নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ণবাদ আর শ্রেণিভেদের মূলোৎপাটন করেছে ইসলাম:

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১০

-ছবি: অন্তর্জাল।

বর্ণবাদ আর শ্রেণিভেদের মূলোৎপাটন করেছে ইসলাম:

বর্ণবৈষম্য এবং শ্রেণিভেদ মানবতা বিবর্জিত ঘৃণ্য অপরাধ। ইসলামে বর্ণবাদ ও শ্রেণিভেদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম বরাবরই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে সহাবস্থানের আহবান জানায়। ইসলামের আদর্শই হচ্ছে, সকল মানুষ একই আদম এবং হাওয়া আলাইহিমাস সালামের সন্তান। সাদা-কালো, ধনী-গরিব আর উঁচু-নিচুতে কোনো তারতম্য কিংবা শ্রেষ্ঠ-নিকৃষ্টের পার্থক্য নির্ধারণ করেনি ইসলাম এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো ভালো-মন্দের কোনো মানদন্ডও নয়। বংশ কৌলিণ্যেরও স্থান নেই ইসলামে।

রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কৃষ্ণের ওপরে শেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আল্লাহভীতি ও ধর্মপালনে:

ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘হে মানবসকল! তোমাদের পালনকর্তা এক আল্লাহ। তোমাদের আদি পিতা এক আদম আলাইহিস সালাম। মনে রেখো! অনারবের ওপর আরবের ও আরবের ওপর অনারবের এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের ও কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনোই বিশেষত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শুধু আল্লাহভীতি ও ধর্মপালনের দিক দিয়েই এ বিশেষত্ব বিবেচিত হতে পারে।’ -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ২২৯৭৮

এখানে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, মানুষ বাহ্যত যতো সুন্দরই হোক, তার মধ্যে যদি সচ্চরিত্র এবং উত্তম আমল না থাকে, আল্লাহ তাআ'লা নির্দেশিত পথ ও রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ না থাকে, সর্বোপরি তাকওয়া বা আল্লাহ তাআ'লার ভয় না থাকে, তাহলে মানুষ হিসেবে সে অন্য আর দশজনের মতই। শ্রেষ্ঠ কেবল সে-ই, যে উত্তম আমলে উত্তীর্ণ। এছাড়া সবাই সমান।

কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

হে মানবজাতি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছুর খবর রাখেন। -সুরা: হুজুরাত, আয়াত: ১৩

ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব এখানেও প্রতীয়মান হয়। অন্যান্য ধর্ম ও প্রথা যেখানে বর্ণের আচরণের আহবান করে, সেখানে ইসলাম তা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখান করে।

কৃষ্ণাঙ্গ বলে হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কোনো মুসলমানের কাছে অবজ্ঞার পাত্র হননি। একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়ায় এবং অধিকতর উত্তম আমলের অধিকারী হওয়ায় তিনি শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্মানের আসনে ভূষিত হয়েছিলেন। মদিনাতুল মুনাওয়ারায় প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মসজিদে মুয়াজ্জিনের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

ইসলামের সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন হাবশি কৃতদাস:

বস্তুত: ইসলাম প্রদত্ত বর্ণবাদ বিরোধী নীতিমালা বা মূলনীতিকে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মুখে বলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং তার গোটা জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন এসব। যে আরব সমাজে অনারবদেরকে ঘৃণার পাত্র বানিয়ে রাখা হয়েছিল, যেখানে কালো রঙের মানুষগুলোকে অমানুষ ভাবা হতো, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সমাজে ইথিওপিয়ান সাহাবি হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে ইসলামের সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন বানিয়েছিলেন। হাবশা তথা বর্তমান ইথওপিয়ার মানুষ হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ছিলেন কৃষাঙ্গ। অতিশয় কালো বর্ণের মানুষ ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন কৃতদাস। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ মেনে বাইতুল্লাহর ছাদে উঠে হযরত বিলাল যখন আজান দিতে শুরু করলেন, মক্কাবাসী মুশরিকরা তখন লজ্জায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছিল। তারা বলছিল, ‘মুহাম্মদ কি এ কৃষ্ণাঙ্গ কাক ছাড়া আর কাউকে আজান দেয়ার মতো পেল না?’

মানবতার নবী সেদিন দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, ‘মানুষ হিসেবে সবাই সমান। বর্ণের ভিত্তিতে নয়, শুধু তাকওয়া বা আল্লাহভীতির বিচারেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত হয়।’-দালায়িলুন নুবুওয়াহ; বায়হাকি : ৫/৭৮

জান্নাতে হাবশি কৃতদাস বিলালের পদধ্বনি:

শুধু তাই নয়, ইসলামে যে বর্ণবাদের স্থান নেই তা প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখনি:সৃত এই কথা থেকেও অনুমেয় যে, তিনি বলেছেন, আমি মি’রাজে জান্নাতের মধ্যে বিলালের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছি।

আরবের সম্ভ্রান্ত অনেক সাহাবী রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পাশে থাকা সত্বেও তিনি হাবশি গোলাম বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর নাম এখানে কেন নিলেন? মিরাজ রজনীর এই ঘটনাটিতেই প্রমান হয় যে, তাওহিদ তথা একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন, তাকওয়া পরহেজগারিতা অবলম্বন, উন্নত চারিত্রিক আদর্শ ধারণ এবং উত্তম কর্ম সম্পাদনই শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠী।

এমনিভাবে কৃষাঙ্গ মানব হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ঘোষণা করার মাধ্যমে সমাজ থেকে বর্ণবাদের বীজ উপড়ে ফেলেছিলেন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

ঝাড়ুদার অতি সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ নারীও তাঁর কাছে সম্মানের পাত্র:

এখানেই শেষ নয় তাঁর বর্ণবাদহীন বিশ্ব গড়ার মিশন। কালো বর্ণের একজন নারী মদিনার মসজিদে নববিতে ঝাড়ু দিতেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন তিনি। কৃষাঙ্গ সেই নারীর ইনতিকাল হলে সাহাবাগণ গুরুত্বপূর্ণ নয় ভেবে তার মৃত্যুর খবর রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন না। কিছুদিন পরে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই নারীর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, তিনি ইনতিকাল করেছেন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা আমাকে কেন জানালে না এই খবর?’

