। অন্য কোনো রাস্তা বলো’।

সাহাবী এবারও ফিরে আসতে বাধ্য হলেন খালি হাতেঃ

সাহাবী আবারও ফিরে এলেন। মানব জাতির হেদায়াতের নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি আবার ফিরে যাও’।

ঐ সময় ছয় শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া দুরূহ ব্যাপার ছিল। তবুও শুধুমাত্র একজন মানুষের হেদায়াতের লক্ষ্যে এ প্রচেষ্টা ছিল কতটা প্রগাঢ় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাও সে হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সবচে’ প্রিয়জনের হত্যাকারী। তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করে অবিরাম হেদায়াতের মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন সকল কষ্টকে মেনে নিয়ে। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে বললেন, ‘তুমি ফিরে গিয়ে তাকে বলো আমার প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু’।

তিনি আরও বলে দিলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শিরক্ ছাড়া সব গুনাহ মাফ করে দিবেন। যাকে ইচ্ছা’।

শেষবারের মত আবারও তাকে পাঠানো হলো তায়েফেঃ

দূত আবার গেলেন তায়েফে। ওয়াহশীর সাথে সাক্ষাৎ করে নবীজীর পয়গাম শোনালেন। ওয়াহ্শী শুনে বললো, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা’ বলেছেন আমাকে না-ও মাফ করতে পারেন। কথার মধ্যে জটিলতা রয়েছে। অন্য রাস্তা দেখো। তুমি ফিরে যাও’।

অন্তর জুড়ে তাঁর গভীর প্রেম উম্মতের প্রতি, বিশ্ব মানবতার প্রতিঃ

তিনি আবারও ফিরে এলেন। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ আমাদের কেমন মহান দ্বীন দরদী নবী দিয়েছেন। অন্তর জুড়ে তাঁর এমন গভীর প্রেম উম্মতের প্রতি, বিশ্ব মানবতার প্রতি, এমনকি নরঘাতক আপন পিতৃব্যের হন্তারকের প্রতি। একজন কাফিরের কাছে বারবার পাঠাচ্ছেন সত্যের বাণী। তাঁর দরদভরা মন ওয়াহ্শীর মত নির্মম অত্যাচারীকে সত্যের পথে আনতে প্রাণান্ত ধৈর্য্য-স্থৈর্যের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছিল।

যিনি আমাদের মৃত্যুর সময় কাছে দাঁড়াবেন, কবরে আমাদের সাহায্য করবেন। হাশরের মাঠে সব নবী বলবেন, ‘ইয়া নাফসি’ ইয়া নাফসি’। তখন তিনি, আমাদের নবী আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। পুলসিরাতে সমগ্র মানব একে অন্যকে ভুলে যাবে। আর তিনি পুলসিরাত আঁকড়ে ধরে বলবেন ‘হে আল্লাহ, তুমি পার করে দাও, তুমি পার করে দাও’।

পরিবর্তনের ঢেউ শুরু হলো ওয়াহশীর অন্তরেঃ

সুতরাং, ওয়াহ্শীর মত একজন চরম অপরাধী খুনীর হেদায়াতের জন্য যখন হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রানান্তকর কষ্ট সহ্য করলেন তখন তার অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা পাল্টে দিলেন। স্রষ্টার দিকে। নবীর দিকে। সত্য ও সুন্দরের দিকে। আলোর দিকে। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দূত ফিরে যাবার পর থেকে ওয়াহ্শীর মাথায় শুধু একই চিন্তা। তিনি সর্বদাই ভাবছেন দূতের কথাগুলো। ভেবেই চলেছেন সারাক্ষণ। দূতের কথামালা ওয়াহ্শীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তার ভাবনার বলয়ে কাজ করছে, সত্যিই কি আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেবেন? ইসলাম যে সত্য তা আমার বুঝতে বাকী নেই। দিবালোকের মত পরিষ্কার। আর যদি তা না হতো তাহলে আবু তালিবের ইয়াতিম ভাতিজা কি করে এতো বড় সফলতা পায়। এতো সম্মানের অধিকারী হয়। সকলেই তার কথা মান্য করছে। তাকে শ্রদ্ধা করছে। মক্কা আজ তাঁর হাতের মুঠোয়! সবচেয়ে আশ্চার্যের ব্যাপার, ইকরামার মতো দুর্দান্ত শত্রুও তাঁর আহবানে সারা দিয়ে আজ মুসলমান। দুর্বিনীতা হিন্দা! সেও তো! দুর্জয় আবু সুফিয়ান ও মহাবীর খালিদ? আমার ইবনুল আস? তাহলে বাকি থাকলোটা আর কে? আমি একা?

চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে ওয়াহশীঃ

মুহাম্মদ যদি এসব মিথ্যে বলতো তাহলে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা কি করে সম্ভব? সবার অন্তর আশ্চর্যজনকভাবে পাল্টে গেল। তাহলে কি আমাদের এতো দিনের পূজা-অর্চনা সব মিথ্যে! লাত, ওজ্জা, হোবল … সব মাটির পুতুল কি কোনো ক্ষমতা রাখে না? সব কিছু আল্লাহ করেন? তিনি কি একা সৃষ্টি করেছেন সমগ্র পৃথিবী? পৃথিবীর সকল গ্রহ-তারা, নদী-সাগর, পাহাড়-পর্বত, মরু-জঙ্গল, আকাশ-বাতাস ও জমিন সব কিছুই তারই সৃষ্টি? আল্লাহ তায়ালা’র এসব সৃষ্টি অতঃপর সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন, ওয়াহ্শী (রা.)। বারবার ওয়াহ্শীর মনে চিন্তার ঢেউ খেলছে হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পাঠানো দূতের বলা শব্দ সমষ্টি। তার মাঝে পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি করছে ঢেউয়ের পর ঢেউ। চেতনার সাগরে আছড়ে পড়ছে বিবেকে উদয় হওয়া সত্য-সুন্দরের চিন্তা। ওয়াহ্শী আবার ভাবছেন, নবীজির সবচেয়ে প্রিয়জন আমির হামযা (রা.)-কে আমি হত্যা করেছি। আমিই তো এখন নবীর সবচেয়ে বড় দুশমন। অথচ তিনি আমাকে এ পথে নেয়ার জন্য বারবার দূত পাঠাচ্ছেন। কিসের দায়বদ্ধতা তাঁর? এমন কি মহত্মতা আছে তাতে? নিশ্চয় এই অসামান্য আয়োজন ও মহান মহানুভবতায় বিরাট কিছু লুকায়িত আছে। আছে আলো ও অন্ধকারের প্রার্থক্য। আমি ওই সাহাবীর চোখে দেখেছি জল। দেখেছি দরদ ভরা ভালবাসা। মানুষ পথ না পেলে এমন কি ক্ষতি ওদের?

শেষ হয় না ওয়াহশীর ভাবনাঃ

ওয়াহ্শী ভাবছেন, কেবলই ভাবছেন। ভাবতে ভাবতে দিগি¦দিগ হারিয়ে ফেলছেন। ভাবনার কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। ‘কি বললো ওই দূত’ বারবার তার কথাগুলো ঘুরে ফিরে আসছে তার মাথায়, ‘আল্লাহ বলে একজন আছেন একথা কি সত্যি? তা যদি না হবে তাহলে বদরের যুদ্ধে জয়ী হলো কেমন করে? এক হাজার সৈন্যের, বিপক্ষে মাত্র তিন শতের জন নিয়ে এই অসম লড়াই জিতে গেলেন তারা অনায়াসে। নিশ্চয়, এমন কোনো মহাপরাক্রান্ত অদৃশ্য শক্তি এদের পেছনে আছেন। সর্বদা সাহায্য সহযোগীতা করছেন। তেমনি করে ওহুদের লড়াইয়ে বিজয় এবং খন্দক বিজয় এসব কিসের আলামত? চাঁদ, সুরুজ, আকাশ-পাতাল, তারা নীহারিকা, নিসর্গ, নদী, সাগর, পাহাড়, তরুলতা, পশু-পাখি সবচে আশ্চর্য আমরা মানুষ! আমাদের বলিষ্ঠ দেহ, চোখ, কান, নাক, দৃষ্টিশক্তিসহ আরও কত কি। এগুলো অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন কে? অবশ্যই এসব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। যিনি আমাদের সকল কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আর সত্যিই যদি তিনি সব কিছুর স্রষ্টা হয়ে থাকেন তাহলে আমি কি করলাম? আমার কর্মের মাধ্যমে আমি বিবেকহীনতার পরিচয় দিলাম। স্রষ্টাকে অস্বীকার করলাম; তার বন্ধুকে দুঃখ দিলাম, তাঁর প্রিয়জনকে হত্যা করলাম। এসব ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠলো ওয়াহ্শী। তার ঘাড়ের পেছনের লোম দাঁড়িয়ে গেল সরসর করে। তার সর্বশরীর কেঁপে উঠলো। হৃদপি- উত্তাল হয়ে আছড়ে পড়ছে বুকের পাটাতনে। সর্বনাশ! একি করেছি আমি এত দিন? এতো বড় পাপ! মহান প্রভু কি মাফ করবেন আমাকে? মনে হয় না। উহু …কিন্তু … কিন্তু …তাহলে আমি কি বিশ্বাস করে ফেলেছি মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে?

