নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: অন্তর্জাল।
সন্দেহাতীতভাবে পুনরুত্থান সত্য:
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ لَیَجۡمَعَنَّکُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ ؕ وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰهِ حَدِیۡثًا ﴿۸۷﴾
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে? -সূরা আন নিসা, আয়াত ৮৭
পবিত্র কুরআনে অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾
প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫
হাশরের দিনের অবস্থা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
৩:২৫ فَکَیۡفَ اِذَا جَمَعۡنٰهُمۡ لِیَوۡمٍ لَّا رَیۡبَ فِیۡهِ ۟ وَ وُفِّیَتۡ کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۵﴾
সুতরাং কী অবস্থা হবে? যখন আমি তাদেরকে এমন দিনে সমবেত করব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। আর প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান পূর্ণভাবে দেয়া হবে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ২৫
হাশরের দিনে শিরককারীদের অবস্থা সম্মন্ধে ইরশাদ হয়েছে-
وَ یَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِیۡعًا ثُمَّ نَقُوۡلُ لِلَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡۤا اَیۡنَ شُرَکَآؤُکُمُ الَّذِیۡنَ کُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ ﴿۲۲﴾
আর যেদিন আমি তাদের সকলকে সমবেত করব তারপর যারা শির্ক করেছে তাদেরকে বলব, ‘তোমাদের শরীকরা কোথায়, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে?’ -সূরা আল আনআম, আয়াত ২২
প্রতিপালকের কাছে সকল সৃষ্ট জীবকে একত্রিত করার বিষয়ে বলা হয়েছে-
وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا طٰٓئِرٍ یَّطِیۡرُ بِجَنَاحَیۡهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمۡثَالُکُمۡ ؕ مَا فَرَّطۡنَا فِی الۡکِتٰبِ مِنۡ شَیۡءٍ ثُمَّ اِلٰی رَبِّهِمۡ یُحۡشَرُوۡنَ ﴿۳۸﴾
ভূপৃষ্টে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই, আর দু’ডানা সহযোগে উড্ডয়নশীল এমন কোন পাখি নেই যারা তোমাদের মত একটি উম্মাত নয়। (লাওহে মাহ্ফুয অথবা আল-কুরআন) কিতাবে আমি কোন কিছুই বাদ দেইনি। অতঃপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদেরকে একত্রিত করা হবে। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৩৮
হাশরের মাঠে জিন ও মানব সম্প্রদায়ের সকলকে উঠানো হবে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে-
وَ یَوۡمَ یَحۡشُرُهُمۡ جَمِیۡعًا ۚ یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ قَدِ اسۡتَکۡثَرۡتُمۡ مِّنَ الۡاِنۡسِ ۚ وَ قَالَ اَوۡلِیٰٓؤُهُمۡ مِّنَ الۡاِنۡسِ رَبَّنَا اسۡتَمۡتَعَ بَعۡضُنَا بِبَعۡضٍ وَّ بَلَغۡنَاۤ اَجَلَنَا الَّذِیۡۤ اَجَّلۡتَ لَنَا ؕ قَالَ النَّارُ مَثۡوٰىکُمۡ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ حَکِیۡمٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۲۸﴾
আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে সমবেত করবেন। সেদিন বলবেন, ‘হে জিনের দল, মানুষের অনেককে তোমরা বিভ্রান্ত করেছিলে’ এবং মানুষদের মধ্য থেকে তাদের অভিভাবকরা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং আমরা সে সময়ে উপনীত হয়েছি, যা আপনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন’। তিনি বলবেন, ‘আগুন তোমাদের ঠিকানা, তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে। তবে আল্লাহ যা চান (তা ভিন্ন)’। নিশ্চয় তোমার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা আল আনআম, আয়াত ১২৮
হাশরের দিনের তুলনায় পার্থিব জীবন মুহূর্তকাল মনে হওয়ার বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে-
وَ یَوۡمَ یَحۡشُرُهُمۡ کَاَنۡ لَّمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَۃً مِّنَ النَّهَارِ یَتَعَارَفُوۡنَ بَیۡنَهُمۡ ؕ قَدۡ خَسِرَ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ اللّٰهِ وَ مَا کَانُوۡا مُهۡتَدِیۡنَ ﴿۴۵﴾