এরপর সরাসরি তিনি তখন সেই নারীর কবরের কাছে গেলেন এবং নিয়ম ভেঙ্গে সেই নারীর কবরের পাশে পুনরায় জানাজার নামাজ আদায় করলেন। সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলে দিলেন, ‘যে কোনো মুসলমান মারা গেলে তোমরা অবশ্যই আমাকে জানাবে।’ -সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস নং- ১২৯৯

সৃষ্টিগত উপাদানে ভিন্নতা নেই:

ইসলাম এই বিশ্বাস আমাদের সামনে তুলে ধরে যে, গোটা পৃথিবীর সকল মানুষ একই উপাদান মাটি থেকে সৃষ্ট। সৃষ্টিগত উপাদানে যেহেতু ভিন্নতা নেই, সুতরাং, মানুষে মানুষে ভেদাভেদেরও কোন স্থান নেই। সকলেই মাটির মানুষ হিসেবে সমান। মানুষে মানুষে উঁচু-নিচুতা এবং ভেদাভেদ সৃষ্টি করাকে সমর্থন না করতেই সৃষ্টিগত উপাদানে ভিন্নতা রাখেননি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। হযরত আবু মুসা আশআরি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আদমকে এক মুষ্টি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি সমগ্র জমিন থেকে সংগ্রহ করেছেন। ফলে আদম সন্তানরা জমিনের বিভিন্নতার মতোই ভিন্নভাবে এসেছে। তাদের মধ্যে (মাটির গুণাবলীর দরুন) সবই আছে— লাল, সাদা, কালো, তাছাড়া নরম, শক্ত এবং ভালো ও মন্দ।’ -সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং- ২৯৫৫

সৃষ্টিগত উপাদানের অভিন্নতায় মানুষে মানুষ সমতার কথা শিখিয়েছে ইসলাম। পাশাপাশি মাটির গুণাবলীর কারণে মানুষের বর্ণগত ভিন্নতাকে মহান আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টিগত কৌশল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং, মহান আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টিগত কৌশলকে ভেদাভেদ ও উঁচুনিচুর কারণ হিসেবে গ্রহণ করা অন্যায়। ইসলাম গর্হিত এই অন্যায়কে কখনোই সমর্থন করে না।

ভালো লাগা ও মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন তারাও:

ইসলামের এমন উদারতা ও উচ্চ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অনেক বিধর্মীও এই ধর্মের প্রতি অবলীলায় নিজের ভালো লাগা ও মুগ্ধতার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। বিখ্যাত ইংরেজ পণ্ডিত জর্জ বার্নার্ড শ' ইসলাম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন,

I have always held the religion of Mohammed in high estimation because of its wonderful vitality.

It is the only religion which appears to me to possess that assimilating capability to the changing phase of existence which can make itself appeal to every age.

‘চমৎকার প্রাণবন্ততার কারণে মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম।

তিনি আরও বলেন,

I have prophesied about the faith of Mohammed that it would be acceptable to the Europe of tomorrow as it is beginning to be acceptable to the Europe of today.

আমি মুহাম্মদের বিশ্বাস সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, এটি আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কারণ, এটি আজকের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে শুরু করেছে।

তাঁর ভাষায়,

I have studied him — the wonderful man, and in my opinion far from being an Anti-Christ he must be called the Savior of Humanity.

আমি মুহাম্মদকে নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। তিনি অতি চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিষ্টানবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে’। -Sir George Bernard Shaw, ÔThe Genuine IslamÕ, Vol. 1, No. 8, 1936

আসলেও তাই, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বের ইতিহাসে উদারতার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। জাতপাত, হিংসা-বিদ্বেষ এবং বর্ণবৈষম্যকে নির্মূল করার সুউচ্চ আদর্শ তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। কারণ, বর্ণবাদ ও জাতিভেদের মত ঘৃণ্য প্রথায় আক্রান্ত মানুষের আচরণে যখন বর্ণবাদ এবং সাদা ও কালোর ভেদাভেদ চলে আসে, স্বাভাবিকভাবেই তখন তিরোহিত হয় সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা এবং স্বাভাবিক মানবাধিকার। আর তখনই সমাজ হয়ে ওঠে অস্থিতিশীল। মানুষ হারাতে থাকে তার প্রাপ্য অধিকার। বিষাক্ত হয়ে উঠতে থাকে গোটা সমাজব্যবস্থা।

তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্ণবৈষম্য আর শ্রেণিভেদের মূলে কুঠারাঘাত হেনে ইসলামই সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণ আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে বিশ্ববাসীর সামনে।

রেসিজম বা বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য কী?

বর্ণবৈষম্য এমন দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা এবং ক্রিয়াকলাপকে বোঝায়, যেখানে ভুল বিশ্বাস পোষন করা হয় যে, মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই অনেকগুলো গোষ্ঠীতে (races) বিভক্ত এবং একইসাথে এই বিশ্বাস লালনকারীগণ বিশ্বাস করে থাকেন যে, কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য বলে বিবেচিত।

রেসিজম বা বর্ণবাদের উৎপত্তি:

বর্তমান বিশ্বে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বর্ণবাদ। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, বৈষম্য ও বর্ণবাদ দূরীকরণের ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও বিশ্ব থেকে এখনো বৈষম্য ও বর্ণবাদের অবসান হয়নি। এমনকি এই বর্ণবাদের কারণেই বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। বিশ্ববাসীকে আজ এমন এক সমঝোতায় আসতে হবে, যাতে করে দুনিয়ায় আর বর্ণবাদ নামের কোনো কিছুর অস্তিত্ব না থাকে।

বর্ণবাদের সূচনা বহুকাল পূর্ব থেকেই পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহত করে এসেছে তবে এই প্রথম বর্ণবাদ শব্দের উৎপত্তি হয় ১৯৩০ সালের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে। সেখানে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চলে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ ক্ষমতা দখল ও পেশী শক্তির প্রদর্শনী। শেতাঙ্গ শাসিত সরকার আইন করে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীদের কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, দক্ষিণ এশীয়, বর্ণশংকর ইত্যাদি বর্ণে ভাগ করে। ফলে অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত জনপদ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী মূল ধারার সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে।

বর্ণবাদী এ আচরণে মানুষের গায়ের রঙেই বেশি চিহ্নিত হয় এ যুদ্ধ। বর্ণবৈষম্যের কারণেই সাদা-কালো মারা-মারি কিংবা জীবনহানির মতো নিকৃষ্ট ঘটনার জন্ম হয়। যুযে যুগে এ বর্ণবৈষম্যের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছেন অনেককে।

বর্ণবাদ বিলোপে আন্দোলন:

যার প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে তৈরি হয় একটি দিবস। যা আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস নামে পরিচিত। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।