ক্রমশঃ ভাবনার অতল তরে যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়াহশীঃ

তিনি ভাবছেন আর ভাবছেন। ওই যে … দূত বললেন … ‘তওবা করো, ফিরে এসো, তওবাকারীর কোনো গুনাহই বাকি থাকে না। সে নিস্পাপ হয়ে যায়, মাসুম হয়ে যায়’। আচমকা … গভীর আবেগে চোখ ভুঁজে ফেললেন ওয়াহ্শী। বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন। আর একটু পরেই ‘ক্ষমা করো … ক্ষমা করো …’ তাঁর চেপে রাখা চোখের পাতার তীর ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে অশ্রুধারা। তিনি বললেন, ‘হে পরম প্রভু …’ তাঁর গলা বসে গেল। ফিসফিস করে বলে উঠলেন, হে বিশ্ব জগতের স্রষ্টা। দয়া করো … দয়া করো … আমাকে পথ দেখাও … পথ দেখাও …। এসব বলেই চলছেন বিরামহীন। এক পর্যায়ে চুপ হলেন তিনি। উপলব্দি হলো তিনি জ্ঞান হারাচ্ছেন বুঝি। ভাঙ্গছে ভুল। আসছে চেতনা নতুনের-আলোর। জাগছেন, জ্ঞান হারাচ্ছেন, ফের জাগছেন। মনে হচ্ছে চোখের সামনে আলো; আবছা আলো। কুয়াশার ভেতর থেকে অস্পষ্ট রহস্যময় ভেতরে আরো আলো। আলোর ভেতর আরও আলো। চোখ ঝলসে যায়। আস্তে আস্তে হৈচৈ হেঁটে হেঁটে চলে এলো তাঁর কাছে। হেসে উঠলো ভূবনজয়ী আলো। অন্তরে জ্বলে উঠলো আলো। সুবহানাল্লাহ! এবার সব কিছু দিনের মতো পরিষ্কার। স্পষ্ট ধরা পড়ছে-আলো আর আঁধারের প্রার্থক্য। সত্য আর মিথ্যা; সোজা-সরল; সহজ সাদা পথ। কে যেন হাত ধরে সোজা পথে দাঁড় করিয়ে দিলেন তাঁকে। বিড়বিড় করে কি যেন পড়লেন। বুঝতে পারলেন না নিজেই। বার বার পড়ছেন, কি যেন পড়ছেন। একসময় অবশ হয়ে পড়লেন তিনি। তাঁর বিবশ নেত্রকোণে জমে এলো তপ্তঅশ্রু। দিন যায় রাত যায় ওয়াহ্শী নিঝুম। একাকী একটা ঘরে সময় কাটায়। ভাবছেন শুধুই ভাবছেন; ভেবেই চলেছেন।

অবশেষে তিনি এসে উপস্থিত হলেন মদিনাতুন্নবীতে

একসময় সব স্মৃতি মনে তার। আবদুল মোত্তালিব, আবদুল্লাহ, আবু তালিব, মুহাম্মদ। তাঁর অমলিন মহান চরিত্র। সুদৃঢ় পদক্ষেপ, বলিষ্ঠ বক্তব্য, ত্যাগ তিতিক্ষা, চরমমূল্য, অনেক রক্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ভেবে ওয়াহ্শী অবাক। কখন যেন তিনি দাঁড়িয়ে গেছেন বসা থেকে। তাঁর মাথাটা একটু টলে উঠলো। এ ক'টা দিনে চোখের নিচে কালির দাগ পড়েছে তাঁর। শরীর দূর্বল হয়েছে, গাল বসে গেছে। কোণঠাসা বাঘের মতো তার অবস্থা। অনেকদিন ধরে গায়ে জড়িয়ে রেখেছেন একটা চাদর। সেটা আবার ভালভাবে জড়িয়ে নিলেন। আপনাআপনিই তার পা সামনে বাড়লো। পা’টা কোথায় ফেলছেন ঠাহর করতে পারছেন না তিনি। তার মনে হচ্ছে শূন্যে ভাসছেন তিনি। শরীরে যেন কোনো ওজন নেই; ভর নেই। নিজ ইচ্ছায় পা ফেলতে পারছেন না। কে যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। আর তিনি চলছেন তো চলছেন-ই। চলার যেনো কোনো শেষ নেই। অন্তহীন কোন ঠিকানায় এগিয়ে চলছেন। নাওয়া খাওয়া নেই, শোয়া নেই, সাথী নেই, একা একা পথ চলছেন। কি কাজে কেনো এ পথ চলা- তাও মনে নেই। শুধুই এগিয়ে যাওয়া। সামনে পথ চলা। পথ চলছেন তিনি। আর ভাবছেন কত কিছু। কত স্মৃতি ভেসে উঠছে তার স্মৃতির পর্দায়। পুরনো সেই শহরের কত কথাই না মনে পড়ছে ওয়াহশীর, স্মৃতিময় নগরী মক্কার ‘সূ-কুল লাইল’, চির চেনা সেই ‘রাত্রির বাজার’ এর পথ তাকে টানছে। সেই আগেকার চির পরিচিত রাস্তা-ঘাট সব কিছুই আজ হয়তো আগের মত নেই। হয়তো অচেনা মনে হবে তার কাছে। আজ সেখানে হয়তো নেই আর কোনো প্রতিমা পূজারী। ধ্বক্ করে কেঁপে ওঠে ওয়াহ্শীর বুক। পরিচিত প্রতিমারা কেউই তাহলে মক্কায় আর নেই, সব শেষ, সবই শেষ। অবশেষে এমনি করেই ভাবনার অতল তলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে এই পথচলা শেষ হলো একসময়। এক চাঁদোয়া রাতে তিনি ঠিকই এসে পৌঁছুলেন নতুন আলোর শহর, নবীর শহর মদিনায়।

আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে ওয়াহশীর ছুটে চলাঃ

তিনি ভাবছেন, শেষ না হয়ে উপায় কি? শেষ হওয়াই ভাল। মিথ্যার ধ্বংস তো অনিবার্য। যা হয়েছে ভালই হয়েছে। তবুও পুরানো স্মৃতির মিথ্যা মায়ায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। ওয়াহ্শীর অবস্থা এমন হয়েছে যেনো তাকে চেনাই ভার। পরিচিত জনের কেউ দেখলে হয়তো তাকে ভূত দেখার মতই চমকে উঠবে। সেই ওয়াহ্শীর আর নেই, নেই তার সেই দর্প। ভিখারীর ন্যায় ছুটে চলেছেন মানবতার মহাপুরুষ, জগতের আলো মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে। উদ্দেশ্য একটা আত্মসমর্পণের। পুণ্যের কাছে পাপের; তাওহিদের কাছে শিরকের; একাত্ববাদের কাছে অংশীবাদীর; আল্লাহর কাছে বান্দার; প্রভুর কাছে ক্রীতদাসের; মালিকের কাছে গোলামের; পরমাত্মার কাছে আত্মার সম্পূর্ণ উজার করে সপে দেওয়া। দ্রুত পায়ে ছুটে চলছেন ওয়াহ্শী। আলোকবর্তিকা নবীজির দিকে। কখনও দৃষ্টি বিভ্রম কখনও আবছা আবছা। সব কিছুই যেনো অচেনা ব্যতিক্রম লাগছে। বাড়ি-ঘর, পথ-ঘাট, সবই যেনো নতুনের সাজে সেজে আছে। মনে হচ্ছে এ শহরের মানুষগুলো অনেক উঁচু, আকাশের মতো। তবুও সামনে চলার পিপাসায় দ্রুত চলছেন তিনি। ভাবছেন আর ঘামছেন ওয়াহ্শী। কোন দিকে যাবেন ঠিক করতে পারছেন না কিছু। একবার এ গলি আরেকবার ও গুলিতে হেঁটে চলছেন। চারদিকে সাজ সাজ রব। সবার ভেতর এক প্রশান্তির ঢেউ খেলছে যেনো। আলোকিত বদন নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কেউ হাঁটছে। পরিচিত জনদের কেউ দেখছেনা তো? কেউ চিনে ফেলেনি তো? চেনার তো কথা নয়, মুখ তো চাদর দিয়ে ঢাকা। কিন্তু কে যেন একজন তাঁর দিকে চেয়েছিল অনেকক্ষণ। অপলক দৃষ্টিতে ওয়াহ্শীর বুক ধ্বক্ করে উঠেছিল। কিন্তু না চিনতে পারেনি। পাশ কেটে চলে গেল দ্রুত।