যে দিন তাদেরকে একত্রিত করা হবে (সেদিন তারা মনে করবে যে) দিনের এক মুহূর্তের বেশি তারা (দুনিয়াতে) অবস্থান করেনি। তারা পরস্পরকে চিনতে পারবে। যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর তারা কখনই সঠিক পথপ্রাপ্ত ছিল না। -সূরা ইউনুস, আয়াত ৪৫
কিয়ামতের ভয়াবহতা:
যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা নত করে দিবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَوۡمَئِذٖ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُۥۖ وَخَشَعَتِ ٱلۡأَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمَٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ إِلَّا هَمۡسٗا ١٠٨﴾ [طه: ١٠٨]
“সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফিরিশতার) অনুসরণ করবে। এর কোনো এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না”। -সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১০৮
﴿وَعَنَتِ ٱلۡوُجُوهُ لِلۡحَيِّ ٱلۡقَيُّومِۖ وَقَدۡ خَابَ مَنۡ حَمَلَ ظُلۡمٗا ١١١ وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَا يَخَافُ ظُلۡمٗا وَلَا هَضۡمٗا ١١٢﴾ [طه: ١١١، ١١٢]
“আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে যুলুম বহন করবে। এবং যে মুমিন অবস্থায় ভালো কাজ করবে সে কোনো যুলুম বা ক্ষতির আশংকা করবে না”। -সূরা ত্বাহা আয়াত: ১১১-১১২
﴿فَذَرۡهُمۡ يَخُوضُواْ وَيَلۡعَبُواْ حَتَّىٰ يُلَٰقُواْ يَوۡمَهُمُ ٱلَّذِي يُوعَدُونَ ٤٢ يَوۡمَ يَخۡرُجُونَ مِنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ سِرَاعٗا كَأَنَّهُمۡ إِلَىٰ نُصُبٖ يُوفِضُونَ ٤٣ خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۚ ذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمُ ٱلَّذِي كَانُواْ يُوعَدُونَ ٤٤﴾ [المعارج: ٤٢، ٤٤]
“অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোনো লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল”। -সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ৪২-৪৪
পরকাল অস্বীকারকারীদের দুর্দিন:
আমাদের মানব সমাজে বহু মানুষ আছে যারা পরকালকে অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে থাকে দুনিয়ার জীবনই জীবন। যা দেখি না তা বিশ্বাস করি না। পরকাল অস্বীকার করার ফলে তারা যে পরকালের শিকার হবে না তা কিন্তু নয়। কেউ আগুনের দাহ্য শক্তি অস্বীকার করলেও আগুন তাকে পেলে দগ্ধ করবেই।
আল্লাহ তা‘আলা এদের সম্পর্কে বলেন:
﴿وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ١٠ ٱلَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ١١ وَمَا يُكَذِّبُ بِهِۦٓ إِلَّا كُلُّ مُعۡتَدٍ أَثِيمٍ ١٢ إِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ ١٣ كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٤ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ ١٦ ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ١٧﴾ [المطففين: ١٠، ١٧]
“সেদিন ধ্বংস অস্বীকারকারীদের জন্য। যারা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে। আর সকল সীমালঙ্ঘনকারী পাপাচারী ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না। যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, পূর্ববর্তীদের রূপকথা। কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে। কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে”। -সূরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত: ১০-১৭
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ ٥١ قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَاۜ ۗ هَٰذَا مَا وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَصَدَقَ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٥٢ إِن كَانَتۡ إِلَّا صَيۡحَةٗ وَٰحِدَةٗ فَإِذَا هُمۡ جَمِيعٞ لَّدَيۡنَا مُحۡضَرُونَ ٥٣ فَٱلۡيَوۡمَ لَا تُظۡلَمُ نَفۡسٞ شَيۡٔٗا وَلَا تُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٥٤ ﴾ [يس: ٥١، ٥٤]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদেরকে বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন। তা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে। সুতরাং আজ কাউকেই কোনো যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা আমল করছিলে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে”। -সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১-৫৪