তবে এ দিবসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ। সেদিন বর্ণবাদের পক্ষে আইন পাশের এক ষড়যন্ত্র হয়। সেখানে এ আইন পাসের বিরুদ্ধে হয় প্রতিবাদ। সে প্রতিবাদে মিছিলে পুলিশের গুলিতে ৬৯জন ব্যক্তি নিহত হয়।

অবশেষে জাতিসংঘ ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় দেশে এ বর্ণবৈষম্য বিলোপে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বর্ণবাদী অনৈতিক আচরণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্য কাজ করে দেশগুলো।

ইসলামে বর্ণবাদের স্থান নেই:

বর্ণবাদ নয়; সাদা-কালোর শান্তিময় সহাবস্থানের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইসলাম। যেখানে সাদা আর কালো, নাগরিক আর সৈনিক, শাসক আর শাসিত তথা রাজা আর প্রজা সবই সমান। কুরআন ও সুন্নায় গোত্র প্রাধান্য ও বর্ণবাদিতাকে নিষেধ করা হয়েছে। বর্ণের ভিন্নতা, ভাষাগত বিভাজনকে মহান আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ

‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।’ -সুরা রুম : আয়াত ২২

কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনা এবং ইসলামি খেলাফতের দায়িত্বশীল বণ্টনই এর অন্যতম উদারহরণ। ধর্ম বিশ্বাস, গাত্রবর্ণ, শক্তি ও বংশের অহঙ্কারবশত কোনো ব্যক্তি বা জাতি কর্তৃক নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনি। কুরআনে এসেছে-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

হে মানবজাতি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছুর খবর রাখেন। -সুরা: হুজুরাত, আয়াত: ১৩

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا ۚ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ وَحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ

‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন; আর আমি তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি। আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে বিচিত্র বর্ণের পথ- শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো। অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।’ -সুরা ফাতির, আয়াত ২৭-২৮

সুতরাং, যে ভিন্নতায় মানুষের কোনো হাত নেই, মানুষের কোনো অবদান নেই যে বৈচিত্রে; সে ভিন্নতা বা সে বৈচিত্রের জন্য মানুষকে দায়ী করা বোকামি বৈ অন্য কিছু নয়। এছাড়া হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের চেহারা-সুরত, ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের কর্ম ও অন্তরের অবস্থা দেখেন।’

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যয়ের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর; আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ -সুরা আল-মায়িদাহ : আয়াত ৮

ইসলামের শুরু থেকে বর্ণবাদী আচরণের কোনো সুযোগই ছিল না। কে সাদা, কে কালোয়; ধনী কিংবা গরিবে আবার উঁচু-নিচু তারতম্য এবং শ্রেষ্ঠ-নিকৃষ্টের পার্থক্য করার কোনো সুযোগও দেয়নি ইসলাম। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের, কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের উচ্চ মর্যাদা নেই। একজন শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গের তুলনায় এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ একজন শ্বেতাঙ্গের তুলনায় উচ্চতর নয়। পার্থক্য শুধু মানুষের চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে।’

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান-মর্যাদা পাওয়া বর্ণবাদকে টানেননি বরং মর্যাদার মাপকাঠী কী হবে তা বলেছেন-

‘হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহ তাআলার কাছে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী; যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট করেছেন, ‘মানুষ দেখতে যতবেশি সুন্দরই হোক না কেন, তার মধ্যে যদি আল্লাহর ভয় না থাকে, উত্তম আমল না থাকে; কুরআন-সুন্নাহর আমল না থাকে তবে সে ব্যক্তি কখনোই শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করে প্রথমেই বংশ দ্বন্দ্বের অবসান করেছিলেন। ‘আউস ও খাজরাজ’-এর গোত্র দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘ দিনের। এ গোত্রদ্বয়ের বিদ্যমান বিবাদ নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন বিশ্বনবি।

মক্কা থেকে হিজরতকারী সাহাবি মুহাজির ও মদিনার স্থানীয় সাহাবী আনসারদের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সুসম্পর্কই বলে দেয় ইসলাম কতবেশি উদার ও নৈতিকতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন।

আরও কিছু দৃষ্টান্ত-

- সুদূর পারস্যের ক্রীতদাস হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আহলে বাইতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু ঘোষণা করেন- ‘সালমান আমাদেরই ঘরের লোক।’

- হাবশি ক্রীতদাস বিলাল রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। এ কালো বর্ণের সাহাবিকে দেয়া হয়েছিল নেতার মর্যাদা। তাকে নিয়ে একটি ঘটনা-

একবার বিশিষ্ট সাহাবি আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুর সাথে বিলাল রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুর কোন একটি বিষয়ে তর্ক হয়। তর্কের এক পর্যায়ে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ করে তিনি বলে বসলেন- ‘কালো মায়ের সন্তান’। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে এ কথা পৌঁছালে তিনি বিরক্ত হন। তিনি আবু জর রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুকে বলেন, ‘তুমি এমন ব্যক্তি, যার মধ্যে এখনো জাহেলিয়াতের চিহ্ন রয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট্ট একটি মন্তব্যের কারণে হযরত আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর বক্তব্যকে ‘জাহেলিয়াত’-এর সাথে তুলনা করেছেন।

- হযরত উসামাহ ইবনু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অথচ তখনও হযরত আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম -এর মতো প্রসিদ্ধ সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন।

এসব সাহাবিদের নেতৃত্ব ও আনুগত্য দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়েছিলেন উচ্চ বংশ মর্যাদা ও নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-

‘কিশমিশ আকারের মস্তিষ্ক বিশিষ্ট কোনো হাবশি গোলামকেও যদি তোমাদের নেতা নিযুক্ত করা হয়, তবুও তোমরা তার কথা শুনবে এবং পূর্ণ আনুগত্য করবে।’ -সহিহ বুখারি, ৬৭৬০

দুঃখ ও পরিতাপ আজকের দুর্দশাগ্রস্ত অব্যবস্থাপনায়:

আধুনিকতার এ সময়ে বর্ণবাদ একটি অন্যতম সমস্যা। এ বৈষম্য ও বর্ণবাদ দূরীকরণের ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জাতিভেদ ও বর্ণবাদের বিষবাস্প। এর অবসান ঘটেনি আজও। এমনকি এই বর্ণবাদের কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজও প্রতিনিয়ত হানাহানি, নৈরাজ্য, খুনখারাবি আর প্রাণহানির দু:সংবাদ শুনে যেতে হচ্ছে আমাদের।