সত্যের সামনে মাথানত করতে প্রস্তুত ওয়াহশীঃ

ওয়াহ্শী ভাবছেন, আমার নামে হুলিয়া আছে। আছে মৃত্যু পরোয়ানা। আমি নিরাপদ নই মোটেও। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বিপদ। কিন্তু সে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তিনি এসেছেন এখানে। উদ্দেশ্য একমাত্র সত্যের কাছে, আলোর কাছে, আত্মসমর্পণ করা। দ্রুত চলছেন তিনি সামনের দিকে। যেমন করে হোক দেখা করতে হবে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে। তার ভাবনার বলয়ে কাজ করছিল গত বেশ কিছুদিন হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যি-সত্যিই নবী। ব্যস আর কোনো দ্বিধা নেই মনে। নেই কোনো মনের সাথে বোঝাপড়া। আলো এসেছে মনের ভেতরে। সে আলোই দেখিয়েছে সত্য ও সুন্দরের পথ। প্রাণের বিনিময়ে হলেও নবীজির সাথে দেখা করতে হবে। পড়তে হবে সেই পবিত্র কালিমা। কিন্তু … মসজিদে নববী আর কত দূর? যদি এই পথ শেষ না হয় তাহলে সেই অমীয় সুধা থেকে কি বঞ্চিত হবো? ওয়াহ্শীর গায়ে কাঁটা দিল, শিউরে উঠলো সমস্ত শরীর। দ্রুত এগিয়ে চলেছেন তিনি সামনের দিকে। যেমন করেই হোক তাকে পৌঁছতে হবে নবীজির কাছে। মনে মনে ওয়াহ্শী দোয়া পড়ছেন, হে আল্লাহ, ‘হে পরম প্রভু, হে বিশ্বভুবনের স্রষ্টা, আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে রক্ষা করো। ইসলাম ধর্মে না আসা পর্যন্ত আমাকে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কোনো সাথী যেন না দেখতে পায়। আমি মুসলমান না হয়ে মরতে চাই না। হে আল্লাহ, আমাকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও। একটু সুযোগ দাও … একটু সময় দাও …’।

হঠাৎ মনে হলো তিনি বাইতুল্লাহ পৌঁছে গেছেন। কে পৌঁছে দিল তাকে এখানে, দূর্গম কন্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে কি করে তিনি এখানে এলেন! ওয়াহ্শীর দু’চোখ থেকে ঝরে পড়লো দু’ফোঁটা অশ্রু। মিশে গেল সে অশ্রু মসজিদের কাঁকর ভরা মেঝেয়। চোখ মুছলেন, এদিক ওদিক তাকালেন, দেখলেন ওইতো …! ওই তো তিনি…!!

চাঁদরের দেয়াল ফুঁড়ে শব্দ উঠলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ …

পাথরের ন্যায় জমে গেলেন ওয়াহ্শী। মনে হলো পা’ জোড়া পেরেক দিয়ে কে যোনো গেঁথে দিয়েছে মেঝোয়। বুকের পাটাতনে আছড়ে পড়ছে উম্মাদের মতো হৃদপিন্ড। নতুন কারও আগমনের শব্দ পৌঁছে গেল মানবতার মহান বন্ধু, মুক্তির অগ্রদূত শ্রেষ্ঠ মানুষ নবীজির কাছে। তিনি চোখ তুলে তাকালেন। কি অপরূপ সৌন্দর্য, বিশাল আঁখি, মায়াভরা বদন, মায়াময় চাহনি, অশ্রুতে ভেজা দু’চোখ। অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন ওয়াহ্শীর দিকে। ওয়াহ্শী মনের অজান্তেই চাদরের কোন টেনে মুখটাকে বেশি করে টেনে নিলেন। ভয় অনুকম্পায় তার হৃদপিন্ড দেহ খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাঁর পা যেন অচল, বিবশ; সামনে এগুনোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। স্বপ্নের রাজ্যে ঘনঘোরতায় যেন তার এ চলা। জোর করে পা ঠেলে নিয়ে এগিয়ে গেলেন দু’কদম। ঝট করে বসে পড়লেন তাঁর সামনে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখ মেলে তাকালেন, অবাক দৃষ্টিতে। চিনতে পারছেন না মানুষটাকে। চাঁদরের দেয়াল ফুঁড়ে শব্দ উঠলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ …’।

‘কে?! কে তুমি?’ হুজুর অবাক কন্ঠে শুধালেন।

হু-হু করে কেঁদে দিলেন ওয়াহ্শী। খানিক পরে মুখের চাদর না সরিয়েই বললেন,‘ হুজুর, আমি’।

হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রিয় কোনও সাহাবীকে মনে করে ফের চলে গেলেন ধ্যানের জগতে। কিন্তু হঠাৎ। দমকা হাওয়ায় সরে গেল ওয়াহ্শীর মুখের চাদর। চোখ খুললেন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চেয়ে রইলেন অপলক দৃষ্টিতে। ঝাড়া তিরিশ সেকেন্ড। তাঁর বিস্ময় বাড়লো। ‘তুমি?! ওয়াহ্শী!’

‘আশহাদুল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ’ উচ্চকিত স্বরে, বারংবার পড়েই চলেছেন, এই কালিমা, ওয়াহ্শী (রা.)। তার চোখ বেয়ে দরদর করে ঝড়ছে পানি। বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন বিশ্ব নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পলকহীন চাওয়ায় কি যেন বিরাজ করছে- কেউ জানে না। চারদিক থেকে চলে এসেছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আজমাঈন। হাতে খাপ খোলা তলোয়ার। অপেক্ষা শুধু মাত্র হুজুরের ইশারার। সঙ্গে সঙ্গে গর্দান উড়ে যাবে ওয়াহ্শীর।

সাবধান! ওয়াহ্শীকে কেউ ছুঁতে পারবে নাঃ

কিন্তু না … নবীজির তরফ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। তিনি বললেন, ‘সাথীরা, সাবধান! ওয়াহ্শীকে কেউ ছুঁতে পারবে না। সে কালিমা পড়ে নিয়েছে। সে উচ্চারণ করেছে পবিত্র কথাগুলো।'

সাহাবীরা থমকে গেলেন, হলেন অবাক! ধীরে ধীরে খোলা তলোয়ার ঢুকে গেল খাপে। বসে পড়লেন চারদিক ঘিরে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো বদরের সেই অবর্ণনীয় দৃশ্য। তাদের চোখ থেকে নির্গত হলো ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। যেনো কবরের নিরবতা নেমেছে আজ এখানে। ওয়াহ্শীর মাথা নিচু। সাহাবীরাও মাথা নিচু করে হুজুরের মুখে কিছু শুনতে উদগ্রীব। হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র চোখে পানি। সবার চোখে অশ্রুঝর্ণা, মনে ব্যথার ঢেউ আছড়ে পড়ছে মনোতীরে।

এক হাজার অবিশ্বাসীকে হত্যা করার চেয়ে একজনের বিশ্বাসী হওয়া অনেক ভালঃ

কিছু সময় পেরিয়ে গেল। মনের দুয়ারে পুরানো সেই দিনের স্মৃতি ভীড় করেই চলছে। কিছুতেই দূর করতে পারছেনা বেদনাবিধূর বিভীষিকাময় হত্যাকা-ের কথা। এমন সময় হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘শোনো সাথীরা! ওয়াহ্শী কালিমা পড়ে নিয়েছে। একজন অবিশ্বাসী বিশ্বাস এনেছে। কেটে গেছে অবিশ্বাসের আঁধার। এক হাজার অবিশ্বাসীকে হত্যা করার চেয়ে একজনের বিশ্বাসী হওয়া অনেক ভাল। তিনি মহান ধৈর্য’র পরিচয় দিতে চাচার সেই রক্তভেজা শরীর, চিবিয়ে খাওয়া কলিজা, ছিন্নভিন্ন লাশ তার হৃদয়কে করেছিল বিদীর্ণ তা সংবরণ করলেন। তা প্রকাশ হতে দিলেন না। এজন্যে যে, একটি মানুষ অবিশ্বাসের নিঃসীম আঁধার থেকে বেরিয়ে বিশ্বাসের পৃথিবীতে আলোর দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছে। এসেছে সত্যের ঠিকানায়। কাজেই ব্যক্তিগত সব দুঃখ ব্যথার এখন কোনো সুযোগ নেই। একজন মানুষ ইসলামে বিশ্বাসী হওয়া মানে তার জীবনে পরম আনন্দ আলোকময় পথের দিশা পাওয়া। ওয়াহ্শীর এই বার্তাটিও খুশী ও আনন্দের। সব বেদনার খড়কুটো যেন নিমিষেই বন্যায় ভেসে গেল।

‘তুমি ওয়াহ্শী!’

হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সময় সব ভুলে গেলেন এবং ওয়াহ্শীকে কিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া যায় তা নিয়ে চঞ্চল হলেন। তাঁর চোখের পাতা ধীরে ধীরে খুললো। অশ্রুসিক্ত নয়ন। কিছুক্ষণ বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। মহাশক্তিধর অলৌকিক আঙ্গুল তুললেন। সে আঙ্গুল খানিকটা এগিয়ে গেল ওয়াহ্শীর দিকে। আরও উপরে উঠলো। ঠিক ওয়াহ্শীর চেহারার দিকে। স্থির হলো আঙ্গুল। কেঁপে উঠলো ঠোঁট। ‘তুমি ওয়াহ্শী!’

প্রায় শোনা যায় না এমন কন্ঠস্বর। কান্নার দমক চেপে রাখার কারণে বুঁজে এলো। কিন্তু সাহাবা (রা.) আজমাঈনের কাছে মনে হলো বিস্ফোরণ হলো ঘরে। কেঁপে উঠলো অন্তরাত্মা ওয়াহ্শীর। তিনি বললেন, ‘জ্বি হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ওয়াহ্শী। সত্যিই!’ ‘তুমি-তুমি আমার চাচাকে হত্যা করেছিলে?’ ‘কিভাবে?’ জবাব না শুনেই ফের বললেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘আমাকে শোনাও সে কাহিনী’।

শেরে খোদা হযরত হামযা (রা.)-এর শাহাদাত

হযরত হামযা (রা.)-এর আততায়ীর নাম ছিলো ওয়াহশী ইবনে হারব। আমরা হযরত হামযা (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা আততায়ীর ওয়াহশীর ভাষায় প্রকাশ করছি। মুসলমান হবার পর তিনি বলেন, আমি ছিলাম যোবায়ের ইবনে মোয়াত্তামের ক্রীতদাস। তার চাচা তুয়াইমা ইবনে আদী বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। কোরায়শরা ওহুদ যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে যোবায়ের ইবনে মোয়াত্তাম আমাকে বললেন, যদি তুমি মোহাম্মদের চাচা হামযাকে আমার চাচার হত্যার প্রতিশোধস্বরূপ হত্যা করতে পারো, তবে তুমি মুক্তি পাবে। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর কোরায়শদের সাথে ওহুদের যুদ্ধের জন্যে আমি রওয়ানা হলাম। আমি ছিলাম আবিসিনিয়ার অধিবাসী। আবিসিনিয়দের মতো আমিও ছিলাম বর্শা নিক্ষেপে সুদক্ষ। আমার নিক্ষিপ্ত বর্শা কম সময়েই লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো। ব্যাপকভাবে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর আমি হযরত হামযা (রা.)-কে খুঁজতে শুরু করলাম। এক সময় তাঁকে দেখতেও পেলাম। তিনি জেদী উটের মতো সামনের লোকদের ছিন্নভিন্ন করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সামনে কোন বাধাই টিকতে পারছিলো না। কেউ তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারছিলো না।

আল্লাহর শপথ, আমি হযরত হামযা (রা.)-এর ওপর হামলার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলাম এবং একটি পাথর অথবা বৃক্ষের আড়ালে ছিলাম, এমন সময় সাবা ইবনে আবদুল ওযযা আমাকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর কাছে পৌছে গেলো। হযরত হামযা (রা.) হুঙ্কার দিয়ে সাবাকে বললেন, ওরে লজ্জাস্থানের চামড়া কর্তনকারীর সন্তান এই নে। একথা বলে তিনি সাবার ঘাড়ে এমনভাবে তরবারির আঘাত করলেন এবং তার মাথা এমনভাবে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো যেন তার ঘাড়ে মাথা ছিলোই না। আমি তখন বর্শা তুলে হযরত হামযা (রা.)-এর প্রতি নিক্ষেপ করলাম। বর্শা নাভির নীচে বিদ্ধ হয়ে দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে পেছনে পৌছে গেলো। তিনি পড়ে গিয়ে উঠতে চাইলেন কিন্তু সক্ষম হননি। তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত আমি তাকে যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় রেখে দিলাম। এক সময় তিনি শেষে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমি যখন তাঁর কাছে গিয়ে বর্শা বের করে কোরায়শদের মধ্যে গিয়ে বসে রইলাম। হযরত হামযা (রা.) ছাড়া অন্য কাউকে আঘাত করার ইচ্ছা ও প্রয়োজনই আমার ছিলো না। আমি মুক্তি পাওয়ার জন্যেই হযরত হামযা (রা.)-কে হত্যা করেছি। এরপর মক্কা ফিরে এসেই আমি মুক্তি লাভ করলাম। [ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃ. ৬৯-৭২। সহীহ বোখারী দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্টা ৫৮৩।

ওয়াহ্শীর গলার স্বর বুঁজে এলো...

ওয়াহ্শী অনেকক্ষণ চুপ থেকে শুরু করলেন সেই লোমহর্ষক ঘটনার কাহিনী। ‘যুদ্ধ চলছিল, তুমুল যুদ্ধ। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। দুশমন ঘায়েল করার জন্য সতর্ক আছি। এমন সময় দেখি মহাবীর হামজা (রা.) কে। তিনি বীর বিক্রমে যুদ্ধ করছিলেন। এমন লড়াকু সাহসী মানুষ আমি আর দেখিনি। দু’হাতে শত্রু শেষ করছেন। বিদ্যুৎগতিতে সামনে এগিয়ে চলছেন। প্রচন্ড হিংসায় আমি জ্বলে উঠলাম। সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। হামলা করার জন্য প্রস্তুত। হামজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেখানটায় যুদ্ধ করছিলেন তার এক পাশে একটা টিলার আড়ালে লুকিয়ে থাকলাম। অপেক্ষায় আছি, কখন হামলা করার সুযোগ পাবো। এমন সময় তার পেছনে দিকটা অরক্ষিত হয়ে পড়লো। তৎক্ষণাৎ আমি বর্শা চালালাম। তিনি একপাক ঘুরে পড়ে গেলেন। তাকে হত্যা করতে পারলে আমার মালিক আমাকে মুক্তি দেবে। এই লোভ আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। আমি তার লাশের দিকে এগিয়ে গেলাম, আমার সহযোদ্ধাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। হে রাসূল তারপর আর আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় …’। ওয়াহ্শীর গলার স্বর বুঁজে এলো।

অনুরোধ, তুমি কখনও আমার সামনে বসবে না...

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরবে কাঁদছেন। কপোল বেয়ে পড়ছে অশ্রুজল। ওয়াহ্শী ও কাঁদছেন, কাঁদছেন সব সাহাবাই কেরাম। খানিকবাদে, হুজুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘শোনো ওয়াহ্শী, যা কিছু তুমি করেছ তাতে মহান রাব্বুল আলামিন ও তাঁর রাসূল নারাজ হয়েছেন। এখন থেকে তাদের খুশী করার চেষ্টা করো। বুঝতে পারছি, অনুতাপের আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছো। তবুও তোমার কাছে আমার অনুরোধ, তুমি কখনও আমার সামনে বসবে না। তাহলে আমার চাচার কথা মনে পড়বে। আমি কষ্ট পাবো, ভীষণ কষ্ট। তা নিশ্চয়ই তুমি চাও না’।

চোখের পানি ঝরছে অঝোর ধারায়। হায়! এভাবেই এসেছে দ্বীন। শান্তির ধর্ম ইসলাম"

ওয়াহ্শী চুপ! স্তব্ধ! ঠিক যেন বোবা হয়ে গেছেন তিনি! চোখের পানি ঝরছে তার অঝোর ধারায়! হায়! এভাবেই এসেছে দ্বীন! শান্তির ধর্ম ইসলাম! যার সুশীতল পতাকাতলে সমবেত হয়ে মানুষ পেয়েছে আলোর দিশা! আমাদের প্রিয়নবী, রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের ব্যথা বুকে চাপা দিয়েছেন! তাঁর হাজারো দীর্ঘশ্বাস, হাজারো রাত্রি জাগরণ আর সাহাবায়ে কেরামের এমন হাজারো রক্তের সাগর পেরিয়ে এক একটি মানুষ পেয়েছেন হেদায়াতের পথের সন্ধান! পেয়ে গেছেন সঠিক পথের দিক-দর্শন আর জীবন পথের সর্বোত্তম নির্দেশনা!