﴿وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تَرَى ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى ٱللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسۡوَدَّةٌۚ أَلَيۡسَ فِي جَهَنَّمَ مَثۡوٗى لِّلۡمُتَكَبِّرِينَ ٦٠﴾ [الزمر: ٥٩]
“আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?” -সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬০
﴿وَقَالُوٓاْ إِنۡ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوثِينَ ٢٩ وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَىٰ رَبِّهِمۡۚ قَالَ أَلَيۡسَ هَٰذَا بِٱلۡحَقِّۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَرَبِّنَاۚ قَالَ فَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ٣٠ قَدۡ خَسِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِلِقَآءِ ٱللَّهِۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغۡتَةٗ قَالُواْ يَٰحَسۡرَتَنَا عَلَىٰ مَا فَرَّطۡنَا فِيهَا وَهُمۡ يَحۡمِلُونَ أَوۡزَارَهُمۡ عَلَىٰ ظُهُورِهِمۡۚ أَلَا سَآءَ مَا يَزِرُونَ ٣١ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَعِبٞ وَلَهۡوٞۖ وَلَلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٣٢﴾ [الانعام: ٢٩، ٣٢]
“আর তারা বলেছিল, আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া কিছু নেই এবং আমরা পুনরুজ্জীবিত হব না। আর যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে দাঁড় করানো হবে তাদের রবের সামনে এবং তিনি বলবেন, এটা কি সত্য নয়? তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের রবের কসম! তিনি বলবেন, সুতরাং তোমরা যে কুফুরী করতে তার কারণে আযাব আস্বাদন কর। যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকার করেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি যখন হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে যাবে, তারা বলবে, হায় আফসোস! সেখানে আমরা যে ত্রুটি করেছি তার উপর। তারা তাদের পাপসমূহ তাদের পিঠে বহন করবে; সাবধান! তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট! আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না?” -সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ২৯-৩২
﴿وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ٢٨ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ مَا كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٩ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ ظِلّٖ ذِي ثَلَٰثِ شُعَبٖ ٣٠ لَّا ظَلِيلٖ وَلَا يُغۡنِي مِنَ ٱللَّهَبِ ٣١ إِنَّهَا تَرۡمِي بِشَرَرٖ كَٱلۡقَصۡرِ ٣٢ كَأَنَّهُۥ جِمَٰلَتٞ صُفۡرٞ ٣٣ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ٣٤﴾ [المرسلات: ٢٨، ٣٤]
“মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা যা অস্বীকার করতে সেদিকে গমন কর। যাও তিন শাখা বিশিষ্ট আগুনের ছায়ায়, যা ছায়াদানকারী নয় এবং তা জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখার মোকাবেলায় কোনো কাজেও আসবে না। নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেন হলুদ উষ্ট্রী। মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!” -সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত: ২৮-৩৪
হাশরের ময়দানের অবস্থা:
হাদীসে এসেছে: সাহল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ، كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ، لَيْسَ فِيهَا عَلَمٌ لِأَحَدٍ»
“কিয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোনো আলামত থাকবে না”। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯০
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ»
“কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না”। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৯