বিশ্ববাসীকে আজ এমন এক সমঝোতায় আসতে হবে, যাতে বর্ণবাদদের মতো কোনো ঘৃণ্য মতবাদের অস্তিত্ব না থাকে। যেন পৃথিবীজুড়ে ঘোষিত হয় মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক সে ঘোষণা-

‘জেনে রেখো! গর্ব, অহঙ্কার, গৌরব ও আভিজাত্যবোধ প্রভৃতির সব সম্পদ এবং রক্ত ও সম্পত্তি সম্পর্কিত যাবতীয় অভিযোগ আজ আমার এই দুই পদতলে নিপিষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জাহেলি যুগের সব হিংসাবিদ্বেষ ও গর্ব অহঙ্কার এবং পৈতৃক গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ববোধ নির্মূল করে দিয়েছেন। হয়তো বা সে মুমিন-মুত্তাকি অথবা অন্যায়কারী দুর্ভাগা হবে। সব মানুষ আদম থেকে উৎসারিত। আর আদম মাটি থেকে।’

অতএব, এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলামে প্রত্যেকের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। ইসলামের কোনো বিধানই বর্ণবাদের পক্ষে নয়। গোত্রতন্ত্র ও বর্ণবাদ নির্মূলে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুপম আদর্শ ও নির্দেশনা অনুসরণই যথেষ্ট।

ইসলাম গোত্রবাদ ও আভিজাত্য প্রদর্শনকে মূলোৎপাটিত করে। কারণ, এটা পরস্পরকে শত্রুতা, ক্রোধ, অহঙ্কার ও হিংসাবিদ্বেষ উসকে দেয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাছাড়া আনসার ও মুহাজিরদের মাঝেও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম প্রজাদেরকে বলে ‘আহল উজ-জিম্মাহ’ বা ‘জিম্মি।’ শব্দটির অর্থ হলো- ‘যারা নিরাপত্তায় বাস করে। জিম্মিদের সম্পর্কে ইসলামী বিধান হলো ‘জিম্মির রক্ত মুসলমানের রক্তের মতো পবিত্র’, অর্থাৎ, তারা পূর্ণ নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য এবং অধিকারী।

অতএব, মুক্তির পথ কোথায়?...

যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে আন্দোলন হয়েছে। আইন হয়েছে। হয়েছে নীতিমালাও। এমনটি গঠিত হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন-কমিশনও। কিন্তু কেন থামছে না এই বৈষম্যপনা? কেন মানুষ মেনে নিচ্ছে না জন্মগত ভিন্নতার এই আবরণকে? মানবরচিত কোনো বিধান বা নীতিমালায় নয়; বর্ণবাদগত এই বৈষম্য দূরীকরণে ‘ইসলাম’-ই একমাত্র সমাধান। কর্যকরী ফমূর্লা। কারণ ইসলামে কোনো বর্ণবৈষম্য নেই। বর্ণবাদ বা বর্ণবৈষম্যকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না ইসলাম। বর্ণবাদকে নির্মূল করে আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অনন্য এক উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

পরিশেষে...

সুতরাং, আজকের সমস্যা ও দুর্দশা কবলিত এই পৃথিবীকে বর্ণবাদ আর শ্রেণিভেদের হাত হতে বাঁচাতে হলে কোন পরাশক্তির কাছে হাত পেতে লাভ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বলুন আর যুক্তরাজ্য; আফ্রিকা মহাদেশের কথা তুলুন অথবা অস্ট্রেলিয়ার— পৃথিবীর বুক থেকে বর্ণবাদের মতো কলঙ্ক কেউই মুছে দিতে পারবে না। এই কলঙ্ক হতে মানব জাতির মুক্তির একমাত্র পথ হতে পারে ইসলাম। ইসলামই হতে পারে এর জন্য একমাত্র কার্যকরী ফর্মূলা। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মালকম এক্স এর সরল স্বীকারোক্তিটি এইক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকাকে ইসলাম পূর্ণরূপে বুঝতে হবে। কারণ ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা আমেরিকান সমাজ থেকে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে কার্যকরী সমাধান দিতে পারে।’

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা গোটা বিশ্ববাসীকে সাদা-কালো, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচুর ভেদাভেদের বেড়াজাল ছিন্ন করে ইসলামের সুমহান ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত সাম্য, মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নিজেদের নিয়োজিত করার সৌভাগ্য দান করুন। পৃথিবীকে হানাহানি ও বিপর্যয়মুক্ত শান্তিময় আবাস হিসেবে গড়ে তোলার শক্তি এবং সামর্থ্য দান করুন। আমিন।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২১

জুল ভার্ন বলেছেন: সত্য।

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৪

নতুন নকিব বলেছেন:



স্বাগত।

আপনার আগমন প্রেরণার। বরাবরই আপনি সত্যের পক্ষে।

শুভকামনা জানবেন।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম আসলে শুধু ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে।
পৃথিবীতে ধর্ম ভালো করতে পারে না। পৃথিবীর ভালোর জন্য যা কিছু করার মানূষকেই করতে হবে।

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৩

নতুন নকিব বলেছেন:



ধর্ম ফ্যাসাদ যা সৃষ্টি করে তার তুলনায় আপনিও তো কম যাচ্ছেন না! ইদানিং তো ধর্মের পেছনে লেগেই আছেন। অবশ্য, আপনার আমার বাধা দেয়ায় ধর্ম তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ০% ও আছে কি না, সন্দেহ। কিন্তু ধর্মের পেছনে লাগতে গিয়ে আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাতে অনেক ক্ষতি যে হচ্ছে এবং হবে তাতে সন্দেহ নেই মোটেই।

সাগরের প্রবাহকে খড়কুটো দিয়ে যেমন আটকানো যায় না, নদীর স্রোতকে যেমন বন্ধ করা যায় না, ধর্মের বিষয়টিও সেরকমই...