একবার একটু ভাবুন, প্রিয় পাঠক! একটু চিন্তা করুন! ভাবনার বারিরাশিতে একটু মগ্ন-নিমগ্ন হোন! একটু সন্তরণ করে দেখুন! অনুভবে অন্ততঃ বুঝার চেষ্টা করুন, একজন মানুষের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকারের মনোবৃত্তি থাকলে এমনটা করা সম্ভব! কতটা দরদ, কতটা প্রেম, কতটা মমতা এবং ভালোবাসা থাকলে আত্মবিসর্জনের এমন নজির স্থাপন করা যায়! কতটা মায়ার বাঁধনে জড়ালে মানুষের প্রতি এমন উপমাবিহীন দয়া প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত পেশ করা সম্ভব!

হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, তুলনা আর উপমার উর্ধ্বে উঠে ক্ষমাপরায়নতার শ্রেষ্ঠতম এই উদাহরণটি আমাদের জন্য, অনাগত কালের বিশ্ব মানবতার সামনে একমাত্র নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই রেখে গেলেন! পৃথিবীর ইতিহাসে ক্ষমাপরায়নতার এমন বিরল ঘটনা আরেকটি নেই! আরেকটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না এমন ঘটনার নজির! যে মানুষটি ছিলেন তাঁর চাচা, নিজের দুধ ভাই এবং দ্বীনি ভাই তাকে হত্যা করেছিল ওয়াহ্শী! অথচ তাকেই কি না ক্ষমা করে দিলেন তিনি! সুবহানাল্লাহি বিহামদিহী! আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ!

এই হামজা (রা.)’র জন্য প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তুরবার জানাজার নামাজ পড়েছেন। নিজ হাতে খাটিয়া নিয়ে তাঁর কবরে নেমেছেন। কেঁদেছেন আর বলেছেন, ‘আমার চাচার জন্যে কেউ কাঁদার নেই! আফসোস!’

তখন আবু ওবাইদা (রা.) বললেন, ‘আমরাও কাঁদছি হুজুর! আপনার ব্যথায় আমরাও ব্যথিত’।

তার কথায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশী হলেন। শিশুর মতো উৎফুল্ল হলেন। তিনি বললেন, ‘আবু ওবাইদা, আল্লাহ পাক তোমার ঘরকে আবাদ রাখুক। শান্তি দিন’।

তারপর … তারপরও চাচার হত্যাকারী হেদায়াত পাক...

তারপর … তারপরও চাচার হত্যাকারী হেদায়াত পাক, বেহেশত পাক পরকালে মুক্তি পাক। ইসলামের এই কালজয়ী ইতিহাস স্বাক্ষী, ইসলাম যা শিক্ষা দেয় তা বরাবরই শান্তির-সমৃদ্ধির, ক্ষমার এবং সত্য-সুন্দরের। আর আমরা ইসলাম সম্পর্কে জেনে না জেনে মন্তব্য করি। তথাকথিত পন্ডিত কিংবা শিক্ষিত দাবিদার কিছু লোককে ইসলাম ও মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করতে দেখা যায়। তাদের কাছে ইসলাম অন্যায় আক্রমনের শিকার। তারা ইসলামকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দেয় এবং প্রিয় নবীজীর যাপিত জীবন সম্পর্কে বিরূপ ও মিথ্যাচারপূর্ণ বিকৃত তথ্যাদি ছড়িয়ে দেয়।

সমস্ত মানবকূলকে ধন্য করুন সত্য পথের সঠিক দিশাদানেঃ

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন। সঠিক পথে চলার তাওফিক প্রদান করুন। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে দিন সত্যের পয়গাম, দ্বীনে হক এর আহবান, তাওহিদের বুলন্দ আওয়াজ। সমস্ত মানবকূলকে ধন্য করুন সত্য পথের সঠিক দিশাদানে।

তথ্য এবং গ্রন্থপঞ্জী সহায়িকাঃ

১। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল বুখারি, সহিহ কিতাবুল মাগাযী, অনুচ্ছেদ, হামযা ইবনে আবদিল মুত্তালিব এর শাহাদাত লাভের বর্ণনা।
২। ইবনুল আছীর, উসদুল গাবা, তেহরান তা.বি., ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৩-৪।
৩। ইবনে হাজার আল আসকালানী, আল ইসাবা, মিশর ১৩২৮ হজরি, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৩১।
৪। ইবনে আবদিল বার, আল ইসতআ'ব (ইসাবার হাশিয়া, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৪৪-৪৮)।
৫। ইবনে সা'দ, আত তাবাকাত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪২, ৬৮, ৩য় খন্ড পৃষ্ঠা ৫৭৩, ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ৫৭৩।
৬। ইসলামী বিশ্বকোষ ৬ষ্ঠ খন্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনূদিত, পৃষ্ঠা ৫৩২-৫৩৩।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:০৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমার চোখেও পানি এসে গেলো। :) আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করুন। ইসলাম বুঝার ক্ষমতা দিন।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



আগমন এবং লাইকসহ মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা। আমিন।

২| ২৩ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: হাতে সময় আছে, তাই পোষ্ট টি পড়লাম।
তবে আমার চোখে পানি আসে নাই। আমার চোখে কোনো সমস্যা নাই। তবে হাসি এসেছে।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার এই হাসিকে আরও দীর্ঘায়িত করুন মহান আল্লাহ তাআ'লা।

৩| ২৩ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৫৩

মা.হাসান বলেছেন: একটা ক্ষমা, উদারতা যা আনতে পারে, শত শত শাস্তি তা আনতে পারে না। মানুষকে ভালোবাসতে পারার ক্ষমতার ছিটেফোটাও যদি অর্জন করতে পারতাম!

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:১৯

নতুন নকিব বলেছেন:



একটা ক্ষমা, উদারতা যা আনতে পারে, শত শত শাস্তি তা আনতে পারে না।

-সেটাই। সঠিক বলেছেন। কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৪| ২৪ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:১৫

রানার ব্লগ বলেছেন: খুনি ওয়াহ্শী


এই শব্দে আমার আপত্তি আছে, ওয়াহ্শী একজন হাবসি কৃতদাস ছিলেন, তার মালিক তা কে বলেছিলো যে সে যদি হামজা কে হত্যা করতে পারে তা হলে তা কে তার দাসত্ব থেকে মুক্তি দেবে, ওয়াহ্শী মোটেও এক জন যোদ্ধা ছিলো না সে একজন ভালো লক্ষ্য ভেদি ছিলো, সে দূর থেকে হামজা কে বল্লম দিয়ে হত্যা করে। এই হলো ইতিহাস।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:২৫

নতুন নকিব বলেছেন:



যদিও পরবর্তীতে ওয়াহশী ইসলাম গ্রহণ করেছেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তিনি যে হামযা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর হত্যাকারী এটা তো সত্য। তো, তাকে হত্যাকারী বলতে আপত্তি কেন? তিনি হাবসি কৃতদাস হোন অথবা অন্য যে দেশেরই লোক হয়ে থাকুন না কেন, যিনি হত্যা করলেন তাকে হত্যাকারী বলতে সমস্যাটা কোথায় ঠিক বুঝতে পারলাম না।

যাই হোক, আপনি যদি দয়া করে আরেকটু বুঝিয়ে বলেন, কারণটা বোধগম্য হলে প্রয়োজনে আপনার আপত্তি মেনে নিয়ে শিরোনামটা চেঞ্জ করে দিব।

ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:০৫

আরইউ বলেছেন: ব্লগে ওয়াজকারীদের মত তত্ত্ব-তথ্যহীন দাবী বন্ধ করেন দয়াকরে। ২য় আর ৩য় প্যারাগ্রাফে আবেগে একদম অন্ধের মত যা মনে এসেছে লিখেছেন!! এই রিপোর্ট টা পড়ে দেখেন https://www.bbc.com/news/stories-52539314 মেয়ে বাবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছে, বুকেও জড়িয়ে নিয়েছে। এমন উদাহরণ আরো পাবেন। ক্ষমা মানবিক একটা বিষয়, সুন্দর একটা বিষয়, সব ধর্মেই ক্ষমার কথা বলা আছে।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৫

নতুন নকিব বলেছেন:



ক্ষমা করবেন, আসলে বুঝতে পারছি না যে, তত্ত্ব-তথ্যহীন দাবীটা কোথায় করা হয়েছে। এ ছাড়া, ২য় এবং ৩য় প্যারাগ্রাফে অন্ধের মত আবেগ প্রকাশ করে কোথায় কি লেখা হয়েছে, সেটাও বুঝতে পারছি না।

তবে, একটা বিষয় বোধগম্য না হওয়ার কিছু নেই। তা হচ্ছে, অন্যের ভুল ধরতে আমরা বেশ পারঙ্গম। কিন্তু অপরের ভুল ধরতে যাওয়ার আগে আমাদের নিজেদের ভুল কোথায় রয়েছে সেই দিকেও একটু আধটু লক্ষ্য করা উচিত - এই সত্যটাই আমরা ভুলে যাই।

বাবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করা আর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে এরকম সর্বময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া এক কথা? বাবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করার পেছনে বড় কোন লাভ, লোভ কিংবা চাপ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এইক্ষেত্রে কি এসব ছিল? একজন ওয়াহশীকে শুধু ক্ষমা করাই নয়, তাকে ইসলামের দীক্ষা প্রদান করতে তার কাছে বারবার দূত প্রেরণ, তাকে ইসলামের তাওহিদের পথে আনতে কতটা ভালোবাসা লক্ষ্য করা যায় নবীজীর প্রচেষ্টায়! এর সাথে বাবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘটনা আসলেই কি তুলনাযোগ্য?

