নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরবানী: শুধুই পশু যবেহ নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত; কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল

১৩ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩৩

ছবিঃ অন্তর্জাল।

কুরবানী: শুধুই পশু যবেহ নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত; কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল

শুধু পশু যবেহর নাম কুরবানী নয় বরং কুরবানী গুরুত্বপূর্ণ মহান এক ইবাদত। সামর্থ্যবানদের জন্য এটি আদায় করা ওয়াজিব। আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করে না, তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে সতর্কবাণী এসেছে- ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে অথচ কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস: ৩৫১৯

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যে কোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী তা সম্পাদন করা।

শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী কুরবানীর ওয়াজিব ইবাদত সম্পাদন করার ক্ষেত্রেও জানা থাকা চাই কিছু জরুরী মাসায়েল। যেমন :

১. কুরবানী ওয়াজিব যাদের উপরেঃ

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

২. কুরবানীর ক্ষেত্রে ধর্তব্য নেসাবঃ

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫।

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২।

৩. কুরবানীর সময়ঃ

যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়।তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমুআ ও ঈদের নামায ওয়াজিব তারা ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করবে না। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করতে পারবে। -সহীহ বুখারী ২/৮৩২

কুরবানীর দিনগুলোতে যদি কুরবানীর পশু জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২

৪. নাবালেগ ও মুসাফিরের কুরবানীঃ

নাবালেগ শিশু-কিশোর এবং মুসাফির (যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে সফরে থাকবে অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করবে) তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫

অবশ্য নাবালেগ শিশু-কিশোর এবং সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয় এমন সন্তানের পক্ষ থেকে তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬

উপরন্তু নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর মুস্তাহাব। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

হ্যা। কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুসাফির মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬,আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

৫. দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম:

দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

আর কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর ক্রয় করা পশু কোন কারণ বশত কুরবানী করতে না পারলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪

৬. মৃত ও জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী:

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না।গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮

আর যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

৭. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী:

সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯,মিশকাত ৩/৩০৯

৮. কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করা:

অন্যের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

৯. কুরবানীর পশু ও পশুর বয়সসীমা:

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। আর যেসব গৃহপালিত পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই বরাবর। উভয়টি দিয়েই কুরবানী করা যাবে। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

পশুর বয়স;উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা ১ বছরের কিছু কম হওয়া সত্ত্বেও যদি হৃষ্টপুষ্ট হয় এবং দেখতে ১ বছরের মতোই মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা যেতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতেই হবে। ৬ মাসের কম কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য; যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫

১০. কুরবানীর উত্তম পশু:

কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। -মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০

১১. যেসব ত্রুটিপূর্ণ পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয হবে না:

খোড়া পশুর কুরবানী;যেসব পশু চার পায়ে চলতে পারে না-তিন পায়ে চলে;এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না তা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী; এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী; যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

শিং ভাঙ্গা বা শিং ফাটা পশুর কুরবানী; যেসব পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয হবে না। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে গেছে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী; যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয হবে না। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয হবে। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮

অন্ধ পশুর কুরবানী; যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা নষ্ট অথবা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয হবে না। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

আর হ্যা।কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি ত্রুটিমুক্ত পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। – রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

আর পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

১২. গর্ভবতী পশু ও বন্ধ্যা পশুর কুরবানী:

গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত থাকে তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

যেমন ভাবে সুস্থ পশু কুরবানী করা জায়েয তেমনিভাবে বন্ধ্যা পশুর কুরবানীও জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

আর যদি কুরবানীর পশু জবাইয়ের পূর্বেই বাচ্চা প্রসব করে তাহলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। -কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

১৩. নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে:

কুরবানীর পশু হারিয়ে গেলে নতুন পশু কেনার পর হারানোটি পাওয়া গেলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

১৪. কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে:

পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

১৫. এক পশুতে শরীকের সংখ্যা:

ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী করতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

উট গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

উট, গরু বা মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যায়; দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় শরীকে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

আর ছাগলের ক্ষেত্রে খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

একটি পশুতে যেমন কুরবানীর জন্য কয়েকজন শরীক হতে পারে তেমনি আকীকার জন্য ও শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। -তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

কুরবানীর পশুতে হজ্বের কুরবানীরও নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

১৬. নিয়তের বিশুদ্ধতা:

যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না।
আর শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলেও কারো কুরবানী সহীহ হবে না।তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

আর কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে যদি কোনো শরীকের মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে মৃতের ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

১৭. পশু জবাই প্রসঙ্গ:

নিজের কুরবানীর পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩

আর জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে অবশ্যই সবাইকেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানী পশু অন্য কেউ জবাই করে দিলে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া উভয়ই জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

তবে জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র;ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।এবং জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

জবাইয়ের সময় এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। এতে জীবিত পশুর কষ্ট হয়। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া উচিত।

১৮. কুরবানীর পশু থেকে উপকৃত হওয়া প্রসঙ্গ:

কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। যদি করে তাহলে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,

কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নেই। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেই ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ বিক্রি করলে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। -আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫,

১৯. কুরবানীর গোশত বণ্টন:

শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নেই। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

২০. কুরবানীর গোশত খাওয়া:

কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮

ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০,আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

এবং কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক সময় জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয আছে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯,

আর কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকেও দেওয়া জায়েয। -ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

২১. হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী:

যে সকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫

‘কুরবানীর গোশত রক্ত কখনোই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহর কাছে পৌঁছে (মূল্য রাখে) কেবলই তোমাদের তাকওয়া। আর এভাবেই তিনি তোমাদের জন্য সব কিছুই বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। যেন তোমরা তার গুণকীর্তন করতে পারো- যেসব বিষয়ে তিনি তোমাদের পথনির্দেশনা দিয়েছেন। (আর হে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন’! -সূরা হাজ্ব-আয়াত ৩৭, তাফসীরে জালালাইন।

শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদনা হোক আমাদের কুরবানী। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই হোক আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। রিয়ামুক্ত থেকে ইখলাসপূর্ণ তথা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই পূর্ণাঙ্গতা লাভ করুক আমাদের সকল ইবাদত। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেকের কুরবানী কবুল করুন। আমীন।

তথ্যসূত্রঃ লেখার সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৩৭

হাবিব বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খায়রান

৩১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১৯

কামাল১৮ বলেছেন: মাংস খাওয়াটা একটা ভাল দিক কিন্তু বেশি খাওয়া খারাপ।

৩১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, সত্য।

ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:২৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। কুরবানীর নিয়ম কানুন হালাল হারাম জানা আবশ্যক। সুন্দে শেয়ারে অনেক ধন্যবাদ।

৩১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরান প্রিয় কবি ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.