শুভকামনা।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হোল বর্তমান আরব দেশগুলির মুসলমানেরা আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলমান মনে করে। ওদের বেশীর ভাগই আচারি মুসলমান। আর আমরা আবেগ দিয়ে মুসলমান।

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



ঠিকই বলেছেন, বর্তমান আরবের অধিকাংশ লোক ইসলামের সঠিক শিক্ষা ধারণ করেন বলে মনে হয় না। অন্তত: তাদের কাজকর্ম থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়। তবে তাদের মাঝেও ভালো মানুষ রয়েছেন, হয়তো সেই সংখ্যাটা খুবই নগন্য।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সউদি আরবের নিস্পৃহ ভাব, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহন এবং ইসরায়েলের সাথে গোপন আঁতাত, ইয়েমেনে পাতিয়ে দেয়া খুনোখুনি, পশ্চিমাদের ইরাক ধ্বংসকরণযজ্ঞে সহায়তা প্রদান, ইরানের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের ছলচাতুরিতে গোপন সায়, চীনের ঝিনঝিয়াং প্রদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের নির্যাতনে চীনকে সমর্থন করাসহ ইত্যাকার নানান কাজে আরবদের বর্তমান কলঙ্কিত চরিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উম্মুক্ত হয়ে পড়েছে দিনকে দিন।

এগুলো মুসলিম জাতিসত্তার জন্য লজ্জার। গোটা আরবদের জন্য অপমানের। আমাদের জন্য দু:খজনক।

৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আমাদেরকে ধর্মচর্চা করতে হবে। অদ্য আমরা নামের ধার্মিক।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০০

নতুন নকিব বলেছেন:



সুন্দর মন্তব্য রেখে যাওয়ায় অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮

নতুন বলেছেন: লেখক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন, বর্তমান আরবের অধিকাংশ লোক ইসলামের সঠিক শিক্ষা ধারণ করেন বলে মনে হয় না। অন্তত: তাদের কাজকর্ম থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়। তবে তাদের মাঝেও ভালো মানুষ রয়েছেন, হয়তো সেই সংখ্যাটা খুবই নগন্য।

তার অর্থ আরবের মানুষ ইসলামের সঠিক শিক্ষা ধারন করতে পারেনাই। এটা কি এতো দিন পরে বুঝতে পারলেন?

রাসুল সা: মারা যাবার পরে ক্ষমতা নিয়ে আলচনার কারনে তার দাফনে দেরী হয়েছিলো।
ফাতিমা রা: রাসুলের মেয়ে মারা গিয়েছিলেন অল্প বয়সে অনেকে বলে সেটা গর্ভাবস্থায় তার উপরে আক্রমনের কারনে আহত হয়ে তিনি মারা যান।
৩ খলিফাকে হত্যা করা হয়েছিলো।
রাসুল সা: এর স্ত্রী এবং মেয়ের জামাইয়ের মাঝে যুদ্ধ হয়েছিলো
রাসুল সা: এর দুই নাতিকে হত্যা করা হয়েছিলো।

ধর্ম নামে মাত্র কিন্তু ক্ষমতা অনেক বড় একটা বিষয়। ক্ষমতাবানেরা ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে নিয়ন্ত্রনে।

আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষ বেশি ধর্ম পালন করে। তারা আল্লাহর কাছে বিচার দেয়। আশা নিয়ে বেচে থেকে যে মরার পরে বেহেস্তে তাদের দুখ্য থাকবেনা।

কোরান নাজিল হয়েছে আরবীতে, হাদিস আরবীতে, এখন যদি বলেন আরবের মানুষ বোঝে, ইসলাম বোঝে বাংলাদেশীর মানুষ তবে তো সমস্যা B:-)

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৬

নতুন নকিব বলেছেন:



রাসুল সা: মারা যাবার পরে ক্ষমতা নিয়ে আলচনার কারনে তার দাফনে দেরী হয়েছিলো।
ফাতিমা রা: রাসুলের মেয়ে মারা গিয়েছিলেন অল্প বয়সে অনেকে বলে সেটা গর্ভাবস্থায় তার উপরে আক্রমনের কারনে আহত হয়ে তিনি মারা যান।
৩ খলিফাকে হত্যা করা হয়েছিলো।
রাসুল সা: এর স্ত্রী এবং মেয়ের জামাইয়ের মাঝে যুদ্ধ হয়েছিলো
রাসুল সা: এর দুই নাতিকে হত্যা করা হয়েছিলো।


-মিথ্যে বললেও আপনি ঠান্ডা মাথায় বলেন, এটা কিন্তু আপনার বড় একটা গুণ। অথবা, এমনও হতে পারে যে, সঠিক এবং সত্য কথা আপনার কাছে পৌঁছেনি বলেই প্রাপ্ত তথ্যকেই সত্য ধরে নেন এবং সেগুলোকেই আবার সবখানে তুলে ধরেন। যেমনটা করে দেখালেন এই মন্তব্যটিতেও।

কিন্তু আশ্চর্য না হয়ে পারি না, যখন দেখি, ইতিহাসের নামে শিয়াসহ বাতিলপন্থীদের বস্তাপচা বানোয়াট গালগপ্পে আপনার মত আধুনিক ও সচেতন মানুষও আক্রান্ত! নিজের চোখকেও অনেক সময় বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

''রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পরে ক্ষমতা নিয়ে আলোচনার কারনে তাঁর দাফনে দেরী হয়েছিলো'' -এই কথাটা ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য কোনো একটি কিতাবে, কোনো হাদিসে কিংবা অন্য কোনো সূত্রে বর্ণিত আছে, দেখাতে পারবেন? একমাত্র ইসলাম বিদ্বেষী অপশক্তির কাছে তাদের মনগড়া বানোয়াট দলিল যদি থেকে থাকে তা ছাড়া আর কোথাও আপনার এই কথার সপক্ষে কোনো প্রমান দিতে পারবেন না।

একইরকমভাবে ফাতিমা রা: রাসুলের মেয়ে মারা গিয়েছিলেন অল্প বয়সে অনেকে বলে সেটা গর্ভাবস্থায় তার উপরে আক্রমনের কারনে আহত হয়ে তিনি মারা যান।

-এই যে বললেন, অনেকে বলে এই অনেকে বলতে কারা? তাদের পরিচয় কি? সেই পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন? আপনি হয়তো সংকোচবোধ করবেন। আমিই বলে দিচ্ছি, তারা হচ্ছেন ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যাবাদী অপরাধীচক্র।

এদের কথায় আপনার মত বিবেকবান লোকের বিভ্রান্ত হওয়া বেমানান। তা ছাড়া, আপনি তো আমার কাছের মানুষদেরও একজন। B-)

আর এ কথার কিছুটা সত্যতা আপনার এবং আমার নাম দেখলেও যে কেউ বুঝে নিতে পারবেন বলে মনে করি। তাই না?