সম্প্রতি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, তুরস্কের সউদি কনস্যুলেটে নিহত সউদি সাংবাদিক খাশোগীর হত্যাকারীদেরকেও কিন্তু খাশোগীর সন্তানরা ক্ষমা করে দিয়েছেন।

এখন তো আমারও বলতে ইচ্ছে করছে, আহ! কি ক্ষমাপরায়ন খাশোগীর সন্তানেরা! কতই না মতৎ তারা? কত যে উদার! বাবার হত্যাকারীকেও নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দিল!

প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্ষমা কি আসলেই স্রেফ ক্ষমা? আপনি কি মনে করেন যে, খাশোগীর সন্তানেরা স্বেচ্ছায় নিজেদের বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন? এই ক্ষমার পেছনে অদৃশ্য কোনো শক্তির প্রলোভন, হুমকি কিংবা ভীতিপ্রদর্শন কাজ করেনি, এটা কি আপনার বিশ্বাস হয়?

যাক, ধন্যবাদ। আপনার আগমনে কৃতজ্ঞতা।

৬| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য।
ভালো থাকুন।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



পুনরায় পোস্টে এলেন বলে উষ্ণ অভিবাদন আপনাকে।

৭| ২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:২৮

রানার ব্লগ বলেছেন: আপনি তাকেই হত্যাকারী বলবেন যিনি নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য হত্যার মতো ঘৃনিত কাজ করবেন, ওয়াহ্শী তার নিজের মুক্তির বিনিময়ে হত্যা সংঘঠিত করেছিলো। সে মোট তিনবার চেষ্টা করে হত্যার জন্য কিন্তু কোন ভাবেই হামজা তার কাছাকাছি আসে নাই, তাই সে দূর থেকে বল্লম ছুরে এই হত্যা সংগঠিত করে। এই হত্যার বিনিময়ে তিনি মুক্ত হন দাসত্ব থেকে। এই হত্যাকান্ডের কারনে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে সন্তুষ্ট ছিএলন না যা পরবর্তিতে তিনি প্রকাশ করেন। ওই যুদ্ধে আরো অনেক মুসলমান সৈনিক মারা যান কোই তাদের হত্যাকারীদের ত খুনী বলা হচ্ছে না, কেবল হামজার হত্যাকারীকে কেনো খুনী বলা হচ্ছে। ব্যাপারটা নেপুটিজম এর আওতায় পরে।

যুদ্ধে ক্ষেত্রে সবাই হত্যাকারী। হয় তুমি মার নতুবা সে তোমাকে মারবে।

২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ৯:১৬

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, ধন্যবাদ। আপনার প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে শিরোনামে ব্যবহৃত ওয়াহশীর নামের পূর্বের বিশেষন বাদ দেয়া হল।

ভালো থাকবেন, প্রার্থনা।

৮| ২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩৩

রানার ব্লগ বলেছেন: দি আপনি হামজার হত্যাকারির নাম নিতেই চান সে ওয়াহ্শী না সে আবু জাহেলের স্ত্রী হিন্দা। ভদ্র মহিলা অসম্ভব রকমের পিশাচ ছিলেন সে হামজার কলিচা চিবিয়ে খেয়েছে (ওয়াক থু) ,

হিন্দা হলো আসল হত্যাকারী। শাস্তি এই মহিলার হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু শাস্তি কি হয়েছিলো ??? ভেবে বলবেন।

২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ৯:৩৭

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, হিন্দার অপরাধ ছিল নিঃসন্দেহে মারাত্মক। ইতিহাসের গ্রন্থ পাঠে যতটুকু জানা যায়, হামজা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর হত্যাকারী সে নয়। সে কলিজা চিবিয়ে বিকৃত করেছিল। কলিজা খেয়েছে- এমনটা শুনিনি।

তার শাস্তির বিষয়ে আপনার কিছু জানা আছে?

৯| ২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৪

নতুন বলেছেন: ভয়ঙ্কর খুনি ওয়াহ্শীকে নবীজীর ক্ষমা প্রদর্শণ : ইসলাম যে প্রকৃতার্থেই মানবতার মুক্তির পথ তার অনন্য একটি প্রমান - রিপোস্ট

অবশ্যই ১ জন খুনিকে ক্ষমা করা প্রকৃত মানবতার উদাহরন কিন্তু বানু কুরাইজার হাজার খানেক মানুষের হত্যা খুবই উপযুক্ত সাজা বটে।

২৫ শে মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



বনু কুরাইজার হত্যাকান্ড প্রসঙ্গটি কিছু লোকের কাছে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মোক্ষম একটি অস্ত্র বটে!

তাদের অভিযোগ- বনু কুরাইজার সাতশ কিংবা নয়শ পুরুষকে জবাই করা হয়েছে নবীজীর নির্দেশে। এটা কি একজন নবীর কাজ হতে পারে?

বস্তুতঃ বিষয়টিকে যেভাবে তারা উপস্থাপন করে থাকেন, তাদের এ উপস্থাপন পদ্ধতিটিই সঠিক নয়। তাদের উপস্থাপন পদ্ধতি দেখেই বুঝা যায় যে, তারা বিষয়টিকে ভিন্ন উদ্দেশ্যে খুবই অন্যায় ও গর্হিতভাবে তুলে ধরে থাকেন।

এবার আসুন, মুখস্ত কথার বিপরীতে ইতিহাসের আলোকে বনু কুরাইজার বিষয়টি একটু বুঝার চেষ্টা করি-

বনু কুরাইজা মদীনায় অবস্থানকারী এমন একটি গোত্র যাদের সাথে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান্তি চুক্তি ছিল। চুক্তির শর্তানুযায়ী বনু কুরাইজা এবং মুসলিমগণ পরষ্পর কেউ কারো প্রতি আক্রমণ করবে না। চুক্তির শর্তে এ-ও ছিল যে, বর্হিশত্রু আক্রমণ করলে পরস্পর একে অপরকে সহযোগিতা করবে। -দেখুন, সীরাতে ইবনে হিশাম- খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫০৩-৫০৪

কিন্তু খন্দক যুদ্ধের সময় যখন কুরাইশরা দশ হাজার বাহিনী নিয়ে মদীনা ঘেরাও করে তখন মুসলিম শিবিরে সেনা সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আক্রমনকারী অবরোধকারী কুরাইশ সেনাদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করা ছাড়া মুসলিমদের সামনে বিকল্প কোনো পথ অবশিষ্ট ছিল না।

অসম এক সমরে অবতীর্ণ দুই পক্ষ। এ সময় মিত্রশক্তির সহযোগিতাপ্রাপ্তি মুসলিমদের জন্য ছিল একান্তই কাঙ্খিত। হামলাকারীদের হাত থেকে মদিনাবাসীর জান মাল রক্ষার প্রয়োজনেই এই সহযোগিতা মুসলিমদের কাম্য ছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, মুসলিমদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ মিত্র বনু কুরাইজা সহযোগিতা করবে তো দূরে থাক, বরং সেই নিতান্ত সঙ্গীন সময়ে মুসলিমদের শত্রু মদিনার উপরে হামলে পড়া কুরাইশদের সাথে হাত মেলায়।

বনু কুরাইজার সাথে যে সন্ধি চুক্তি ছিল, তা তারা ভঙ্গ করে মক্কার মুশরিকদের সাথে মিলে যায়। সেই সাথে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালাগাল করে।

যখন বনী নজীরের সর্দার হুআই বিন আখতাব বনু কুরাইজার সর্দার কাব বিন আসাদ কুরাজীকে তার দলে টানতে আসে, তখন প্রথমতঃ সে দৃঢ়তার সাথেই বলেছিলঃ

وَيْحكَ يَا حُيَيُّ: إنَّكَ امْرُؤٌ مَشْئُومٌ، وَإِنِّي قَدْ عَاهَدْتُ مُحَمَّدًا، فَلَسْتُ بِنَاقِضٍ مَا بَيْنِي وَبَيْنَهُ، وَلَمْ أَرَ مِنْهُ إلَّا وَفَاءً وَصِدْقًا