হাশরের মাঠে যা কিছু প্রথম:
বিচারের জন্য আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টজীবকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করবেন। কাউকে বাদ দেবেন না। সেখানে সবার চূড়ান্ত বিচার হবে। হাশরের এই সুবিশাল ভয়ানক মাঠে যা কিছু প্রথম সংঘটিত হবে এ নিয়ে অত্যন্ত পরিষ্কার আলোচনা রয়েছে নবীজির বিভিন্ন হাদিসে। এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো-
সর্বপ্রথম যিনি কবর থেকে উঠবেন এবং সর্বপ্রথম মঞ্জুর করা হবে যার সুপারিশ:
কিয়ামতের দিন হাশরে হিসাবের জন্য কবর থেকে সর্বপ্রথম উঠবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, শাফিউল মুজনাবিন মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি হব সব আদম সন্তানের সরদার এবং আমিই প্রথম কবর থেকে উঠব। আল্লাহর নিকট আমিই প্রথম সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই প্রথম কবুল হবে।’ -মুসলিম : ২২৭৮
সর্বপ্রথম যাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে:
হাশরের মাঠে মানুষ খালি পায়ে, বস্ত্রহীন অবস্থায় উত্থিত হবে। কারও শরীরে কোনো বস্ত্র থাকবে না। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন নগ্নপদে, বস্ত্রহীন ও খৎনাবিহীন অবস্থায় হাশরের ময়দানে তোমাদের একত্র করা হবে এবং কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে।’ -বুখারি : ৬৫২৪
উলামায়ে কেরাম হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানোর বেশ কিছু রহস্য বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে চমৎকার একটি রহস্য হলো, মুশরিকরা যখন হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আগুনে জ্বালানোর ইচ্ছা করল, তখন তারা এর জন্য বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করল। কয়েক মাস ব্যাপী লাকড়ি জমা করল। এমনকি আগুনের লেলিহান শিখা উর্ধ্ব দিগন্তে উঠতে লাগল। পাখিরা আগুনের তাপে গলে গলে পড়তে থাকল। এমতাবস্থায় যখন তাকে নিক্ষেপের ইচ্ছা করল তখন তাকে বস্ত্রহীন করে ফেলল। এতে তিনি ধৈর্য্য ধারণ করলেন, সওয়াবের আশা রাখলেন এবং আল্লাহ তাআ'লার ওপর ভরসা করলেন, এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে এর প্রতিদান দিলেন। তাকে দুনিয়া-আখেরাতের আগুন থেকে রক্ষা করলেন এবং বিনিময়ে কেয়ামতের দিন তাকে সব মানুষের উপস্থিতিতে কাপড় পরিধান করিয়ে সম্মানিত করবেন।
সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে যাদের:
হাশরে সব নবীর উম্মত থেকে হিসাব নেওয়া হবে। সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে উম্মতে মুহাম্মদি থেকে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমরা সর্বশেষ উম্মত এবং সর্বপ্রথম আমাদের হিসাব নেওয়া হবে। বলা হবে, উম্মি উম্মত ও তাদের নবী কোথায়? আমরা হলাম শেষ (আগমনের দিক থেকে) প্রথম (হিসাব ও জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে)। -ইবনে মাজাহ : ৪২৯০
সর্বপ্রথম যে ইবাদতের হিসাব হবে:
হাশরের দিন প্রত্যেকটা ইবাদতের হিসাব নেওয়া হবে। আর ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজের। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের। যদি নামাজ সঠিক হয় তাহলে তার সব আমল ঠিক, আর নামাজ যদি নষ্ট হয়, তাহলে সব আমল নষ্ট।’ -আল মুজামুল কাবির, তাবরানি : ২৪০
সর্বপ্রথম যে কৃতকর্মের হিসাব হবে:
রক্তপাত ঘটানো, কাউকে হত্যা করা জঘন্য একটি অপরাধ। তিরমিজির একটি হাদিসে এসেছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ এ জন্য মানুষের কৃতকর্মের মধ্যে সবার আগে হিসাব হবে এ রক্তপাতের। হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে ফয়সালা হবে রক্তপাতের ক্ষেত্রে।’ -বুখারি : ৬৮৬৪
রক্তপাতের বিষয়টি জটিল হওয়ার কারণে এর বিচার আগে হবে। কুুুফর-শিরকের পর এটি সবচেয়ে বড় পাপ। ইমাম নববি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদিসটি সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, নামাজ হলো আল্লাহর হক। এটি বান্দা ও আল্লাহর মাঝের বিষয়। আর রক্তপাত ঘটানোর বিষয়টি বান্দার হক। এটি বান্দাদের পারষ্পরিক বিষয়। অতএব, আল্লাহর হকগুলোর মধ্যে নামাজের হিসাব আগে হবে আর বান্দার হকগুলোর মধ্যে রক্তপাতের বিচার আগে হবে। -আদদিবাজ আলা মুসলিম : ৪/২৭৯