৬| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য।
ভালো থাকুন।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ তো দিলেন ঠিকই। কিন্তু আগের মন্তব্যের উত্তরে যতগুলো কথা লিখলাম, তা নিয়ে তো কিছুই বললেন না। আপনার অভিমত জানা প্রয়োজন ছিল।

শুভকামনা।

৭| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:৫৯

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বর্তমান মুসলিম বাদশারা ভোগবিলাসে আকণ্ঠ নিমজ্জিত - তাদের সখ্যতাও পশ্চিমা গলাকাটা ক্যাপিটালিস্টদের সাথে। সুতরাং তাদের রাজত্বে এখন শ্রেণীভেদ আর বর্ণবাদের চাষাবাদই চলে - মূলোৎপাটন তো দূরের কথা। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। আমার মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে স্বল্প সময়ের জন্য যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মনে হলো এদের অনেকেই একধরণের সামন্ততান্ত্রিক মনোমানষিকতায় ছাপ স্পষ্ট । আমাদেরকে দেখলে কামলা বা দাস বলেই মনে করে, তাদের দেশে কামলা দিতে গিয়েছি। দুর্ভাগ্যক্রমে পাশ্চাত্যের অনেক দেশে দরিদ্র দেশ থেকে আগত ইমিগ্রেন্টদের নাগরিকত্ব দেয়া হলেও মুসলিম রাজাবাদশাদের দেশে আগত কামলাদের এখন অবধি সে রকম সৌভাগ্য হয় নি।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২১

নতুন নকিব বলেছেন:



একদম আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন। ওরা ভোগ বিলাসে আকন্ঠ নয়, বরং আপাদমস্তক নিমজ্জিত। দুনিয়া একদিকে আর ওদের বিলাসিতা এবং ভোগ উপভোগ আরেক দিকে।

মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অভিনন্দন।

শুভকামনা জানবেন।

৮| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬

নতুন বলেছেন: -মিথ্যে বললেও আপনি ঠান্ডা মাথায় বলেন, এটা কিন্তু আপনার বড় একটা গুণ। অথবা, এমনও হতে পারে যে, সঠিক এবং সত্য কথা আপনার কাছে পৌঁছেনি বলেই প্রাপ্ত তথ্যকেই সত্য ধরে নেন এবং সেগুলোকেই আবার সবখানে তুলে ধরেন। যেমনটা করে দেখালেন এই মন্তব্যটিতেও।

কিন্তু আশ্চর্য না হয়ে পারি না, যখন দেখি, ইতিহাসের নামে শিয়াসহ বাতিলপন্থীদের বস্তাপচা বানোয়াট গালগপ্পে আপনার মত আধুনিক ও সচেতন মানুষও আক্রান্ত! নিজের চোখকেও অনেক সময় বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।


যেটাকে আমি মিথ্যা বলে জানি সেটা বলার প্রশ্নই উঠেনা। বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ।

রাসুল সা: এর মৃত্যুর পরে নেতা কে হবে সেটা নিয়ে সমস্যার কারনেই তার দাফনে দেরী হয়েছিলো বলেই জানি।
৩৫ ডি থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপ থাকে জুন মাসে। তখন মক্কায় এসি বা হিম ঘর ছিলো না। তখন কেন রাসুল সা: কে দাফন না করে রেখে দিয়ে ছিলো? কেন তার জানাজা একক ভাবে হয় নাই?

কারন কেউই এই পরিস্হিতির জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তাই নেতা কে হবে সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো।

আরেকটা কথা শিয়া উতস থেকেই ফাতেমা এবং ওমর রা: এর ঘটনা আসে এটা ঠিক। কিন্তু কিছু ঘটনা এই কাহিনির পক্ষে যায়।

যেমন রাসুল সা: এর মেয়ের জানাজা তে আবু বকর রা: উপস্হিত ছিলেন?
কেন রাতের অন্ধকারে তার জানাজা এবং কবর দিলো এবং কাউকে জানালো না?

এখানে অবশ্যই কোন অভিমান কাজ করেছিলো। নতুবা রাসুল সা: এর মেয়ে মারা যাবার পরে সেটা কেউ জানবে না, খলিফা, রাসুল সা: এর সহচরী জানাজায় আসবেনা সেটা সাভাবিক না।

আরবে বংস, ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিলো সেই সময়ে তাই রাসুল সা: মৃত্যুর পরে ক্ষমতার দন্দ শুরু হয়।

আপনি যদি বলেন যে ফাতেমা রা: বলে গেছেন যে তার শরিরের আকৃতি যেন কেউ না দেখে তাই এই সব করা হয়েছে তবে আর কোন কথা নাই। :#)

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৫

নতুন নকিব বলেছেন:





যেটাকে আমি মিথ্যা বলে জানি সেটা বলার প্রশ্নই উঠেনা। বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ।

রাসুল সা: এর মৃত্যুর পরে নেতা কে হবে সেটা নিয়ে সমস্যার কারনেই তার দাফনে দেরী হয়েছিলো বলেই জানি।
৩৫ ডি থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপ থাকে জুন মাসে। তখন মক্কায় এসি বা হিম ঘর ছিলো না। তখন কেন রাসুল সা: কে দাফন না করে রেখে দিয়ে ছিলো? কেন তার জানাজা একক ভাবে হয় নাই?

কারন কেউই এই পরিস্হিতির জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তাই নেতা কে হবে সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো।

আরেকটা কথা শিয়া উতস থেকেই ফাতেমা এবং ওমর রা: এর ঘটনা আসে এটা ঠিক। কিন্তু কিছু ঘটনা এই কাহিনির পক্ষে যায়।

যেমন রাসুল সা: এর মেয়ের জানাজা তে আবু বকর রা: উপস্হিত ছিলেন?
কেন রাতের অন্ধকারে তার জানাজা এবং কবর দিলো এবং কাউকে জানালো না?

এখানে অবশ্যই কোন অভিমান কাজ করেছিলো। নতুবা রাসুল সা: এর মেয়ে মারা যাবার পরে সেটা কেউ জানবে না, খলিফা, রাসুল সা: এর সহচরী জানাজায় আসবেনা সেটা সাভাবিক না।

আরবে বংস, ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিলো সেই সময়ে তাই রাসুল সা: মৃত্যুর পরে ক্ষমতার দন্দ শুরু হয়।

আপনি যদি বলেন যে ফাতেমা রা: বলে গেছেন যে তার শরিরের আকৃতি যেন কেউ না দেখে তাই এই সব করা হয়েছে তবে আর কোন কথা নাই। :#)


-রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পরে খিলাফতের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবেন, এটা নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছিল এ কথা সত্য কিন্তু যদি বলেন শুধু এই একটিমাত্র কারণেই তাঁর দাফন কাফনে বিলম্ব হয়েছে, তাহলে সে কথা সঠিক হবে না। কারণ, জানাজা নামাজের প্রচলিত পদ্ধতি রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় যে, কোন সাহাবিই হয়তো এটা সঠিক মনে করেননি যে, রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পরে তাকে সামনে নিয়ে কেউ ইমামতির দায়িত্ব পালন করুন। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে যেমন কেউ কোনো দিন ইমামতি করার ধৃষ্টতা দেখাননি, তেমনি তাঁর ইনতিকালের পরেও তাঁর জানাজা নামাজেও কেউ ইমাম নিযুক্ত হতে চাননি। যার ফলে যার যার মত করে প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে জানাজা নামাজ আদায় করেছেন। এতে, দলে দলে বিভক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে শুধু জানাজা নামাজের জন্যই মঙ্গলবার পুরো দিন লেগে যায়। এমনকি সেই দিনটি পার হয়ে পরবর্তী রাত এসে যায়।

আপনার সদয় অবগতির জন্য নির্ভরযোগ্য সিরাত গ্রন্থ 'আর রাহিকুল মাখতুম' এর সংশ্লিষ্ট অধ্যায় হতে উদ্ধৃতি দিচ্ছি-

কাফন-দাফন (التَّجْهِيْزُ وَتَوْدِيْعُ الْجَسَدِ الشَّرِيْفِ إِلَى الْأَرْضِ):

এদিকে নাবী কারীম (ﷺ)-এর কাফন-দাফনের পূর্বেই নাবী কারীম (ﷺ)-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ব্যাপারে মুসলিমগণের মধ্যে মত বিরোধের সৃষ্টি হল। সাকীফা বনু সায়েদার মধ্যে, মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে আলোচনা ও বাদানুবাদ চলতে থাকল এবং দলীল প্রমাণাদি পেশ ও প্রশ্নোত্তর চলছিল, অবশেষে আবূ বাকর (রাঃ)-এর প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হল। এর ফলে যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হয় এবং রাত্রি আগমন করে। লোকজনেরা নাবী কারীম (ﷺ)-এর কাফন-দাফনের পরিবর্তে আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত্রি অতিবাহিত হয়ে সমাগত হয় মঙ্গলবার সকাল। এ সময় পর্যন্ত নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারক একটি জরীদার ইয়েমেনী চাদর দ্বারা আবৃত অবস্থায় বিছানায় শায়িত ছিল। ঘরের মানুষেরা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ রেখেছিল।

মঙ্গলবার দিবস নাবী কারীম (ﷺ)-কে কাপড়সহ গোসল দেওয়া হল। গোসল দেওয়ার কাজে অংশ গ্রহণ করলেন আব্বাস, আলী, আববাসের পুত্র ফযল এবং কাশেম (রাঃ), রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর আযাদকৃত দাস শাকরান, উসামা বিন যায়দ এবং আওস বিন খাওলী (রাঃ)। আব্বাস, ফযল ও কাশেম (রাঃ) নাবী কারীম (ﷺ)-এর পাশ পরিবর্তন করে দিচ্ছেলেন। উসামা এবং শাকরান পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, আলী (রাঃ) ধৌত করছিলেন এবং আওস নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারককে আপন বক্ষের উপর ভর করে নিয়ে রেখেছিলেন।

রাসূলুল্লাহকে তিনবার কুল পাতার মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল দেয়া হয়। কুবায় অবস্থিত সা’দ বিন খায়সামাহ ‘গারস’ নামক কূপের পানি দিয়ে তাঁকে গোসল দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই কূপের পানি পান করতেন।

গোসলের পর তিনটি কুরসুফ হতে তৈরী সাদা ইয়েমেনী চাদর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাফনের ব্যবস্থা করা হল। এসবের মধ্যে জামা কিংবা পাগড়ি ছিল না। -সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃঃ, সহীহুল মুসলিম ১ম খন্ড ৩০৬ পৃঃ

নাবী কারীম (ﷺ)-এর অন্তিম আরামগাহ (শান্তি শয্যা) সম্পর্কে সাহাবীগণ (রাযি.)-এর মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘আমি নাবী কারীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘কোন নাবীকে (পৃথিবী) থেকে উঠানো হয় নি (মৃত্যুবরণ করেন নি) তাঁকে সেই স্থানে দাফন করা ব্যতীত যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’ এ মীমাংসার পর নাবী কারীম (ﷺ) যে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবূ ত্বালহাহ (রাঃ) তা উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর তার নীচে বগলী কবর খনন করা হল।

এরপর সাহাবীগণ (রাযি.) পালাক্রমে দশ দশ জন করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে জানাযা আদায় করলেন। নির্ধারিত কোন ইমামের ব্যবস্থা ছিল না। সর্ব প্রথম নাবী কারীম (ﷺ) পরিবার বনু হাশিমের লোকজনেরা সালাত আদায় করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে মুহাজির ও আনসারগণ জানাযা সালাত আদায় করেন। অতঃপর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পুরুষ, মহিলা ও শিশুগণ সালাত আদায় করেন।

সালাতে জানাযা আদায় করতে মঙ্গলবার দিবস পুরোটাই অতিবাহিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবস অতিবাহিত হওয়ার পর বুধবারের রাত্রে নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারককে সমাহিত করা হয়। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, পুরো দিবসটাই সালাতে জানাযা চলার কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দাফন সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। এভাবে সময় অতিবাহিত হতে থাকার পর বুধবার রাত্রের মধ্যভাগে দাফন-কাফনের শব্দ কর্ণগোচর হয়। -শাইখ আব্দুল্লাহ রচিত মুখতাসারুস সীরাতে রাসূল (সাঃ) ৪৭১ পৃঃ। মৃত্যু বিবরণ বিস্তারিত অবগতির জন্য দ্রষ্টব্য সহীহুল বুখারীম, নাবী (সাঃ) অসুস্থতা অধ্যায়, এবং এর পরের কয়েকেটি অধ্যায়, ফাতহুল বারী সহ। সহীহুল মুসলিম ও মিশকাতুল মাসাবীহ, নাবী (সাঃ)-এর মৃত্যূ অধ্যায় দ্রঃ। ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৬৪৯-৬৬৫ পৃঃ। তালকিহুvাহুমি আহলিল আসার ৩৮-৩৯ পৃঃ। রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ২৭৭-২৮৬ পৃঃ। সময়ের নির্দিষ্টতা সাধারণভাবে রহমাতুল্লিল আলামীন হতে গৃহীত

ফাতিমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার ইনতিকালের ঘটনা নিয়ে আপনার বক্তব্যের বিষয়ে পরবর্তীতে সুযোগ হলে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

আপনার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম এবং শুভকামনা। আপনার কাছেও দোআ চাই।