আফসোস! তোমার জন্য হে হুয়াই! নিশ্চয় তুমি এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। নিশ্চয় আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং, আমার ও তার মাঝে যে চুক্তি রয়েছে তা আমি ভঙ্গ করতে পারবো না। আর আমি তাকে একজন ওয়াদা রক্ষাকারী এবং সত্যনিষ্ট ব্যক্তি হিসেবেই পেয়েছি। -দেখুন, সীরাতে ইবনে হিশাম- খন্ড ২, গাযওয়ায়ে খন্দক অধ্যায়, পৃষ্ঠা ২২০

কিন্তু নিতান্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল, বনু কুরাইজার সর্দার কাব বিন আসাদ কুরাজী তার এ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। লাভ এবং লোভের বশবর্তী হয়ে শেষমেষ হুয়াইয়ের ফাঁদে পড়ে যায় সে এবং চুক্তি ভঙ্গ করে শত্রুপক্ষের সাথে মিলে যায় তার গোত্রের লোকজনসহ। এমনকি, এক পর্যায়ে নবীজীর প্রতিনিধি যখন তার সাথে সাক্ষাত করে মুসলিমদের সাথে তাদের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে তাচ্ছিল্যের সাথে বলেঃ

مَنْ رَسُولُ اللَّهِ؟ لَا عَهْدَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مُحَمَّدٍ وَلَا عَقْدَ

আল্লাহর নবী কে? মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আমাদের মাঝে কোন চুক্তি নেই। কোন সন্ধি নেই। -দেখুন, সীরাতে ইবনে হিশাম- খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২২২

এইভাবে শান্তি ও সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে বনু কুরাইজার নেতা কাব বিন আসাদ মুসলমানদের চরম বিপদের মুহুর্তে মুসলমানদের শত্রুপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলমানদের জন্য চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে বহিশত্রু মক্কার মুশরিকদের বিরাট বাহিনীর ঘেরাওয়ের কবলে গোটা মদিনা। অপরদিকে ঘরের শত্রু চুক্তি ভঙ্গকারী গাদ্দার বনু কুরাইজা।

এ গাদ্দারীর কারণেই খন্দক যুদ্ধ শেষে বনী কুরাইজাকে শায়েস্তা করতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিনী নিয়ে বনু কুরাইজা অভিমুখে যাত্রা করেন। বনু কুরাইজার অধিবাসীরা তাদের দুর্গ বন্ধ করে বসে থাকে। ২৫ দিন পর্যন্ত তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অবশেষে তাদের বন্দি করা হয়। বনু কুরাইজার দীর্ঘকালীন এ অভিযানে একজন মহিলা ছাড়া কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। যে মহিলার কারণে সাহাবী খাল্লাদ বিন সুআইদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু শহীদ হন। -দেখুন, উয়ুনুল আছার- খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮

বনু কুরাইজার বিচারঃ

অনেক মায়াকান্নার ধ্বজাধারীদের চুক্তি ভঙ্গকারী চরম গাদ্দারির পরেও এই বনু কুরাইজার শাস্তি প্রদানকে কেন্দ্র করে হাউমাউ করে পরিবেশ ঘোলাটে করতে চায়। তারা হাজার বা কিছু কম বেশি লোককে হত্যার কথা বলে মানুসের দয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায়। আসলে বনু কুরাইজার যেসব অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল তাদের এই সংখ্যাটা হাজার খানেক বা এত বেশি নয়; বরং, তিরমিজী, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বানের বর্ণনা অনুপাতে তাদের সংখ্যা আনুমানিক চারশত জনের মত বলে জানা যায়।

আসলে এসব ডাহা অভিযোগ যারা করে থাকেন তাদেরকে প্রায়ই নিজেদেরকে মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে দাবী করতে দেখা যায়। আসলে মুক্ত চিন্তা মানে কি? একতরফা চিন্তা? একতরফা বিচার ফায়সালা?

বিনীতভাবে একটা প্রশ্ন করি-

বিনীতভাবে প্রশ্ন করি- যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের উপর আক্রমণ করেছিল তখন আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে যেসব রাজাকাররা পাকিস্তানীদের পক্ষে কাজ করে আমাদের দেশের মানুষদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল। সেসব গাদ্দার রাজাকারদের ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তার অধিকারী এসব ভাইদের মতামত কী? সেসব রাজাকারদের ছেড়ে দেয়া উচিত হবে? বঙ্গভবন কিংবা রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় অভ্যর্থনার মাধ্যমে তাদেরকে ফুলের মালা পড়িয়ে পুরষ্কৃত করা সঠিক হবে?

বরং, আমরা তো দেখেছি, মুক্ত চিন্তার অধিকারী দাবিদারগণই গাদ্দার রাজাকারদের হত্যা করার জন্য সবচে’ বেশি সোচ্চার। হওয়া উচিতও ছিল সেটাই। তাহলে এই দ্বি-চারিতা কেন? তাহলে আবার তাদের মুখেই গাদ্দার বনু কুরাইজার জন্য এ কেমন হাস্যকর দরদ উথলে উঠতে দেখা যায়? এটা কি দ্বিমুখী নীতি নয়? এটাকে দ্বি-চারিতা ছাড়া আর কিইবা বলা যায়?

কিছু লোককে তো দেখা যায়, অন্যের বলা কথাই তারা তোতাপাখির মত আউড়ে বেড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাদের প্রতি অনুরোধ, বাছবিচার না করে অন্যের বলা কথার সত্যতা যাচাই না করে শুধু শুধু না আউড়ে, নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে ঘটনাগুলো দয়া করে একটু আধটু যাচাই করুন। তাহলে দেখবেনঃ বনু কুরাইজার ঘটনার উপর কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তির প্রশ্ন থাকতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন। বিবেকের বদ্ধ দুয়ার খুলে দিন। আমাদের সকলকে হেদায়াতের উপর অটল রাখুন। আমীন।

১০| ২৫ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮

নতুন বলেছেন: এই ব্লগের উদ্দেশ্য

একজন ভয়ংকর খুনি যে রাসুল সা: এর চাচাকে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে মহানুভবের কাজ করেছেন সেটা প্রচার করা।

আবার হাজার খানেক মানুষকের কল্লাকাটাকে জাস্টিফাই করছেন যে সেটা ঠিক ছিলো।

অবশ্যই যদি রাসুল সা: তাদের হত্যা করতে নিষেধ করতেন তবে ঐ ব্যক্তি যে সাজা দিয়েছিলেন তিনি অমান্য করতেন না।

১ জন খুনীকে ক্ষমা করা মহানুভবের কাজ হলে হাজার মানুষকে মুক্তি দিলে বা সাজা কমিয়ে দিলে সেটা কতটা ভালো হতো?

যদি এই খুনি সাহাবা হতে পারে তবে ঐ হাজার মানুষ যে ভালো কিছু করতো না সেটা আপনি কিভাবে জানেন?

আসল বিষয় হলো ধর্মান্ধরা যুক্তি বোঝেনা তারা ১ খুনীকে ক্ষমাকে মহান বলে প্রচার করবে কিন্তু হাজার মানুষ কে হত্যাকে সমর্থন করবে।

যারা মানুষকে হত্যার সমর্থন করে কারন ধর্মে সমর্থন করেছে তারা তো মানুষের জীবনকে মূল্যায়ন করেনা করে ধর্মের কথা।

২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ৯:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



নতুন ভাই,

দয়া করে একচোখা নীতি পরিহার করে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে তাকান। তাকিয়ে দেখুন চোখ খুলে। তাহলেই যুদ্ধাপরাধী বনু কুরাইজার ব্যাপারে অন্তরে পুষে রাখা বিভ্রান্তি কেটে যাবে আপনাদের। যুদ্ধাপরাধী বনু কুরাইজা সম্প্রদায়ের পক্ষে আপনি তর্ক করে সময় ক্ষেপন করতে পারেন, তবে তা স্রেফ অর্থহীন সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে নেমে তাদের বিচারের দাবিতে আপনাদেরকেই দেখা যায় সোচ্চার হতে, আবার যুদ্ধাপরাধী বনু কুরাইজা সম্প্রদায়ের পক্ষে দরদ প্রকাশও করেন, এই দ্বি-চারিতার ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। খুঁজতেও চাই না। আপনাদের সুবিধামত ব্যাখ্যা আপনারা করে নিচ্ছেন হয়তো। আমাদের সমস্যা নেই, সেটাই নিয়ে নিন। তবে, কথা হচ্ছে, সেই ব্যাখ্যা আপনাদের কাছে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি কটাক্ষ করার হাতিয়ার হলেও অন্যদের কাছে এমন অযৌক্তিক ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না কখনোই।