এখন প্রশ্ন থাকে, এ দুটির মধ্যে কোনটির বিচার আগে হবে এ ব্যাপারে কথা হলো নামাজের হিসাব আগে হবে। কারণ, হাদিসের বাহ্যিক শব্দাবলি দ্বারা বুঝা যায়, বান্দার হকের আগে আল্লাহর হকের বিচার হবে। -তুহফাতুল আহওয়াজি : ৩/৪৪০
সর্বপ্রথম যিনি আল্লাহর সামনে বিতর্ক করবেন:
সর্বপ্রথম আল্লাহর সামনে বিতর্ক করবেন হযরত আলী ইবনে আবি তালেব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি কেয়ামতের দিন রহমানের সামনে বিতর্ক করার জন্য হাঁটু গেড়ে বসবেন। হযরত কায়েস ইবনে উবাদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, তাদের ব্যাপারেই নাজিল হয়েছে, ‘ওই দুই সম্প্রদায় তাদের মধ্যে তাদের যারা রবের ব্যাপারে ঝগড়া রয়েছে।’ কায়েস বলেন, তারা হলেন ওই সব ব্যক্তিবর্গ যারা বদরের দিন মল্লযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। হামজা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এবং উবাইদা কিংবা আবু উবাইদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু [মুসলমানদের পক্ষে] আর শাইবা ইবনে রবিআ, উতবা ইবনে রবিআ এবং ওয়ালিদ ইবনে উতবা (কাফেরদের পক্ষে)।’ -বুখারি : ৩৯৬৫
সর্বপ্রথম যারা আত্মীয়-স্বজন থেকে পালাবে:
কেয়ামতের দিন মানুষ নিজের নেকি বা সাওয়াব দিয়ে দিতে হয় কি না এই আশঙ্কায় কিংবা নিজের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার কারণে লজ্জায় আত্মীয়-স্বজন থেকে পালিয়ে বেড়াবে। হযরত হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম পিতা থেকে পালাবেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, সর্বপ্রথম আপন পুত্র থেকে পালাবেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বপ্রথম স্ত্রী থেকে পালাবেন হযরত লূত আলাইহিস সালাম। -তাফসিরে কুরতুবি : ১৯/২২৫
পরিশেষে...
যেহেতু কেয়ামত অত্যাসন্ন, তাই প্রত্যেকেরই উচিত সর্বদা সৎকর্ম সম্পাদন করার মাধ্যমে কেয়ামতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কেয়ামতের ভয়াবহতা হতে মহান আল্লাহ তাআ'লার নিকট বিনীতভাবে পরিত্রাণলাভের প্রার্থনা করছি।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫১
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া।
জজাকুমুল্লাহ।
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: কেয়ামতের পরে দারুন সব ঘটনা ঘটবে। আমার ইচ্ছা করছে খুব দ্রুত কেয়ামত হোক। সব কিছু দেখি, উপভোগ করি।
যাইহোক, আগামী মাসে আমার কন্যার প্রথম জন্মদিন। ইসলাম মতে কন্যার জন্মদিনে আমি কি কি করতে পারি? ধর্ম কি বলে? যদি এবিষয়ে বলেন তো খুশি হবো।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
ইসলামে জন্মদিন (Birthday), মৃত্যুদিন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি পালনের আদৌ কোন বিধান আছে বলে আমার জানা নেই। যারা এটা করেন, তারা ইসলাম ধর্মের মর্ম সঠিকভাবে না বুঝেই হয়তো করে থাকেন।
ইদানিং ‘জন্মদিন’ পালনের প্রবণতা একটু বেশিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধনী হোক আর গরিব হোক, জন্মের দিনটা ঘটা করে পালন না করলে যেন মনে শান্তি আসে না, এ রকম একটা ভাব অনেকের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু মানুষের কথা বলি কেন? কিছু বিত্তশালী তো এমনও রয়েছেন যারা তাদের পোষা কুকুরটিরও জন্মদিন পালন করে থাকেন! এদিন তারা নানা আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে, আনন্দ-উল্লাস করেন, মদ্যপান করেন, নর্তকি নাচিয়ে আমোদ ফুর্তি করে দিনটা উদযাপন করে থাকেন।
তবে, কেক কেটে জন্মদিন পালনের উদ্ভবটা সম্ভবত: সর্বপ্রথম পশ্চিমা দেশগুলোতেই ঘটে। আর জন্মদিনের সূচনা হয় ফিরাউন থেকে। বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে এসেছে, ‘তৃতীয় দিনটা ছিল ফিরাউনের জন্মদিন। ফিরাউন তার সব দাসদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। সেই সময় ফিরাউন রুটিওয়ালা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবেশককে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন।’ -আদি পুস্তক : ৪০২
সুতরাং বুঝা গেল, জন্মদিন পালনের উদ্ভব ঘটেছে ফিরাউন থেকে। ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই।