৯| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৩

নতুন বলেছেন: রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পরে খিলাফতের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবেন, এটা নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছিল এ কথা সত্য কিন্তু যদি বলেন শুধু এই একটিমাত্র কারণেই তাঁর দাফন কাফনে বিলম্ব হয়েছে, তাহলে সে কথা সঠিক হবে না। কারণ, জানাজা নামাজের প্রচলিত পদ্ধতি রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় যে, কোন সাহাবিই হয়তো এটা সঠিক মনে করেননি যে, রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পরে তাকে সামনে নিয়ে কেউ ইমামতির দায়িত্ব পালন করুন। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে যেমন কেউ কোনো দিন ইমামতি করার ধৃষ্টতা দেখাননি, তেমনি তাঁর ইনতিকালের পরেও তাঁর জানাজা নামাজেও কেউ ইমাম নিযুক্ত হতে চাননি।

এখানে ধৃস্টতার কথা না। যখন কোথাও নেতা থাকেনা তখন যে কোন সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগে। আর যেহেতু ঝামেলা হচ্ছিলো কে খলিফা হবে সেটা নিয়ে তাই এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই।

মানে সম্পূর্ন একটা জটিল পরিস্হিতির কারনেই এমনটা হয়েছিলো।
আর আপনি যদি ইতিহাস লেখেন তবে তাতে অবশ্যই ভালো জিনিস গুলিই লিখবেন।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩৩

নতুন নকিব বলেছেন:



যখন কোথাও নেতা থাকেনা তখন যে কোন সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগে। আর যেহেতু ঝামেলা হচ্ছিলো কে খলিফা হবে সেটা নিয়ে তাই এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই।

মানে সম্পূর্ন একটা জটিল পরিস্হিতির কারনেই এমনটা হয়েছিলো।


-আপনার এই কথাগুলোর সাথে সম্পূর্ণ সহমত। মূল কারণ আসলে এটাই ছিল। সাহাবায়ে কেরাম এমন পরিস্থিতিতে ইতোপূর্বে কখনো পড়েননি। প্রিয় নবীজীর ইনতিকালে একে তো তারা ছিলেন নিদারুন শোকাহত। তার উপরে তাদের আগামীর নেতৃত্ব ঠিক করে নেয়া সেই মুহূর্তটিতে শুধু কঠিন বলা হলেও কম হবে, কঠিন থেকে কঠিনতর ছিল। কারণ, গোটা মদিনায় তখন শোকের ভিন্নরকম এক পরিবেশ। সবাই শোকে মুহ্যমান। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে গনমানুষের কান্নায় মদিনার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে এসেছিল। সাহাবায়ে কেরাম তখন শোকের এক অতল সাগরে ঠিক যেন হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না অথবা বলতে পারেন, বুঝে ওঠার সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিই তাদের ছিল না যে, কাকে খিলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করা হবে, কে এই গুরুদায়িত্ব পালন করবেন- তখনকার শোকাবহ পরিস্থিতিতে এটা নির্ধারণ করা নিতান্তই জটিল একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এইসব নিয়ে পরামর্শের পর পরামর্শ চলে তাদের ভেতরে। আনসার মুহাজির সকলেই একে একে নিজেদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। তাদের ইচ্ছের বাইরে হলেও এতে অনেকটা বিলম্ব হয়ে যায়।

যাই হোক, প্রকৃত বিষয়টি আপনি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

এই কারণটাকেই কেউ কেউ যখন সাহাবায়ে কেরামের ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতার ভিন্ন রং লাগিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালাতে থাকেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেটাকে ইতিহাস বিকৃতি বলা ছাড়া উপায় থাকে না।

শুভকামনা জানবেন।

১০| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৭

নতুন বলেছেন: রাস্টের ক্ষমতা কখনোই ছোট কোন বিষয়না। আরবে বংস, ক্ষমতা, প্রভাব অনেক বড় একটা বিষয় ছিলো। ক্ষমতার বিষয়টা অবশ্যই প্রধান কারন ছিলো সেটা আপনি মানতে চাইবেন না কারন তাতে ইসলামের বদনাম হবে।

কিন্তু বাস্তবতা সেই রকমের হবার সম্ববনা খুবই বেশি।

১১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৩

জ্যাকেল বলেছেন: @নতুন ভাই, নবীর ওফাতের পরে ইসলামে একটা কঠিন সময় পার করেছিল, ভন্ড নবীদের উতপাৎ ছিল, এরপরে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ছিল। সব মিলিয়ে আপনার কাছে ইসলাম'কে কি আধুনিক জীবনের সাথে মেলাতে পারেন? এটাই আল্লাহ প্রদত্ত বিধান বলে মনে করেন নাকি? আমার জানার কৌতুহল হইতেছে কারণ আপনি অনেক বেশি রিসার্চ করেছেন এই ব্লগের অনেক ব্লগারগণের মধ্যে। না জানাইলেও কোন অসুবিধা নাই, একান্তই আপনার মর্জি।

১২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৫

নতুন বলেছেন: @জ্যাকেল ভাই দ্যা জ্যাকেল মুভিটা খুব ভালা লাগছিলো, মাসুদ রানার একটা পর্ব মনে হয় এই ছবির কাহিনির নিয়ে লেখা ছিলো সেটা আগে পড়ছিলাম এবং পরে যখন ছবিটা দেখতেছিলাম তখন কাহিনি পরিচিত লাগতেছিলো। :)

কোন ধর্মই আধুনিক জীবনের সাথে মেলাতে পারছেনা।

আর সৃস্টিকতার কথা বললে আমার দৃস্টিভঙ্গি এগনোস্টিসমের মতন বলতে পারেন।

এই মহাবিশ্ব এতো বড় যে এটা আমাদের বিশ্বের ধর্মের একজন সৃস্টকতা বানিয়েছেন বলে যে দাবি সবাই করে সেটা সঠিক মনে হয় না। কারন সব ধর্মের কাহিনি, নিয়মে অনেক ঘাপলা আছে।

ধর্ম মানুষকে নিয়ন্ত্রনের জন্য সৃস্টি করেছিলো কেউ সেখান থেকে এখনো চলছে।

আগে মানুষ ধর্ম ভীরু ছিলো কারন মৃত্যুর হার বেশি ছিলো, চিকিতসা বিজ্ঞান উন্নত ছিলো না। তাই মানুষ মৃত্যুর ভয়ে ধর্ম মানতো বেশি। এখন মানুষের জ্ঞানের পরিধী বাড়ছে তাই ধর্ম পালনের পরিধী কমে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.