ধন্যবাদ।

১১| ২৫ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৫৭

নতুন বলেছেন: যারা মানুষ হত্যা, শিশু ধর্ষন হত্যা বা এমন যঘন্য কাজ করে তাদেরই ফাসীর পক্ষে মানুষ কথা বলে। নতুবা চুক্তি ভঙ্গের জন্য হাজার মানুষের হত্যা মানুষ সমর্থন করতে পারেনা।

ঐ সময় বানু কুরাইজার উপরে এই রকমের একটা অভিজান রাজনিতিক প্রয়োজনে দরকার ছিলো। সত্রুদের একটা ম্যাসেজ দিয়ে ছিলো এই ঘটনা। আর ১ খুনিকে ক্ষমা করেছিলো যখন মক্কা জয় করা হয়েছিলো। '

তাই এখানে মানুষের জীবন বড় না বরং সময়ের প্রয়োজনটাই আসল। মহানুভবতা নয় রাজনিতিই ছিলো উদ্দেশ্য।

২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনি দয়া করে ইবনে হিশাম ৩য় খন্ডের ২৩১ - ২৩৭ পৃষ্ঠার বনু কুরাইজা বিষয়ক অংশটুকু পাঠ করে দেখতে পারেন।

ইসলামের মহৎ এবং গর্বের যে কোনো বিষয়ে দোষ খুঁজে বের করার ঢালাও মানসিকতা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। আপনি কি বলেন? গ্রাম গঞ্জে 'পাঁচ সের চাল দিয়ে হলেও নিজের মতামতটা বহাল রাখার' একটা কথা বলা হয়ে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এগুলোই অধিক পরিমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানিং। প্রাসঙ্গিক হোক আর না হোক, সেই কুমিরের রচনার মত করে শেষমেষ ইসলাম এবং এই বিষয়ে দোষ খুঁজে বের করতেই হবে, এটাই যেন হয়ে উঠেছে একমাত্র কাজ। দুঃখজনক বিষয় বটে।

একটি পয়েন্ট বলা হয়নি। বনু কুরাইজার বিচারটা কে করেছিলেন, জানেন কি না জানি না। এদের বিচারের দায়িত্বটা কিন্তু রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পালন করেননি। এটা করেছিলেন তাদের গোত্রের, অর্থাৎ, বনু কুরাইজারই একজন। সা'দ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। বিস্তারিত দেখতে পারেন-

সীরাতুন নবী সঃ ৩য় খণ্ড

যাক, আপনার প্রতি শুভকামনা। অনেক ভালো থাকবেন, প্রার্থনা।

১২| ২৫ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৪

আরইউ বলেছেন: @নতুন, আপনি ভুল জায়গায় প্রশ্ন করছেন। এখানে আপনি ওয়াজী মোল্লাদের বক্তব্যের বাইরে কিছুই পাবেননা! মামুনুল ইস্যুতে পোস্ট ও ওনার জবাব/মনোভাবে যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।

২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ৮:৫৯

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ আপনার এত চমৎকার বুঝ ও সমঝ এর জন্য! নতুন ভাইকে সদুপদেশ প্রদান করার জন্যও অভিনন্দন! ওয়াজী মোল্লাদের বিপরীতে আপনার উল্লেখযোগ্য অবদান জাতির সামনে পেশ করা হলে জাতি আপনার প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞতা পোষন করার সুযোগলাভে ধন্য হতে পারতো। :)

যাক, বেশি কিছু বলতে চাই না। কিছু বোকাসোকা মানুষের উপস্থিতি পৃথিবীতে সবসময়ই থাকে। হয়তো থাকতেও হয়। তেমন হয়েই না হয় থেকে গেলাম আরও কিছুটা দিন, আপনাদের মত বুদ্ধিমানদের ভীড়ে।

শুভকামনা জানবেন।

১৩| ২৫ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৯

আরইউ বলেছেন: @লেখক, আপনি আমার দেয়া লিংক পড়ে দেখেননি! আপনার সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলা করা আর একটা চেয়ারের সাথে কথা বলা একদম এক জিনিস। আপনি প্রসংগের বাইরে চলে যাবেন, দুই চারটা আয়াত বা হাদিস ধরিয়ে দেবেন, আপনার ন্যারেটিভ সমর্থন করে এমন তালগাছটা নিয়ে বসে থাকবেন...

২৭ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:০২

নতুন নকিব বলেছেন:



আরইউ বলেছেন: @লেখক, আপনি আমার দেয়া লিংক পড়ে দেখেননি! আপনার সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলা করা আর একটা চেয়ারের সাথে কথা বলা একদম এক জিনিস।

-আমার সাথে কথা বলা আর চেয়ারের সাথে কথা বলা, একদমই যদি এক জিনিষ হয়ে থাকে এবং এটা যদি ভালোভাবেই বুঝে থাকেন, তাহলে আর অনর্থক কথা বলে লাভ কি? তারচেয়ে বরং দয়া করে 'চেয়ারের সাথে কথা না বলাই' উত্তম। তাই নয় কি?

অনেক ভালো থাকার প্রার্থনা, ধন্যবাদ।

১৪| ২৫ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

বানু কুরাইজা নিয়ে কিছু লিখুন।
বিষয়টা নিয়ে আপনার মতামত জানা দরকার।

১৫| ২৫ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৩

নতুন বলেছেন: আরইউ বলেছেন: @নতুন, আপনি ভুল জায়গায় প্রশ্ন করছেন। এখানে আপনি ওয়াজী মোল্লাদের বক্তব্যের বাইরে কিছুই পাবেননা! মামুনুল ইস্যুতে পোস্ট ও ওনার জবাব/মনোভাবে যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।

B-))

ভাই আমি তো বললাম যে ১ জন খুনীকে ক্ষমা করা কত মহত কাজ আর হাজার মানুষের হত্যা সমর্থন করা ততটাই মানবিক কাজ ।

১৬| ২৭ শে মে, ২০২১ সকাল ১০:৫২

রানার ব্লগ বলেছেন: ** হীন্দা সংশোধন আবু জাহেলের স্ত্রী না আবু সুফিয়ানের স্ত্রী !!

হিন্দ বিনতে উতবা (আরবি: هند بنت عتبة‎‎) ছিলেন উতবাহ ইবনে আবি রাবিআহ'র কন্যা এবং আবু সুফিয়ান এর স্ত্রী। উহুদের যুদ্ধের সময় হামজার কলিজা বের করে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিখ্যাত হয়েছিলো, পরবর্তীতে মুহাম্মাদ তাকে ক্ষমা করে দেন, এবং হিন্দ ইসলাম গ্রহণ করেন।

না তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মুলক ব্যাবস্থা নেয়া হয় নাই, সে চ্যালচ্যালিয়ে ক্ষমা পেয়ে গেছে।

১৭| ২৭ শে মে, ২০২১ বিকাল ৩:১৭

নতুন বলেছেন: ইসলামের মহৎ এবং গর্বের যে কোনো বিষয়ে দোষ খুঁজে বের করার ঢালাও মানসিকতা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। আপনি কি বলেন? গ্রাম গঞ্জে 'পাঁচ সের চাল দিয়ে হলেও নিজের মতামতটা বহাল রাখার' একটা কথা বলা হয়ে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এগুলোই অধিক পরিমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানিং। প্রাসঙ্গিক হোক আর না হোক, সেই কুমিরের রচনার মত করে শেষমেষ ইসলাম এবং এই বিষয়ে দোষ খুঁজে বের করতেই হবে, এটাই যেন হয়ে উঠেছে একমাত্র কাজ। দুঃখজনক বিষয় বটে।

একটি পয়েন্ট বলা হয়নি। বনু কুরাইজার বিচারটা কে করেছিলেন, জানেন কি না জানি না। এদের বিচারের দায়িত্বটা কিন্তু রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পালন করেননি। এটা করেছিলেন তাদের গোত্রের, অর্থাৎ, বনু কুরাইজারই একজন। সা'দ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু।


১ জন মানুষকে ক্ষমা করা মহত্বের পরিচয় আর ১০০০ মানুষকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার রায়কে বাস্তবায়নকে সমর্থন করা ন্যায় বিচার এটাই আপনাদের বক্তব্য।

এই ১০০০ মানুষ অবশ্যই সরাসরি হত্যার মতন কাজে জড়িত ছিলো না। যদি থাকে তবে অবশ্যই সেই সাজা সঠিক হবে।

একটা গোত্রের বালেগ পুরুষদের হত্যা করা বাকী নারী শিশুদের দাসী হিসেবে বিক্রি করা কে অবশ্যই ঐ গোত্রোকে নিশ্চিন্হ করা বলে।

আমি আগেও বলেছি এটা এ সময়ে মুসলমানদের ক্ষমতা প্রকাশের জন্য দরকার ছিলো। তাই সেটা হয়েছে এবং সবাই সমর্থন করেছে।

ধর্ম মানুষকে এই রকমের কাজগুলি করিয়ে নেয় অবলিলায় যেটা অযৌক্তিক কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.