জন্মদিন পালনের গুরুত্ব যদি ইসলামে থাকতো, তা হলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.), তাবেয়ি, তাবে তাবেইনদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ থাকার কথা। কিন্তু আদৌ তা নেই। তারা জন্মদিন পালন করবেন তো দূরের কথা, কারও কারও জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি।
এমনকি আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। সঙ্গত কারণে জন্মদিন পালন নিঃসন্দেহে একটি অনর্থক কর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইসলামে এর কোন স্থান নেই। এদিন ফেসবুকে কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব জমায়েত হয়ে উৎসব করা, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বিশেষ দোয়া, সালাম বা উপহার পেশ করা, বয়স অনুপাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তা ফুঁ দিয়ে নেভানো, কেক কেটে খাওয়া প্রভৃতি কাজ এসব অপচয় কোনো ধার্মিকের হতে পারে না।
হাদিসে এসেছে, আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»
অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাতের সমপরিমাণ। এমনকি তারা যদি সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তা হলে তোমরাও তাদের পেছন পেছন যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইহুদি ও নাসারাদের অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তবে আর কার?’ -সহিহ বুখারি : ২৬৬৯
অন্য একটি হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” -সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ, সহিহুল জামে : ৬০২৫
নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ছেড়ে অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন কর না, খ্রিস্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন কর না।’ -সিলসিলাহ সহিহা : ২১৯৪
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারও অনুসরণ কর না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।’ -সূরা আরাফ : ৩
তা ছাড়া জন্মদিনে খুশি হয়ে আনন্দ-উৎসব করা নেহায়েতই বোকামি। কেননা, জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেলে তার জন্য আক্ষেপ ও দুঃখ করা উচিত, খুশি নয়।
যা হোক, ইসলামে যেহেতু জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করার অস্তিত্ব নেই সেহেতু অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনে জন্মদিবস (Birth Day) পালন করার সুযোগ নেই।
কোন মুসলিম ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত: এমনটি করলে তার সামনে এ বিষয়টি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান এমনভাবে তাকে অবহিত করতে হবে যাতে তিনি সঠিকভাবে ইসলাম ধর্মে জন্মদিন, মৃত্যুদিন ইত্যাদির অসারতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন।
কিন্তু কোন শুভাকাঙ্খী যদি আপনার জন্মদিবসে উপহার নিয়ে হাজির হয়ে যান বা আপনাকে উইশ করে বসেন তখন আপনার করণীয় কি? এই ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ আপনি তার কাজটির বিষয়ে ভিন্নমত পোষনের বিষয়টি তাকে জানালে অথবা তার নীত উপহার তাকে ফেরত দিলে যদি তার এবং আপনার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে (সম্পর্ক নষ্ট হলে দাওয়াতের পথ বন্ধ হয়ে যাবে) তাহলে দাওয়াতের বৃহত্তর স্বার্থে আপাতত: তার উপহার গ্রহণ করত: তাকে একটি ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে। তবে সুবিধা মত সময়ে তার কাছে ইসলামের এই বিষয়ক বিধান সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে তাকে বুঝাতে হবে যে, ইসলামে জন্ম দিবস পালন করা বা এ উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান-আয়োজন করা, উইশ বা উপহার বিনিময় করা বৈধ নয়। তাকে এও বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, ভবিষ্যতে যেন আর কখনো তিনি এমনটি না করেন। এতে করে একইসাথে দু'টি কাজ হবে, তিনি মন খারাপও করবেন না, আবার ভবিষ্যতের জন্য বিষয়টি তার জানার সুযোগও হয়ে যাবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৬
জ্যাকেল বলেছেন: সুন্দর আলোচনা করেছেন। ধন্যবাদ।